শীত-বিকেলে তিন প্রজাপতি by গোলাম রাব্বানী

ভাবনা, নওশাবা ও তাহসিন সময়ের ব্যস্ত তিন অভিনেত্রী। নিজেদের অভিনয়ের দক্ষতা ও মেধা দিয়ে দর্শক ও নির্মাতাদের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন। কেমন কাটছে তাঁদের সময়। কী তাঁদের ভাবনা, আর কী নিয়ে এতটা ব্যস্ততা_এসব খবর নিয়েই এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন। লিখেছেন গোলাম রাব্বানী এবং ছবি তুলেছেন কাকলী প্রধান শীতকাল বড়ই কৃপণ। আইসক্রিমের মতো দ্রুতই গলে শেষ হয়ে যায় একেকটা দিন।


আর সূর্যিমামার যেদিন মন ভালো থাকে দেখা দেয়। নতুবা সেও মেঘের কম্বল ঁজড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তাই শীতকালের দিনগুলো নিয়ে বড়ই ফাঁপরে থাকতে হয় আমাদের নির্মাতা আর অভিনয়শিল্পীদের। তাহসিন উত্তরা পার্কে এসেই বললেন, 'ভাইয়া, শুটিং থেকে এসেছি, এখনই যেতে হবে। কারণ সূর্য থাকতে থাকতেই আরো কয়েকটা দৃশ্যের শুটিং করতে হবে।' তাঁকে আশ্বস্ত করা হলো, সূর্যের আলো ঘরে প্রবেশের আগেই তিনি শুটিং স্পটে প্রবেশ করতে পারবেন। শীতকালের মতোই নীরব স্বভাবের মেয়ে তাহসিন। এ বিষয়ে এরই মধ্যে সার্টিফিকেট পেয়ে গেছেন তিনি। শীতের বিকেলটা মুহূর্তেই গরম হয়ে উঠল ভাবনা আর নওশাবার আগমনে। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে 'আরে কত দিন পর দেখা... কেমন আছ?' তারপর নিজেদের ব্যক্তিগত আরো কত গল্পের ডালা খুলে বসলেন। আলোচনার প্রসঙ্গ নানা দিকে মোড় নেয়। গাড়ি যেমন কোনো বাঁকে মোড় নিলে আমরা যাত্রীরা নড়েচড়ে উঠি, তাঁদের গল্প শুনেও সেই দৃশ্যের অবতারণা হয়। তাঁদের শরীরও কথা বলতে শুরু করে। যেন শীতকালের দুই প্রজাপতি ওড়াউড়ি করছে। তাহসিন তাঁদের এই প্রাণচঞ্চলতার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। একটা সময় নাচতে শুরু করেন তাঁরা। কী ব্যাপার? 'ব্যাপার কিছুই না। নাচতে ভালো লাগে, তাই নাইচ দিই' বললেন ভাবনা। অভিনেত্রী হিসেবে ভাবনার পরিচিতিটা শুরু হয়েছে। কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন নৃত্যশিল্পী হতে। হয়েছেনও তাই। প্রথম পরিচয়ে যে কারো মেনে নিতে কষ্ট হবে যে ভাবনা একজন ক্লাসিক্যাল ড্যান্সার। কারণ ক্লাসিক্যাল ড্যান্সারদের লাইফ স্টাইলের সঙ্গে ভাবনার লাইফ স্টাইল একেবারেই ভিন্নতর। ভাবনা নাচ শিখেছেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে। সম্প্রতি তিনি চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্যে অভিনয়ও করেছেন। ভাবনা বলেন, 'নাচটা আমি ছাড়ছি না। প্রায়ই আমি মঞ্চে শো করি। সামনে নাচ নিয়ে আরো কাজ করার ইচ্ছা আছে।' নওশাবা ভাবনাকে থামিয়ে বলেন, 'আমিও তো নৃত্যাশিল্পীই হতে চেয়েছিলাম; কিন্তু পারলাম কই। সংগীতশিল্পী হতে চাইলাম। লোকে আমাকে এমনিতে নাচুনি বুড়ি বলে। সুযোগ পেলেই আমি নাচি', বলেই হাসলেন।
