ইতি-নেতি-মানুষের জন্য রাজনীতি নয় রাজনীতির জন্য মানুষ by মাসুদা ভাট্টি
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছয়টি শহরের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য দূরীকরণে কী করে একটি কার্যকর ও টেকসই জীবনোন্নয়ন পদ্ধতি খুঁজে বের করা যায়, সে লক্ষ্যে আয়োজিত একটি ওয়ার্কশপে যোগ দিতে এসেছি সুইডেনের মালমো শহরে। এর আগে ভারতের আহমেদাবাদে একই রকম ওয়ার্কশপ হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে বাকি চারটি শহরেও হবে।
মূল লক্ষ্য হচ্ছে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দেশের ভেতরকার মাইগ্রেশনের ফলে সৃষ্ট যত্রতত্র বস্তি এবং তাদের জীবনমানে পরিবর্তন আনার জন্য কি আরো একটি ফলপ্রসূ ও টেকসই প্রকল্প দাঁড় করানো যায় তা খুঁজে বের করা। টিম হিসেবে ঢাকা শহরের বস্তিবাসী তথা স্বীকৃতিবিহীন নাগরিকের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার চিন্তাভাবনা নিয়েই কাজ করছি আমরা। অন্য পাঁচটি শহরেরও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কর্মচিন্তা। কিন্তু একটি জায়গায় এসে সবাই একমত হয়েছে যে বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় মানুষের জীবন ও ভবিষ্যৎ নানা রকম সমস্যায় আকীর্ণ। প্রকৃতি-মাতা ক্রমেই মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, আর এ জন্য প্রকৃতি নয়, মানুষই দায়ী। এমনকি কখনো কখনো প্রচণ্ড বৈরী হয়ে উঠছে প্রকৃতি, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সবচেয়ে বড় শিকার বাংলাদেশ_এ কথা দেশের ভেতরে ও আন্তর্জাতিকভাবে বারবার উচ্চারিত হচ্ছে। এ রকম প্রতিটি আন্তর্জাতিক মঞ্চেই প্রকৃতির কাছে হেরে যাওয়া দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের নাম সবার আগে উচ্চারিত হচ্ছে। দেখানো হচ্ছে সামনের ভয়ংকর সব ছবি, কী ঘটতে পারে, কেমন হতে পারে জনসংখ্যা ভারে ন্যুয়ে পড়া এই দেশটির অবস্থা, তা নিয়ে থাকছে মর্মস্পর্শী সব প্রতিবেদন, থাকছে তথ্য-উপাত্ত সমেত প্রেজেন্টেশন। মালমোতেও তার ব্যতিক্রম নয়, বরং এখানে কেবল সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে গিয়ে বাংলাদেশের যে দুরবস্থা দেখা দিচ্ছে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হচ্ছে এবং চলছে নানা বিশ্লেষণ। 'জলেরও মধ্যে বাস করে তবু তৃষায়ও শুকিয়ে মরা'র মতো বিষয়টি বাংলাদেশে আগামী দশকে সবচেয়ে বড় উদাহরণ হবে_তা উচ্চারিত হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের মুখে।
আর ঠিক একই সময়ে আবারও রাজনৈতিক সহিংসতা, অসহিষ্ণুতা ও হানাহানির দেশের কাতারে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। বিগত তিনটি বছর মোটামুটি রাজনৈতিক পরিবেশ স্বাভাবিক থাকলেও ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি দেশটিতে নতুন যে অসহিষ্ণুতার জন্ম দিয়েছে তার শেষ কোথায়_তা এ মুহূর্তে বলা না গেলেও সামনের জনভোগান্তি এবং জানমালের নিরাপত্তাহীনতার কথা নির্বিকারভাবেই ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়। বিগত হরতালকে কেন্দ্র করে বাসে অগি্নসংযোগসহ যা যা ঘটেছে অতীতে তা প্রত্যক্ষ করা গেছে এবং একই রকমভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব স্বার্থ সংরক্ষণ করতে গিয়ে তাকে জনগণের 'চাওয়া' হিসেবে জনগণকে বোকা বানানোর ঘটনা ঘটেছে এবং এখনো তাই-ই ঘটছে, হয়তো সামনেও ঘটবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি থাকা বা না থাকা ইস্যুটি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নিঃসন্দেহে নানা কথা রয়েছে এবং সেটাই