ডোবে আর ভাসে দক্ষিণ বেদকাশী
তিন দিক দিয়ে ঘেরা দুটি নদী। একদিকে শাকবাড়িয়া, অন্য দুই দিকে কপোতাক্ষ নদ। সুন্দরবনের কোলঘেঁষে প্রায় ব-দ্বীপের মতো জনবসতি খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন। কিন্তু চার বছর ধরে এই ইউনিয়নের ১৪টি গ্রাম নদীর জোয়ারের পানিতে দিনের ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ডুবে থাকে। কঠিন দুর্যোগের শিকার এই জনপদ ছেড়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। যারা এখনো টিকে আছে, তাদের হিসাবে ২৫ হাজারের মধ্যে ২০ হাজারের মতো মানুষ
ইতিমধ্যে বেদকাশী ছেড়ে গেছে। বাঁধের ভাঙা অংশ আটকাতে না পারলে এই ইউনিয়ন দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা করছে।
এলাকাবাসী জানায়, ২০০৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পাতাখালী এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেওয়া বেড়িবাঁধের সামান্য একটু অংশ ভেঙে যায়।
সেই থেকে দুর্ভোগের শুরু। কয়েক দফা বাঁধ বাঁধার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বাঁধ আটকানো যায়নি। সেই ভাঙা অংশ এখন বিশাল নদীর আকার ধারণ করেছে। সেখানে বসবাসকারী ১৫০টি পরিবারের এখন কিছুই নেই। থাকার জায়গা নেই, কাজ নেই, জীবিকার কোনো পথ খোলা নেই। ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের সময় তীরবেগে পানি ঢুকে ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামই ডুবিয়ে দেয়।
তবে পাউবো কর্তাদের মতে, ইউনিয়নের ৬০ শতাংশ এলাকা ডুবে যায়। ২৪ ঘণ্টায় দুবার জোয়ার এবং দুবার ভাটার কারণে চক্রাকারে ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় গোটা এলাকা পানির তলায় নিমজ্জিত থাকায় এখানকার জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। উৎপাদন কর্মকাণ্ড একেবারে নেই বললেই চলে। জীবিকার তাগিদে এবং বিজ্ঞানীদের মতে 'উপকূলীয় এলাকা' ডুবে যাওয়ার আতঙ্কে মানুষ এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে।
খুলনা জেলা সদর থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে কয়রা উপজেলা সদর। সেখান থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন। বেড়িবাঁধের টিকে থাকা অংশ এবং মাঝে-মধ্যে ঘুরপথে মোটরসাইকেলযোগে কয়রা সদর থেকে ওই এলাকায় পেঁৗছতেই এক ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে যায়। তারপর চোখে পড়ে কোনো এক দানবের থাবায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া এক জনপদ। ভাটার সময় যখন পানি থাকে না তখন গোটা বিল এলাকা কর্দমাক্ত হয়ে ওঠে। আর জোয়ারের সময় চারিদিকে পানি আর পানি। গ্রামের রাস্তাগুলো নেই। গবাদিপশু নেই। নোনা পানির দাপটে গাছপালা মরে যাচ্ছে। কয়রা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা স ম নজরুল ইসলাম বলেন, 'দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নে কৃষি কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। এই ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামে কোনো গরু-ছাগল নেই।'
সামান্য ভাঙন থেকে অতিকায় চেহারার ভাঙন সম্পর্কে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আমিরুল ইসলাম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'বাঁধ ভাঙার শুরুতে আমরা খেজুরগাছ ফেলে যাওয়া-আসা করেছি। আর এখন ভাঙন বিশাল নদীর চেহারা নিয়েছে। এই ভাঙন দিয়ে আসা জোয়ারের পানিতে আমরা ডুবে মরছি। তখন বাঁধের ভাঙনটি বাঁধা হলে আজ এই অবস্থা হতো না।' প্রকৃতপক্ষে বাঁধের ভাঙা অংশ ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার আঘাতে আরো বেড়ে যায়। এরপর বাঁধ বাঁধার উদ্যোগ নেয় পাউবো। সেই সময়ে এ কাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫০ লাখ টাকা। ঠিকাদার এই কাজের জন্য আরো ২০ লাখ টাকা দাবি করে। ঠিকাদারের দাবি পূরণ না হওয়ায় সেবার বাঁধ বাঁধা হয়নি। কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান মহসিন রেজা বাঁধ না হওয়ার জন্য পাউবোকে দায়ী করেন।
