চোখের তারায় স্বপ্ন
টিভির পাশাপাশি চলচ্চিত্রেরও নিয়মিত মুখ হয়ে উঠেছেন জয়া আহসান। তবে ছোট ও বড় দুই পর্দাতেই তার কাজের সংখ্যা হাতেগোনা। সেগুলো বরাবরই আলাদাভাবে নজর কাড়ে। জয়ার জনপ্রিয়তা ক্রমে আকাশসম উচ্চতায় উঠছে। এখনও তার চোখের তারায় নানা স্বপ্ন ঘোরে। তাকে নিয়ে লিখেছেন মীর সামী\\ চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকার ইস্কাটনে নতুন ফ্ল্যাটে উঠেছেন জয়া আহসান। এটি ১৩তলা ভবনের পাঁচ তলায়।
সেখানে মা আর ছোট বোন কান্তার সঙ্গেই বেশিরভাগ সময় কাটে তার। সদর দরজা দিয়ে ভেতরে বসার ঘরে যেতে পার হতে হয় একটু সরু পথ। জয়ার বসার ঘর ছিমছাম এবং পরিপাটি করে সাজানো-গোছানো। ঘরটি নিজের মনের মতো করে সাজিয়েছেন তিনি। ঘরের দুই কোনে তিনটি সোফা। সেখানে বসলেই চোখে পড়ে রাজা-বাদশা আমলের একটি আয়না। যার নকশা রাজপ্রাসাদের দরজার মতোই। দরজার দুই পাল্লা খুললেই আয়না। তবে এই আয়নায় জয়া মুখ দেখেন না বললেই চলে। ঘরের পশ্চিম দিকের দেয়ালজুড়ে আছে মাঝারি দুটি স্কেচ। ঘরের দক্ষিণ দিকে পাথরের টেবিলের ওপর বেশ কয়েকটি পাথর আর কাঁসার শোপিস। ঘরের একপাশে দুটি জানালা। এর একটি বড়। এগুলো বেনারসি শাড়ির আদলে তৈরি পর্দায় ঢাকা। ঘরজুড়ে প্রাচীন এক আবহ। এক গাল মিষ্টি হেসে জয়া বলেন, 'অ্যান্টিক যে আমার কত্তো ভালো লাগে তা বলে বোঝাতে পারব না। সেজন্য আমার ঘরে এমন প্রাচীন আবহ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। [দরজার আদলে তৈরি করা আয়না দেখিয়ে] এটা ইন্দোনেশিয়া থেকে এনেছি।'
ঘরে খুব সাধারণ থাকতেই ভালো লাগে জয়ার। খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠা যেন তার অন্যতম অভ্যাস। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ঘরেই হালকা শারীরিক ব্যায়ামসহ সবকিছুই নিয়মমাফিক করেন। 'শুধু ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর জন্যই নয়, আমি এমনিতেই নিয়ম মেনে সব কাজ করি।'
এরই মধ্যে জয়ার গৃহকর্মী একটি ট্রেতে করে কোমল পানীয় আর শনপাপড়ি নিয়ে এলো। জয়া সেগুলো পরিবেশন করতে করতে বললেন, 'যে কোনো মানুষেরই নিয়ম মেনে চলা উচিত। তাহলে শরীর এবং মন দুটোই ভালো থাকে। আমি বিশ্বাস করি, শরীর ঠিক তো সব ফিট। না হলে এত লম্বা সিডিউলের যে ধকল সেটা সামলানো যায় না। অনেক সময় কাজের চাপে হয়তো সবকিছু নিয়মমাফিক হয়ও না। তবুও নিয়ম অনুসারে চলাফেরা করার চেষ্টা থাকে আমার।'
কলকাতায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জয়া আহসান অভিনীত 'ডুবসাঁতার' ও 'গেরিলা' ছবির প্রদর্শনী হয়েছে। একই উৎসবে এবারই প্রথম বাংলাদেশি কোনো অভিনয়শিল্পীর দুটি চলচ্চিত্র দেখানো হলো। নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত 'গেরিলা' নিয়ে পশ্চিমবাংলার গণমাধ্যম ভূয়সী প্রশংসা করেছে। 