সুতার ঘরে আগুন লেগেছে by মহসীন হাবিব
কম্পিউটার-ইন্টারনেট যুগের কথা জানি না, তবে শ্লেট-পেনসিল যুগের শিশুদের কিছু মজার খেলা ছিল, যা এখনো মনের গভীর কোণে ঘুমিয়ে আছে। কদাচিৎ ঘুম থেকে জেগে যখন মনের পরতে পরতে সেই খেলাগুলো হাঁটাহাঁটি করে, তখন আমাদের ঝলসানো রুটির দেহ-প্রাণ কী এক পুলকে যেন ভরে ওঠে। সে খেলাগুলোর নানা ধরনের স্লোগান ছিল।
এমনি একটি ঘরে বসে খেলার স্লোগান ছিল, 'সুতার ঘরে আগুন লাগছে কে নিভাতে পারে।' এই খেলাটি শিশুদের কাছে খুব জনপ্রিয় ছিল না। কিন্তু ঘরে অলস সময় কাটানোর আর কোনো খেলা না থাকলে এটি আমরা খেলতাম। নিয়ম ছিল, একজন হাতের মধ্যে একটি দীর্ঘ সুতা নিয়ে জট পাকিয়ে দেবে, অন্যজনকে নির্দিষ্ট সময়ে সে জট ছাড়াতে হবে। আর বিশ্বাস ছিল, এই জট ছাড়ানোর সময় যদি 'সুতার ঘরে আগুন লাগছে, কে নিভাতে পারে' এই মন্ত্র আওড়ানো যায়, তাহলে সুতার জট দ্রুত খুলে যাবে। এই খেলাটির কথাই আজ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি দেখে বারবার মনে পড়ছে। দেশের সমস্যাগুলো যেন সেই সুতার মতো জট পাকিয়ে গেছে।
পুলিশ ঘুষ খায়। এটি বহুল প্রচলিত কথা। এর সত্যতাও আছে। কিন্তু পুলিশের এই ঘুষ গ্রহণ কি এক কথায় মীমাংসাযোগ্য? মোটেই না। ধরুন, পুলিশের একজন দারোগার কথা। ভবিষ্যতে কী হবে জানি না, কিন্তু পুলিশের নিয়োগ-বাণিজ্যের যে অবিশ্বাস্য কাহিনী আছে, তা দেশের প্রত্যেক মানুষ জানে। কেউ ভিটা বিক্রি করেন, কেউ আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ঋণ করে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে নিয়োগ পেয়ে তারপর সারদা ট্রেনিংয়ে গিয়ে সততার সঙ্গে কর্তব্য পালনের শপথ নেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মুখোমুখি হলেন পোস্টিং-বাণিজ্যের। পোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে পুলিশের রয়েছে ভালো থানা, মন্দ থানা। এবার ধরুন, যে করেই হোক তাঁর পোস্টিং হলো ঢাকার কোনো একটি থানায়। এই মানুষটিকে ঢাকায় পরিবার নিয়ে থাকতে হবে। একটি সাধারণ তিন কামরার বাসা ভাড়া কত হবে, তা সরকারের তরফ থেকে, সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। কিন্তু একজন বাড়িওয়ালা কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে অন্তত পাঁচগুণ ভাড়া আদায় করছেন। থাকতে তো হবেই। রাস্তায় তো থাকা যাবে না। তাই দারোগা বাসাটি ভাড়া নিচ্ছেন কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকায়, যা তাঁর বেতনের চেয়ে বেশি। এবার তিনি কী খাবেন, তাঁর সন্তানরা কী খাবে? লেখাপড়ার খরচ দেবে কে? লক্ষ করে দেখুন, ঢাকার বাড়িওয়ালা কি দারোগার ঘুষ খাওয়ার জন্য অন্যতম দায়ী নয়? আমি পুলিশের ঘুষ খাওয়ার ওকালতি করছি না। কিন্তু বাস্তবতা অস্বীকার করব কী করে?
