চরাচর-পলিথিনের বিষ by আজিজুর রহমান

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ আবার নিষিদ্ধ পলিথিনকবলিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কাঁচাবাজার ও মুদি দোকানগুলোতে পলিথিন ব্যাগের উপস্থিতি উদ্বেগজনক। পলিথিন শুধু মানব স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। সরকারিভাবে দেশে পলিথিনের উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।


অথচ প্রতিদিন প্রকাশ্যে উৎপাদন, বেচাকেনা ও ব্যবহৃত হচ্ছে কোটি কোটি পিস পলিথিন ব্যাগ। বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার শুরু হয় ১৯৮২ সালে। পলিথিনের বহুমুখী কুফল ও এর বিষাক্ত ছোবল সম্পর্কে তখন থেকেই পরিবেশবাদীরা সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ফলে পলিথিনের নেতিবাচক প্রভাবের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে পলিথিন নিষিদ্ধের দাবিতে নাগরিক আন্দোলন গড়ে ওঠে। ২০০২ সালে সংসদে বিল পাসের মাধ্যমে পলিথিনের উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশের দেশ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করে পলিব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করতে সমর্থ হয়েছে। আর পলিথিন ব্যাগের উদ্ভাবক দেশ জাপান বহু আগেই এটি পরিত্যাগ করেছে। পলিথিন (চড়ষুঃযবহব) বা পলিইথাইলিন (চড়ষুবঃযুষবহব) একটি রাসায়নিক যৌগিক পদার্থের নাম। এতে ইথাইলিনের পলিমার (চড়ষুসবৎ) একটার সঙ্গে অন্যটা কোব্যালেন্ট (ঈড়নধষধহঃ) বন্ড সংযোগ করে পাতলা লম্বা সিটের মতো তৈরি করা হয়, যা সহজে অঙ্ডিাইজড (ঙীুফরংবফ) হয় না। অর্থাৎ ভেঙে মিথেন বা কার্বন ডাই-অঙ্াইডে পরিণত হয়। এ জন্য পলিথিন পচে না। এই রাসায়নিক যৌগ পদার্থটিকে কাজে লাগিয়ে কাগজের মতো পাতলা শপিং ব্যাগ আকারে তৈরি করা হচ্ছে। এটি কোনো জীব তথা উদ্ভিদজাত বস্তু নয়। বরং রাসায়নিক বস্তুসৃষ্ট। এ কারণে এটা পচে না। অর্থাৎ কোনো অনুজীব পলিথিনকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে না। ফলে পচন ধরে না। পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অপচনশীল জড়বস্তু হিসেবে পড়ে থেকে সৃষ্টি করছে পরিবেশ সমস্যা। কারখানাগুলোতে প্রতিদিন কয়েক কোটি পিস নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগ উৎপাদিত হচ্ছে। ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া এসব ড্রেন, ডাস্টবিন ও নোংরা আবর্জনার স্তূপ থেকে কুড়িয়ে এনে দূষিত পলিব্যাগগুলো কারখানায় রিসাইক্লিং পদ্ধতিতে ফের ব্যাগে পরিণত করে বিক্রি করা হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। পলিথিন ব্যাগে খাদ্যপণ্য বহন করলে কিংবা পলিথিনে মুড়িয়ে কাঁচা মাছ-মাংস রেফ্রিজারেটরে রাখলে পলিথিনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র রাসায়নিক যৌগ অণু খাদ্যসামগ্রী বা মাছ-মাংসে মিশে বিষাক্ত করে তোলে, যা মানবদেহের জন্য ভয়াবহ। পরিত্যক্ত পলিথিন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় বৃষ্টির পানি ভূগর্ভে প্রবেশ করতে না পারায় প্রাকৃতিক পানিচক্রের স্বাভাবিক গতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে ভয়াবহ হচ্ছে পলিথিন মাটির অভ্যন্তরে গিয়ে জমে মাটির উর্বরতা বিনষ্ট করছে। যেখানে পলিথিন পড়ে থাকে সেখানে মাটির তাপ বৃদ্ধি পায়। অঙ্েিজন চলাচল করতে পারে না। ফলে মাটির উর্বরা শক্তি ধরে রাখতে মাটিতে অনুজীবের বসবাসে যে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রয়োজন তা ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে মাটির পুষ্টিমান ও অন্য গুণাবলির আমূল পরিবর্তন হয়ে যায়। এতে উর্বরতা হারাচ্ছে আমাদের ফসলি জমি।
আজিজুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.