নারায়ণগঞ্জবাসীকে অভিনন্দন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গণরায়

সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন যে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে, তা আমাদের গণতন্ত্রের জন্য একটি সুসংবাদ বটে। যেকোনো নির্বাচনের লক্ষ্য ভোটারদের পছন্দের প্রতিনিধি বেছে নেওয়া এবং সে জন্য শান্তিপূর্ণ ও অভয় পরিবেশ জরুরি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেই কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবারই ধন্যবাদ প্রাপ্য। তবে এই নির্বাচনে সর্বাধিক কৃতিত্বের দাবিদার নারায়ণগঞ্জের ভোটাররা। তাঁরা মেয়র পদে একজন সৎ, যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিয়েছেন। আমরা তাঁদের অভিনন্দন জানাই।
এই নির্বাচনের প্রতি শুধু নারায়ণগঞ্জবাসী নয়, সারা দেশের মানুষেরই ব্যাপক আগ্রহ ও কৌতূহল ছিল। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সম্ভবত এটাই শেষ নির্বাচন। এটি তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের দাবি অনুযায়ী সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েও বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকারের অসহযোগিতার কারণে। তবে কমিশন জোর দিয়েই বলেছিল, সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হোক বা না হোক, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। তারা দেশবাসীর কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।
গতকাল সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত টানা ভোট নেওয়া হয়েছে। কিছু বিচ্ছিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আমরা আশা করব, প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থী নির্বাচনের ফল সানন্দে গ্রহণ করবেন।
নারায়ণগঞ্জের ভোটাররা প্রমাণ করলেন, তাঁরা সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে স্বাধীনভাবে রায় দিতে দ্বিধাবোধ করেন না। তাঁরা নির্বিঘ্নে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন। এই নির্বাচনী ফলাফল আমাদের জাতীয় নির্বাচনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, আশা করি। এর মাধ্যমে আবারও সত্য উদ্ভাসিত, পেশিশক্তি ও কালোটাকা দিয়ে জনগণের রায় বানচাল করা যায় না। অতীতে আমরা দেখেছি, কারচুপির মাধ্যমে বহু বিজয়ী প্রার্থীকে হারানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে তার পুনরাবৃত্তি না ঘটায় দেশবাসী আশ্বস্ত হয়েছে।
তবে এই নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অধিকার সবার আছে। কিন্তু তিনি ও তাঁর দল যে অজুহাত দেখিয়েছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়।
এই নির্বাচনের আরেকটি বড় শিক্ষা প্রার্থিতা প্রত্যাহার কিংবা সমর্থন, উভয় ক্ষেত্রে ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের ফল ভালো হয় না। তাতে যেমন জনমতের প্রতিফলন ঘটে না, তেমনি উপেক্ষিত থাকে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের আকাঙ্ক্ষাও। গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে হলে রাজনৈতিক দলের শীর্ষপর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা পরিহার করতে হবে।
আমরা আশা করব, নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন-উত্তর পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ থাকবে। নির্বাচনে যাঁরা পরাজিত হয়েছেন, তাঁরা নির্দ্বিধায় ফল মেনে নেবেন এবং যাঁরা বিজয়ী হয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে সংযত ও সহনশীল আচরণ কাম্য। কেউ এমন কিছু করবেন না, যাতে পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে। সবাইকে মিলেমিশে এখন নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রতিই মনোযোগী হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.