পৃথিবীর সব সভ্য দেশে, এমনকি অনেক অসভ্য দেশেও (অসভ্য দেশও আছে, সে আলোচনা অন্যত্র) স্কুলশিক্ষকের বিশেষ বেতন স্কেল রয়েছে। পৃথিবীর বহু দেশে শিক্ষক শুধু সামাজিকভাবেই মর্যাদাসম্পন্ন নন, বেতনের টাকায় স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করেন। শুধু তা-ই নয়, অবসরগ্রহণ করে পেনশনের টাকায় জীবনযাপনের নিশ্চয়তা রয়েছে। অথচ বাংলাদেশের একজন শিক্ষক যে বেতন পান, তা দিয়ে একটি মাঝারি সংসারের জন্য চাল কেনা যায় বড়জোর, আটার দাম থাকে না। শিক্ষকরা এত চিৎকার করলেন, এত আন্দোলন-ধর্মঘট করলেন_কিছুতেই তাঁদের ভাগ্যের পরিবর্তন হলো না। এত বড় বড় কথা শুনি চারদিকে, এত প্রতিশ্রুতি, আশার বুলি চারদিকে, সামান্য একটু উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষকদের একটি বিশেষ স্কেল দিলেই সমাজে শিক্ষকদের চেহারা, শিক্ষার মান পাল্টে যেত। কিন্তু তাঁদের প্রতি আচরণ দেখে মনে হয়, প্রতিটি সরকার, প্রত্যেক নীতিনির্ধারক মুখে শিক্ষার কথা বলেন, শিক্ষায় মোটা অঙ্ক বরাদ্দের কথা বলেন_আসলে তাঁরা শিক্ষকদের না খাইয়ে মারার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই শিক্ষকদের স্কুল ফাঁকি দিয়ে কোচিং সেন্টারে যোগ দেওয়া ছাড়া আর কী করার আছে, আমি তা সমাজের বিজ্ঞজনদের কাছে জানতে চাই। অনেক শিক্ষকেরই আবার কোচিং সেন্টারে যোগদানের 'ভাগ্য' হয় না। যে সমাজে একজন 'সৎ' শিক্ষক সিএনজিচালকের চেয়ে দরিদ্র জীবনযাপন করবেন সে সমাজ কতটা শিক্ষামুখী থাকতে পারে?
যা বলছি তা সবই বহু উচ্চারিত দীর্ঘদিনের সত্য। কিন্তু এ ঘোর জট থেকে ছুটতে না পারলে সর্বনাশের আর কিছু বাকি থাকবে না। আজ অবধি এত চিৎকার-চেঁচামেচির পরও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, অর্থনীতির বিকেন্দ্রীকরণের কোনো বাস্তবসম্মত উদ্যোগ কাউকে নিতে দেখা গেল না। তার ফল দাঁড়াচ্ছে কী? ঢাকা শহরে বস্তি কেন, সে প্রশ্ন করেন অনেকে। দেশের যে নাগরিকদের বেঁচে থাকার, কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই, তারা ঢাকা শহরে ছুটে আসা ছাড়া, এখানে মাথা গোঁজার চেষ্টা করা ছাড়া আর কী করতে পারে? এ বেঁচে থাকার লড়াই করা মানুষ যদি কখনো বড় বড় ভবন দখল করে নিয়ে মাথা গুঁজতে চেষ্টা করে, তাহলে কতটুকু দোষ দেওয়া যাবে তাদের? দেশের বনাঞ্চল, সরকারের খাস জমিতে আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে ঘর উঠিয়ে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে অনেক মানুষ। তাদের কী বলে ধিক্কার দেবেন? বেঁচে থাকার প্রয়োজন কোনো আইন মানে না। সুতরাং যদি অর্থনীতির বিকেন্দ্রীকরণ না হয়, যদি ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ না হয়, তাহলে অবৈধ বস্তিকে শুধু মেনে নিতেই হবে না, যদি তারা নাগরিক সুবিধা চায় তাহলেও তা খুব একটা অযৌক্তিক হবে বলে মনে করি না। যাঁরা ঢাকা শহরে বস্তি কেন, সে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা এর পেছনের করুণ বঞ্চনার কথা কি ভেবে দেখেছেন? কেন গ্রামের দরিদ্র মানুষ ভারতের বিভিন্ন শহরে ছুটে চলে আসছে, তা নিয়ে কয়েক দিন আগে অরুন্ধতী রায় একটি নিবন্ধ লিখেছেন ভারতের আউটলুক পত্রিকায় (যার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর প্রকাশ পেয়েছে কালের কণ্ঠে)। তিনি তাঁর একটি গ্রন্থের আলোকে লিখেছেন, 'যাদের শহর থেকে উৎখাত করা হয়, তারা ফিরে গিয়ে দেখে নিজের গ্রামটি অদৃশ্য হয়ে গেছে কোনো বাঁধের কারণে। তাদের ঘর ক্ষুধা ও পুলিশের অত্যাচারে জর্জরিত। যে কারণে জনগণ আবার শহরের রাস্তা এবং পেভমেন্টে ফিরে এসে আশ্রয় নেয়। তারা গাদাগাদি করে ধুলোবালি ভরা কনস্ট্রাকশন কাজের জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে, ঘুরতে থাকে এই বিশাল দেশের কোনো একটি জায়গায় আশ্রয়ের জন্য।'
