তিনি আমাদের আলোকবর্তিকা by মাহমুদুর রহমান মান্না
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর অবিস্মরণীয় বিজয় দলীয় স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে একটি প্রচণ্ড চপেটাঘাত। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই ব্যথিত যে আওয়ামী লীগের মতো একটি দল, তার দলীয় প্রার্থী সমর্থন দেওয়ার ব্যাপারে, কোনো ছোটখাটো ভুল নয়, এত বড় একটি ভুল করেছিল।
তবে আমি মনে করি, এটা বর্তমান দলের একটা চরিত্রগত ভুল। এ কারণে আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীর মধ্যে একটা ব্যাপক রদবদল হওয়া দরকার। রদবদল বলতে আমি শুধু ব্যক্তির পরিবর্তন বোঝাচ্ছি না, আমি তাঁদের চিন্তাচেতনার পরিবর্তন ও পরিচ্ছন্নতার কথা বলছি। এখনো যদি তাঁরা গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার দ্বারা নিজেদের চালিত না করতে পারেন, তাহলে শেষ পর্যন্ত আমাদের তাঁরা একটা স্বেচ্ছাচারী সাম্প্রদায়িক স্বৈরাচারের কাছে ছেড়ে দিতে পারেন। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে মানুষ বড় আশা করে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু এখন যদি তারা মনে করে জনগণের সেই ম্যান্ডেট জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর পরিবর্তে কারও খেয়ালখুশি চরিতার্থ করার হাতিয়ার, তাহলে বলব, তিনি যে-ই হোন, তিনি নিশ্চয় বিপথগামী।
অনেকেই হয়তো এ রকম করে বলবেন না, কিন্তু আমি একটি কথা খুবই জোর দিয়ে বলব, বিএনপির শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তটি খুবই সুচিন্তিত ও পরিপক্ব। তৈমুরের পরাজয় এমনিতেও ঘটতে পারত। এমনকি শামীম ওসমানের চেয়েও কম ভোট পেতে পারতেন। মানুষ যে রকমভাবে ভোট দিতে গেছেন, সেটা তাঁদের দুজনের কারও জন্য নয়। আইভী একবার বললেন, জনতাই তাঁর সেনাবাহিনী, জনগণ কিন্তু ঠিক সেভাবেই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো ভোট দিতে গেছেন। কোনো কিছুই তাঁরা কেয়ার করেননি। তাঁরা আইভীকে ভোট দিতেই গেছেন। তাঁরা বাসা থেকে বেরিয়েছিলেনই আইভীকে ভোট দিতে। শামীমের জন্য যেমন নয়, তেমনি তৈমুরের জন্যও নয়। আমি মনে করি, বিএনপি নেতৃত্ব যথাযথভাবে এটা আগাম বুঝতে পেরেছিলেন। আমি আওয়ামী লীগ করি বলে বিএনপির একটি দূরদর্শী ও প্রজ্ঞামণ্ডিত একটি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে অপারগ থাকতে পারি না। তাদের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল, এবং সেটা তাদের একটা বিরাট লজ্জা ও গ্লানি থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। বিএনপি হয়তো এখন বলবে যে তারা শামীমকে জেতানোর জন্য সেনা মোতায়েন করেনি, কিন্তু সেটা ধোপে টিকবে না। বিএনপির কাছে দলগতভাবে আইভী ও শামীমের মধ্যে কোনো তফাৎ ছিল না। কারণ, দুজনই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। বিএনপি সুন্দরের জন্য লড়াই করছে না। তারাও সততা, নিষ্ঠা এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে না। যদি তারা সেটাই করত, তাহলে আইভী তাদের দল করুক আর না-ই করুক, তারা তাঁকে সমর্থনের কথা ভাবত। এবং সে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে সেটা একটা মূল্যবোধ ও নীতিবোধের জায়গা থেকে আসত।
অন্যদিকে আজ থেকেই দেখবেন, আওয়ামী লীগ কী করে সুর পাল্টাতে শুরু করেছে। একেকজন একেক রকম করে ব্যাখ্যা দিতে শুরু করবেন। ভেতরে ভেতরে কে কীভাবে আইভীকে সমর্থন দিয়েছিলেন, তা নিয়ে হরেক রকম কেচ্ছাকাহিনি শুনবেন। তিনি যাতে জয়ী হতে পারেন, সে জন্য তাঁরা কত রকম কৌশল করেছেন। হয়তো ইনিয়েবিনিয়ে বলা হবে, নেত্রীর খুব ইচ্ছা ছিল, আইভীকে সমর্থনদানের। কিন্তু অজ্ঞাত বিবিধ কারণে দিতে পারেননি। আর বলবে, এই যে দেখ, আমাদের দল ক্ষমতায়, আমরা সেনাবাহিনী দিইনি, কিন্তু তাই বলে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে কোনো রকম কসরৎ করিনি। সুতরাং তাদের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। সে জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো রকম দরকার নেই। কিন্তু প্রকৃত সত্য সেখানে নয়। যে নেতৃত্ব শামীম ওসমানকে সমর্থন দিয়েছিল, তাদের কোনো উপায় ছিল না, জনস্রোতের সামনে মাথা নত না করার।
