দুই দু’গুণে পাঁচ-কারাগার সমাচার by আতাউর রহমান
গল্প আছে: আদালতে এক ব্যক্তির কারাদণ্ডের আদেশ হয়ে গেল। তো, সে কারাগারে আসতে না আসতেই সেখানকার পুরোনো বাসিন্দারা তাকে ঘিরে নানাবিধ প্রশ্ন ও মন্তব্য করতে লাগলেন। একজন ‘আশা করি তোমার নিকটাত্মীয়রা তোমাকে দেখতে এখানে মাঝেমধ্যে আসবেন’ বলতেই সে বলে উঠল, ‘সেটার দরকার হবে না।
তাঁরা সবাই আগে থেকেই এখানে আছেন।’
গল্পটি আমার মনে পড়ে গেল সম্প্রতি পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাঠ করে: দিনাজপুরে জনৈক আবদুর রহমান ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালে রিলিফের গম আত্মসাৎ করায় আদালতে অভিযুক্ত হন। এরপর থেকে তিনি পলাতক এবং পলাতক অবস্থায় ভুয়া সনদ দেখিয়ে তিনি সরকারের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার চাকরি পেয়ে যান। চাকরি পাওয়ার পরের বছর গম আত্মসাৎ মামলার রায় হয় এবং ওই রায়ে তাঁর তিন বছরের কারাদণ্ড হয়। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। তিনি সিলেটের সহকারী কর কমিশনার হিসেবে কাজ করছিলেন আর তাঁর জায়গায় নগদ টাকা ও ভবিষ্যতে চাকরির বিনিময়ে জেল খাটছিলেন সিলেটের জনৈক আবদুর রউফ।
সংবাদটি প্রথম আলোয় প্রথমে বেরোয় ‘সবই সম্ভব’ এই শিরোনামে। তবে এর চেয়েও বিস্ময়কর ও সম্ভবপর ঘটনা আমরা পড়েছিলাম নব্বইয়ের দশকে পত্রিকার পাতায়: একাত্তরে বরিশালের জেল-ভাঙা খুনের আসামি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকায় এসে ২২ বছর পুলিশের দারোগার চাকরি করার পরে ছুটি নিয়ে দেশের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েই জালে আটকা পড়ে যান।
সে যা-ই হোক। আবদুর রহমানের জানা উচিত ছিল কারাগার বাইরের কাজের জায়গার তুলনায় আদতে খারাপ জায়গা নয়। কারাগারে ভালো কাজের জন্য শাস্তিতে রেয়াত পাওয়া যায় আর বাইরের কাজের জায়গায় ভালো কাজ করলে আরও কাজ চাপিয়ে দেওয়া হয়। কারাগারে যেসব কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে, তাঁরা প্রায়ই নিপীড়ন করে আনন্দ পান আর বাইরে কাজের জায়গায় এরূপ লোককে বলা হয় বস কিংবা ম্যানেজার—সর্বোপরি কারাগারে একজন লোকের সব খরচ বহন করেন কর-দাতারা আর বাইরে কষ্টার্জিত বেতন থেকে কর কেটে নেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, সরদার খুশবন্ত সিংয়ের বইয়ে পড়েছিলাম: ইন্ডিয়ান রেলের বগিতে একজন হিন্দিতে লিখে রেখেছিল, ‘আনা ফ্রি, যানা ফ্রি, পাকড়া গায়া তো খানা ভি ফ্রি’; অর্থাৎ ট্রেনে বিনা পয়সায় আসা-যাওয়া করা যায়, ধরা পড়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হলে খাওয়া-দাওয়াটাও বিনা পয়সায় হয়ে যায়।