চীন সরকার লক্ষ করে দেখেছে, গ্রামের মানুষ শহরমুখী হয়ে উঠেছে। তাদের ঠেকানো যাচ্ছে না। সঙ্গে সঙ্গে কী করে তাদের গ্রামে কর্মসংস্থান করা যায়, তা নিয়ে বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করেছে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে। বাংলাদেশ সরকারের যত দিন এমন তাগিদ তৈরি না হবে, তত দিন কাকে কোন অপরাধের জন্য আমরা দায়ী করব, সেটা ভেবে দেখতে হবে। দীর্ঘদিনের অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ভেতর দিয়ে যে সামাজিক, অর্থনৈতিক জটলা ও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, চারদিকে যে অন্যায়-অনিয়ম মাটির গভীরে প্রোথিত হয়ে গেছে, তা এখন বাস্তিল দুর্গ পতনের মতো করে উৎখাত ছাড়া গত্যন্তর দেখছি না।
mohshinhabib@yahoo.com
পুলিশ ঘুষ খায়। এটি বহুল প্রচলিত কথা। এর সত্যতাও আছে। কিন্তু পুলিশের এই ঘুষ গ্রহণ কি এক কথায় মীমাংসাযোগ্য? মোটেই না। ধরুন, পুলিশের একজন দারোগার কথা। ভবিষ্যতে কী হবে জানি না, কিন্তু পুলিশের নিয়োগ-বাণিজ্যের যে অবিশ্বাস্য কাহিনী আছে, তা দেশের প্রত্যেক মানুষ জানে। কেউ ভিটা বিক্রি করেন, কেউ আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ঋণ করে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে নিয়োগ পেয়ে তারপর সারদা ট্রেনিংয়ে গিয়ে সততার সঙ্গে কর্তব্য পালনের শপথ নেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মুখোমুখি হলেন পোস্টিং-বাণিজ্যের। পোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে পুলিশের রয়েছে ভালো থানা, মন্দ থানা। এবার ধরুন, যে করেই হোক তাঁর পোস্টিং হলো ঢাকার কোনো একটি থানায়। এই মানুষটিকে ঢাকায় পরিবার নিয়ে থাকতে হবে। একটি সাধারণ তিন কামরার বাসা ভাড়া কত হবে, তা সরকারের তরফ থেকে, সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। কিন্তু একজন বাড়িওয়ালা কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে অন্তত পাঁচগুণ ভাড়া আদায় করছেন। থাকতে তো হবেই। রাস্তায় তো থাকা যাবে না। তাই দারোগা বাসাটি ভাড়া নিচ্ছেন কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকায়, যা তাঁর বেতনের চেয়ে বেশি। এবার তিনি কী খাবেন, তাঁর সন্তানরা কী খাবে? লেখাপড়ার খরচ দেবে কে? লক্ষ করে দেখুন, ঢাকার বাড়িওয়ালা কি দারোগার ঘুষ খাওয়ার জন্য অন্যতম দায়ী নয়? আমি পুলিশের ঘুষ খাওয়ার ওকালতি করছি না। কিন্তু বাস্তবতা অস্বীকার করব কী করে?
পৃথিবীর সব সভ্য দেশে, এমনকি অনেক অসভ্য দেশেও (অসভ্য দেশও আছে, সে আলোচনা অন্যত্র) স্কুলশিক্ষকের বিশেষ বেতন স্কেল রয়েছে। পৃথিবীর বহু দেশে শিক্ষক শুধু সামাজিকভাবেই মর্যাদাসম্পন্ন নন, বেতনের টাকায় স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করেন। শুধু তা-ই নয়, অবসরগ্রহণ করে পেনশনের টাকায় জীবনযাপনের নিশ্চয়তা রয়েছে। অথচ বাংলাদেশের একজন শিক্ষক যে বেতন পান, তা দিয়ে একটি মাঝারি সংসারের জন্য চাল কেনা যায় বড়জোর, আটার দাম থাকে না। শিক্ষকরা এত চিৎকার করলেন, এত আন্দোলন-ধর্মঘট করলেন_কিছুতেই তাঁদের ভাগ্যের পরিবর্তন হলো না। এত বড় বড় কথা শুনি চারদিকে, এত প্রতিশ্রুতি, আশার বুলি চারদিকে, সামান্য একটু উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষকদের একটি বিশেষ স্কেল দিলেই সমাজে শিক্ষকদের চেহারা, শিক্ষার মান পাল্টে যেত। কিন্তু তাঁদের প্রতি আচরণ দেখে মনে হয়, প্রতিটি সরকার, প্রত্যেক নীতিনির্ধারক মুখে শিক্ষার কথা বলেন, শিক্ষায় মোটা অঙ্ক বরাদ্দের কথা বলেন_আসলে তাঁরা শিক্ষকদের না খাইয়ে মারার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই শিক্ষকদের স্কুল ফাঁকি দিয়ে কোচিং সেন্টারে যোগ দেওয়া ছাড়া আর কী করার আছে, আমি তা সমাজের বিজ্ঞজনদের কাছে জানতে চাই। অনেক শিক্ষকেরই আবার কোচিং সেন্টারে যোগদানের 'ভাগ্য' হয় না। যে সমাজে একজন 'সৎ' শিক্ষক সিএনজিচালকের চেয়ে দরিদ্র জীবনযাপন করবেন সে সমাজ কতটা শিক্ষামুখী থাকতে পারে?
