স্মরণ-সতীশচন্দ্র মিত্র by গৌরাঙ্গ নন্দী

দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করেই তিনি এগিয়েছেন। লেখাপড়া শিখেছেন অনেক কষ্টে। ছাত্র পড়ানো এবং বৃত্তির টাকায় নিজের চলা, লেখাপড়ার খরচ চালানো এবং সংসারের খরচ জোগাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করেন ১৮৯৯ সালে।


শেষ করেন কলেজের শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে। তবে পরিচিতি পেয়েছেন ঐতিহাসিক হিসেবে। তাঁর অমর সৃষ্টি যশোর-খুলনার ইতিহাস। যশোর, খুলনা তথা সুন্দরবন প্রভাবিত এই অঞ্চলে মনুষ্য বসতি, এখানকার প্রকৃতি, মানুষের জীবনধারা-জীবনাচরণ পদ্ধতি, রাজা-রাজড়াদের কাহিনী, বিশেষ করে প্রতাপাদিত্যের প্রতাপ, পীরালি বংশের ইতিহাস, ফসল, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের লড়াই করার ইতিহাস আর সুন্দরী সুন্দরবনের সম্পদের কথা_সব, সবই ঠাঁই পেয়েছে সেই গ্রন্থে। দুই খণ্ডে লেখা এ বইটি যশোর-খুলনা অঞ্চলের এখনো একমাত্র তথ্যবহুল আকরগ্রন্থ। এর স্রষ্টা সতীশচন্দ্র মিত্র। জন্মেছিলেন খুলনার বর্তমানের রূপসা উপজেলার বেলফুলিয়া গ্রামে। অংশত তাঁরই চেষ্টায় আইনজীবী ব্রজদুলাল শাস্ত্রী প্রতিষ্ঠিত খুলনার দৌলতপুর হিন্দু একাডেমী একটি বিশিষ্ট কলেজে রূপান্তরিত হয়। ১৯০৪ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি এ কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। এ কলেজের বিশাল গ্রন্থাগারটি তাঁরই সৃষ্টি। তিনি এর গ্রন্থাগারিক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। এ গ্রন্থাগারের ইতিহাস সম্ভার ছিল বিশেষ আকর্ষণীয়। তিনি এখানে একটি প্রত্নতাত্তি্বক সংগ্রহশালাও গড়ে তুলেছিলেন। সে সময়ের ছোটলাট এই কলেজ ও এখানকার লাইব্রেরি পরিদর্শন করে এতটাই মুগ্ধ হন যে তিনি তাৎক্ষণিক লাইব্রেরির জন্য ৫০০ টাকা দান করেন। তাঁর লেখক বা সাহিত্যিক জীবন শুরু হয় ছাত্রাবস্থায়ই। স্বদেশি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তিনি অনেক প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন। লেখক জীবনের শুরুতে কবিতাও লিখেছেন। আরো লিখেছেন 'হরিদাশ ঠাকুর', 'সপ্ত গোস্বামী', 'প্রতাপসিংহ' প্রভৃতি নামের গ্রন্থ। তবে বিশেষ কিছু লেখার তাগিদ পেয়েছিলেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় তথা এপিসি রায়ের কাছ থেকে, এ কথা তিনি স্বীকার করেছেন। তাঁর সেরা কাজ 'যশোর-খুলনার ইতিহাস' গ্রন্থটি তিনি এই কৃতি পুরুষের নামে উৎসর্গ করেন। ১৮৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর জন্ম নেওয়া এই জ্ঞানসাধক ৬১ বছর বয়সে ১৯৩১ সালের ৭ জুন মৃত্যুবরণ করেন।
গৌরাঙ্গ নন্দী

No comments

Powered by Blogger.