বিশেষ সাক্ষাৎকার : ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ-সমন্বয় নেই বলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগোচ্ছে না

আগামীকাল জাতীয় সংসদে বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী। বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে কালের কণ্ঠের মুখোমুখি হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন মহসীন হাবিব
কালের কণ্ঠ : অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন।


বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কী ধরনের বাজেট আপনি প্রত্যাশা করেন?
সালেহ উদ্দিন আহমেদ : বাংলাদেশে বর্তমান যে প্রেক্ষিত, সেখানে রয়েছে প্রচণ্ড মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগে এসেছে স্থবিরতা, অর্থনীতি চলছে মন্থর গতিতে। ফরেন এঙ্চেঞ্জ রিজার্ভের ওপর চাপ পড়েছে, আমদানি-রপ্তানি, ফরেন এঙ্চেঞ্জ মার্কেটে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ পড়ছে। আমাদের প্রবৃদ্ধির যে বিষয়; সেটা আরেকটু বেশি হওয়া দরকার। যাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়। আরো একটি মৌলিক বিষয় হলো, ব্যক্তিগত আয় এবং আঞ্চলিক আয়ের একটি সুষম বণ্টন। সেটা হচ্ছে না। একদিকে আয়ের বৈষম্য বাড়ছে, আবার অন্যদিকে আঞ্চলিক আয় এবং কর্মসংস্থান হচ্ছে না। এসব তো আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ। এমন অবস্থায় বাজেট হওয়া উচিত বাস্তবসম্মত এবং বাস্তবায়নযোগ্য। গতবার যে বাজেট করা হয়েছিল, সেটি ১৩২ হাজার কোটি টাকার একটি বাজেট ছিল। সেটা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। আমার মনে হয় না সেটা বাস্তবায়ন করা গেছে। বিশেষ করে এডিবির বিষয়টি তাড়াহুড়ো করে করা হয়েছে। কর্মসংস্থানের বিশেষ কিছু হয়নি। অতএব সবদিক দিয়ে যদি দেখেন, বড় বাজেট হয়েছিল, কিন্তু বাজেটের সুফল জনগণ, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমরা ভোগ করতে পারিনি। আর একটি ব্যাপার হলো পিপিপি। গতবারও আমি বলেছিলাম, পিপিপির সীমারেখা স্পষ্ট না হলে প্রাইভেট সেক্টর কোনো দিনও আসবে না। মূল্য ইস্যু কতটা চার্জ করবে। সরকার কতটা সাবসিডি দেবে, পরে সেটা চলবে কি না। অতএব বাজেট যদি আরো একটু ছোটও হতো, তাহলে কোনো ক্ষতি ছিল না। আমি মনে করি না, বড় বাজেট হতেই হবে। অনেকে মনে করেন, উন্নয়নশীল দেশে বড় বাজেট হওয়ার প্রয়োজন আছে। হ্যাঁ, প্রয়োজন আছে, কিন্তু যদি যথাযথভাবে খরচ করতে না পারেন এবং আপনি যদি লোকদেখানো বাজেট করেন, তাহলে এঙ্পেকটেশনটা বেড়ে যেতে পারে। সে প্রত্যাশা পূরণ না হলে সরকারের ওপরই দায়দায়িত্ব চাপে এবং তার কুফল ভোগ করতে হয়। অতএব বাজেটটা হবে বাস্তবায়নমুখী এবং কতগুলো প্রায়োরিটি সেক্টরে বাজেটটা ইস্যু করতে হবে।
কালের কণ্ঠ : এ বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে সাধারণ মানুষ এবং অনেক অর্থনীতিবিদও বলেন যে এ ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতার অভাব লক্ষ করা যায়। সেটাই কি বাস্তবায়ন না হওয়ার মূল কারণ?
