ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-ছাত্রীদের আবাসন সমস্যা বাড়ছেই
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা এখন প্রায় সমান সমান। অথচ ছাত্রদের জন্য আছে ১৩টি হল আর ছাত্রীদের জন্য চারটি। আবাসনের ক্ষেত্রে চরমভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে\ঢাবি' র ছাত্রীরা। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ছাত্রীদের বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে বেসরকারি হোস্টেল কিংবা সাবলেটে, যা বেশ ব্যয়বহুল এবং ততটা নিরাপদও নয়। অথচ তাদেরই নিরাপদ আবাসস্থল সবচেয়ে বেশি জরুরি। ঢাবির ছাত্রীদের আবাসন সংকট নিয়ে প্রতিবেদনটি লিখেছেন মৌনতা
আরওয়া\ভোগান্তির শেষ নেই 'ছোট্ট একটা রুম। গাদাগাদি করে ছয়জনের থাকা। চলাফেরা করতে গেলে একজনের গায়ে আরেকজনের গা ধাক্কা লাগে। পড়াশোনার পরিবেশের কথা ভাবা-ই যায় না। রিডিংরুমে পড়তে গেলেও সমস্যা। সেখানেও জনসংখ্যা অত্যাধিক। ডাইনিং, ক্যান্টিনে নির্দিষ্ট সময়ে দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে খাবার নিতে হয়, যা অত্যন্ত বিরক্তিকর। এখানে এসেছি পড়াশোনা করতে, কিন্তু প্রতি মুহূর্তে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়।' বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের আবাসিক ছাত্রী সামিরা আনজুম আনিলা। তার মতো অভিযোগ হলের সবার।
প্রতিক্ষার প্রহর যেন শেষ হয়না
এদিকে আবাসিক হলের অফিস চলাকালীন প্রতিদিন দেখা যায় হলে আবাসিক হওয়ার জন্য নতুন ছাত্রীদের জটলা। হল অফিসগুলোতে বিজ্ঞপ্তি টানানো আছে_ ২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রীদের দ্বৈতাবাসিক সিট বণ্টনের নিয়মাবলি। আছে বেশ কিছু ছাত্রীর জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষ নম্বর। ২০০৯-২০১০ শিক্ষাবর্ষের যেসব ছাত্রীর মেধা স্কোর প্রথমদিকে তাদের গুটিকয়েক হলে আবাসিক হতে পেরেছে। বাকিরা প্রতিদিন ক্লাস চলাকালীন ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে নয়তো ক্লাস মিস দিয়ে সিটের জন্য হল অফিসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকেন। আবাসিক শিক্ষিকারা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাউকে কাউকে আশ্বাস দেন। কারও কপালে তাও জোটে না। ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের এমনই এক ছাত্রী তামান্না রহমান জানালেন, 'গত এক বছর ধরে একটি দ্বৈতাবাসিক সিটের জন্য প্রায় প্রতিদিন ক্লাস শেষে কিংবা ক্লাস বাদ দিয়ে এসে বসে থাকতাম, যদি হলে একটি সিট হয়! আজ পর্যন্ত আমি হলে আবাসিক হতে পারলাম না। বাবা-মা যদি দেখতেন সর্বোচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তে এসে তাদের আদরের মেয়েটি একটি আশ্রয়ের জন্য একটু থাকার জায়গার জন্য কীরকম অসহায়ের মতো ঘুরছে; তাহলে বোধহয় এখানে ভর্তি করাতেন না।'
ওদের কী হবে
২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষের অনেকেই এখন পর্যন্ত হলে আবাসিক হতে পারেননি। এর মধ্যেই আবার শুরু হয়ে যাচ্ছে ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া। পুরনো যারা এখনও হলে আবাসিক হতে পারেনি তারা নিত্যদিন হল অফিসে ধরনা দিচ্ছেন শুধু একটা থাকার জায়গার জন্য, সেখানে নতুন ভর্তি হওয়া আরেক শিক্ষাবর্ষের মেয়েরা এসেই পড়বেন অথৈই সমুদ্রে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে লালন করা স্বপ্ন তখন অনেকের কাছে শুধু দুঃস্বপ্নই মনে হবে। হলে আবাসিক হতে না পেরে অধিকাংশ ছাত্রীর আবাস হয় বেসরকারি ছাত্রী হোস্টেলে, নয়তো কোনো পরিবারের সঙ্গে সাবলেটে থাকা, যা মোটামুটি ব্যয়বহুল। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার নয়। তাই সাধারণ সিট কিংবা গণরুম যেখানেই হোক, জরুরি ভিত্তিতে দরকার হলে আবাসিক হওয়া।