তো, ওপার বাংলার খ্যাতিমান লেখক ‘জরাসন্ধ’ ছিলেন পেশায় একজন জেলার। তিনি তাঁর লৌহকপাট-এ কারাগার-সংক্রান্ত অনেক চিত্তাকর্ষক কথা ও উপাখ্যানের অবতারণা করেছেন। মনে আছে, কারাগারে কয়েদিরা খুনিকে খুব সম্ভ্রমের চোখে আর গরুচোরকে খুব হেয় চোখে দেখে। কারণ, খুন করতে সাহসের প্রয়োজন আর গরু চুরি করার মধ্যে কোনো আর্ট বা রিস্ক তেমন নেই। আরও স্মরণ আছে, কারাগারের কেরানিবাবু রামজীবনের চাকরিতে আর পদোন্নতি হয় না। কারণ যে-ই অবসরে যান, তাঁর ছেলেকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে যান; অতএব রামজীবন বাবু থিওরি আবিষ্কার করেছিলেন: ‘আগে বাবাজীবন, পরে রামজীবন’। ইদানীং সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী বিদিশার শত্রুর সঙ্গে বসবাস বই পড়তে গিয়ে জানতে পারলাম, এরশাদ যখন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ, তখন কারাগারসংলগ্ন নাজিমুদ্দিন রোডের এক হাজি সাহেবের চারতলা বাড়ির ছাদ থেকে তাঁর সঙ্গে ইশারা-আশারায় কথা বলতে গিয়ে বিদিশা সাইন-ল্যাংগুয়েজে প্রায় পারদর্শীই হয়ে গিয়েছিলেন।
যাকেগ এসব কথা। এবারে এ সংক্রান্ত কিছু মজার গল্প পরিবেশন করা যাক—কারাগারে আটকানো কয়েদিটি জানত যে কারাগারের অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী সব চিঠিপত্র সেন্সর তথা সরকারিভাবে পরীক্ষা করা হয়। তো তার বউ কারাগারে স্বামীর কাছে চিঠি লিখে জানতে চাইল, ‘এবারে আলুর চাষ কোথায় করব?’ সঙ্গে সঙ্গে সে উত্তর পাঠাল, ‘আর যা-ই করো, বাড়ির ভেতরের বাগানে চাষ বা খুঁড়াখুঁড়ি কোরো না, ওখানে আমি আমার সমস্ত অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছি।’ কয়েক দিনের মধ্যেই বউয়ের ফিরতি চিঠি পাওয়া গেল, ‘কয়েকজন উর্দিওয়ালা লোক লেবার নিয়ে এসে বাড়ির ভেতরের বাগান খুঁড়ে উলটপালট করে দিয়ে গেছে। ওরা নাকি অস্ত্রের খোঁজ করছিল, তবে কোনো কিছুই পায় নাই। এখন আমি কী করব?’
‘এখন ওখানে আলুর চাষ করো,’ স্ত্রীর পরবর্তী ডাকে স্বামীর চিঠি পেল।
ওই লোকটির চাকরি হয়েছিল কি না আমরা জানি না—সে গিয়েছিল কারাগারের ওয়ার্ডেনের চাকরির ইন্টারভিউ দিতে। তো তাকে ইন্টারভিউ বোর্ডে বলা হলো, ‘কারাগারের অভ্যন্তরে সব দাগী দুষ্টলোকের বাস। আপনি কি পারবেন এদের নিয়ন্ত্রণ করতে?’ ‘কোনো সমস্যা হবে না, স্যার,’ প্রার্থী ঝটপট জবাব দিল, ‘কেউ আমার অবাধ্য হলে তাকে ঘাড় ধরে প্রধান ফটকের বাইরে বের করে দেব।’
আর একসঙ্গে পলায়নরত সেই দুজন কয়েদি কারাগার থেকে পালাতে পেরেছিল কি না, তাও আমরা জানি না। ওদের প্রথমজন পলায়নের প্রচেষ্টাকালে কারাগারের ছাদের একটা টাইল নিচে পড়ে যাওয়াতে শব্দ হলে পর গার্ড চিৎকার করে উঠল, ‘কে রে, কে ওখানে?’ লোকটার বুদ্ধির প্রশংসা করতেই হয়। সে বিড়ালের আওয়াজ অনুকরণ করে বলল, ‘মিয়াঁও।’ গার্ড আশ্বস্ত হয়ে চুপচাপ বসে রইল। খানিকক্ষণ পরে দ্বিতীয়জন আরেকটা টাইলকে স্থানচ্যুত করলে আবারও গার্ড চিৎকার করে উঠল, ‘কে, কে রে ওখানে?’