এই ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামে ২৫ হাজারের মতো মানুষের বাস ছিল। এখন এলাকায় হাজার পাঁচেকের মতো মানুষ বাস করে। যারা এখনো টিকে আছে, তারা অবিলম্বে বাঁধ বাঁধার দাবি করেছে। ইউপি সদস্য আমিরুল ইসলাম তাঁর শরীরের গামছা দেখিয়ে বলেন, 'আমার কোনো কাপড়-চোপড় নেই। আমরা ত্রাণ বা কোনো সহায়তা পাই না। আমরা সহায়তা চাইও না। বাঁধটা বেঁধে দেওয়া হোক।' তিনি আরো বলেন, 'বিজ্ঞানীরা বলেছেন, আমাদের এলাকা ডুবে যাবে, এলাকার মানুষ এখন তাই বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। সে কারণে মানুষ এলাকা ছাড়ছে।' এখান থেকে মানুষ নিকটবর্তী শহর, রাজধানী ঢাকা, রাঙামাটি এমনকি ভারতেও অনেকে চলে গেছেন বলে তিনি দাবি করেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন এম এম এ মান্নানেরও ধারণা, ইউনিয়নটি দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। তিনিও বাঁধটি বেঁধে দেওয়ার দাবি করেন।
কপোতাক্ষ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমেন চন্দ্র রায়েরও আশঙ্কা, এ বছর বাঁধ নির্মিত না হলে এলাকাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, 'স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন অনেক কমে গেছে।' শিক্ষক ইন্দিরা রানী বলেন, 'আমরা জোয়ারের জন্য আতঙ্কে থাকি, কারণ জোয়ারের আগেই ছাত্রীদের ছুটি দিয়ে দিতে হয়। তা না হলে জোয়ারের তোড়ে মেয়েদের ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।'
এলাকায় ফসল ফলানোসহ উৎপাদন কর্মকাণ্ড না থাকায় নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরাই এলাকাবাসীর প্রধান জীবিকা হয়ে উঠেছে। আগে অবশ্য অনেকেই নদী পেরিয়ে সুন্দরবনে গাছ-কাঠ সংগ্রহে যেত। সামপ্রতিককালে তিনজন বাঘের কবলে পড়ায় মানুষ আর সুন্দরবনে যায় না। পাউবোর দক্ষিণ-পশ্চিম জোনের প্রধান প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন আহমেদ স্বীকার করেন, পাতাখালী বাঁধটি আটকানো যায়নি। এখন বাঁধটি দেওয়ার উদ্যোগ চলছে বলে তিনি দাবি করেন।
এলাকাবাসী জানায়, ২০০৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পাতাখালী এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেওয়া বেড়িবাঁধের সামান্য একটু অংশ ভেঙে যায়।
সেই থেকে দুর্ভোগের শুরু। কয়েক দফা বাঁধ বাঁধার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বাঁধ আটকানো যায়নি। সেই ভাঙা অংশ এখন বিশাল নদীর আকার ধারণ করেছে। সেখানে বসবাসকারী ১৫০টি পরিবারের এখন কিছুই নেই। থাকার জায়গা নেই, কাজ নেই, জীবিকার কোনো পথ খোলা নেই। ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের সময় তীরবেগে পানি ঢুকে ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামই ডুবিয়ে দেয়।
তবে পাউবো কর্তাদের মতে, ইউনিয়নের ৬০ শতাংশ এলাকা ডুবে যায়। ২৪ ঘণ্টায় দুবার জোয়ার এবং দুবার ভাটার কারণে চক্রাকারে ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় গোটা এলাকা পানির তলায় নিমজ্জিত থাকায় এখানকার জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। উৎপাদন কর্মকাণ্ড একেবারে নেই বললেই চলে। জীবিকার তাগিদে এবং বিজ্ঞানীদের মতে 'উপকূলীয় এলাকা' ডুবে যাওয়ার আতঙ্কে মানুষ এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে।