উপেক্ষিত ছাত্রীরা
ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাবির আবাসিক ছাত্রী হল রোকেয়া হলে ছাত্রী ধারণক্ষমতা ৯৬৫, কিন্তু এখানে আছে প্রায় ১৯০০ ছাত্রী। শামসুন্নাহার হলে ছাত্রী ধারণক্ষমতা ৮১০, বর্তমানে আবাসিক ১৬৫০-এরও অধিক। তেমনি বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ছাত্রী ধারণক্ষমতা ৫৩৬। ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৩০৪ জন, কিন্তু এখানেও প্রায় দ্বিগুণ ছাত্রীকে আবাসিক করা হয়েছে। যেখানে ঢাবিতে ছাত্র হল ১৩টি, সেখানে ছাত্রীদের আবাসিক হল মাত্র ৪টি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে অর্ধেকই ছাত্রী। আবাসিক হলের সংখ্যার অনুপাত করতে গেলে বোঝা যায়, ছাত্রীরা কতটা উপেক্ষিত হচ্ছেন। ভর্তির পর একজন ছাত্র মাটিতে বিছানা করে থাকার ব্যবস্থা করে হলেও আবাসিক হতে পারেন। কলাভবন, কার্জন হল, ব্যবসায় প্রশাসন কিংবা অ্যানেক্স ভবনের অনেক ছাত্রের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হলে উঠতে গেলে প্রথমে ফ্লোরিং ব্যবস্থাটিকেই আপন করে নিতে হয়। কিন্তু ছাত্রীদের ক্ষেত্রে সে সুযোগটাও নেই। ভর্তির একটা দীর্ঘ সময় পর তারা হলে আবাসিক হতে পারেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষিকা আয়েশা সুলতানা জানান, 'প্রতিদিন হলে সিটের জন্য অনেক শিক্ষার্থী আসে। সবারই ঢাকায় থাকার জায়গা নেই। কিন্তু আমাদের কিছু করার থাকে না। সিট খালি হলেই নতুন মেয়ে আবাসিক করার চেষ্টা করি।'
আশার আলো, তবে পর্যাপ্ত নয়
বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের আবাসিক শিক্ষিকা ড. আফরোজা হোসেন জানালেন, 'ছাত্রী হলগুলোতে পর্যাপ্ত সিট নেই। কিন্তু প্রতি বছর নতুন ছাত্রী ভর্তি হচ্ছে। ফলে ছাত্রীদের আবাসিক করাটা অনেক কষ্টসাপেক্ষ ব্যাপার। এখন দরকার নতুন যে ছাত্রী হলটি তৈরি হচ্ছে তা তাড়াতাড়ি চালু করা।'
রোকেয়া হলের আরেকজন সিনিয়র আবাসিক শিক্ষিকা শাহেদা জাফর বললেন, 'বাবা-মাকে ছেড়ে কচি মুখগুলো ঢাকায় আসে একা একা পড়াশোনা করতে। এমনিতেই নতুন পরিবেশ, একা পথচলা, তার ওপর হলের সিটের জন্য এক রকম হন্যে হয়ে ঘোরা, ওদের জন্য মায়া লাগে। ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে তারা হলে আবাসিক হয়ে যাবে_ এটা তো স্বাভাবিক, কিন্তু তা হচ্ছে না। এর একটা বিহিত হলে হাউস টিউটর হিসেবে আমরাও যেমন স্বস্তিতে থাকব, তেমনি ছাত্রীদের পড়াশোনা বাদ দিয়ে হলের সিট নামে সোনার হরিণের পেছনেও ছুটতে হবে না।'
সোনার হরিণের পেছন ছোটা কিছুটা কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অনেক আবাসিক শিক্ষিকা। কেননা সুখবর হচ্ছে, কবি সুফিয়া কামালের নামে নির্মাণাধীন নতুন একটি ছাত্রী হল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের কাছে রেলওয়ে থেকে লিজ নেওয়া জমিতে তৈরি হচ্ছে নতুন আবাসিক ছাত্রী হল। যাতে ১ হাজার ছাত্রীর সিট বরাদ্দ থাকবে। এতে সমস্যা অনেকটা মিটলেও তা কতখানি?