স্বাভাবিক। দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছেন এই ব্যবস্থা না থাকার পক্ষে। সরকারও তাই-ই চাইছে, কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সবচেয়ে করুণ শিকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। যদিও তাদেরই আন্দোলনের ফসল এবং রক্তপাত, হানাহানি ও সহিংসতার ভেতর দিয়েই বর্তমান বিরোধী দলকে এই ব্যবস্থা মানতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং এই রাজনৈতিক শক্তিটিই এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করে নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়ার ও থাকার পথ বের করেছিল। আর বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যাকে ভোট-ডাকাতি এবং গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে বিগত দশক বলতে গেলে রাস্তায়ই থেকেছে। সংসদে গিয়ে দাবি আদায়ের প্রশ্ন উঠলেই তারা বলেছে, সংসদে তাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না এবং তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়। অভিযোগটির কিঞ্চিৎ সত্যতা রয়েছে। একই অভিযোগ বর্তমান বিরোধী দলেরও। বিরোধীদলীয় নেতা সংবাদ সম্মেলন করে সেদিন বলেছেন, 'তিনি সংসদে যাবেন না, রাজপথেই দাবি আদায় করে ছাড়বেন। সংসদে তাঁকে কথা বলতে দেওয়া হয় না। তাঁদের দলীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করা হয়।' অজুহাত ঠিক আগের মতোই, কেবল এখন মুখ বদল হয়েছে। তবে এ কথাও সত্য, বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা যখন নিজে সংসদনেতা ছিলেন তখনো তিনি সংসদমুখী হয়েছেন কদাচ। পাঁচ বছরে সংসদনেতা হিসেবে তিনি স্মরণকালের সর্বনিম্ন উপস্থিতি দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর অনাস্থাই প্রকাশ করেছিলেন বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন।
বর্তমান সরকার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার পরিচালনা করছে। সংসদে এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো দুর্ঘটনার চিত্র দেখা যায়নি, যাতে বলা যেতে পারে যে বিরোধীদলীয় নেতা বা সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করা হয়েছে। সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি চাইছে না, এ কথা স্পষ্ট। তারা আদালতের রায়কে কার্যকর করার কথা বলছে এবং এ ব্যাপারে গঠিত কমিটি নানা পক্ষের মতামত গ্রহণ করেছে। কেউ হয়তো এই মতামত গ্রহণকে দেখানেপনা বলে উড়িয়ে দিতে পারেন, তাতে দোষ দেওয়া যাবে না। কিন্তু সরকার নিজেদের গা বাঁচানোর জন্য হলেও এসব করেছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী এখনো বলছেন যে 'বিরোধী দল যদি সংসদে গিয়ে এই সরকার পদ্ধতি বহাল রাখার দাবি জানায় তাহলে সরকার বিবেচনা করে দেখবে। কিন্তু বিরোধী দল তো আগে থেকেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তুলে বসে আছে। একবার যখন তারা মধ্যবর্তী নির্বাচন চেয়েছে তার মানে হচ্ছে এই সরকারের ওপর তাদের কোনোই আস্থা নেই। সুতরাং তাদেরই কাছে গিয়ে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল রাখার দাবি জানানোটা হয়তো বিরোধীদলীয় নেতার 'ইগো'র সম্পূর্ণ বিরোধী, তাই তিনি রাজপথকে বেছে নিয়েছেন দাবি আদায়ের জন্য। কিন্তু তাতে সাধারণ জনগণের যে ভোগান্তি, দেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি, উন্নতি যেভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তাতে আগামী দিনে যখন রাজনৈতিক সময় আরো অসহিষ্ণু হয়ে উঠবে তখনকার কথা ভেবে যেকোনো সুস্থ বিবেক আতঙ্কিত ও অসহায় বোধ করবেন, সেটাই স্বাভাবিক।