‘আরেকটা বিড়াল।’ দ্বিতীয় কয়েদিটি জবাব দিল।
আইজাক আসিমভ তাঁর ট্রেজারি অব হিউমার গ্রন্থে একটি ঐতিহাসিক মজার ঘটনা অন্তর্ভুক্ত করেছেন: অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রুশিয়া তথা জার্মানির সম্রাট ফ্রেডারিক-২ একজন আলোকিত শাসক ছিলেন। তো, তিনি একবার বার্লিনের কারাগার পরিদর্শনে গেলে সম্রাটের প্রশ্নের উত্তরে কয়েদিরা সবাই উচ্চ স্বরে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করতে থাকল; কেবল একজন চুপ করে থাকাতে সম্রাটের কৌতূহল জাগ্রত হলো। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাকে এখানে আনা হয়েছে কেন?’
‘সশস্ত্র ডাকাতি, ইওর ম্যাজেস্টি এবং আমি দোষী ও শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।’ কয়েদিটি জবাব দিল। ফ্রেডারিক তখন তাঁর হাতের ছড়ি দ্বারা মাটিতে জোরে আঘাতপূর্বক বললেন, ‘ওয়ার্ডেন, এই দোষী লোকটাকে মুক্ত করে দাও। ও এখানে থাকলে এত সব নির্দোষ লোককে দোষী বানিয়ে ফেলবে।’
পাদটীকা: ইংরেজি ‘সেনটেন্স’ (Sentence) শব্দটির দুটো অর্থ হয়, ‘শাস্তি’ ও ‘বাক্য’। তো, বিলেতের এক লেখক তাঁর স্বদেশি ভাইকে বলেছিলেন, ‘এই বইটি শেষ করতে আমার চার বছর লেগেছে।’ এটা শুনে লোকটি বলল, ‘আমার একটি সেনটেন্স শেষ করতেই ২০ বছর লেগেছিল।’
আতাউর রহমান: রম্য লেখক। ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক।
গল্পটি আমার মনে পড়ে গেল সম্প্রতি পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাঠ করে: দিনাজপুরে জনৈক আবদুর রহমান ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালে রিলিফের গম আত্মসাৎ করায় আদালতে অভিযুক্ত হন। এরপর থেকে তিনি পলাতক এবং পলাতক অবস্থায় ভুয়া সনদ দেখিয়ে তিনি সরকারের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার চাকরি পেয়ে যান। চাকরি পাওয়ার পরের বছর গম আত্মসাৎ মামলার রায় হয় এবং ওই রায়ে তাঁর তিন বছরের কারাদণ্ড হয়। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। তিনি সিলেটের সহকারী কর কমিশনার হিসেবে কাজ করছিলেন আর তাঁর জায়গায় নগদ টাকা ও ভবিষ্যতে চাকরির বিনিময়ে জেল খাটছিলেন সিলেটের জনৈক আবদুর রউফ।
সংবাদটি প্রথম আলোয় প্রথমে বেরোয় ‘সবই সম্ভব’ এই শিরোনামে। তবে এর চেয়েও বিস্ময়কর ও সম্ভবপর ঘটনা আমরা পড়েছিলাম নব্বইয়ের দশকে পত্রিকার পাতায়: একাত্তরে বরিশালের জেল-ভাঙা খুনের আসামি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকায় এসে ২২ বছর পুলিশের দারোগার চাকরি করার পরে ছুটি নিয়ে দেশের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েই জালে আটকা পড়ে যান।
