জিডিপিতে রেমিট্যান্সের হার কমছে-উন্নয়ন অন্বেষণের রিপোর্ট

জিডিপিতে রেমিট্যান্সের শতকরা হার কমতে শুরু করেছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরের পর থেকে তা কমছে। কমার এ হার অব্যাহত থাকলে ২০১১-১২ অর্থবছরে জিডিপিতে রেমিট্যান্সের শতকরা হার হবে মাত্র ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ, যা ২০০৯-১০-এ ছিল ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। রেমিট্যান্সের এ প্রবৃদ্ধির হার জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারকে বাড়াতে পারছে না। ২০০৩-০৪ অর্থবছর থেকে মুদ্রাস্ফীতির হার জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার থেকেও বেশি, যা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারকে ব্যাহত


করছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির চাপে রেমিট্যান্স ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে যথাক্রমে ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
চলতি হিসাবের ভারসাম্য বজায় রাখা, বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উন্নয়ন অন্বেষণের গবেষণা অনুযায়ী, প্রকৃত রেমিট্যান্স প্রবাহ ও মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো অনুযায়ী সরকারের রেমিট্যান্স প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে দিনের পর দিন পার্থক্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সামনের বছরগুলোয় আরও বৃদ্ধি পাবে। ২০১০-১১ অর্থবছরে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে প্রকৃত রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১১ হাজার ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ধারা চলতে থাকলে ২০১৪-১৫ অর্থবছর নাগাদ প্রকৃত রেমিট্যান্স প্রবাহ ও সরকারের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে পার্থক্য দাঁড়াবে ১৬ হাজার ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধির হারে পার্থক্য দাঁড়াবে ১৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। রফতানি আয় বাড়লেও রফতানি আয়ে রেমিট্যান্সের শতকরা হার কমছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এ হার ৬৭ দশমিক ৮ শতাংশ থাকলেও ২০১০-১১ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫০ দশমিক ৮২ শতাংশ। ২০১০-১১ অর্থবছরে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় রেমিট্যান্স ৯ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ বাড়লেও রিজার্ভ বেড়েছে মাত্র এক দশমিক ৫ শতাংশ।
এদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ৭০ দশমিক ৪৮, যা ২০০৯-১০-এ ছিল ৬৯ দশমিক ১৯, বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৭৫ দশমিক ২০। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যসহ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং অন্যান্য আমদানি বৃদ্ধি, বিশেষ করে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আমদানি ও এর জ্বালানি তেলের আমদানি বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার অবচিতি হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের তুলনায় বৈদেশিক সাহায্যের অবদান সামান্য। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে ২০১৪-১৫ অর্থবছর নাগাদ রেমিট্যান্সের পরিমাণ হবে ১৫ হাজার ৩০৯ দশমিক ৯৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে নিট বৈদেশিক সাহায্য আসার সম্ভাবনা মাত্র এক হাজার ৬৬ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা : বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির হার দিন দিন কমছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছর জনশক্তি রফতানির পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ যার পরিমাণ ৯ লাখ ৮১ হাজার, যা পরবর্তী সময়ে কমতে শুরু করেছে। ২০১০ সালে মোট ৩ লাখ ৯১ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক কাজের সন্ধানে বিদেশ গমন করেছে। বৈশ্বিক মন্দা ও অর্থনৈতিক সংকটে মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। মন্দাপরবর্তী সময়ে এসব দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরালো হলেও সম্প্রতি উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোয় চলমান রাজনৈতিক সংকট এবং মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাপ্তি জনশক্তি রফতানির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। বর্তমান সময়ে স্বল্পদক্ষ জনশক্তি রফতানির পরিমাণ বাড়ছে। আফ্রিকার দেশগুলোয় বর্তমানে কৃষিজমি চাষাবাদের জন্য প্রচুর শ্রমিক দরকার। নতুন শ্রমবাজার হিসেবে ইরাক, রুমানিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি, রাশিয়া, কানাডা, সুইডেন, সুদান, গ্রিস, কঙ্গো প্রভৃতি দেশ প্রচুর সম্ভাবনাময়।
রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক সাহায্য : রেমিট্যান্সের সঙ্গে তুলনা করলে বৈদেশিক সাহায্যের অবদান বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খুবই নগণ্য। ২০১০-১১-তে নিট বৈদেশিক সাহায্য ছিল এক হাজার ৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১১ হাজার ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
 

No comments

Powered by Blogger.