সালেহ উদ্দিন আহমেদ : হ্যাঁ, এটা হয়তো আমি পরে বলতাম। এই সরকারের আড়াই বছর হয়ে গেছে, কিন্তু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়নি। কথাবার্তা চলছে, কিন্তু সে ক্ষেত্রে আবার একজনের সঙ্গে আরেকজনের কথার কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থমন্ত্রী একরকম কথা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক অন্য রকম উদ্যোগ নিচ্ছে। অতএব অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সামর্থ্য আপনার যা-ই থাকুক, সম্পদ যতই কম থাকুক, যদি ব্যবস্থাপনা ভালো করেন_ওই অল্প সম্পদ দিয়েই ভালো কিছু করতে পারেন। এখানে একটি সমন্বয়হীনতা রয়েছে, সরকারের নানা ধরনের পলিসি থাকবে, বিদেশি বিষয়ে পলিসি থাকবে। সেগুলো ভিন্ন বিষয়; কিন্তু সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিষয়ে একটি সমন্বয় থাকতে হবে। এ জিনিসটি গুরুত্ব পায়নি। দেখবেন, মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এটি মূল দায়িত্ব। সেন্ট্রাল ব্যাংক বেশি যেটা করে সেটা হলো টাকার সরবরাহ কমিয়ে চাহিদাটাকে নিয়ন্ত্রণ করে বেশি। ঋণ যেন বেশি না হয়। টাকা যেন বেশি না হয়। এই সরবরাহ দিকটা বাংলাদেশ ব্যাংক দেখে থাকে। ব্যাংকগুলোকে বলে দিতে হবে উৎপাদনশীল খাতে বেশি ঋণ দেওয়ার কথা। ব্যাংককে তো আর বলা যাবে না যে ভোগ্যপণ্যের ওপর ঋণ দেওয়া যাবে না। বলতে হবে, কৃষির ওপর ঋণ দাও। তাহলে ব্যাংকগুলো একটি মেসেজ পাবে। এখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। মূল্যস্ফীতি এবং বাজারে মনিটরিং করার একটি ব্যাপার আছে। তারপর ধরুন, স্ট্রাকটারের দিকটা আছে। এই যে বাজারজাত করার জন্য ঘাটে ঘাটে চাঁদা, পাঁচ টাকায় যেখানে বেগুন উৎপন্ন হয়, সেখানে বাজারে দাম ২৫ টাকায় উঠে যাচ্ছে। বিষয়টি এ রকম হবে কেন? এ বিষয়গুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের বদলে বরং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেই দেখতে হবে। তারপর আসুন এডিবি বাস্তবায়নের প্রশ্নে, প্ল্যানিং কমিশন এটাকে অ্যাপ্রোচ করে। প্রকল্প পরিচালনা করবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পরিচালকরা, তাই না? তাদের এফিসিয়েন্সির একটা বিষয় আছে। অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড়বে। তারা দেখবে কত তাড়াতাড়ি অর্থ ছাড়া হচ্ছে। তারপর দেখতে হবে এটি কারা মনিটরিং করছে? এই মনিটরিং আহামরি কোনো বিষয় নয়, যাঁরা মনিটর করেন তাঁরা শুধু দেখেন ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরে কত টাকা খরচ হয়েছে। অর্থাৎ সার্বিকভাবেই সমন্বয় নেই দেখে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে যাচ্ছে না। আর বাজেটটা তো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এটাও কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
কালের কণ্ঠ : আপনি মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাস্ফীতির কথা বলেছেন। আমরা সাধারণ মানুষের কণ্ঠেও শুনতে পাচ্ছি যে যেহেতু মুদ্রাস্ফীতি অব্যাহত রয়েছে, সেহেতু আয়কর সীমা বাড়ানো উচিত। এটা আপনি সমর্থন করেন কি?
সালেহ উদ্দিন আহমেদ : আয়কর সীমা বাড়ানোর একটি বিষয় আছে। আপনি লক্ষ করে দেখবেন, রেভিনিউ যারা দিয়ে যাচ্ছে, তাদের ওপরই চড়াও হতে দেখা যায়। ধরুন, আপনি-আমি জানালাম যে আমার-আপনার আয় এক লাখ ৬০ হাজারের বেশি, পরেরবার আমাদের ওপরই বাড়তি রেভিনিউ চাপানোর প্রবণতা দেখা যাবে। মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, মানুষজনের চাহিদা বাড়ছে। সুতরাং সিলিংটা বাড়ানো উচিত। কিন্তু পাশাপাশি দেখতে হবে, অনেকে আয়করের সীমা থেকে ফসকে যাচ্ছে। স্বল্প আয়ের মানুষকে কেন আপনি টার্গেট করবেন? আপনি আয়করের নেট বাড়ান। যাদের ওপরের দিকে বেশি আয় তাদের আরো বেশি প্রগ্রেসিভ করেন। যাদের মাসে লাখ লাখ টাকা আয় তারা যদি আয়কর ১০ পার্সেন্ট বেশি দেয়, তার ওপর আঘাত পড়বে না। কিন্তু যার মাসে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় তার জন্য ১০ হাজার টাকা অপঘাত করবে। অতএব আমার মনে হয়, সিলিংটা বাড়ানো দরকার। এ ছাড়া অনেক লোক আছে যাদের উঁচু লিডিং স্ট্যান্ডার্ড রয়েছে; কিন্তু আয়কর দিচ্ছে না। তা ছাড়া দেখুন, মুদ্রাস্ফীতিকে আমরা বলি ট্যাঙ্ অন দ্য পুওর। সরাসরি তাদের কাছ থেকে ট্যাঙ্ নিচ্ছে না, কিন্তু দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাদের কাছ থেকে টাকাটা বেরিয়ে যাচ্ছে, এমনকি সরকারের যেসব সার্ভিস রয়েছে সেগুলোর দাম বাড়ছে। অতএব আয়কর আদায়ের চেয়ে বড় কথা দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে হবে, কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে এবং এই কর্মসংস্থানের মাধ্যমেই দরিদ্র লোকের আয়টা আয়ে পরিণত করতে হবে। ওটাই হলো প্রো-অ্যাকটিভ মুড। এর পরও ধরুন, জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও যদি আয়ের ব্যবস্থা থাকে, আপনি অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।
কালের কণ্ঠ : সরকার টার্গেট করেছিল পাঁচ লাখ নতুন করদাতা খুঁজে বের করবে। কিন্তু দেখা গেছে মাত্র এক লাখ ৮৪-৮৫ হাজার করদাতা খুঁজে পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপনি কোনো বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহারের কথা ভাবছেন কি?
