অভিযোগ না এড়িয়ে অধিকতর তদন্ত করে ব্যবস্থা নিন-শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি

শেয়ারবাজারে কারসাজি হয়েছে, অজস্র মানুষ এর খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সরকারের তরফে বিশিষ্ট ব্যাংকার খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের মাধ্যমে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে এ কমিটির প্রতিবেদন এবং এর সুপারিশগুলো নিয়ে সরকারের বিরূপতাও প্রকাশিত হয়েছে।


এরই সর্বশেষ প্রকাশ ঘটল অর্থমন্ত্রীর আত্মপক্ষ সমর্থনের মাধ্যমে। বিষয়টি ব্যক্তিগত ভূমিকার নয়, বিপর্যয়ের দায়দায়িত্ব চিহ্নিত করা এবং প্রতিকার করা হচ্ছে কি না—সবাই সেটাই দেখতে চায়।
অর্থমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বলেছেন, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময় কোনো অংশ বাদ পড়েছে বলে কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে তিনি পদত্যাগ করবেন। প্রশ্ন সেখানে নয়; প্রশ্ন হলো, শেয়ারবাজার বিপর্যয়ের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিতে পেরেছে কি না? ওই প্রতিবেদনের অনেক সুপারিশও অবাস্তবায়িত থেকে গেছে। অর্থমন্ত্রী সঠিকই বলেছেন, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পাঁচটি মামলা হয়েছে এবং আরও সাতটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়।
আমরা দেখেছি, শেয়ারবাজার বিপর্যয়ে দিশেহারা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা যখন রাজপথে নেমেছেন, তখন বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের কয়েকজনকে আটক করা হলেও কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের কাউকেই আটক করা হয়নি। এ জন্য যদি অর্থমন্ত্রী তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্বলতা বা প্রমাণের অভাব ছিল বলে মনে করেন, তাহলে অধিকতর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? ব্যক্তিবিশেষের পক্ষে যখন এত বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি উদ্ঘাটন করা কঠিন, তখন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে তদন্ত করাই শ্রেয়তর হতো। কিন্তু তা না করায় সরকারের সদিচ্ছা নয়, শেয়ারবাজার থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা উধাওকারীদের খুঁটির জোরই প্রমাণিত হয়েছে। শেয়ারবাজারের অস্বাভাবিক অস্থিতিশীল আচরণের মূল কারণগুলো সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করে সেগুলো দূর করার কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েই সরকার অভিযোগের জবাব দিতে পারে। তা না করে মাঝেমধ্যে পুঁজি-প্রণোদনা, নতুন নিয়ম করে আবার তা প্রত্যাহার ইত্যাদি উপরিতলের পদক্ষেপ নিয়ে বরং পরিস্থিতি আরও জটিলই করা হয়েছে। এমনকি এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে খোলামেলা আলোচনা না হওয়াও দুর্ভাগ্যজনক।
শেয়ারবাজারের বিপর্যয়ের জন্য কারসাজিকেই দায়ী করছে ক্ষতিগ্রস্ত পুঁজিমালিক এবং অর্থনীতিবিদদের বড় অংশ। এ অভিযোগ অস্বীকার না করে সরকারের উচিত হবে, খুদে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

No comments

Powered by Blogger.