'সত্যিকার অর্থে নিজেকে খুবই গর্বিত মনে হয়েছে তখন। সারাবিশ্বে অন্য কোনো অভিনেত্রীর ক্ষেত্রে এমন হয়েছে কি-না জানি না। তবে এ দেশে প্রথমবারের মতো আমি এ সম্মান পেয়ে সত্যিই গর্বিত। উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলিউড ও টালিউডের অনেক তারকার পাশাপাশি কথা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। তিনিও আমার অভিনয়ের প্রশংসা করলেন।' এমন সময় জয়ার মুঠোফোন বেজে উঠল। অনেক সময় নিয়ে ফোনে কথা বললেন তিনি। জানা গেল, কলকাতা থেকে ফোন করেছিলেন পরিচালক অরিন্দম শীল। তার পরিচালনায় 'আবর্ত' নামের একটি ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। আগামী বছরের শুরুতে এর দৃশ্যধারণ শুরু হবে। 'আবর্ত' ছবিতে তাকে দেখা যাবে চারু চরিত্রে। সেজন্য অরিন্দমের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ হয়। 'গেরিলা' কলকাতায় ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে_ এ খবরও তিনি তার কাছে থেকে পেয়েছেন। অন্যদিকে যেদিন 'গেরিলা' পুরস্কৃত হলো, সেদিনও তার মাধ্যমেই খবরটা এসেছে জয়ার কাছে।
চলচ্চিত্রে নিয়মিত হবেন?
"চলচ্চিত্রে নিয়মিত হব কি-না তা বলতে পারছি না। তবে চলচ্চিত্র একটি বড় জায়গা। সেখানে অভিনয় করতে আমার ভালো লাগে। তবে তথাকথিত বাণিজ্যিক ছবিতে নয়, আমি চাই ভালো গল্প, চরিত্র ও পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে। নাসির উদ্দীন ইউসুফের 'গেরিলা' চলচ্চিত্রে একজন নারী মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করেছি। অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে কাজটি করতে গিয়ে। চরিত্রটির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর জন্য আমার ওজন দশ কেজি বাড়াতে হয়েছিল। যখন 'গেরিলা'র কাজ করেছি তখন অন্য কোনো কাজ হাতে নেইনি। ছবিটি করতে গিয়ে অনেক ঘটনাই ঘটেছে। শিমূল ইউসুফ দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন। বাচ্চু ভাইয়ের মা এবং ভাই মারা গেলেন। এতকিছুর মধ্যেও আমরা ছবিটির কাজ শেষ করতে পেরেছি_ এটাই ছিল বড় বিষয়।'
এবার একটু বিরতি দিলেন। কোমল পানীয়তে চুমুক দিয়ে আবারও শুরু করলেন_ "আমি কাজের প্রতি অনেক যত্নবান। যে কাজটা করছি তাতে নিজেকে শতভাগ নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করি। যেমন 'গেরিলা' ছবিতে যখন আমরা কাজ করলাম তখন কিন্তু ইউনিটের কেউই আমাকে জয়া নামে ডাকেনি। সবাই বিলকিসই বলেছে। শুধু আমার নাম নয়, ছবিটিতে যারা কাজ করেছেন তাদের সবারই চরিত্রের নাম ধরে ডাকা হতো। এমনিতেই মুক্তিযুদ্ধ তার ওপর ৩৫ মিলিমিটারে করা আমার প্রথম ছবি। ছবির প্রথম প্রদর্শনীর পর হল থেকে বের হলে দর্শক কাঁদতে কাঁদতে আমাদের জড়িয়ে ধরেছে। এই যে দর্শকের ভালোবাসা, সেটা আমার অনেক বড় প্রাপ্তি। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। কিন্তু যখন বাচ্চু ভাই আমাকে এ ছবিতে অভিনয় করার জন্য প্রস্তাব দেন তখন থেকেই আমার প্রস্তুতি শুরু হয়। সৈয়দ শামসুল হকের 'নিষিদ্ধ লোবান' উপন্যাসটি বেশ কয়েকবার পড়ি। চেনাজানা অনেকের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গল্প শুনতে চেয়েছি। গল্প করেছি অনেক মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে। যুদ্ধ চলাকালে তাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনেছি। ছোটপর্দার নাটকে বহুমুখী নানা চরিত্রে অভিনয় করেছি। কিন্তু যখন আমি 'গেরিলা'র বিলকিস চরিত্রে অভিনয় করছি তখন ওই ক'টা দিন ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমি জয়া, আমি একাত্তরের বিলকিস।"
