স্মরণ-ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা : দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী by তামান্না ইসলাম অলি
আমি বলছি গুলিবর্ষণ হবে না, যদি গুলিবর্ষণ হয় তা হলে কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে সেটা আমার গায়ে লাগবে।' গুলিবিদ্ধ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে এ কথাগুলো বলেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের রিডার ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা। এ কথা শোনার পর পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা খাদেম গুলি চালানোর নির্দেশ দেন।
তাঁর সঙ্গের বাঙালি সৈনিকরা তাঁর প্রতি গুলি চালাতে পারেননি। তখন খাদেম নিজে তাঁর রিভলবার দিয়ে গুলি চালান জোহার ওপর। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পড়ে যান তিনি। এর পর তাঁকে আঘাত করা হয় বেয়নেট দিয়ে। আহত অবস্থায় পাকিস্তানি সৈন্যরা তাঁকে সে সময়ের পৌরসভা ভবনের একটি ঘরে ফেলে রাখে। কয়েক ঘণ্টা পর হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার জানান, এ দেহে প্রাণ নেই। ড. জোহা শহীদ হলেন। আর শুরু হলো আরেকটি অধ্যায়ের। তিনিই আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী। সেদিন ছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। ১৯৬৯ সালের সেই দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে এ ঘটনাটি হয়।
মঙ্গলবার ছিল সেদিন। উত্তপ্ত সারা দেশ। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। কারণ এর দুই দিন আগেই হত্যা করা হয়েছে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে। এই হত্যার প্রতিবাদে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল করে। তাতে পুলিশি হামলা হয়। আহত হয় অনেক ছাত্র। এতে আরো উত্তেজিত হয় ছাত্ররা। ১৪৪ ধারা ভাঙতে প্রস্তুত ছিল তারা। একই অবস্থা ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও। সেনাবাহিনী ঘিরে রেখেছিল গোটা ক্যাম্পাস। ড. জোহা ছুটে বেড়াচ্ছিলেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। তিনি একবার সামরিক অফিসারদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, আবার ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ছাত্ররা কোনো কথা শুনছিল না। এ সময়ই সেনা কর্মকর্তা নির্দেশ দেন গুলি চালানোর। তখন ড. জোহা বাধা দেন। কথা রেখেছিলেন তিনি। জীবন দিয়ে বাঁচিয়ে গেছেন হাজারো ছাত্রের প্রাণ।
এরপর পাকিস্তানিদের জন্য পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে যায়। ওই দিন দুপুরে সারা দেশে জারি করা হয় কারফিউ। ড. জোহার মৃত্যুর খবরে আন্দোলন আরো উত্তাল হয়ে ওঠে। ১৯ তারিখে সারা দেশে সফল হরতাল পালিত হয়। ওই দিনই তাঁকে দাফন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের পাশে। আর তাঁর কবরের গায়ে লিখে দেওয়া হয় তাঁর উচ্চারিত সেই বাণী_'কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে সেটা আমার গায়ে লাগবে।' সেদিনের সেই বুলেট শুধু ড. জোহাকে বিদ্ধ করেনি। বিদ্ধ করে এ দেশের মুক্তিকামী শিক্ষকসমাজ এবং অন্য বুদ্ধিজীবীদের। প্রিয় ছাত্রদের প্রাণ বাঁচানোর জন্যে জীবন দেওয়ার ঘটনা বিরল। তাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ দিনটিকে 'জোহা দিবস' বা 'রাবি শিক্ষক দিবস' হিসেবে পালন করে। সারা দিনে পালিত হয় নানা কর্মসূচি। তবে শুধু রাজশাহী নয়, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ দিনটিকে স্মরণ করা উচিত। ড. জোহাকে তুলে ধরা প্রয়োজন নতুন শিক্ষক ও ছাত্রদের সামনে। দিনটিকে ঘোষণা করা দরকার 'জাতীয় শিক্ষক দিবস' হিসেবে। তামান্না ইসলাম অলি
মঙ্গলবার ছিল সেদিন। উত্তপ্ত সারা দেশ। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। কারণ এর দুই দিন আগেই হত্যা করা হয়েছে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে। এই হত্যার প্রতিবাদে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল করে। তাতে পুলিশি হামলা হয়। আহত হয় অনেক ছাত্র। এতে আরো উত্তেজিত হয় ছাত্ররা। ১৪৪ ধারা ভাঙতে প্রস্তুত ছিল তারা। একই অবস্থা ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও। সেনাবাহিনী ঘিরে রেখেছিল গোটা ক্যাম্পাস। ড. জোহা ছুটে বেড়াচ্ছিলেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। তিনি একবার সামরিক অফিসারদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, আবার ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ছাত্ররা কোনো কথা শুনছিল না। এ সময়ই সেনা কর্মকর্তা নির্দেশ দেন গুলি চালানোর। তখন ড. জোহা বাধা দেন। কথা রেখেছিলেন তিনি। জীবন দিয়ে বাঁচিয়ে গেছেন হাজারো ছাত্রের প্রাণ।
এরপর পাকিস্তানিদের জন্য পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে যায়। ওই দিন দুপুরে সারা দেশে জারি করা হয় কারফিউ। ড. জোহার মৃত্যুর খবরে আন্দোলন আরো উত্তাল হয়ে ওঠে। ১৯ তারিখে সারা দেশে সফল হরতাল পালিত হয়। ওই দিনই তাঁকে দাফন করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের পাশে। আর তাঁর কবরের গায়ে লিখে দেওয়া হয় তাঁর উচ্চারিত সেই বাণী_'কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে সেটা আমার গায়ে লাগবে।' সেদিনের সেই বুলেট শুধু ড. জোহাকে বিদ্ধ করেনি। বিদ্ধ করে এ দেশের মুক্তিকামী শিক্ষকসমাজ এবং অন্য বুদ্ধিজীবীদের। প্রিয় ছাত্রদের প্রাণ বাঁচানোর জন্যে জীবন দেওয়ার ঘটনা বিরল। তাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ দিনটিকে 'জোহা দিবস' বা 'রাবি শিক্ষক দিবস' হিসেবে পালন করে। সারা দিনে পালিত হয় নানা কর্মসূচি। তবে শুধু রাজশাহী নয়, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ দিনটিকে স্মরণ করা উচিত। ড. জোহাকে তুলে ধরা প্রয়োজন নতুন শিক্ষক ও ছাত্রদের সামনে। দিনটিকে ঘোষণা করা দরকার 'জাতীয় শিক্ষক দিবস' হিসেবে। তামান্না ইসলাম অলি
No comments