বন্দি শিশু শ্রমিক-চাই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা

ইটভাটায় দিনেরবেলায় কঠোর পরিশ্রমের পর রাতেরবেলায় সন্ত্রাসী পাহারাধীনে তালাবদ্ধ ঘরে বন্দি করে রাখা হতো ৩০ শিশু শ্রমিককে। এদের মধ্যে ছয় শিশু পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। বাকি ২৪ শিশুকে র‌্যাব উদ্ধার করে। কক্সবাজার সদরের বাংলাবাজার এলাকায় বিএসসি ব্রিকফিল্ডে এসব শিশুকে কী মানবেতর অবস্থায় রাখা হতো এ সম্পর্কে শুক্রবার সমকালে 'কক্সবাজারে ইটভাটায় বন্দি ২৪ শিশু শ্রমিক' শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে।


এ ঘটনায় র‌্যাবের হাতে আটক হওয়া ইটভাটার মালিক ও সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, তারা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়েই এসব শিশুকে কাজ করার জন্য এনেছেন। যা হোক, এভাবে শিশুদের দিয়ে অমানবিক উপায়ে কাজ করানো নিশ্চয়ই সুস্থ মানসিকতার লক্ষণ নয়। এটা সবাই জানেন যে, নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরোয় সেসব পিতা-মাতা শিশুসন্তানকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কাজে পাঠাতে বাধ্য হন। তাই দারিদ্র্যসীমার নিচে যাদের বাস সেসব পরিবারের সন্তানদের শিশু অবস্থায় শ্রম বিক্রি করার পথ থেকে সরিয়ে এনে শিক্ষার্জনে ব্যাপৃত করতে হলে সমাজ ও রাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে সচেতন প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রকে যৌথভাবেই এই অতিদরিদ্র মানুষদের দারিদ্র্যসীমার নিচের অবস্থান থেকে তুলে আনা পর্যন্ত সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। এসব পরিবার যাতে তাদের সন্তানদের শিশু অবস্থায় শ্রমদানের জন্য না পাঠায় তার জন্য তাদের মধ্যে নাগরিক সচেতনতা গড়ার কাজটিও করতে হবে যত্নের সঙ্গে। কক্সবাজারে ইটভাটায় শিশুদের রাতেরবেলায় ঘরে বন্দি করে রেখে দিনেরবেলায় কঠোর পরিশ্রম করানো প্রকৃতিগতভাবেই অমানবিক। ইটভাটার মালিক এদের এ জন্য মজুরি দেওয়ার বিষয়টি বললেও এতে তার অপরাধ লঘু হয় না। শিশুরা যাতে কঠোর পরিশ্রমের কারণে ইটভাটা ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে সে জন্যই তাদের ঘরে তালাবন্দি করে রাখা হতো। এভাবেই কার্যত এসব শিশুকে শ্রমদাসে পরিণত করেছিল ইটভাটার মালিক। আমরা এসব হতভাগ্য শিশুকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করার জন্য প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই। এখন এসব শিশু যাতে শিক্ষায় মনোনিবেশ করতে পারে তার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সমাজ ও রাষ্ট্রের। একই সঙ্গে ইটভাটা মালিকসহ দোষীদের শাস্তি বিধান করতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার
পুনরাবৃত্তি আর যেন না ঘটে।

No comments

Powered by Blogger.