মনের জানালা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিষয়টি পড়াচ্ছেন। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন। আপনার সঠিক পরিচয় না দিতে চাইলে অন্য কোনো নাম ব্যবহার করুন। স্থানস্বল্পতার কারণে সব চিঠির উত্তর দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।


আমরা দুঃখিত। —বি. স.
সমস্যা: সামনেই আমার এইচএসসি পরীক্ষা। পড়াশোনা করার অনেক চেষ্টা করছি; কিন্তু কোনোভাবেই মনোযোগ বসাতে পারছি না। কিন্তু আমি এতটা খারাপ মেধার ছিলাম না। এমন একটা সময় ছিল, যখন আমি ছোট শ্রেণীতে পড়া সত্ত্বেও উঁচু শ্রেণীর বই পড়তাম। এখন বেশিক্ষণ বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি না। উদ্ভট উদ্ভট সব চিন্তা মাথায় কাজ করে। এসব চিন্তার মধ্যে বেশির ভাগই একটা মেয়ে নিয়ে। তাকে আমি অনেক পছন্দ করি। ভবিষ্যতে তাকে পাব কি না—এমন চিন্তা সারাক্ষণ আমাকে ভয় দেখায়। পরিবার থেকেও খুব কম সহযোগিতা পেয়েছি। আমি লেখাপড়ায় অনেক পিছিয়ে পড়ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ: তুমি পড়ার বই ছাড়াও অন্য বই পড়তে ভালোবাস শুনে ভালো লাগল। আশা করি পরীক্ষার পর তুমি আবার এই চর্চায় ফেরত যাবে। যে মেয়েটিকে তুমি খুব পছন্দ করো, তাকে তোমার মনের কথাটি জানিয়েছিলে কি না বা তার সঙ্গে তোমার কতটুকু যোগাযোগ হয়েছে তা উল্লেখ
করোনি। মেয়েটি যদি তোমাকে ভালোবাসে, বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা করে, তাহলে সে নিশ্চয়ই তোমার জন্য অপেক্ষা করবে, তাই না? আর যদি না-ও বলে থাকো, তাহলে পরীক্ষার পর তুমি তাকে পছন্দের কথাটি অবশ্যই বলতে পারো। তবে সে ক্ষেত্রে তোমাকে আগেই নিজের মনকে তৈরি করে নিতে হবে। মেয়েটিরও অধিকার রয়েছে তোমাকে ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’ বলার। কাজেই মেয়েটিকে ওর অধিকার প্রয়োগের সম্পূর্ণ অধিকার দিয়েই তোমাকে এগোতে হবে। তোমার জীবনে এখন প্রতিটি মুহূর্তকেই খুব জরুরি ভিত্তিতে কাজে লাগানো প্রয়োজন। তুমি প্রতিদিন ভোরবেলা নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করবে যে সারাটি দিনের পুরো সময়গুলো তুমি কাজে লাগাবে। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করবে, প্রতিজ্ঞাটি রক্ষা করতে তুমি কতটা সফল হয়েছ। যদি সেটা সবটুকু সম্ভব না-ও হয়, তবু নিজেকে দোষারোপ কোরো না। পরের দিনের জন্য নিজেকে আবার উৎসাহিত করো। আর মেয়েটিকে ঘিরে যে নেতিবাচক চিন্তা, আপাতত তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। কারণ, এটি তোমাকে লক্ষ্য অর্জনে বাধাগ্রস্ত করছে। নিজের ক্ষমতা, সৃজনশীলতা ও দক্ষতাগুলোর ওপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস রেখে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকো, কেমন?

সমস্যা: আমার মন অনেক অস্থির। চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান আমার ওপর অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। যখন কোনো সিনেমা বা নাটক দেখি, নিজেকে নায়কের চরিত্রে কল্পনা করি এবং সারা দিন এই নিয়ে ভাবি। সিনেমা বা নাটক দেখে দেখে কখনো ভাবি ডাক্তার হব, কখনো ইঞ্জিনিয়ার, কখনো সামরিক যোদ্ধা, আবার কখনো বা অন্য কিছু। তাই আমি আজও বুঝতে পারিনি, আমি কোন বিষয় ভালো পারি এবং জীবনের লক্ষ্যও নির্ধারণ করতে পারিনি। পড়ার সময়ও আমি কল্পনার সাগরে ডুবে থাকি।
জয়
কুমিল্লা।
পরামর্শ: মনে হচ্ছে, তুমি মানুষের সামাজিক অবস্থান, পরিচিতি ও অর্জনগুলোকে অতিরিক্ত প্রাধান্য দিচ্ছ। হয়তো বা তোমার পরিবারের কোনো সদস্যের কাছ থেকে তুমি শৈশব থেকে শুনে এসেছ যে তোমাকে অন্য কারও মতো হতে হবে। এর জন্য তুমি নিজেকে দোষারোপ কোরো না। কারণ, অভিভাবক ও শিক্ষকদের দায়িত্ব হচ্ছে একটি শিশুর সার্বিক বিকাশে সহায়তা করা। বড় হলে সে কী হবে, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিশুর মধ্যে জ্ঞানের পিপাসা জাগিয়ে তোলা। তার মধ্যে মানবিক গুণাবলি, আত্মসম্মান বোধ, আত্মবিশ্বাস তৈরিতে সাহায্য করা। এ ছাড়া তুমি কী চাও এবং তোমার মধ্যে কোন দিকে আগ্রহ রয়েছে, সেই আলোচনাগুলো শৈশব থেকে সন্তানদের সঙ্গে আলোচনা করার প্রাথমিক দায়িত্ব অভিভাবকদের ওপরেই ন্যস্ত। এটি করার মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের সন্তানদের গুণাবলি, আগ্রহ ও মেধা বুঝতে চেষ্টা করলে সেভাবে তাদের উৎসাহিত করতে পারতেন। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, আমরা অভিভাবকেরা প্রায়ই এ কাজটা করতে পারি না। আমি তোমাকে অনুরোধ করব, ভবিষ্যতের চিন্তাটি সরিয়ে রেখে তুমি এখনকার সময়গুলোকে কাজে লাগাও। পরীক্ষার পর তুমি কিছু ভালো বই পড়বে এবং ভালো চলচ্চিত্র দেখবে। আমরা অবশ্যই ভবিষ্যতের স্বপ্ন লালন করব কিন্তু সারাক্ষণ সেই স্বপ্ন নিয়ে বিভোর হয়ে থাকাটা মোটেও কোনো কাজের কথা নয়। সেটা তুমিও নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ। কাজেই, আর একটুও সময় নষ্ট কোরো না। পুরো মনোযোগ আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে পড়ালেখা করো।

No comments

Powered by Blogger.