আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হোক-নির্বাচনকালীন সরকার

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান হতে দুই বছর বাকি থাকলেও এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন এখনই উত্তপ্ত। বিরোধী দলের দাবি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। তারা এ দাবিতে আগামী ১২ মার্চ ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ কর্মসূচি দিয়েছে। সরকারি দল বলেছে,


‘সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সুযোগ নেই।’ তারাও তাদের ভাষায় ‘বিরোধী দলের নৈরাজ্যকর কর্মসূচির’ বিরুদ্ধে পাল্টা কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে সরকারি ও বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে আলোচনা, হোক তা অনানুষ্ঠানিক—একেবারে তাৎপর্যহীন ভাবার কারণ নেই। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, এই আলোচনা হচ্ছে অনেকটা পর্দার অন্তরালে, বিদেশি দূতদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে। দেশের রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে বিদেশি দূতদের বাড়িতে আলোচনা আত্মশ্লাঘার বিষয় নয়। তার পরও আমরা এ আলোচনাকে স্বাগত জানাই এ কারণে যে এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের একটি বিকল্প রূপরেখা বেরিয়ে আসতে পারে।
পৃথিবীতে এমন কোনো সমস্যা নেই, যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব নয়। বিরোধী দল সংসদে গেলে সেখানেও দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হতে পারে, হতে পারে সংসদের বাইরেও।
আমরা মনে করি, আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হলে সরকারি ও বিরোধী দলের সমঝোতার বিকল্প নেই। মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ব্লেকও প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের সঙ্গে বৈঠকের পর সব দলের অংশগ্রহণে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিয়েছেন। এর আগেও কয়েকজন বিদেশি দূত অনুরূপ মন্তব্য করেছেন। বিদেশিরা বলছেন বলেই নয়, দেশের শান্তিকামী মানুষও মনেপ্রাণে চায়, নির্বাচন প্রশ্নে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হোক। অন্যথায় ১৯৯৬ ও ২০০৭ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাও অস্বাভাবিক নয়।
নির্বাচন নিয়ে অতীতে এ দেশে অনেক বিতর্ক ও আন্দোলন হয়েছে। নবযাত্রায় গণতন্ত্রের বয়সও দুই দশকের বেশি হলো। এর মধ্যে যদি আমরা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে একটি টেকসই রূপ দিতে পারতাম, তাহলে এ নিয়ে বারবার রাজপথে শক্তি পরীক্ষার প্রয়োজন হতো না। নির্বাচন কমিশনকে সত্যিকার অর্থে শক্তিশালী এবং বিদায়ী কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে অনেক বিতর্কের অবসান হবে।
যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এত দিন আদর্শ পদ্ধতি ভাবা হয়েছিল, তা এরই মধ্যে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিচার বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, এ পদ্ধতির ফলে বিচার বিভাগই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার এ কথাও ঠিক যে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে, তা অনেকেই বিশ্বাস করেন না।
অতএব, বিকল্প উপায়ই খুঁজে বের করতে হবে। আমরা মনে করি, সরকার ও বিরোধী দল আন্তরিক হলে তা অসম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিকতার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে এসে উভয় পক্ষের উচিত আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করা।

No comments

Powered by Blogger.