কথার বড়াই by জাহিরুল ইসলাম

কিছু মানুষ আছেন কথার বড়াই করাই তাদের স্বভাব। কথা রাখতে না পারলেও বড় কথা বলে আরেকজনকে টেক্কা দিতে পারলে তারা তৃপ্তি অনুভব করেন। রাজনীতিবিদদের মধ্যেও এই প্রবণতা প্রায়শই দেখা যায়। রাজনীতিতে কথার গুরুত্ব আছে বটে। তবে রাজনীতি যে শুধু কথার খেলা নয় সেটা তারা বুঝতেই চান না। আর বুঝতে চান না বলেই যত বিপত্তি। ২৬ নভেম্বর খুলনা অভিমুখে রোডমার্চের সময় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুরিয়া মোড়ে পথসভায়


বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে একটি নয়, দুটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। একটি মাওয়া রুটে এবং অপরটি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া-পাবনা রুটে। বর্তমান সরকারও সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে এ ধরনের সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখতে বলেছে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই দুটি পদ্মা সেতু হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হবে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, এর অর্থায়ন হবে কোত্থেকে? এবার পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার ঋণ দিতে চেয়েছিল। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংকের ঋণ আটকে যাওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পও থমকে আছে। ধরে নিলাম, ক্ষমতায় এলে বিএনপি বিশ্বব্যাংকের দ্বারস্থ না হয়ে অন্য দাতাদের দ্বারস্থ হবে। তারা যে বিএনপিকে ঋণ দেবে সেই নিশ্চয়তাই-বা কী?
সমস্যা আরও আছে। প্রথম পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে যেখানে অনেক মানুষকে বাস্তুচ্যুত হতে হবে, সেখানে দ্বিতীয় আরেকটি সেতু নির্মাণের ফলে যেসব মানুষ এই সমস্যার সম্মুখীন হবে তাদের সম্পর্কে কোনো পক্ষই কিছু বলছে না। এর যে পরিবেশগত এবং বাস্তুগত প্রভাব পড়বে, যেসব মানুষ জীবিকা হারাবে; কীভাবে তাদের পুনর্বাসন করা হবে_ বক্তব্যে এসব প্রশ্নেরও কোনো উত্তর মেলে না।
রাজনীতি সবসময় জনস্বার্থে পরিচালিত হওয়া উচিত। আর যেসব রাজনীতিবিদ বাকচাতুর্য প্রদর্শন করে জনগণকে ধোঁকা দিয়ে রাজনীতি করতে চান তারা বেশি দিন ময়দানে টিকতে পারেন না। কেননা একথা সত্য, একটা নির্দিষ্ট সময় কিছু মানুষকে বোকা বানানো সম্ভব হলেও সবসময় সব মানুষকে বোকা বানানো সম্ভব নয়।
আরেকটি পদ্মা সেতু হলে দেশের মধ্যাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ যে খুব সহজ হবে সে কথা সবাই জানে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ক্ষমতায় এলে বিএনপি আদৌ তা করতে পারবে কি? একটি পদ্মা সেতু নির্মাণের অর্থই যখন সংকুলান হচ্ছে না তখন দুুটি সেতুর স্বপ্ন আকাশ কুসুমই বলা চলে। স্বপ্নে যত ইচ্ছা খাওয়া সম্ভব। তাতে পেটে জায়গার অভাব ঘটে না কিংবা পেটও খারাপ করে না। তবে বাস্তবতা হলো, খালি পেট খালিই থেকে যায়।
কবি কুসুম কুমারী দাস দেশে এমন মানুষ চেয়েছিলেন যে কথায় বড় না হয়ে কাজে বড় হবে। কেননা, উন্নয়নের জন্য কথার চেয়ে কাজের দরকার বেশি। দেশ ও জনগণ- উভয়ের উন্নতির জন্যই এমন মানুষ এখন খুব প্রয়োজন।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে পদ্মা সেতু নিমাণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এক্ষেত্রে নেতারা কথার চেয়ে কাজে বড় হলেই জনগণের কল্যাণ হবে। তবে বর্তমান সরকার যেহেতু দুটি পদ্মা সেতুর কথা বলেছে তাই কথার বড়াই দেখাতে বিএনপির জন্য ভালো হয় যদি তারা তিন বা চারটি সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয়।
zahirul.du@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.