অথচ এই দেশটি পরিবেশগতভাবে, অর্থনৈতিকভাবে, উন্নয়নগত দিক থেকে এই মুহূর্তে রয়েছে বিশাল সব ঝুঁকির মধ্যে। সরকার উন্নয়ন প্রকল্পের চেয়ে রাজনৈতিক প্রকল্প নিয়ে বেশি আগ্রহী, বিরোধী দল বাকি সব কিছু নিয়ে কথা বলতে রাজি থাকলেও দেশের এসব বাস্তব সমস্যা নিয়ে কখনো কথা বলছে বলে প্রমাণ নেই। জলবায়ুজনিত সমস্যাবলির বড় শিকার হওয়া সত্ত্বেও সরকারকে এ ব্যাপারে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে বিরোধী দল একটি শব্দও উচ্চারণ করেছে বলে আমাদের জানা নেই। অন্যদিকে সরকার সংবিধান সংশোধন কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করার জন্য যতটা তৎপরতা দেখাচ্ছে তার খানিকটাও যদি দেশের উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে ভাবত তাহলে পরিস্থিতি হয়তো ভিন্নতর হতে পারত। মানুষের জীবনের চেয়েও রাজনীতি যে বড়, তা আর কোথাও না হলেও বাংলাদেশে বারবার প্রমাণিত হচ্ছে। একবিংশ শতকের এক দশক পার হয়ে এসেও যদি রাজনীতি ও মানুষের মধ্যে সম্পর্ক কেবল 'রাজনীতির জন্য মানুষ, মানুষের জন্য রাজনীতি নয়' বলে প্রতীয়মান হয় তাহলে সে দেশের ভবিষ্যৎ কেবল ভবিষ্যতের ওপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর উপায় থাকে কি?
লেখক : সম্পাদক, একপক্ষ
editor@ekpokkho.com
আর ঠিক একই সময়ে আবারও রাজনৈতিক সহিংসতা, অসহিষ্ণুতা ও হানাহানির দেশের কাতারে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। বিগত তিনটি বছর মোটামুটি রাজনৈতিক পরিবেশ স্বাভাবিক থাকলেও ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি দেশটিতে নতুন যে অসহিষ্ণুতার জন্ম দিয়েছে তার শেষ কোথায়_তা এ মুহূর্তে বলা না গেলেও সামনের জনভোগান্তি এবং জানমালের নিরাপত্তাহীনতার কথা নির্বিকারভাবেই ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়। বিগত হরতালকে কেন্দ্র করে বাসে অগি্নসংযোগসহ যা যা ঘটেছে অতীতে তা প্রত্যক্ষ করা গেছে এবং একই রকমভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব স্বার্থ সংরক্ষণ করতে গিয়ে তাকে জনগণের 'চাওয়া' হিসেবে জনগণকে বোকা বানানোর ঘটনা ঘটেছে এবং এখনো তাই-ই ঘটছে, হয়তো সামনেও ঘটবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি থাকা বা না থাকা ইস্যুটি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নিঃসন্দেহে নানা কথা রয়েছে এবং সেটাই স্বাভাবিক। দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছেন এই ব্যবস্থা না থাকার পক্ষে। সরকারও তাই-ই চাইছে, কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সবচেয়ে করুণ শিকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। যদিও তাদেরই আন্দোলনের ফসল এবং রক্তপাত, হানাহানি ও সহিংসতার ভেতর দিয়েই বর্তমান বিরোধী দলকে এই ব্যবস্থা মানতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং এই রাজনৈতিক শক্তিটিই এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করে নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়ার ও থাকার পথ বের করেছিল। আর বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যাকে ভোট-ডাকাতি এবং গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে বিগত দশক বলতে গেলে রাস্তায়ই থেকেছে। সংসদে গিয়ে দাবি আদায়ের প্রশ্ন উঠলেই তারা বলেছে, সংসদে তাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না এবং তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়। অভিযোগটির কিঞ্চিৎ সত্যতা রয়েছে। একই অভিযোগ বর্তমান বিরোধী দলেরও। বিরোধীদলীয় নেতা সংবাদ সম্মেলন করে সেদিন বলেছেন, 'তিনি সংসদে যাবেন না, রাজপথেই দাবি আদায় করে ছাড়বেন। সংসদে তাঁকে