সালেহ উদ্দিন আহমেদ : এটি অত্যন্ত সহজ একটি ব্যাপার। কেন করা হচ্ছে না, তা আমি জানি না। যাঁরা আয়কর দিচ্ছেন তাঁদের 'টিন' রয়েছে। এই টিনকে আপনি ভাগ করে ফেলুন। যারা আয়করের আওতায় আসতে পারে, তাদের সরেজমিনে ধরলেই পেয়ে যেতে পারেন। দেখুন বড় বড় শপিং মলে যাদের দোকান রয়েছে, ব্যবসা রয়েছে, তারপর ডাক্তার, উকিল রয়েছেন। এঁদের অনেকের আয় অসম্ভব উঁচু হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের আয়কর ধরা হচ্ছে না। তাঁদের কেন আয়করের আওতায় আনতে পারবেন না? আমার ধারণা, সরকারের সংশ্লিষ্ট লোকদের সদিচ্ছার অভাব আছে। আপনি দেখুন, কত দামি দামি গাড়ি, বিদেশি ফার্নিচার আসছে। এগুলো কিনছে কারা? লোক আছে নিশ্চয়ই। পদ্ধতিগত ব্যাপারে আপনার ট্যাঙ্ ডিপার্টমেন্টের অর্থনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে কিভাবে আয়করদাতা চিহ্নিত করা যায়, সেটা ঠিক করতে পারেন। ডিপার্টমেন্ট না পারলে তারাই বের করে দেবে উপায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কী হয়? আমার মনে হয় এটা এনবিআরের লোকরাও জানেন কী করে চিহ্নিত করতে হয়। বাংলাদেশকে প্রত্যক্ষ আয়করের ওপর বেশি নির্ভর করতে হবে, পরোক্ষ নয়। এমনি মানুষের আয় কম। আপনি রেট বাড়াবেন, সেটা গিয়ে পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর। ভর্তুকি প্রত্যাহার করবেন, সেটাও দেখা যাবে গিয়ে পড়েছে পরিবহনের ওপর। আপনাকে সরাসরি ট্যাঙ্ েযেতে হবে।
কালের কণ্ঠ : ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অনুসারে বাজেটে কোন কোন খাতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন?