খুলনা জেলা সদর থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে কয়রা উপজেলা সদর। সেখান থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন। বেড়িবাঁধের টিকে থাকা অংশ এবং মাঝে-মধ্যে ঘুরপথে মোটরসাইকেলযোগে কয়রা সদর থেকে ওই এলাকায় পেঁৗছতেই এক ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে যায়। তারপর চোখে পড়ে কোনো এক দানবের থাবায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া এক জনপদ। ভাটার সময় যখন পানি থাকে না তখন গোটা বিল এলাকা কর্দমাক্ত হয়ে ওঠে। আর জোয়ারের সময় চারিদিকে পানি আর পানি। গ্রামের রাস্তাগুলো নেই। গবাদিপশু নেই। নোনা পানির দাপটে গাছপালা মরে যাচ্ছে। কয়রা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা স ম নজরুল ইসলাম বলেন, 'দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নে কৃষি কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। এই ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামে কোনো গরু-ছাগল নেই।'
সামান্য ভাঙন থেকে অতিকায় চেহারার ভাঙন সম্পর্কে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আমিরুল ইসলাম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'বাঁধ ভাঙার শুরুতে আমরা খেজুরগাছ ফেলে যাওয়া-আসা করেছি। আর এখন ভাঙন বিশাল নদীর চেহারা নিয়েছে। এই ভাঙন দিয়ে আসা জোয়ারের পানিতে আমরা ডুবে মরছি। তখন বাঁধের ভাঙনটি বাঁধা হলে আজ এই অবস্থা হতো না।' প্রকৃতপক্ষে বাঁধের ভাঙা অংশ ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার আঘাতে আরো বেড়ে যায়। এরপর বাঁধ বাঁধার উদ্যোগ নেয় পাউবো। সেই সময়ে এ কাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫০ লাখ টাকা। ঠিকাদার এই কাজের জন্য আরো ২০ লাখ টাকা দাবি করে। ঠিকাদারের দাবি পূরণ না হওয়ায় সেবার বাঁধ বাঁধা হয়নি। কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান মহসিন রেজা বাঁধ না হওয়ার জন্য পাউবোকে দায়ী করেন।
এই ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামে ২৫ হাজারের মতো মানুষের বাস ছিল। এখন এলাকায় হাজার পাঁচেকের মতো মানুষ বাস করে। যারা এখনো টিকে আছে, তারা অবিলম্বে বাঁধ বাঁধার দাবি করেছে। ইউপি সদস্য আমিরুল ইসলাম তাঁর শরীরের গামছা দেখিয়ে বলেন, 'আমার কোনো কাপড়-চোপড় নেই। আমরা ত্রাণ বা কোনো সহায়তা পাই না। আমরা সহায়তা চাইও না। বাঁধটা বেঁধে দেওয়া হোক।' তিনি আরো বলেন, 'বিজ্ঞানীরা বলেছেন, আমাদের এলাকা ডুবে যাবে, এলাকার মানুষ এখন তাই বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। সে কারণে মানুষ এলাকা ছাড়ছে।' এখান থেকে মানুষ নিকটবর্তী শহর, রাজধানী ঢাকা, রাঙামাটি এমনকি ভারতেও অনেকে চলে গেছেন বলে তিনি দাবি করেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন এম এম এ মান্নানেরও ধারণা, ইউনিয়নটি দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। তিনিও বাঁধটি বেঁধে দেওয়ার দাবি করেন।
কপোতাক্ষ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমেন চন্দ্র রায়েরও আশঙ্কা, এ বছর বাঁধ নির্মিত না হলে এলাকাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, 'স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন অনেক কমে গেছে।' শিক্ষক ইন্দিরা রানী বলেন, 'আমরা জোয়ারের জন্য আতঙ্কে থাকি, কারণ জোয়ারের আগেই ছাত্রীদের ছুটি দিয়ে দিতে হয়। তা না হলে জোয়ারের তোড়ে মেয়েদের ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।'
এলাকায় ফসল ফলানোসহ উৎপাদন কর্মকাণ্ড না থাকায় নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরাই এলাকাবাসীর প্রধান জীবিকা হয়ে উঠেছে। আগে অবশ্য অনেকেই নদী পেরিয়ে সুন্দরবনে গাছ-কাঠ সংগ্রহে যেত। সামপ্রতিককালে তিনজন বাঘের কবলে পড়ায় মানুষ আর সুন্দরবনে যায় না। পাউবোর দক্ষিণ-পশ্চিম জোনের প্রধান প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন আহমেদ স্বীকার করেন, পাতাখালী বাঁধটি আটকানো যায়নি। এখন বাঁধটি দেওয়ার উদ্যোগ চলছে বলে তিনি দাবি করেন।
No comments