উচ্চ আদালতে জামিন জালিয়াতি-জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে

উচ্চ আদালতে একের পর এক জামিন জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। খুন, ডাকাতি, রাহাজানির মামলায় আসামিরা প্রতারণার মাধ্যমে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। যাবজ্জীবন, এমনকি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরাও অভিনব পন্থায় প্রতারণার মাধ্যমে জামিন নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাচ্ছে।


কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, তারা মূল এজাহারের পরিবর্তে দণ্ডবিধির ধারা পাল্টে নকল এজাহার দায়ের করে বিচারকদের বিভ্রান্ত করে। আর এ কাজে আসামিদের সহায়তা করেন একশ্রেণীর আইনজীবী এবং আদালতের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ ক্ষেত্রে বিচারকদের উদাসীনতাকেও কেউ কেউ দায়ী করেছেন। এ ধরনের ঘৃণ্য তৎপরতার জন্য ইতিমধ্যে কিছুসংখ্যক আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। কিন্তু মামলা সঠিক গতিতে এগোচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। ঠিক তার উল্টো চিত্রও দেখা যায় আমাদের বিচারব্যবস্থায়। এমন বহু নিরপরাধ লোক আছেন, যাঁরা বছরের পর বছর জেলখানায় পচে মরছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কিছু অসৎ সদস্যকে খুশি করতে না পারায় তাঁদের গ্রেপ্তার করে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়। এমনও দেখা গেছে, কেবল নামের মিল থাকায় কোনো কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে ১০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে হাজতবাস করতে হয়। অর্থের অভাবে অনেকে উকিলও নিয়োগ করতে পারেন না। তারপর একসময় ছাড়া পেয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলা ছাড়া তাঁর আর কিছুই করার থাকে না। সিনেমার সেই সংলাপের মতো তাঁরা দাবিও করতে পারেন না_'ফিরিয়ে দাও আমার জীবনের ১৬টি বছর।' এ সবই আমাদের বিচার বিভাগের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করছে, বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ কমিয়ে দিচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই দেশের সর্বোচ্চ আদালতকেই এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সব জালিয়াতি তদন্ত করে দেখতে হবে। কারা এসব জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত এবং কী কী উপায়ে জালিয়াতিগুলো সংঘটিত হয়, তা-ও খুঁজে বের করতে হবে এবং জালিয়াতির সব পথ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। বিচারব্যবস্থার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় এসব প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের এমন কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের প্রতারণা করার সাহস না পায়।
রাষ্ট্রকেও এ ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে হবে। বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার পথে এখনো আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, কিন্তু চট্টগ্রামে আজ কী কী রায় হলো, ঢাকায় বসে তা দেখার উপায় নেই। একজন বিচারক চাইলেও কোনটি প্রকৃত আর কোনটি ভুয়া এজাহার, তা মিলিয়ে দেখতে পারবেন না। কারাগারগুলো ভুয়া জামিননামা ও প্রকৃত জামিন আদেশ পরখ করে দেখতে পারে না। অপরাধী ও অসৎ আইনজীবীরা এ দুর্বলতাগুলোরই সুযোগ নিয়ে থাকে। এ জন্য বিচার বিভাগকে স্বাধীন করার পাশাপাশি যথেষ্ট লোকবলেরও ব্যবস্থা করতে হবে। বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়াটিও যথেষ্ট স্বচ্ছ হতে হবে, যাতে সবচেয়ে দক্ষ ব্যক্তিরাই উচ্চ আদালতে নিয়োগ পেতে পারেন। পাশাপাশি আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধাগুলো ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বিচার বিভাগের ওপর আস্থা কমে যাওয়া, জাতিগতভাবে আত্মহত্যারই শামিল। আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার এই লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

No comments

Powered by Blogger.