উপাচার্য যা বলেন
প্রতি বছর নতুন ভর্তি হওয়া ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় হাজার চলি্লশেক শিক্ষার্থী। তার অর্ধেক ছাত্রী। এই অর্ধেক অর্থাৎ ১৬-১৭ হাজার ছাত্রীর মধ্যে আবাসনের ব্যবস্থা আছে ৪ হাজার জনের। সিট সংকট কিছুটা কমবে। কিন্তু পুরোপুরি এ সমস্যা থেকে প্রশাসন কি বের হয়ে আসতে পারবে? এ রকম প্রশ্ন নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিলাম উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের। তিনি জানালেন, 'এটা সত্যি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসন সমস্যা অনেক প্রকট। যা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এতটা নয়। কষ্ট করে মেয়েরা হলে থাকছে। সেখানেও নানা রকম সমস্যা। দেখা যায়, যতজন ছাত্রীর জন্য হল বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে তার দ্বিগুণ ছাত্রী থাকছে সেখানে। কেউ আবার হলে থাকার ব্যবস্থাটুকুও পাচ্ছে না। তবে সমস্যা কিছুটা সমাধানের দিকে যাচ্ছে। কার্জন হলের পাশেই তৈরি হচ্ছে নতুন আবাসিক ছাত্রী হল। কবি সুফিয়া কামাল ছাত্রীনিবাস। আপাতত সমস্যা কিছুটা মিটবে। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা হয়তো আবারও নতুন কোনো উদ্যোগ হাতে নেব।'
প্রতিক্ষার প্রহর যেন শেষ হয়না
এদিকে আবাসিক হলের অফিস চলাকালীন প্রতিদিন দেখা যায় হলে আবাসিক হওয়ার জন্য নতুন ছাত্রীদের জটলা। হল অফিসগুলোতে বিজ্ঞপ্তি টানানো আছে_ ২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রীদের দ্বৈতাবাসিক সিট বণ্টনের নিয়মাবলি। আছে বেশ কিছু ছাত্রীর জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষ নম্বর। ২০০৯-২০১০ শিক্ষাবর্ষের যেসব ছাত্রীর মেধা স্কোর প্রথমদিকে তাদের গুটিকয়েক হলে আবাসিক হতে পেরেছে। বাকিরা প্রতিদিন ক্লাস চলাকালীন ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে নয়তো ক্লাস মিস দিয়ে সিটের জন্য হল অফিসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকেন। আবাসিক শিক্ষিকারা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাউকে কাউকে আশ্বাস দেন। কারও কপালে তাও জোটে না। ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের এমনই এক ছাত্রী তামান্না রহমান জানালেন, 'গত এক বছর ধরে একটি দ্বৈতাবাসিক সিটের জন্য প্রায় প্রতিদিন ক্লাস শেষে কিংবা ক্লাস বাদ দিয়ে এসে বসে থাকতাম, যদি হলে একটি সিট হয়! আজ পর্যন্ত আমি হলে আবাসিক হতে পারলাম না। বাবা-মা যদি দেখতেন সর্বোচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তে এসে তাদের আদরের মেয়েটি একটি আশ্রয়ের জন্য একটু থাকার জায়গার জন্য কীরকম অসহায়ের মতো ঘুরছে; তাহলে বোধহয় এখানে ভর্তি করাতেন না।'
ওদের কী হবে
২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষের অনেকেই এখন পর্যন্ত হলে আবাসিক হতে পারেননি। এর মধ্যেই আবার শুরু হয়ে যাচ্ছে ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া। পুরনো যারা এখনও হলে আবাসিক হতে পারেনি তারা নিত্যদিন হল অফিসে ধরনা দিচ্ছেন শুধু একটা থাকার জায়গার জন্য, সেখানে নতুন ভর্তি হওয়া আরেক শিক্ষাবর্ষের মেয়েরা এসেই পড়বেন অথৈই সমুদ্রে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে লালন করা স্বপ্ন তখন অনেকের কাছে শুধু দুঃস্বপ্নই মনে হবে। হলে আবাসিক হতে না পেরে অধিকাংশ ছাত্রীর আবাস হয় বেসরকারি ছাত্রী হোস্টেলে, নয়তো কোনো পরিবারের সঙ্গে সাবলেটে থাকা, যা মোটামুটি ব্যয়বহুল। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার নয়। তাই সাধারণ সিট কিংবা গণরুম যেখানেই হোক, জরুরি ভিত্তিতে দরকার হলে আবাসিক হওয়া।
উপেক্ষিত ছাত্রীরা
ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাবির আবাসিক ছাত্রী হল রোকেয়া হলে ছাত্রী ধারণক্ষমতা ৯৬৫, কিন্তু এখানে আছে প্রায় ১৯০০ ছাত্রী। শামসুন্নাহার হলে ছাত্রী ধারণক্ষমতা ৮১০, বর্তমানে আবাসিক ১৬৫০-এরও অধিক। তেমনি বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ছাত্রী ধারণক্ষমতা ৫৩৬। ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৩০৪ জন, কিন্তু এখানেও প্রায় দ্বিগুণ ছাত্রীকে আবাসিক করা হয়েছে। যেখানে ঢাবিতে ছাত্র হল ১৩টি, সেখানে ছাত্রীদের আবাসিক হল মাত্র ৪টি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে অর্ধেকই ছাত্রী। আবাসিক হলের সংখ্যার অনুপাত করতে গেলে বোঝা যায়, ছাত্রীরা কতটা উপেক্ষিত হচ্ছেন। ভর্তির পর একজন ছাত্র মাটিতে বিছানা করে থাকার ব্যবস্থা করে হলেও আবাসিক হতে পারেন। কলাভবন, কার্জন হল, ব্যবসায় প্রশাসন কিংবা অ্যানেক্স ভবনের অনেক ছাত্রের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হলে উঠতে গেলে প্রথমে ফ্লোরিং ব্যবস্থাটিকেই আপন করে নিতে হয়। কিন্তু ছাত্রীদের ক্ষেত্রে সে সুযোগটাও নেই। ভর্তির একটা দীর্ঘ সময় পর তারা হলে আবাসিক হতে পারেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষিকা আয়েশা সুলতানা জানান, 'প্রতিদিন হলে সিটের জন্য অনেক শিক্ষার্থী আসে। সবারই ঢাকায় থাকার জায়গা নেই। কিন্তু আমাদের কিছু করার থাকে না। সিট খালি হলেই নতুন মেয়ে আবাসিক করার চেষ্টা করি।'
আশার আলো, তবে পর্যাপ্ত নয়
বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের আবাসিক শিক্ষিকা ড. আফরোজা হোসেন জানালেন, 'ছাত্রী হলগুলোতে পর্যাপ্ত সিট নেই। কিন্তু প্রতি বছর নতুন ছাত্রী ভর্তি হচ্ছে। ফলে ছাত্রীদের আবাসিক করাটা অনেক কষ্টসাপেক্ষ ব্যাপার। এখন দরকার নতুন যে ছাত্রী হলটি তৈরি হচ্ছে তা তাড়াতাড়ি চালু করা।'
রোকেয়া হলের আরেকজন সিনিয়র আবাসিক শিক্ষিকা শাহেদা জাফর বললেন, 'বাবা-মাকে ছেড়ে কচি মুখগুলো ঢাকায় আসে একা একা পড়াশোনা করতে। এমনিতেই নতুন পরিবেশ, একা পথচলা, তার ওপর হলের সিটের জন্য এক রকম হন্যে হয়ে ঘোরা, ওদের জন্য মায়া লাগে। ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে তারা হলে আবাসিক হয়ে যাবে_ এটা তো স্বাভাবিক, কিন্তু তা হচ্ছে না। এর একটা বিহিত হলে হাউস টিউটর হিসেবে আমরাও যেমন স্বস্তিতে থাকব, তেমনি ছাত্রীদের পড়াশোনা বাদ দিয়ে হলের সিট নামে সোনার হরিণের পেছনেও ছুটতে হবে না।'
সোনার হরিণের পেছন ছোটা কিছুটা কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অনেক আবাসিক শিক্ষিকা। কেননা সুখবর হচ্ছে, কবি সুফিয়া কামালের নামে নির্মাণাধীন নতুন একটি ছাত্রী হল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের কাছে রেলওয়ে থেকে লিজ নেওয়া জমিতে তৈরি হচ্ছে নতুন আবাসিক ছাত্রী হল। যাতে ১ হাজার ছাত্রীর সিট বরাদ্দ থাকবে। এতে সমস্যা অনেকটা মিটলেও তা কতখানি?
উপাচার্য যা বলেন
প্রতি বছর নতুন ভর্তি হওয়া ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় হাজার চলি্লশেক শিক্ষার্থী। তার অর্ধেক ছাত্রী। এই অর্ধেক অর্থাৎ ১৬-১৭ হাজার ছাত্রীর মধ্যে আবাসনের ব্যবস্থা আছে ৪ হাজার জনের। সিট সংকট কিছুটা কমবে। কিন্তু পুরোপুরি এ সমস্যা থেকে প্রশাসন কি বের হয়ে আসতে পারবে? এ রকম প্রশ্ন নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিলাম উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের। তিনি জানালেন, 'এটা সত্যি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসন সমস্যা অনেক প্রকট। যা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এতটা নয়। কষ্ট করে মেয়েরা হলে থাকছে। সেখানেও নানা রকম সমস্যা। দেখা যায়, যতজন ছাত্রীর জন্য হল বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে তার দ্বিগুণ ছাত্রী থাকছে সেখানে। কেউ আবার হলে থাকার ব্যবস্থাটুকুও পাচ্ছে না। তবে সমস্যা কিছুটা সমাধানের দিকে যাচ্ছে। কার্জন হলের পাশেই তৈরি হচ্ছে নতুন আবাসিক ছাত্রী হল। কবি সুফিয়া কামাল ছাত্রীনিবাস। আপাতত সমস্যা কিছুটা মিটবে। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা হয়তো আবারও নতুন কোনো উদ্যোগ হাতে নেব।'
No comments