চার মন্ত্রীর প্রথম দিন

তুন দায়িত্ব গ্রহণের পর গতকালই প্রথম অফিসকরেছেন চার মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের,
জিএম কাদের ও ফারুক খান। তারা সাংবাদিকদেরজানিয়েছেন তাদের অনুভূতি\'ঢাল নেই তলোয়ার নেই' অবস্থা :সুরঞ্জিত\সমকাল প্রতিবেদক\নয়া রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, তার প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে সময়মতো ট্রেন ছাড়া এবং পেঁৗছানো।


গতকাল বুধবার নিজ দফতরে প্রথম কর্মদিবসে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। গত রোববার সরকারি আদেশে যোগাযোগ মন্ত্রণালকে ভাগ করে রেল মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। পরদিন সোমবার এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। দায়িত্ব পাওয়ার পর গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় নিজ দফতরে আসেন মন্ত্রী। এ সময় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।
নবগঠিত এ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর বসার জায়গা হয়েছে রেল সচিবের আগের কক্ষে। সকালে ওই কক্ষের দরজায় মন্ত্রীর নামফলক দেখা যায়।
এ সময় রেলমন্ত্রী হাসতে হাসতে সাংবাদিকদের বলেন, 'কার্যালয় না থাকায় রেল সচিবের রুম দখল করেছি।'
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'এটা ভাবাবেগের সময় নয়, রেল মন্ত্রণালয় নতুন। ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দারের মতো অবস্থা। সময় কম, তবে আত্মবিশ্বাস আছে। লোকসান কেউ ভালোবাসে না। তাই রেলকে লাভজনক করতে হবে। তবে সেবার মান বাড়াতে হলে জনগণেরও সহযোগিতা করা দরকার।'
রেল নিয়ে পরিকল্পনার বিষয়ে সুরঞ্জিত জানান, তিনি জরুরি, মধ্যবর্তী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে চান। তিনি বলেন, 'ট্রেন যেটুকু আছে, আমরা তা প্রথমে গতিশীল করতে চাই।'
সুরঞ্জিত বলেন, রেল একটি ঐতিহ্যবাহী ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই রেলের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে হবে।
'জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের' মাধ্যমে রেলওয়েকে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
পরে মন্ত্রী দুপুর সোয়া ১টায় সচিবালয়ের নিজ দফতর থেকে বেরিয়ে রেল ভবনে যান।


আরামদায়ক চেয়ার সরিয়ে ফেলুন :কাদের
সমকাল প্রতিবেদক
নতুন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তিনি পকেট ভারী
করতে আসেননি, কাজ করতে এসেছেন। সততার সঙ্গে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চান তিনি।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে দফতর পাওয়ার পর প্রথম অফিস করেন যোগাযোগমন্ত্রী। সকাল সোয়া ১০টায় দফতরে পেঁৗছলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। পরে তিনি সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, পথ অনেক, কিন্তু পেট্রোল কম। জনগণের বিপুল প্রত্যাশার বিপরীতে তার হাতে সময় কম হলেও তহবিলের দিকে নজর রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা সাজাবেন তিনি। একটি খেলা হলে খেলোয়াড়-কর্মকর্তা সবাই চাপের মধ্যে থাকেন। তিনি তীব্র চাপ অনুভব করছেন জনগণের প্রত্যাশার ক্ষেত্রে_ যোগ করেন কাদের।
তিনি বলেন, 'আমি ১০ বছর পর আজ সচিবালয়ে প্রবেশ করেছি। এর আগে ২০০১ সালে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে অফিস করে শেষবারের মতো বেরিয়ে গিয়েছিলাম। আবার মন্ত্রী হয়ে সচিবালয়ে ঢুকলাম।'
মন্ত্রী বলেন, তিনি এ অফিসকে দলীয় কার্যালয় বানাতে চান না। কাজেই দলীয় বিষয়ে কারও কোনো কথা থাকলে তা যেন তার বাড়িতেই বলা হয়।
এরপর সচিবকে উদ্দেশ করে 'বেশি আরামদায়ক' চেয়ার সরিয়ে নিতে বলেন তিনি। সৈয়দ আবুল হোসেনের উত্তরসূরি কাদের বলেন, 'আমি সোজা হয়ে বসতে চাই।'
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কী কী করবেন জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, 'আমার হাতে দু'বছর সময় আছে বলা হচ্ছে। এটি ঠিক নয়। আমি বলব, আমার সময় রয়েছে দেড় বছর। কারণ মেয়াদ শেষের ছয় মাস আগে থেকেই নির্বাচনের কাজ শুরু হয়ে যায়।' তারপরও 'সময় ও ফান্ডের দিকে নজর রেখে' উন্নয়ন পরিকল্পনা করবেন বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, 'মন্ত্রণালয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। এগুলো সহজে ভাঙা যাবে না। তবে আমি সবকিছু দ্রুততার সঙ্গে করতে চাই।'
পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে মন্ত্রী বলেন, 'আমার সময়ে আমি কাজ শুরু করে দিয়ে যাব। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। পরেও এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে।' পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করাকেই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন যোগাযোগমন্ত্রী।
মন্ত্রণালয়ে ভালো কাজের পুরস্কার দেওয়া হবে জানিয়ে কাদের বলেন, তিনি অতীত থেকে শিক্ষা নিতে চান।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন অধিদফতরের দুর্নীতির বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, 'ওয়েট অ্যান্ড সি।'


দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখাই চ্যালেঞ্জ :জিএম কাদের
সমকাল প্রতিবেদক
বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের তার নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেই জনগণের স্বার্থে
কাজ করার অঙ্গীকার করলেন। তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি মন্ত্রণালয়। দেশের প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে এ মন্ত্রণালয়ের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। আমি সংবেদনশীল মন নিয়ে তাদের প্রত্যাশা পূরণ করার চেষ্টা করব।
গতকাল বুধবার বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর জিএম কাদের সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। বিকেল সাড়ে ৪টার পর বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের মন্ত্রণালয়ে যান। এ সময় নবনিযুক্ত বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান ও বাণিজ্য সচিব গোলাম হোসেন, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমানসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নতুন মন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান।
গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ফারুক খানকে এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে জিএম কাদেরকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে জিএম কাদের বলেন, যে কোনো কাজেই চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এটা নিতে না পারলে কাজ করার কোনো গুরুত্ব থাকে না।
তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আমার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আরও গতিশীল করা। তবে, দেশের পণ্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমি কেবল দায়িত্ব নিয়েছি। সবার সঙ্গে বিশেষ করে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, আমদানি-রফতানিকারকসহ বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পদ্ধতি নির্ধারণ করব। সাধারণ মানুষের চাহিদাই আমার কাজে প্রাধান্য পাবে।
ফারুক খানকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আরও গণমুখী করার চেষ্টা করব।
ডবি্লউটিও সম্মেলন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, জেনেভা সম্মেলনে ফারুক খান বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তিনি দেশে ফিরে আমাকে ব্রিফ করবেন, তার ভিত্তিতে আমি কাজ করব।


মানুষ মাঝে মাঝে কষ্ট পেয়েছেন :ফারুক খান
সমকাল প্রতিবেদক
বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে গত তিন বছরে দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাধারণ
মানুষ মাঝে মাঝে কষ্ট পেয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন ফারুক খান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য থেকে শুরু করে রফতানি, ব্যবসাভিত্তিক নেগোসিয়েশনসহ বাণিজ্য সংগঠনগুলো ভালো অবস্থানে রয়েছে।
গতকাল বিকেল পর্যন্ত ফারুক খান বাণিজ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে অফিস করেন। জিএম কাদেরের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে তিনি সাংবাদিকদের কাছে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে তার তিন বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। পরে তিনি তার নতুন কর্মস্থল বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে যান।
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আতাহারুল ইসলাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ফারুক খানকে নিয়ে আসেন। এরপর কর্মকর্তারা নতুন মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে বরণ করেন।
নতুন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে আসা দলীয় নেতাকর্মীদের নতুন কার্যালয় দেখিয়ে ফারুক খান বলেন, কক্ষটা অনেক সুন্দর, তাই না? তবে আশপাশে গাছ থাকলে আরও ভালো হতো। ফারুক খান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পেয়েই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বারান্দায় এবং তার রুমে প্রচুরসংখ্যক টবে গাছ লাগিয়েছিলেন।
নতুন দায়িত্ব পালন সম্পর্কে ফারুক খান বলেন, এটা আমার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। ট্যুরিজম এবং লোকসানে থাকা বিমানকে যেন উন্নত করা যায় সে লক্ষ্যে আমার প্রচেষ্টা থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.