অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন-সমঝোতার পথেই সমাধান
ক্রমশ ঘনায়মান অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিমুখ কী হবে তা নিয়ে নাগরিকরা উদ্বিগ্ন। দিন যতই এগিয়ে আসছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অস্থিরতা ততই বাড়ছে। গণমাধ্যমগুলোতে যেসব খবর প্রকাশিত হচ্ছে তাতে স্পষ্ট যে, সরকার ও বিরোধী দল এখন মুখোমুখি অবস্থানে।
সাম্প্রতিক সময়েই সংঘাত-সংঘর্ষ-জ্বালাও-পোড়াও-গুলিবর্ষণের মতো ঘটনায় রাজপথ উত্তপ্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বেশ কিছু। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতেও আরও বেশি উত্তাপের আশঙ্কা করছেন রাজনীতির বিশ্লেষকরা। আগামী ১২ মার্চ বিরোধী দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে যে বাগ্যুদ্ধ শুরু হয়েছে তা সংঘাতের স্পষ্ট ইঙ্গিতই দিয়ে চলেছে। অথচ বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংঘাত-সংঘর্ষ অনিবার্য নয়। অনেকেই মনে করেন, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে রাজপথে মুখোমুখি হওয়ার দরকার নেই, বরং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনার টেবিলে বসলেই সমাধান হয়ে যেতে পারে। বিরোধীদের দাবির কেন্দ্রে রয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধানটির প্রত্যাবর্তন। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে তাদের অনাগ্রহ আছে। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের জন্য তারা আন্দোলন-কর্মসূচি দিয়ে চলেছেন। সকলেই স্বীকার করেন, একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক। প্রধান বিরোধী দল অনুপস্থিত থাকতে পারে এমন নির্বাচন অনুষ্ঠান বা নির্বাচন অনুষ্ঠানের এমন পরিস্থিতি থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। শুধু দেশের মানুষের কাছেই নয়, আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছেও বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ও ব্লেক ঢাকা সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ খুঁজতে আহ্বান জানিয়েছেন। আশার কথা, এ বিষয়ে সরকার খুব কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়েছে সত্য, কিন্তু এ নিয়ে আলোচনার পথ বন্ধ হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে বারবারই আলোচনার আহ্বান এসেছে। সম্প্রতি বিরোধী দলকে নতুন ফর্মুলা নিয়ে সংসদে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। যত দূর ইঙ্গিত মিলেছে তাতে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তিত না হলেও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য স্বল্পমেয়াদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থার দিকে সরকারের পক্ষপাত থাকবে। বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে নতুন একটি প্রস্তাব উত্থাপনে কাজ করছে বলেও খবর মিলেছে। আলোচনায় যেতে বিএনপির আপত্তি দেখা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের পদস্থ ব্যক্তিরাও আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। দুই দলের মধ্যে এই ইতিবাচক মনোভাব সত্ত্বেও এ বিষয়ে সমঝোতার উদ্যোগ কেন গতি পাচ্ছে না সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমরা মনে করি, আলোচনার টেবিলেই এর চূড়ান্ত সমাধান নির্ধারিত হওয়া উচিত। সরকার ও বিরোধী দল যদি আলোচনার টেবিলের একটি ইস্যুকে রাজপথে টেনে আনে এবং 'বিনাযুদ্ধে নাহি দেব সূচ্যগ্র মেদিনী' মনোভাব ধারণ করে তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এটি সরকার ও বিরোধী দল উভয়ের ব্যর্থতা বলেই গণ্য হবে এবং রাজপথে সংঘাত পরিস্থিতিকে অনর্থক জটিলই করে তুলবে। ঈশান কোণে যে কালো মেঘ ঘনীভূত হয়েছে তা দূর করতে তাই এখনই নানামুখী সংলাপ, আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সরকারকে আন্তরিক হতে হবে, বিরোধীদেরও সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য শিগগিরই সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাব আসুক। বিরোধী দল যদি এমন একটি প্রস্তাব নিয়ে সংসদে ফেরে এবং সরকার যদি সে প্রস্তাবে সমর্থন দেয়, তবে একটি বিরল উদাহরণ সৃষ্টি হবে। সেই বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করার জন্য যে আলোচনা, টেবিল ওয়ার্ক দরকার তা জরুরি। জরুরি কাজটির দিকে সবার দৃষ্টি পড়লেই
দেশের বৃহত্তর মঙ্গল নিশ্চিত হতে পারে।
দেশের বৃহত্তর মঙ্গল নিশ্চিত হতে পারে।
No comments