বিলকিস হয়ে ওঠা প্রসঙ্গে জয়া আরও বলেন, 'বিলকিস হওয়ার জন্য আমার প্রথম পরীক্ষা ছিল ওজন বাড়ানোর। চরিত্রে বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার জন্য ছয়-সাত কেজি ওজন বাড়ানোর দরকার ছিল। মনে আছে, ইউনিটে থাকার সময় গাদা গাদা খাবার আসত আমার জন্য। বিশেষ খাবারের মধ্যে ছিল আম। সেগুলো খেয়েছি ওজন বাড়ানোর জন্য। দৃশ্যায়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য দিনের পর দিন থাকতে হয়েছে একই পোশাকে। কাপড় ধোয়ার উপায় নেই। শুঁটকির গুদামে চিত্রায়ন হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অসুস্থ হয়ে পড়েছি একাধিকবার। রেলগাড়িতে থাকতে হয়েছে টানা ১১ দিন। এ ছাড়া সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা মনে হয়েছে, সেই একাত্তর সালের একজন হয়ে ওঠাটা।'
কাজের জন্য সামাজিকতা মিস করেন না?
'যখন আমি কাজে থাকি তখন পারিবারিক অনেক অনুষ্ঠান যে মিস করি না তা নয়। সেজন্য অনেক সময় খুব মন খারাপ হয়। আবার তখন এই ভেবে মনকে সান্ত্বনা দিই যে, অভিনয় করতে এসেছি। এটাই আমার দায়িত্ব।
অভিনয় জীবনের প্রথম দিকের জয়া এবং আজকের জয়া মাঝখানে পার্থক্য কী?
মুচকি হেসে জবাব দিলেন, 'মানুষ সবসময় নিজের সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করে। তখনও এই প্রবণতা ছিল আমার, এখনও আছে। আমি সবসময় সততা নিয়েই কাজ করি। নিজেকে নিয়ে নিজের জাস্টিফিকেশন করা মুশকিল। অভিনয়ের ক্ষেত্রে নিজেকে আমি স্বার্থপর মনে করি। কারণ আমি যখন কোনো চরিত্রে অভিনয় করি তখন সেখানে কোনো কিছু ছাড় দিতে চাই না। আর আমার চেষ্টা থাকে নতুন নতুন চরিত্রে কাজ করা। কোনো চ্যালেঞ্জ না থাকলে সে কাজে আমি আনন্দ পাই না।'
তাহলে নিজেকে মূল্যায়ন করেন কীভাবে? 'ভালো করেই জানি, আমার এখনও অনেক কিছু শেখার রয়েছে। সত্যি বলতে, অভিনয়ে আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। শুধু পর্যবেক্ষণের ওপর ভর করেই অভিনয় করার সাহস পেয়েছি। তাই শুরু থেকেই শেখার চেষ্টা করছি। এখনও প্রতিনিয়ত শিখে যাচ্ছি।'
ঘরে খুব সাধারণ থাকতেই ভালো লাগে জয়ার। খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠা যেন তার অন্যতম অভ্যাস। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ঘরেই হালকা শারীরিক ব্যায়ামসহ সবকিছুই নিয়মমাফিক করেন। 'শুধু ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর জন্যই নয়, আমি এমনিতেই নিয়ম মেনে সব কাজ করি।'
এরই মধ্যে জয়ার গৃহকর্মী একটি ট্রেতে করে কোমল পানীয় আর শনপাপড়ি নিয়ে এলো। জয়া সেগুলো পরিবেশন করতে করতে বললেন, 'যে কোনো মানুষেরই নিয়ম মেনে চলা উচিত। তাহলে শরীর এবং মন দুটোই ভালো থাকে। আমি বিশ্বাস করি, শরীর ঠিক তো সব ফিট। না হলে এত লম্বা সিডিউলের যে ধকল সেটা সামলানো যায় না। অনেক সময় কাজের চাপে হয়তো সবকিছু নিয়মমাফিক হয়ও না। তবুও নিয়ম অনুসারে চলাফেরা করার চেষ্টা থাকে আমার।'