যা বলছি তা সবই বহু উচ্চারিত দীর্ঘদিনের সত্য। কিন্তু এ ঘোর জট থেকে ছুটতে না পারলে সর্বনাশের আর কিছু বাকি থাকবে না। আজ অবধি এত চিৎকার-চেঁচামেচির পরও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, অর্থনীতির বিকেন্দ্রীকরণের কোনো বাস্তবসম্মত উদ্যোগ কাউকে নিতে দেখা গেল না। তার ফল দাঁড়াচ্ছে কী? ঢাকা শহরে বস্তি কেন, সে প্রশ্ন করেন অনেকে। দেশের যে নাগরিকদের বেঁচে থাকার, কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই, তারা ঢাকা শহরে ছুটে আসা ছাড়া, এখানে মাথা গোঁজার চেষ্টা করা ছাড়া আর কী করতে পারে? এ বেঁচে থাকার লড়াই করা মানুষ যদি কখনো বড় বড় ভবন দখল করে নিয়ে মাথা গুঁজতে চেষ্টা করে, তাহলে কতটুকু দোষ দেওয়া যাবে তাদের? দেশের বনাঞ্চল, সরকারের খাস জমিতে আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে ঘর উঠিয়ে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে অনেক মানুষ। তাদের কী বলে ধিক্কার দেবেন? বেঁচে থাকার প্রয়োজন কোনো আইন মানে না। সুতরাং যদি অর্থনীতির বিকেন্দ্রীকরণ না হয়, যদি ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ না হয়, তাহলে অবৈধ বস্তিকে শুধু মেনে নিতেই হবে না, যদি তারা নাগরিক সুবিধা চায় তাহলেও তা খুব একটা অযৌক্তিক হবে বলে মনে করি না। যাঁরা ঢাকা শহরে বস্তি কেন, সে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা এর পেছনের করুণ বঞ্চনার কথা কি ভেবে দেখেছেন? কেন গ্রামের দরিদ্র মানুষ ভারতের বিভিন্ন শহরে ছুটে চলে আসছে, তা নিয়ে কয়েক দিন আগে অরুন্ধতী রায় একটি নিবন্ধ লিখেছেন ভারতের আউটলুক পত্রিকায় (যার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর প্রকাশ পেয়েছে কালের কণ্ঠে)। তিনি তাঁর একটি গ্রন্থের আলোকে লিখেছেন, 'যাদের শহর থেকে উৎখাত করা হয়, তারা ফিরে গিয়ে দেখে নিজের গ্রামটি অদৃশ্য হয়ে গেছে কোনো বাঁধের কারণে। তাদের ঘর ক্ষুধা ও পুলিশের অত্যাচারে জর্জরিত। যে কারণে জনগণ আবার শহরের রাস্তা এবং পেভমেন্টে ফিরে এসে আশ্রয় নেয়। তারা গাদাগাদি করে ধুলোবালি ভরা কনস্ট্রাকশন কাজের জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে, ঘুরতে থাকে এই বিশাল দেশের কোনো একটি জায়গায় আশ্রয়ের জন্য।'
চীন সরকার লক্ষ করে দেখেছে, গ্রামের মানুষ শহরমুখী হয়ে উঠেছে। তাদের ঠেকানো যাচ্ছে না। সঙ্গে সঙ্গে কী করে তাদের গ্রামে কর্মসংস্থান করা যায়, তা নিয়ে বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করেছে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে। বাংলাদেশ সরকারের যত দিন এমন তাগিদ তৈরি না হবে, তত দিন কাকে কোন অপরাধের জন্য আমরা দায়ী করব, সেটা ভেবে দেখতে হবে। দীর্ঘদিনের অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ভেতর দিয়ে যে সামাজিক, অর্থনৈতিক জটলা ও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, চারদিকে যে অন্যায়-অনিয়ম মাটির গভীরে প্রোথিত হয়ে গেছে, তা এখন বাস্তিল দুর্গ পতনের মতো করে উৎখাত ছাড়া গত্যন্তর দেখছি না।
mohshinhabib@yahoo.com
No comments