কথা বলতে দেওয়া হয় না। তাঁদের দলীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করা হয়।' অজুহাত ঠিক আগের মতোই, কেবল এখন মুখ বদল হয়েছে। তবে এ কথাও সত্য, বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা যখন নিজে সংসদনেতা ছিলেন তখনো তিনি সংসদমুখী হয়েছেন কদাচ। পাঁচ বছরে সংসদনেতা হিসেবে তিনি স্মরণকালের সর্বনিম্ন উপস্থিতি দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর অনাস্থাই প্রকাশ করেছিলেন বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন।
বর্তমান সরকার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার পরিচালনা করছে। সংসদে এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো দুর্ঘটনার চিত্র দেখা যায়নি, যাতে বলা যেতে পারে যে বিরোধীদলীয় নেতা বা সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করা হয়েছে। সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি চাইছে না, এ কথা স্পষ্ট। তারা আদালতের রায়কে কার্যকর করার কথা বলছে এবং এ ব্যাপারে গঠিত কমিটি নানা পক্ষের মতামত গ্রহণ করেছে। কেউ হয়তো এই মতামত গ্রহণকে দেখানেপনা বলে উড়িয়ে দিতে পারেন, তাতে দোষ দেওয়া যাবে না। কিন্তু সরকার নিজেদের গা বাঁচানোর জন্য হলেও এসব করেছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী এখনো বলছেন যে 'বিরোধী দল যদি সংসদে গিয়ে এই সরকার পদ্ধতি বহাল রাখার দাবি জানায় তাহলে সরকার বিবেচনা করে দেখবে। কিন্তু বিরোধী দল তো আগে থেকেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তুলে বসে আছে। একবার যখন তারা মধ্যবর্তী নির্বাচন চেয়েছে তার মানে হচ্ছে এই সরকারের ওপর তাদের কোনোই আস্থা নেই। সুতরাং তাদেরই কাছে গিয়ে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বহাল রাখার দাবি জানানোটা হয়তো বিরোধীদলীয় নেতার 'ইগো'র সম্পূর্ণ বিরোধী, তাই তিনি রাজপথকে বেছে নিয়েছেন দাবি আদায়ের জন্য। কিন্তু তাতে সাধারণ জনগণের যে ভোগান্তি, দেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি, উন্নতি যেভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তাতে আগামী দিনে যখন রাজনৈতিক সময় আরো অসহিষ্ণু হয়ে উঠবে তখনকার কথা ভেবে যেকোনো সুস্থ বিবেক আতঙ্কিত ও অসহায় বোধ করবেন, সেটাই স্বাভাবিক।
অথচ এই দেশটি পরিবেশগতভাবে, অর্থনৈতিকভাবে, উন্নয়নগত দিক থেকে এই মুহূর্তে রয়েছে বিশাল সব ঝুঁকির মধ্যে। সরকার উন্নয়ন প্রকল্পের চেয়ে রাজনৈতিক প্রকল্প নিয়ে বেশি আগ্রহী, বিরোধী দল বাকি সব কিছু নিয়ে কথা বলতে রাজি থাকলেও দেশের এসব বাস্তব সমস্যা নিয়ে কখনো কথা বলছে বলে প্রমাণ নেই। জলবায়ুজনিত সমস্যাবলির বড় শিকার হওয়া সত্ত্বেও সরকারকে এ ব্যাপারে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে বিরোধী দল একটি শব্দও উচ্চারণ করেছে বলে আমাদের জানা নেই। অন্যদিকে সরকার সংবিধান সংশোধন কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করার জন্য যতটা তৎপরতা দেখাচ্ছে তার খানিকটাও যদি দেশের উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে ভাবত তাহলে পরিস্থিতি হয়তো ভিন্নতর হতে পারত। মানুষের জীবনের চেয়েও রাজনীতি যে বড়, তা আর কোথাও না হলেও বাংলাদেশে বারবার প্রমাণিত হচ্ছে। একবিংশ শতকের এক দশক পার হয়ে এসেও যদি রাজনীতি ও মানুষের মধ্যে সম্পর্ক কেবল 'রাজনীতির জন্য মানুষ, মানুষের জন্য রাজনীতি নয়' বলে প্রতীয়মান হয় তাহলে সে দেশের ভবিষ্যৎ কেবল ভবিষ্যতের ওপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর উপায় থাকে কি?
লেখক : সম্পাদক, একপক্ষ
editor@ekpokkho.com
No comments