মত দ্বিমত-জিপিএ-৫ বৃদ্ধি ইতিবাচক লক্ষণ by এ এস এম মুশফিকুর রহমান
এসএসসি (মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষায় সব ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়েছে শিক্ষার্থীরা। সাতটি শিক্ষা বোর্ডের গড় পাসের হার ৭৮.১৯। এ ছাড়া জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮২ হাজার ১৩৪ জন শিক্ষার্থী। এটি কি পরীক্ষাপদ্ধতির দুর্বলতার জন্য, নাকি শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রতিফলন? এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দুজন শিক্ষাবিদের বক্তব্য তুলে ধরা হলো।
ফি-বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর হার বাড়ছে, বাড়ছে জিপিও-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। এটিকে আমি ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখতে চাই। অনেকে বলছেন, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতিবছর হাজার হাজার বাড়ছে। কিন্তু মেধার বিকাশ ঘটছে না। আমার মনে হয়, সে কথা পুরোপুরি সত্য নয়। পরীক্ষাপদ্ধতি পরিবর্তিত হয়েছে, নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মনোভাবের পরিবর্তন হয়েছে, প্রশ্ন তুলনামূলক সহজ হচ্ছে, সচেতনতা বেড়েছে—এসব কিছুই জিপিএ বাড়ায় ভূমিকা রাখছে। এর সঙ্গে শিক্ষার সার্বিক মানের প্রশ্নটিও জড়িত।
তবে এ ক্ষেত্রে সমস্যাটি হলো, যারা খুব ভালো শিক্ষার্থী তারা যেমন জিপিএ-৫ পাচ্ছে, আবার যারা মোটামুটি মধ্যম মানের শিক্ষার্থী তারাও জিপিএ-৫ পাচ্ছে। এতে করে ভালো ও মধ্যম মানের শিক্ষার্থীরা মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ বলবেন, এর ফলে যথাযথ মূল্যায়ন হয়তো হচ্ছে না। তাদের বক্তব্য যে একেবারে অযৌক্তিক, তা বলব না। সব মূল্যায়ন পদ্ধতিতেই এ সমস্যা আছে। কিন্তু তাই বলে জিপিএ-৫-এর সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখাও ঠিক নয়।
গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হওয়ার পর প্রথমবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল মাত্র ৭৬ জন। এ বছর ৮২ হাজারেরও বেশি। তবে আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জিপিএ-৫-এর হার গতবারের চেয়ে খুব বেশি বাড়েনি। এ বছর সেরা স্কুল নির্বাচনের পদ্ধতি পরিবর্তন করায় আমরা প্রথম স্থান অধিকার করেছি। আমরা পাঠদানের ক্ষেত্রে প্রথাগত পদ্ধতির পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করেছি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্তরিক পরিবেশ ও কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলাও পরীক্ষায় ভালো ফল করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করার পর থেকে আস্তে আস্তে পরীক্ষাপদ্ধতিও পরিবর্তিত হচ্ছে, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যার ফলে শিক্ষকদের খাতা মূল্যায়নে ভিন্নতা আসছে, শিক্ষার্থীদের নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের দৃষ্ঠিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে, নতুন পদ্ধতিতে প্রশ্নও তুলনামূলক একটু সহজ করা হচ্ছে—এসব কারণে একটু বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাচ্ছে। এটিও আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে।
যত দিন যাচ্ছে ছেলেমেয়ের পড়ালেখা নিয়ে আমাদের অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ছে, বাড়ছে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ, গত কয়েক বছরে শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে, মেয়েদের পড়ালেখার জন্য সরকার নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলে মেয়ে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি মনোযোগী হচ্ছে, পড়ালেখার সুযোগও বাড়ছে। এসব কারণও জিপিএ বাড়ার ক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে।
