নৌ চুক্তির আওতায় ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট চালুর তাগিদ by আবুল কাশেম

নৌ ট্রানজিট চুক্তির আওতায় নিয়মিত ট্রান্সশিপমেন্ট চালুর তাগিদ দিয়েছে ভারত। গত ২০ নভেম্বর এ বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশন অফিস থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি পাঠিয়েছে ভারতীয় হাইকমিশন। তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব ও ট্রানজিট মাশুল নির্ধারণ ছাড়া নিয়মিত নৌ ট্রানজিট এখনই চালুর পক্ষে নয় সরকার। এ ছাড়া নৌ ট্রানজিটের মাধ্যমে শেরপুর ও আশুগঞ্জে আসা ভারতীয় পণ্য পরিবহনে


বাংলাদেশের সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলায় অবস্থিত সুতারকান্দি স্থলবন্দর ব্যবহারের সুযোগ চেয়েছে ভারত। নদীবন্দর থেকে স্থলবন্দর পর্যন্ত পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের ট্রাক ব্যবহার করা হবে। ভারতীয় এ প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে সরকার।
গত ২০ নভেম্বর ভারতীয় হাইকমিশনের পাঠানো চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার অবকাঠামোগত অবস্থা জানতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাবি্লউটিএ) কাছে চিঠি পাঠিয়েছে রাজস্ব বোর্ড। নৌপথে ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় আসা ভারতীয় পণ্য আখাউড়া বন্দর দিয়ে এখন ভারতে পাঠানো হয়ে থাকে। সরকার এর আগে আশুগঞ্জ থেকে সড়কপথে আখাউড়া পর্যন্ত ভারতীয় পণ্য পরিবহনে সুযোগ দিয়েছে। এসব তথ্য তুলে ধরে রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নৌ প্রটোকল চুক্তি অনুসারে আশুগঞ্জ অথবা শেরপুর থেকে সুতারকান্দি পর্যন্ত ভারতীয় পণ্য পরিবহনে কোনো বাধা নেই। তবে দেখতে হবে ট্রান্সশিপমেন্ট উপযোগী অবকাঠামো আছে কি না। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধার বিষয়ে জানতে চেয়ে এনবিআরের চিঠিটি নৌ মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, কাস্টমস কমিশনার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেটের জেলা প্রশাসকের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
নৌ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এখন আশুগঞ্জ ও শেরপুরকে পোর্ট অব কল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আশুগঞ্জ বন্দরে ২৬ অক্টোবর থেকে ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় পণ্য পাঠানো স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে কয়েকটি ট্রায়াল রানের মাধ্যমে পণ্য ট্রান্সশিপমেন্ট করা হয়। এ ব্যাপারে সমালোচনা শুরু হলে তা আবার স্থগিত করা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, নৌ ট্রানজিট সংক্রান্ত পরীক্ষামূলক চলাচলে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। আর এসব জটিলতা দূর করার পর নিয়মিত নৌ ট্রানজিট দেওয়ার পক্ষে নৌ মন্ত্রণালয়। এ-সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভায় জানানো হয়েছে, নৌ ট্রানজিট দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো আশুগঞ্জে নেই। তবে অবকাঠামো তৈরির প্রস্তুতি চলছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সড়ক, নৌ ও রেলপথে ট্রানজিট দিতে মাশুল নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে সরকার গঠিত বিশেষ কমিটি। ১৭টি পথের প্রতিটি পৃথক পৃথক মাশুল ঠিক করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। সাতটি সড়কপথে সর্বনিম্ন ১৮ হাজার টাকা থেকে ৩৮ হাজার টাকা। সাত রেলপথে সর্বনিম্ন ১০ লাখ থেকে ৪০ লাখ টাকা এবং তিনট নৌপথে সর্বনিম্ন আট লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণের প্রস্তাব রয়েছে। ৮০০ টন পণ্য পরিবহন করা যায় এমন পণ্যবাহী জাহাজ বিবেচনায় এনে নৌপথে এসব মাশুল নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি কনটেইনার ট্রেনে ১৬৫০ টন পণ্য পরিবহন করা যাবে_এমন হিসাবে রেল ট্রানজিট মাশুল এবং সড়কপথের জন্য ৯ টনের ট্রাক বিবেচনায় এনে এসব মাশুল নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে সরকারের বিশেষ কমিটি। আগামী মার্চ মাসে বিদ্যমান নৌ প্রটোকল নবায়ন করা হবে। বর্তমানে এই প্রটোকলের আওতায় আশুগঞ্জকে ট্রান্সশিপমেন্ট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে বাণিজ্য চুক্তি হয়েছিল, তারই আওতায় স্বাক্ষরিত হয় নৌ প্রটোকল। তবে ওই সময় চুক্তিতে পোর্ট অব কল ছিল শেরপুর। তখন কেবল নদীপথেই পণ্য পরিবহনের সুযোগ ছিল। নদীর নাব্যতা না থাকায় ১৯৮০ সালের পর শেরপুর বন্দর অকার্যকর হয়ে পড়ে। পরে ভারত তার নিজের সুবিধার জন্য শেরপুরের বদলে আশুগঞ্জ বন্দরকে পোর্ট অব কল হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব করে বাংলাদেশের কাছে। ওই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার ভারতের জন্য আশুগঞ্জ বন্দরকে পোর্ট অব কল হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর পরীক্ষামূলকভাবে ভারতীয় পণ্যভর্তি একাধিক জাহাজ আশুগঞ্জ বন্দরে আসে।

No comments

Powered by Blogger.