বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

সমঝোতায় পৌঁছাতে দূর করতে হবে মতপার্থক্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনেক দিনের। কিন্তু সেই সম্পর্কের মধ্যেই আবার অবিশ্বাসের কাঁটা, শীতল বরফ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গত বছর ভারত সফর করার পর সেই বরফ গলতে শুরু করে।


ওই সফরের উদ্দেশ্য নতুন করে উষ্ণতা ফিরে পাওয়া, শীর্ষ বৈঠকের মধ্য দিয়ে সব সংশয়-সন্দেহ মুছে ফেলা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় বেশ কয়েকটি চুক্তি সই হয়। এর পরও দুই দেশের মধ্যে রয়ে গেছে অমীমাংসিত অনেক বিষয়। পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়নের পথ এখনো মসৃণ নয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এ বছর বাংলাদেশ সফরে আসবেন। তাঁর বাংলাদেশ সফর খুবই গুরুত্ব বহন করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর সামনে রেখে ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়ে গেল। বৈঠক শেষে উভয় দেশের পররাষ্ট্রসচিবের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। উভয় দেশের পররাষ্ট্রসচিব এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেঁৗছাতে উভয় পক্ষ নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করতে কাজ করছে।
ভারত বাংলাদেশের নিকট-প্রতিবেশী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অনন্য ভূমিকা রয়েছে। তার পরও বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের মধ্যে নানা বিষয়ে মতবিরোধ রয়ে গেছে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে কেবল সংস্কৃতিগত বিষয় ছাড়া অনেক বিষয়েই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিস্তর ফারাক। দুই দেশের সীমান্ত নিয়ে মাঝেমধ্যেই উত্তেজনা দেখা দেয়। অনেক বিষয় এখন পর্যন্ত রয়ে গেছে সিদ্ধান্তহীন। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে যেমন কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয় না, তেমনি সহযোগিতা বৃদ্ধির নতুন ক্ষেত্রও চিহ্নিত হয়নি। সীমানা চিহ্নিতকরণ, ছিটমহল বিনিময় ও অপদখলীয় জমি হস্তান্তর নিয়ে কোনো সমাধান এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় সম্পাদিত ১০০ কোটি ডলারের ঋণ-সহায়তা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের দেওয়া প্রকল্প এখনো অনুমোদনের অপেক্ষায়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যে অসাম্য রয়েছে। অন্যদিকে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে উভয় দেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়গুলোই আলোচিত হয়েছে বলে জানা গেছে। তিস্তার পানিবণ্টন বিষয়ে আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহারের জন্য ভারত কী পরিমাণ মাসুল দেবে, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর বাংলাদেশ সফরের সময় সীমানা চিহ্নিতকরণ ও তিস্তা নদীর পানিবণ্টনে ঐতিহাসিক চুক্তি সই হবে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয় বাংলাদেশ। ভারতও বাংলাদেশকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়। তবে অনেকে মনে করেন, বড় দেশ ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে বড়ভাইসুলভ আচরণ করে। এটা আমাদের কাম্য নয়। আমরা চাই দুটি স্বাধীন দেশের আত্মমর্যাদার প্রতি উভয় দেশ সম্মান দেখাবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে আস্থার অভাব রয়েছে, তা দূর করতে হবে। নিকট-প্রতিবেশীর সঙ্গে সব বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে হবে। প্রতিবেশীকে প্রতিবেশীর মতোই দেখতে হবে। ইতিবাচক ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে উভয় পক্ষকে এগোতে হবে। অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, অচিহ্নিত সীমানা নির্ধারণ, অপদখলীয় জমি হস্তান্তর বিষয়ে একটি শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক সমাধান উভয় দেশ খুঁজে পাবে বলে আমরা আশা পোষণ করি।

No comments

Powered by Blogger.