এখন আইভীর বিজয়টা আমরা কীভাবে দেখব। যদি আওয়ামী লীগের নিষ্ঠাবান কর্মীদের কথা বলেন, সাধারণ মানুষের কথা বলেন, তাহলে এই বিজয় তাঁদেরই। সেই জনগণের বিজয় কিন্তু বিএনপি মানছে না। তার মানে হচ্ছে, তারাও আওয়ামী লীগের মতো ওই একই অবস্থানে দাঁড়িয়ে তারা তাদের রাজনীতিটা সারার চেষ্টা করছে।
নারায়ণগঞ্জের জনগণকে আমি স্যেলুট করি। আমি মনে করি, পরিবর্তনের জন্য তারা একটি ট্রেন্ড সেটার। এটা সারা দেশের জনগণ দেখছেন। আগামী দিনের গণতন্ত্রের লড়াইয়ের জন্য আইভী একটি আইকন, একটি আলোকবর্তিকা।
মাহমুদুর রহমান মান্না: রাজনীতিবিদ ও কলাম লেখক।
অনেকেই হয়তো এ রকম করে বলবেন না, কিন্তু আমি একটি কথা খুবই জোর দিয়ে বলব, বিএনপির শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তটি খুবই সুচিন্তিত ও পরিপক্ব। তৈমুরের পরাজয় এমনিতেও ঘটতে পারত। এমনকি শামীম ওসমানের চেয়েও কম ভোট পেতে পারতেন। মানুষ যে রকমভাবে ভোট দিতে গেছেন, সেটা তাঁদের দুজনের কারও জন্য নয়। আইভী একবার বললেন, জনতাই তাঁর সেনাবাহিনী, জনগণ কিন্তু ঠিক সেভাবেই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো ভোট দিতে গেছেন। কোনো কিছুই তাঁরা কেয়ার করেননি। তাঁরা আইভীকে ভোট দিতেই গেছেন। তাঁরা বাসা থেকে বেরিয়েছিলেনই আইভীকে ভোট দিতে। শামীমের জন্য যেমন নয়, তেমনি তৈমুরের জন্যও নয়। আমি মনে করি, বিএনপি নেতৃত্ব যথাযথভাবে এটা আগাম বুঝতে পেরেছিলেন। আমি আওয়ামী লীগ করি বলে বিএনপির একটি দূরদর্শী ও প্রজ্ঞামণ্ডিত একটি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে অপারগ থাকতে পারি না। তাদের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল, এবং সেটা তাদের একটা বিরাট লজ্জা ও গ্লানি থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। বিএনপি হয়তো এখন বলবে যে তারা শামীমকে জেতানোর জন্য সেনা মোতায়েন করেনি, কিন্তু সেটা ধোপে টিকবে না। বিএনপির কাছে দলগতভাবে আইভী ও শামীমের মধ্যে কোনো তফাৎ ছিল না। কারণ, দুজনই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। বিএনপি সুন্দরের জন্য লড়াই করছে না। তারাও সততা, নিষ্ঠা এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে না। যদি তারা সেটাই করত, তাহলে আইভী তাদের দল করুক আর না-ই করুক, তারা তাঁকে সমর্থনের কথা ভাবত। এবং সে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে সেটা একটা মূল্যবোধ ও নীতিবোধের জায়গা থেকে আসত।
অন্যদিকে আজ থেকেই দেখবেন, আওয়ামী লীগ কী করে সুর পাল্টাতে শুরু করেছে। একেকজন একেক রকম করে ব্যাখ্যা দিতে শুরু করবেন। ভেতরে ভেতরে কে কীভাবে আইভীকে সমর্থন দিয়েছিলেন, তা নিয়ে হরেক রকম কেচ্ছাকাহিনি শুনবেন। তিনি যাতে জয়ী হতে পারেন, সে জন্য তাঁরা কত রকম কৌশল করেছেন। হয়তো ইনিয়েবিনিয়ে বলা হবে, নেত্রীর খুব ইচ্ছা ছিল, আইভীকে সমর্থনদানের। কিন্তু অজ্ঞাত বিবিধ কারণে দিতে পারেননি। আর বলবে, এই যে দেখ, আমাদের দল ক্ষমতায়, আমরা সেনাবাহিনী দিইনি, কিন্তু তাই বলে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে কোনো রকম কসরৎ করিনি। সুতরাং তাদের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। সে জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো রকম দরকার নেই। কিন্তু প্রকৃত সত্য সেখানে নয়। যে নেতৃত্ব শামীম ওসমানকে সমর্থন দিয়েছিল, তাদের কোনো উপায় ছিল না, জনস্রোতের সামনে মাথা নত না করার।
এখন আইভীর বিজয়টা আমরা কীভাবে দেখব। যদি আওয়ামী লীগের নিষ্ঠাবান কর্মীদের কথা বলেন, সাধারণ মানুষের কথা বলেন, তাহলে এই বিজয় তাঁদেরই। সেই জনগণের বিজয় কিন্তু বিএনপি মানছে না। তার মানে হচ্ছে, তারাও আওয়ামী লীগের মতো ওই একই অবস্থানে দাঁড়িয়ে তারা তাদের রাজনীতিটা সারার চেষ্টা করছে।
নারায়ণগঞ্জের জনগণকে আমি স্যেলুট করি। আমি মনে করি, পরিবর্তনের জন্য তারা একটি ট্রেন্ড সেটার। এটা সারা দেশের জনগণ দেখছেন। আগামী দিনের গণতন্ত্রের লড়াইয়ের জন্য আইভী একটি আইকন, একটি আলোকবর্তিকা।
মাহমুদুর রহমান মান্না: রাজনীতিবিদ ও কলাম লেখক।
No comments