সে যা-ই হোক। আবদুর রহমানের জানা উচিত ছিল কারাগার বাইরের কাজের জায়গার তুলনায় আদতে খারাপ জায়গা নয়। কারাগারে ভালো কাজের জন্য শাস্তিতে রেয়াত পাওয়া যায় আর বাইরের কাজের জায়গায় ভালো কাজ করলে আরও কাজ চাপিয়ে দেওয়া হয়। কারাগারে যেসব কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে, তাঁরা প্রায়ই নিপীড়ন করে আনন্দ পান আর বাইরে কাজের জায়গায় এরূপ লোককে বলা হয় বস কিংবা ম্যানেজার—সর্বোপরি কারাগারে একজন লোকের সব খরচ বহন করেন কর-দাতারা আর বাইরে কষ্টার্জিত বেতন থেকে কর কেটে নেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, সরদার খুশবন্ত সিংয়ের বইয়ে পড়েছিলাম: ইন্ডিয়ান রেলের বগিতে একজন হিন্দিতে লিখে রেখেছিল, ‘আনা ফ্রি, যানা ফ্রি, পাকড়া গায়া তো খানা ভি ফ্রি’; অর্থাৎ ট্রেনে বিনা পয়সায় আসা-যাওয়া করা যায়, ধরা পড়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হলে খাওয়া-দাওয়াটাও বিনা পয়সায় হয়ে যায়।
তো, ওপার বাংলার খ্যাতিমান লেখক ‘জরাসন্ধ’ ছিলেন পেশায় একজন জেলার। তিনি তাঁর লৌহকপাট-এ কারাগার-সংক্রান্ত অনেক চিত্তাকর্ষক কথা ও উপাখ্যানের অবতারণা করেছেন। মনে আছে, কারাগারে কয়েদিরা খুনিকে খুব সম্ভ্রমের চোখে আর গরুচোরকে খুব হেয় চোখে দেখে। কারণ, খুন করতে সাহসের প্রয়োজন আর গরু চুরি করার মধ্যে কোনো আর্ট বা রিস্ক তেমন নেই। আরও স্মরণ আছে, কারাগারের কেরানিবাবু রামজীবনের চাকরিতে আর পদোন্নতি হয় না। কারণ যে-ই অবসরে যান, তাঁর ছেলেকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে যান; অতএব রামজীবন বাবু থিওরি আবিষ্কার করেছিলেন: ‘আগে বাবাজীবন, পরে রামজীবন’। ইদানীং সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী বিদিশার শত্রুর সঙ্গে বসবাস বই পড়তে গিয়ে জানতে পারলাম, এরশাদ যখন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ, তখন কারাগারসংলগ্ন নাজিমুদ্দিন রোডের এক হাজি সাহেবের চারতলা বাড়ির ছাদ থেকে তাঁর সঙ্গে ইশারা-আশারায় কথা বলতে গিয়ে বিদিশা সাইন-ল্যাংগুয়েজে প্রায় পারদর্শীই হয়ে গিয়েছিলেন।
যাকেগ এসব কথা। এবারে এ সংক্রান্ত কিছু মজার গল্প পরিবেশন করা যাক—কারাগারে আটকানো কয়েদিটি জানত যে কারাগারের অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী সব চিঠিপত্র সেন্সর তথা সরকারিভাবে পরীক্ষা করা হয়। তো তার বউ কারাগারে স্বামীর কাছে চিঠি লিখে জানতে চাইল, ‘এবারে আলুর চাষ কোথায় করব?’ সঙ্গে সঙ্গে সে উত্তর পাঠাল, ‘আর যা-ই করো, বাড়ির ভেতরের বাগানে চাষ বা খুঁড়াখুঁড়ি কোরো না, ওখানে আমি আমার সমস্ত অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছি।’ কয়েক দিনের মধ্যেই বউয়ের ফিরতি চিঠি পাওয়া গেল, ‘কয়েকজন উর্দিওয়ালা লোক লেবার নিয়ে এসে বাড়ির ভেতরের বাগান খুঁড়ে উলটপালট করে দিয়ে গেছে। ওরা নাকি অস্ত্রের খোঁজ করছিল, তবে কোনো কিছুই পায় নাই। এখন আমি কী করব?’