ঢাকার কিংবা জেলা শহরের স্কুলগুলো বরাবর ভালো করছে, বেশি বেশি জিপিএ পাচ্ছে। তুলনামূলকভাবে অনেক পিছিয়ে আছে গ্রামের স্কুলগুলো। এর কারণ ঢাকায় যারা পড়ালেখা করছে তাদের প্রতি অভিভাবকেরা যে পরিমাণ শ্রম, অর্থ ব্যয় করছেন; যেভাবে যত্ন নিচ্ছেন, তা গ্রামে খুব কম করা হয়। তা ছাড়া সুবিধাজনক অবস্থানগত কারণেই শহরের ছেলেমেয়েরা এমনিতেই কিছু বেশি সুযোগ পেয়ে থাকে।
একজন সাধারণ মানের শিক্ষার্থীর প্রতিও বাড়তি মনোযোগ দিলে, সার্বক্ষণিক তাকে তদারক করলে তার পক্ষে জিপিএ-৫ পাওয়া অসম্ভব নয়। অতএব জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লে সেটি নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা ঠিক নয়।
এ এস এম মুশফিকুর রহমান: অধ্যক্ষ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ।
তবে এ ক্ষেত্রে সমস্যাটি হলো, যারা খুব ভালো শিক্ষার্থী তারা যেমন জিপিএ-৫ পাচ্ছে, আবার যারা মোটামুটি মধ্যম মানের শিক্ষার্থী তারাও জিপিএ-৫ পাচ্ছে। এতে করে ভালো ও মধ্যম মানের শিক্ষার্থীরা মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ বলবেন, এর ফলে যথাযথ মূল্যায়ন হয়তো হচ্ছে না। তাদের বক্তব্য যে একেবারে অযৌক্তিক, তা বলব না। সব মূল্যায়ন পদ্ধতিতেই এ সমস্যা আছে। কিন্তু তাই বলে জিপিএ-৫-এর সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখাও ঠিক নয়।
গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হওয়ার পর প্রথমবার জিপিএ-৫ পেয়েছিল মাত্র ৭৬ জন। এ বছর ৮২ হাজারেরও বেশি। তবে আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জিপিএ-৫-এর হার গতবারের চেয়ে খুব বেশি বাড়েনি। এ বছর সেরা স্কুল নির্বাচনের পদ্ধতি পরিবর্তন করায় আমরা প্রথম স্থান অধিকার করেছি। আমরা পাঠদানের ক্ষেত্রে প্রথাগত পদ্ধতির পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করেছি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্তরিক পরিবেশ ও কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলাও পরীক্ষায় ভালো ফল করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করার পর থেকে আস্তে আস্তে পরীক্ষাপদ্ধতিও পরিবর্তিত হচ্ছে, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যার ফলে শিক্ষকদের খাতা মূল্যায়নে ভিন্নতা আসছে, শিক্ষার্থীদের নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের দৃষ্ঠিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে, নতুন পদ্ধতিতে প্রশ্নও তুলনামূলক একটু সহজ করা হচ্ছে—এসব কারণে একটু বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাচ্ছে। এটিও আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে।
যত দিন যাচ্ছে ছেলেমেয়ের পড়ালেখা নিয়ে আমাদের অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ছে, বাড়ছে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ, গত কয়েক বছরে শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে, মেয়েদের পড়ালেখার জন্য সরকার নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলে মেয়ে শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি মনোযোগী হচ্ছে, পড়ালেখার সুযোগও বাড়ছে। এসব কারণও জিপিএ বাড়ার ক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে।
ঢাকার কিংবা জেলা শহরের স্কুলগুলো বরাবর ভালো করছে, বেশি বেশি জিপিএ পাচ্ছে। তুলনামূলকভাবে অনেক পিছিয়ে আছে গ্রামের স্কুলগুলো। এর কারণ ঢাকায় যারা পড়ালেখা করছে তাদের প্রতি অভিভাবকেরা যে পরিমাণ শ্রম, অর্থ ব্যয় করছেন; যেভাবে যত্ন নিচ্ছেন, তা গ্রামে খুব কম করা হয়। তা ছাড়া সুবিধাজনক অবস্থানগত কারণেই শহরের ছেলেমেয়েরা এমনিতেই কিছু বেশি সুযোগ পেয়ে থাকে।
একজন সাধারণ মানের শিক্ষার্থীর প্রতিও বাড়তি মনোযোগ দিলে, সার্বক্ষণিক তাকে তদারক করলে তার পক্ষে জিপিএ-৫ পাওয়া অসম্ভব নয়। অতএব জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লে সেটি নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা ঠিক নয়।
এ এস এম মুশফিকুর রহমান: অধ্যক্ষ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ।
No comments