কলকাতায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জয়া আহসান অভিনীত 'ডুবসাঁতার' ও 'গেরিলা' ছবির প্রদর্শনী হয়েছে। একই উৎসবে এবারই প্রথম বাংলাদেশি কোনো অভিনয়শিল্পীর দুটি চলচ্চিত্র দেখানো হলো। নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত 'গেরিলা' নিয়ে পশ্চিমবাংলার গণমাধ্যম ভূয়সী প্রশংসা করেছে। 'সত্যিকার অর্থে নিজেকে খুবই গর্বিত মনে হয়েছে তখন। সারাবিশ্বে অন্য কোনো অভিনেত্রীর ক্ষেত্রে এমন হয়েছে কি-না জানি না। তবে এ দেশে প্রথমবারের মতো আমি এ সম্মান পেয়ে সত্যিই গর্বিত। উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলিউড ও টালিউডের অনেক তারকার পাশাপাশি কথা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। তিনিও আমার অভিনয়ের প্রশংসা করলেন।' এমন সময় জয়ার মুঠোফোন বেজে উঠল। অনেক সময় নিয়ে ফোনে কথা বললেন তিনি। জানা গেল, কলকাতা থেকে ফোন করেছিলেন পরিচালক অরিন্দম শীল। তার পরিচালনায় 'আবর্ত' নামের একটি ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। আগামী বছরের শুরুতে এর দৃশ্যধারণ শুরু হবে। 'আবর্ত' ছবিতে তাকে দেখা যাবে চারু চরিত্রে। সেজন্য অরিন্দমের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ হয়। 'গেরিলা' কলকাতায় ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে_ এ খবরও তিনি তার কাছে থেকে পেয়েছেন। অন্যদিকে যেদিন 'গেরিলা' পুরস্কৃত হলো, সেদিনও তার মাধ্যমেই খবরটা এসেছে জয়ার কাছে।
চলচ্চিত্রে নিয়মিত হবেন?
"চলচ্চিত্রে নিয়মিত হব কি-না তা বলতে পারছি না। তবে চলচ্চিত্র একটি বড় জায়গা। সেখানে অভিনয় করতে আমার ভালো লাগে। তবে তথাকথিত বাণিজ্যিক ছবিতে নয়, আমি চাই ভালো গল্প, চরিত্র ও পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে। নাসির উদ্দীন ইউসুফের 'গেরিলা' চলচ্চিত্রে একজন নারী মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করেছি। অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে কাজটি করতে গিয়ে। চরিত্রটির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর জন্য আমার ওজন দশ কেজি বাড়াতে হয়েছিল। যখন 'গেরিলা'র কাজ করেছি তখন অন্য কোনো কাজ হাতে নেইনি। ছবিটি করতে গিয়ে অনেক ঘটনাই ঘটেছে। শিমূল ইউসুফ দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন। বাচ্চু ভাইয়ের মা এবং ভাই মারা গেলেন। এতকিছুর মধ্যেও আমরা ছবিটির কাজ শেষ করতে পেরেছি_ এটাই ছিল বড় বিষয়।'
এবার একটু বিরতি দিলেন। কোমল পানীয়তে চুমুক দিয়ে আবারও শুরু করলেন_ "আমি কাজের প্রতি অনেক যত্নবান। যে কাজটা করছি তাতে নিজেকে শতভাগ নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করি। যেমন 'গেরিলা' ছবিতে যখন আমরা কাজ করলাম তখন কিন্তু ইউনিটের কেউই আমাকে জয়া নামে ডাকেনি। সবাই বিলকিসই বলেছে। শুধু আমার নাম নয়, ছবিটিতে যারা কাজ করেছেন তাদের সবারই চরিত্রের নাম ধরে ডাকা হতো। এমনিতেই মুক্তিযুদ্ধ তার ওপর ৩৫ মিলিমিটারে করা আমার প্রথম ছবি। ছবির প্রথম প্রদর্শনীর পর হল থেকে বের হলে দর্শক কাঁদতে কাঁদতে আমাদের জড়িয়ে ধরেছে। এই যে দর্শকের ভালোবাসা, সেটা আমার অনেক বড় প্রাপ্তি। