হরতালে গাড়ি পোড়ানো-রাজনীতি হোক সহিংসতামুক্ত
রাজনীতি আবার সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠছে। এমন চিত্র নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৫ জুনের হরতালে আবারও ফুটে উঠেছে রাজনীতির সেই পুরনো চেহারা। ৪ জুন রাতে পরের দিনের হরতালকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে সহিংসতা ঘটেছে।
বেশ কিছু গাড়িতে অগি্নসংযোগসহ ভাঙচুরের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাবলি গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক ধারাকে আবারও করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাজনীতিতে পরমতসহিষ্ণুতা এবং জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্যের বিষয়টি জরুরি হলেও তা উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। হরতালকে কেন্দ্র করে আবারও অগি্নসংযোগ ও ভাঙচুরের ফলে জনমনে আতঙ্কের নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ৪ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসন ও চারদলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে প্রতীয়মান হয়, সরকারি ও বিরোধী জোটের মধ্যে রাজনৈতিক দূরত্ব আরো বাড়বে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
৫ জুনের হরতাল নিয়ে নানা মহলে বহু প্রশ্ন ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে উচ্চ আদালতের দেওয়া সাম্প্রতিক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট রাজনৈতিক জটিলতা নিরসনে আলোচনার কোনো বিকল্প আছে বলে আমরা মনে করি না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন, এ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার আর কোনো সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের বিরোধিতা করে বিরোধী দল তাদের ভাষায় 'গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে' হরতাল আহ্বান করে। এ দেশের সাধারণ মানুষের মনে হরতাল সম্পর্কে অতীতের কর্মকাণ্ড থেকে ভীতিকর অভিজ্ঞতা সঞ্চিত রয়েছে। পিকেটিং আর হরতাল প্রতিরোধের নামে যেসব চিত্র অতীতে পরিলক্ষিত হয়েছে, তা কোনোভাবেই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য প্রীতিকর নয়। এর মধ্য দিয়ে রাজনীতি অধিকতর সংঘাতপূর্ণ হয়ে ওঠার পাশাপাশি জানমালের ক্ষয়ক্ষতিসহ দেশের অর্থনীতি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়সহ অন্যান্য মহল থেকে এর আগে বহুবার হরতালের বিকল্প কর্মসূচি দিতে রাজনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হলেও তা উপেক্ষিত থেকে গেছে। আমরা মনে করি, জনগণ ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে জাতীয় সংসদে পাঠিয়েছে, সেই সংসদেই আলোচনাক্রমে সব কিছু মীমাংসা করা উচিত। জনকল্যাণের আরেক নাম যদি হয় রাজনীতি, তাহলে তা কখনোই জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো উপেক্ষা করতে পারে না। নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় যেখানে সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানোর সব রাস্তা খোলা আছে, সেখানে জাতীয় সংসদ বর্জন করে রাজপথে নেমে রাজনীতিকে সহিংস করে তোলার এমন কর্মকাণ্ড কতটা যুক্তিযুক্ত কিংবা সমীচীন, সে প্রশ্নও থেকে যায়। যে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে হরতাল ডাকা হলো, তা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার শামিল। কাজেই এ ক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানসূত্র বের করা উচিত। সরকার এ নিয়ে বিরোধীপক্ষকে আলোচনায় বসার আহ্বানও ইতিমধ্যে জানিয়েছে।
আমরা সংঘাতপূর্ণ ও জনজীবনের জন্য আতঙ্কজনক কর্মকাণ্ডের অবশ্যই অবসান চাই। রাজনীতিবিদদের দায়বদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আরো বলতে চাই, জনস্বার্থ ক্ষুণ্ন করে এমন সব কিছু পরিত্যাগ করে জাতীয় সংসদকে কার্যকর ও অর্থবহ করে তোলার অঙ্গীকার থেকে তাঁরা যেন বিচ্যুত না হন। গণতন্ত্রের পথ কণ্টকাকীর্ণ করা হলে তা কারো জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। অদূরদর্শী রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কুফল বহুমুখী হতে বাধ্য। নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার রদবদলের যে ব্যবস্থা দেশে চালু হয়েছে, তা যেন কোনোভাবেই নস্যাৎ না হয়, এটি নিশ্চিত করার দায় প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের। আমরা আশা করি, আলোচনার মাধ্যমেই সব সমাধান খোঁজা হবে। রাজনীতিকদের দায়িত্বশীলতা, দায়বদ্ধতা ছাড়া রাজনীতির বিকাশ এবং দেশ ও জাতির বৃহৎ স্বার্থ রক্ষা করা আদৌ সম্ভব নয়।
No comments