‘এখন ওখানে আলুর চাষ করো,’ স্ত্রীর পরবর্তী ডাকে স্বামীর চিঠি পেল।
ওই লোকটির চাকরি হয়েছিল কি না আমরা জানি না—সে গিয়েছিল কারাগারের ওয়ার্ডেনের চাকরির ইন্টারভিউ দিতে। তো তাকে ইন্টারভিউ বোর্ডে বলা হলো, ‘কারাগারের অভ্যন্তরে সব দাগী দুষ্টলোকের বাস। আপনি কি পারবেন এদের নিয়ন্ত্রণ করতে?’ ‘কোনো সমস্যা হবে না, স্যার,’ প্রার্থী ঝটপট জবাব দিল, ‘কেউ আমার অবাধ্য হলে তাকে ঘাড় ধরে প্রধান ফটকের বাইরে বের করে দেব।’
আর একসঙ্গে পলায়নরত সেই দুজন কয়েদি কারাগার থেকে পালাতে পেরেছিল কি না, তাও আমরা জানি না। ওদের প্রথমজন পলায়নের প্রচেষ্টাকালে কারাগারের ছাদের একটা টাইল নিচে পড়ে যাওয়াতে শব্দ হলে পর গার্ড চিৎকার করে উঠল, ‘কে রে, কে ওখানে?’ লোকটার বুদ্ধির প্রশংসা করতেই হয়। সে বিড়ালের আওয়াজ অনুকরণ করে বলল, ‘মিয়াঁও।’ গার্ড আশ্বস্ত হয়ে চুপচাপ বসে রইল। খানিকক্ষণ পরে দ্বিতীয়জন আরেকটা টাইলকে স্থানচ্যুত করলে আবারও গার্ড চিৎকার করে উঠল, ‘কে, কে রে ওখানে?’
‘আরেকটা বিড়াল।’ দ্বিতীয় কয়েদিটি জবাব দিল।
আইজাক আসিমভ তাঁর ট্রেজারি অব হিউমার গ্রন্থে একটি ঐতিহাসিক মজার ঘটনা অন্তর্ভুক্ত করেছেন: অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রুশিয়া তথা জার্মানির সম্রাট ফ্রেডারিক-২ একজন আলোকিত শাসক ছিলেন। তো, তিনি একবার বার্লিনের কারাগার পরিদর্শনে গেলে সম্রাটের প্রশ্নের উত্তরে কয়েদিরা সবাই উচ্চ স্বরে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করতে থাকল; কেবল একজন চুপ করে থাকাতে সম্রাটের কৌতূহল জাগ্রত হলো। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাকে এখানে আনা হয়েছে কেন?’
‘সশস্ত্র ডাকাতি, ইওর ম্যাজেস্টি এবং আমি দোষী ও শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।’ কয়েদিটি জবাব দিল। ফ্রেডারিক তখন তাঁর হাতের ছড়ি দ্বারা মাটিতে জোরে আঘাতপূর্বক বললেন, ‘ওয়ার্ডেন, এই দোষী লোকটাকে মুক্ত করে দাও। ও এখানে থাকলে এত সব নির্দোষ লোককে দোষী বানিয়ে ফেলবে।’
পাদটীকা: ইংরেজি ‘সেনটেন্স’ (Sentence) শব্দটির দুটো অর্থ হয়, ‘শাস্তি’ ও ‘বাক্য’। তো, বিলেতের এক লেখক তাঁর স্বদেশি ভাইকে বলেছিলেন, ‘এই বইটি শেষ করতে আমার চার বছর লেগেছে।’ এটা শুনে লোকটি বলল, ‘আমার একটি সেনটেন্স শেষ করতেই ২০ বছর লেগেছিল।’
আতাউর রহমান: রম্য লেখক। ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক।
No comments