তাহসিন চুপ কেন? 'আমি নাচতে পারি না, ভাই। তবে ঘরোয়া অনুষ্ঠানে চেষ্টা করি নাচার।'
শীতকালের জন্য নাচটা বোধ হয় ভালো। শরীর গরম করে দেয়। তবে অভিনেত্রীদের আলোচনার প্রসঙ্গ যদি হয় নাচ, তাহলে তাঁদের অভিনয়ের খবর জানব কিভাবে? নওশাবা আর ভাবনা দুজনই পৃথক দুটি নাটকে অভিনয় করেছেন তাহসিনের সঙ্গে। ভাবনা আর নওশাবার একসঙ্গে কখনো কাজ করা হয়নি; যদিও তাঁদের আলোচনা আর গল্পের ধরন দেখে মনে হতে পারে, তাঁদের মধ্যে যেন কতকালের দোস্তি। কিন্তু বিষয়টা মোটেও তা নয়। নওশাবা বললেন, 'ওর সঙ্গে আজ আমার দ্বিতীয়বারের মতো দেখা হয়েছে। আর ফোনে কোনো দিন কথা হয়নি। আমি আসলে সহজেই সবাইকে আপন করে নিতে ভালোবাসি।' কিন্তু আপনারা দুজনই বলছিলেন আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে।
ভাবনা ও নওশাবা হাসেন। উত্তর দেন ভাবনা, 'আরে এটা তেমন কিছু না। এটা তো ভাই আমাদের ব্যক্তিগত বিষয়। বলা যাবে না ঘটনা কী?'
পারিবারিক আলোচনা থাক। তাহসিন বলুন আপনাদের সম্পর্কে। 'আমাদের তো ওনাদের কথা শুনতে ভালো লাগছে', বললেন তাহসিন। তিনি বলেন, 'দুজনের সঙ্গেই কাজ করার সুযোগ হয়েছে। ভালো বন্ধু। ভালো মনের মানুষ।' তিন কন্যা এক হয়ে রুক্ষ শীতের বিকেলটাতে যেন প্রাণ ঢেলে দিলেন। তাঁদের আলোচনায় খই ফুটতে শুরু করল। টেলিভিশনের পর্দা খুললেই এখন এই তিনজনের উপস্থিতি চোখ এড়াতে পারে না। নতুন কিছু কাজ নিয়ে আসছেন তাঁরা। ভাবনা ব্যস্ত আছেন এস এ হক অলিকের 'কুটুম আসছে', চয়নিকা চৌধুরীর 'মুনসুন রেইন', শিমুল সরকারের 'জীবন বীমা করপোরেশন'সহ বেশ কিছু ধারাবাহিক ও একক নাটক নিয়ে। নওশাবার নতুন কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে নূরুল আলম আতিকের পরিচালনায় 'জাদুর শহর', মারুফ মিঠুর 'মিঠা হাঁড়ি', গোলাম সোহরাব দোদুলের 'ক্যাফেটেরিয়া'।
চট করেই যেন কৃপণ সময়টা পালিয়ে গেল। তিনজনেরই শুটিং আছে। পরিচালকরা বসে আছেন মনিটরের সামনে। উত্তরা পার্কে পড়ে থাকা অসংখ্য ঝরা পাতার মতো এই তিন কন্যা জীবনের কিছুটা সময় এখানে ফেলে গেলেন। তিন রাস্তায় তিনজন। ধুলোয় ওড়ে ঝরা পাতা। প্রজাপতিরা উড়ে যায়। সূর্যিমামা কম্বল টানে গায়ে।

No comments

Powered by Blogger.