সালেহ উদ্দিন আহমেদ : ইমিডিয়েট আমার যেটা মনে হয়_জ্বালানি, যোগাযোগব্যবস্থা এবং সঙ্গে সঙ্গে অন্য ইনফ্রাস্ট্রকচারগুলো। কারণ এগুলো সোশ্যাল ক্যাপিটাল তৈরি করে। একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা গেলে (ইনফ্রাস্ট্রাকচারের দিক দিয়ে) প্রাইভেট সেক্টর এমনিতেই এগিয়ে আসবে। এ প্রসঙ্গে আমি এডিবি বাস্তবায়নের কথা বলি। এডিবিতে অনেক প্রকল্প আছে। এবার আবার নতুন প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। আপনি রাস্তা এবং পোর্টগুলোর ব্যাপারে বড় বড় কিছু প্রজেক্ট নিন। নিয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করুন। এই ছোট ছোট প্রজেক্ট সময়মতো হচ্ছে না, ফলে নানা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। আরেকটি বিষয় হলো, সময়মতো ব্যয় করা। সময়মতো না করলে দেখা যায় এক কোটি টাকার জায়গায় পরের বছর দুই কোটি টাকা লাগে। আর বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য_এ দুটো বিষয়ে কিন্তু বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। যথাযথ এবং গুণগত মান বাড়াতে হবে শিক্ষায়। আপনি অবকাঠামো নির্মাণ করবেন, কিন্তু শিক্ষকের বেতন বাড়াবেন না, তাহলে ভালো শিক্ষক কোথায় পাবেন? আবার উচ্চশিক্ষাও আসবে না যদি সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি শিক্ষায় গুরুত্ব না দেন। টিনের ঘরে ভালো শিক্ষা হতে পারে, আবার বড় বিল্ডিংয়ে তা না-ও হতে পারে। আর স্বাস্থ্যের বিষয়টি হলো, স্বাস্থ্য কিন্তু ইনকাম সৃষ্টি করে। গরিবের স্বাস্থ্য যদি খারাপ হয়ে যায়, তাহলে আর ভালো হয় না। বড়লোকের সমস্যা নেই। গরিব, নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তকেও স্বাস্থ্য খারাপ হলে সব হারাতে হয়। বাড়িঘর বিক্রি করে দিতে হয়। পুরো পরিবারের ওপর চাপ পড়ে। সুতরাং বেসিক হেলথ এবং হেলথ ফ্যাসিলিটিজ থাকা দরকার। আর আবাসন, ক্লাইমেট চেঞ্জ, এসব তো রয়েছেই। আমাদের দেশে ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ে নানা বিষয় আছে, যেগুলো আপনারা জানেন। এনজিওগুলো কোনোটা পারবে, কোনোটা পারবে না। কিন্তু দেশের জনগণকে সক্ষম করে তুলতে হবে। সুতরাং বাজেটে সাধারণ জনগণের চাহিদা ও সোশ্যাল বেষ্টনীর বিষয়টি থাকতে হবে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী যেটার ফল ভোগ করে সেটার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো সামাজিক নিরাপত্তা। আপনি লক্ষ করুন, বড় শক্তিশালী কম্পানিগুলোতে, গার্মেন্টে কোনো ইনস্যুরেন্স নেই। সময় লাগবে, কিন্তু সরকারের এখন এসব নিয়ে চিন্তা করা উচিত। একজন লোক একটি প্রতিষ্ঠানে ১০ বছর চাকরি করার পর হঠাৎ চাকরি হারিয়ে পথে বসবে_এটা হয় না।
কালের কণ্ঠ : এই বাজেটের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কতটা প্রতিফলিত হবে? আপনি কী মনে করেন?
সালেহ উদ্দিন আহমেদ : আমি মনে করি, একটি দল ক্ষমতায় আসতে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। তার সব পালন করতে হবে, এমন কোনো কথা নয়। কিন্তু বেসিক কিছু বিষয়, যেমন আমরা আয় বাড়াব, কর্মসংস্থান করব, প্রবৃদ্ধি বাড়াব, ইমপোর্ট বাড়বে।
আরেকটি বিষয় হলো সামাজিক নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। প্রশাসনিক তথা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এগুলো কিন্তু বড় ইস্যু। সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রপার খাতগুলোতে হাত দিতে হবে। সরকারের কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অনেক টাকা ব্যয় হয়। রাজনৈতিক চাপেও আপনি নৈর্ব্যক্তিকভাবে বলবেন, এ টাকাটা এ খাতে ব্যয় না হলেও চলত। এমপিদের একটি ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সব এমপি, দেখবেন, আমার এলাকায় এটা করেন, আমার এলাকায় ওটা করেন বলছেন। কিন্তু তাঁদের ভাবতে হবে যে বিষয়টি তাঁর এলাকায় অপেক্ষাকৃত ভালো আছে সেটি অন্য এলাকায় করার সুযোগ দিতে হবে। তবে এগুলো দেখা বাজেটের দায়িত্বও অবশ্য নয়। বাজেটের মূল কাজ হলো, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং সামাজিক নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা আনা। কারণ অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা না এলে সামাজিক অস্থিতিশীলতা বেড়ে যায়। যেমন_দেশের শিক্ষিত গোষ্ঠীকে যদি কর্মসংস্থান না দিতে পারেন, তাহলে তারা অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়। সন্ত্রাসী-বেআইনি কাজে লিপ্ত হয়। অতএব এটি কিন্তু বাজেটে একটি বড় দিক।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
সালেহ উদ্দিন আহমেদ : আপনাকেও ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.