পবিত্র কোরআনের আলো-অপরাধী মুসলমান হলেও তার পক্ষ নেওয়া যাবে না

১০৪. ওয়ালা তাহিনূ ফিব্ তিগা-য়িল ক্বাওমি; ইন তাকূনূ তা'লামূনা ফাইন্নাহুম ইয়া'লামূনা কামা তা'লামূনা; ওয়াতারজূনা মিনাল্লাহি মা লা-ইয়ারজূনা; ওয়া কা-নাল্লাহু আ'লীমান হাকীমা। ১০৫. ইন্না আনযালনা ইলাইকাল কিতাবা বিলহাকি্ব লিতাহ্কুমা বাইনান নাছি বিমা আরাকাল্লাহু; ওয়ালা তাকুল্ লিল খা-য়িনীনা খাসীমা।


১০৬. ওয়াছ্তাগ্ফিরিল্লাহা ইন্নাল্লাহা কা-না গাফূরার্ রাহীমা।
১০৭. ওয়ালা তুজাদিল্ আ'নিল্লাযীনা ইয়াখ্তানূনা আনফুছাহুম; ইন্নাল্লাহা লা-ইউহিব্বু মান্ কা-না খাওয়্যা-নান আছীমা। [সুরা : আন নিসা, আয়াত : ১০৪-১০৭]

অনুবাদ : ১০৪. তোমরা যখন কোনো শত্রু সম্প্রদায়ের পেছনে ধাওয়া করো, তখন মোটেও মনোবল হারাবে না। তোমাদের জন্য যদি কাজটা কষ্টকর হয়, তবে জেনে রেখো তাদের জন্যও এটা কষ্টকর। যেমনিভাবে তোমাদের জন্য কষ্টকর। তোমরা আল্লাহর কাছ থেকে তাঁর নৈকট্য আশা করো, অথচ তোমাদের প্রতিপক্ষ তা করতে পারে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান।
১০৫. আমি নিশ্চিতভাবে সত্যের পথে আপনার কাছে কিতাব নাজিল করেছি, যাতে আপনাকে আল্লাহ তায়ালা যে জ্ঞানের আলো দেখিয়েছেন, এর ভিত্তিতে আপনি মানুষের মধ্যে বিচার-মীমাংসা করতে পারেন। এ ব্যাপারে আপনি কখনো বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শনকারী হবেন না।
১০৬. আপনি আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন, অবশ্যই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
১০৭. যারা নিজেদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, আপনি কখনো এমন লোকদের পক্ষে কথা বলবেন না। কারণ আল্লাহ তায়ালা এমন লোকদের কখনো পছন্দ করেন না, যে পাপিষ্ঠ, বিশ্বাসঘাতক।
ব্যাখ্যা : ১০৪ নম্বর আয়াতটির মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের শত্রু সম্প্রদায়ের মোকাবিলার ক্ষেত্রে দৃঢ় হওয়ার প্রণোদনা দিয়েছেন। ওহুদ যুদ্ধের পর শত্রুদের পেছন ধাওয়া করার ব্যাপারে এই আয়াত নাজিল হয়েছে বলে অনেক তাফসিরকারই মনে করেন। বিশেষ করে মুসলমানদের সংখ্যা অল্প হলেও মনোবলের দিক থেকে তারা যেন দুর্বল হয়ে না পড়ে এবং শত্রুর মোকাবিলায় তারা যেন দৃঢ় মনোবলের অধিকারী হয়, সে লক্ষ্যেই এ আয়াত নাজিল হয়েছে। এখানে মনোবল দৃঢ় রাখার পক্ষে দুটি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম যুক্তি হলো, শত্রুদের ধাওয়া করতে গেলে তাদের কষ্ট হবে। ঝুঁকিও আছে। কিন্তু তারা যেন মনে রাখে, অনুরূপ কষ্ট ও ঝুঁকির মধ্যে তাদের প্রতিপক্ষও আছে। সুতরাং কষ্ট ও ঝুঁকি নিয়েই তাদের মোকাবিলা করতে হবে। দ্বিতীয় যুক্তিটি হলো, মুসলমানরা এই কাজের বিনিময়ে আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিদান বা তার নৈকট্য লাভের আশা রাখে। এই আশা খুবই যথার্থ। অথচ তাদের প্রতিপক্ষের এমন কোনো আশা নেই। আ@ি@@@ক প্রণোদনার দিক থেকে তারা একেবারেই নিঃস্ব।
এর পরবর্তী আয়াতগুলো, অর্থাৎ ১০৫, ১০৬ ও ১০৭ নম্বরসহ পরবর্তী কয়েকটি আয়াত নাজিল হয়েছে একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। ঘটনাটি এ রকম : জনৈক আনসার মুসলমান অন্য এক আনসার মুসলমানের ঘর থেকে রাতে এক বস্তা আটা ও কিছু অস্ত্রশস্ত্র চুরি করে। এই চুরির মাল প্রথমে সে নিজ বাড়িতে নিয়ে রাখে এবং পরে সে এগুলো এক ইহুদি বন্ধুর বাড়িতে আমানত রাখে। ঘটনাক্রমে বস্তাটি ছিদ্রযুক্ত থাকায় পথে পথে আটা পড়ে চিহ্ন রেখে গেল। মালের মালিক সকালে চিহ্ন ধরে ধরে চোরের বাড়ি উপস্থিত হয়ে মালের দাবি করলে সে কসম করে তা অস্বীকার করল। মালিক আবার সেই চিহ্ন ধরে ধরে ইহুদির বাড়ি গিয়ে মালের দাবি করল। ইহুদি বলল, অমুক ব্যক্তি গত রাতে আমার বাড়িতে এগুলো আমানত রেখে গেছে। প্রতিবেশীরা ইহুদির পক্ষে সাক্ষ্যও দিল। অবশেষে এ ব্যাপারে রাসুল (সা.)-এর দরবারে মোকদ্দমা পেশ করা হলো। চোর ও তার সম্প্রদায়ের লোকরা কসম করে ইহুদিকে চোর প্রমাণিত করল। রাসুল (সা.)-ও ধারণা করলেন, মুসলমানরা মিথ্যা কসম করে না। সুতরাং তিনিও ইহুদিকে চোর সাব্যস্ত করলেন। এমন সময় এ আয়াতগুলো নাজিল হয়। এসব আয়াতে অপরাধী মুসলমান হলেও তার পক্ষ না নেওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।

গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.