গণমাধ্যমের প্রতি বিশিষ্টজনেরা-গুজবের প্রকাশ বন্ধ করুন

দুষ্কৃতকারীদের হাতে নৃশংসভাবে নিহত সাংবাদিক মেহেরুন রুনির ‘চরিত্র’ হননকারী গুজব প্রকাশ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বিশিষ্ট নাগরিকেরা। গতকাল শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে গণমাধ্যমের প্রতি তাঁরা এ দাবি জানান।


মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, অধ্যাপক আবুল বারকাত, আনু মুহাম্মদসহ ৬১ জন নাগরিক বিবৃতিতে সই করেন। গত শনিবার রাতে নিজ বাসায় সাংবাদিক দম্পতি মেহেরুন রুনি ও সাগর সরওয়ার খুন হন।
বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর তথ্য সংগ্রহের নামে পাঁচ বছরের শিশুসন্তান মেঘকে যেভাবে দফায় দফায় নিপীড়ন করা হচ্ছে, তা দায়িত্বহীন নির্মম আচরণ। কোনো হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য একজন শিশুকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করার দায়িত্ব গণমাধ্যমের নয়। বিবৃতিতে তাঁরা প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করার আশ্বাস দেন। কিন্তু প্রতিশ্রুত সময় পার হলেও তদন্ত-প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। অথচ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সম্প্রচারমাধ্যম নিহত মেহেরুন রুনির কথিত “পরকীয়া” সম্পর্ককে দায়ী করে সংবাদ ছাপাতে এবং প্রচার করতে শুরু করেছে। কোনো কোনো সংবাদপত্র বিভিন্ন ব্যক্তির নামের আদ্যাক্ষর প্রকাশ করে পুরো ঘটনাকে একটি গুজবের আবহে ঠেলে দিয়েছে।’
বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেন, ‘আমরা মনে করি, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগে সংবাদমাধ্যমের পক্ষে প্রকৃত তথ্য নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব নয়। ফলে যা প্রকাশিত হচ্ছে তা অনুমাননির্ভর, ভিত্তিহীন, প্রমাণহীন কিছু গুজব। এ-জাতীয় গুজবের প্রকাশ প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল, তদন্তের গতিকে ধীর এবং খুনি ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার মূল লক্ষ্যকে বিচ্যুত করতে সাহায্য করবে। সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে এ-জাতীয় দায়িত্বহীন আচরণ দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত। আমরা সংবাদমাধ্যমের এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই।’
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আরও রয়েছেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক এম এম আকাশ, ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আলী রীয়াজ, মানবাধিকারকর্মী সারা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মেস্বাহ কামাল, গীতি আরা নাসরীন, কাবেরী গায়েন, রোবায়েত ফেরদৌস, মানবাধিকারকর্মী ফস্টিনা পেরেরা, উন্নয়নকর্মী খুশী কবির প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.