ঐক্য হোক একুশের চেতনায় by আবুল বাশার

ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের মাস। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত বাঙালি জাতীয় চেতনাবোধের ঐক্যের সিঁড়ি বেয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ছিল বাঙালি জাতির হাজার বছরের সাধনার ফসল। পরে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের রচিত সংবিধানে বাংলা ভাষাকে দেশের রাষ্ট্রভাষারূপে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।


তারপরই বিদেশি সব ভাষাকে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রেখে রাষ্ট্র ব্যবস্থার সম্ভাব্য সব স্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের চেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু কালক্রমে সে চেষ্টায় ব্যত্যয় ঘটিয়ে বাংলা ভাষা অবনমিত করা হচ্ছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্তাক্ত ইতিহাস আমাদের যে শিক্ষায় শিক্ষিত করেছিল সেখান থেকে ক্রমশ দূরে চলে এসেছি।
একুশের চেতনার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। ইউনেস্কো এদিন অমর একুশকে স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। এই স্বীকৃতি নিজের ভাষার জন্য বাঙালি জাতির সাহসিকতার স্বীকৃতি। ভাষা প্রশ্নে এ স্বীকৃতির সত্যিকারের অর্থ হলো_ পৃথিবীর নিজ নিজ মাতৃভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, যা খুবই জরুরি। বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের ভাষা স্বকীয়তা এবং বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এই উপলক্ষ তো আমরাই সৃষ্টি করেছি। কিন্তু এত কিছুর পরও আমরা কি আমাদের গৌরবগাথা ইতিহাসকে ম্লান করে দিচ্ছি না? ভাষার জন্য যারা জীবন দিয়ে গেছেন তাদের আমরা যথাযোগ্য মর্যাদার আসনে যেমন স্থান দিতে পারিনি, তেমনি ইতিহাসের বিচারে তাদের মূল্যায়নও করা হয়নি। এ ছাড়াও সংখ্যালঘুর ভাষার প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষার আধিপত্য বিস্তারের মানসিকতা থেকে কি আমরা সরে আসতে পেরেছি? আমাদের মনে রাখতে হবে, বহু সংস্কৃতি, বহু ভাষা ও জাতির সম্মিলনে বাংলাদেশ একটি জাতি-বৈচিত্র্যের দেশ। এ দেশের পাহাড় থেকে সমতলে প্রায় ৪৫টি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। এদের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। ভাষা রক্ষার ক্ষেত্রে অতীত ইতিহাসের পর্যালোচনা করেই বর্তমানকে মেলাতে হবে। নিজেদের মাতৃভাষা রক্ষার গুরুদায়িত্ব আমাদের। ভাষা রক্ষা করা গেলেই আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষা পাবে। এ কারণে ভাষা রক্ষা, বিকাশ এবং সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবার চেতনার ঐক্য গড়ে উঠুক এমনটাই প্রত্যাশা।
স শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ
abul.bashar.bashar@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.