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। কিন্তু যখন বাচ্চু ভাই আমাকে এ ছবিতে অভিনয় করার জন্য প্রস্তাব দেন তখন থেকেই আমার প্রস্তুতি শুরু হয়। সৈয়দ শামসুল হকের 'নিষিদ্ধ লোবান' উপন্যাসটি বেশ কয়েকবার পড়ি। চেনাজানা অনেকের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গল্প শুনতে চেয়েছি। গল্প করেছি অনেক মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে। যুদ্ধ চলাকালে তাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনেছি। ছোটপর্দার নাটকে বহুমুখী নানা চরিত্রে অভিনয় করেছি। কিন্তু যখন আমি 'গেরিলা'র বিলকিস চরিত্রে অভিনয় করছি তখন ওই ক'টা দিন ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমি জয়া, আমি একাত্তরের বিলকিস।"
বিলকিস হয়ে ওঠা প্রসঙ্গে জয়া আরও বলেন, 'বিলকিস হওয়ার জন্য আমার প্রথম পরীক্ষা ছিল ওজন বাড়ানোর। চরিত্রে বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার জন্য ছয়-সাত কেজি ওজন বাড়ানোর দরকার ছিল। মনে আছে, ইউনিটে থাকার সময় গাদা গাদা খাবার আসত আমার জন্য। বিশেষ খাবারের মধ্যে ছিল আম। সেগুলো খেয়েছি ওজন বাড়ানোর জন্য। দৃশ্যায়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য দিনের পর দিন থাকতে হয়েছে একই পোশাকে। কাপড় ধোয়ার উপায় নেই। শুঁটকির গুদামে চিত্রায়ন হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অসুস্থ হয়ে পড়েছি একাধিকবার। রেলগাড়িতে থাকতে হয়েছে টানা ১১ দিন। এ ছাড়া সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা মনে হয়েছে, সেই একাত্তর সালের একজন হয়ে ওঠাটা।'
কাজের জন্য সামাজিকতা মিস করেন না?
'যখন আমি কাজে থাকি তখন পারিবারিক অনেক অনুষ্ঠান যে মিস করি না তা নয়। সেজন্য অনেক সময় খুব মন খারাপ হয়। আবার তখন এই ভেবে মনকে সান্ত্বনা দিই যে, অভিনয় করতে এসেছি। এটাই আমার দায়িত্ব।
অভিনয় জীবনের প্রথম দিকের জয়া এবং আজকের জয়া মাঝখানে পার্থক্য কী?
মুচকি হেসে জবাব দিলেন, 'মানুষ সবসময় নিজের সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করে। তখনও এই প্রবণতা ছিল আমার, এখনও আছে। আমি সবসময় সততা নিয়েই কাজ করি। নিজেকে নিয়ে নিজের জাস্টিফিকেশন করা মুশকিল। অভিনয়ের ক্ষেত্রে নিজেকে আমি স্বার্থপর মনে করি। কারণ আমি যখন কোনো চরিত্রে অভিনয় করি তখন সেখানে কোনো কিছু ছাড় দিতে চাই না। আর আমার চেষ্টা থাকে নতুন নতুন চরিত্রে কাজ করা। কোনো চ্যালেঞ্জ না থাকলে সে কাজে আমি আনন্দ পাই না।'
তাহলে নিজেকে মূল্যায়ন করেন কীভাবে? 'ভালো করেই জানি, আমার এখনও অনেক কিছু শেখার রয়েছে। সত্যি বলতে, অভিনয়ে আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। শুধু পর্যবেক্ষণের ওপর ভর করেই অভিনয় করার সাহস পেয়েছি। তাই শুরু থেকেই শেখার চেষ্টা করছি। এখনও প্রতিনিয়ত শিখে যাচ্ছি।'
No comments