এ ই দি নে-মহান আত্মা...

খন আমি হতাশ হই, তখন স্মরণ করি সমগ্র ইতিহাসেই সত্য ও ভালোবাসার জয় হয়েছে। দুঃশাসক ও হত্যাকারীদের কখনও অপরাজেয় মনে হলেও শেষ সব সময়ই তাদের পতন ঘটে মনে রাখবেন সর্বদাই।' জীবনী গ্রন্থে মহাত্মা গান্ধী এভাবেই নিজের অবস্থান বর্ণনা করেছিলেন। সংগ্রাম ও সহিংসতা যে এক জিনিস নয়, পৃথিবীর মানুষকে তিনি তা বুঝিয়ে দিয়েই পরিণত হয়েছিলেন মহান এক আত্মায়; মহাত্মা গান্ধীতে।


তবে তার প্রকৃত নাম মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার অসামান্য অবদান, অহিংস সত্যাগ্রহ আন্দোলন এবং তার আত্মোৎসর্গী মানসিকতার জন্য তিনি পেয়েছেন এ 'মহাত্মা গান্ধী' উপাধি। উত্তেজনা কিংবা ক্ষমতার লোভ নয়, বরং নিজ মেধাবলেই তিনি পরিচালনা করেছিলেন শান্তিপূর্ণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন। তিনি সব সময় বলতেন এবং বিশ্বাসও করতেন_ ক্রোধ বা রক্তপাত নয়, বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে, বিলেতি পণ্য পরিহার ইত্যাদি শান্তিপূর্ণ কার্যক্রমের মাধ্যমেই কেবল ইংরেজদের সমগ্র ভারত থেকে বিদায় করা সম্ভব।
মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধীর জন্ম ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দের ২ অক্টৌবর অর্থাৎ আজকের এই দিনে গুজরাটের পোরবন্দরের হিন্দু মোধ পরিবারে। বাবা করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন পোরবন্দরের দেওয়ান বা প্রধানমন্ত্রী। মা পুতলিবা ছিলেন করমচাঁদের চতুর্থ স্ত্রী। করমচাঁদের প্রথম দুই স্ত্রীর প্রত্যেকেই একটি করে কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে অজানা কারণে মৃত্যুবরণ করেন। ধার্মিক মায়ের সঙ্গে এবং গুজরাটের জৈন প্রভাবিত পরিবেশে থেকে গান্ধী ছোটবেলা থেকেই জীবের প্রতি অহিংসা, নিরামিষ ভোজন, আত্মশুদ্ধির জন্য উপবাস, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও সম্প্রদায়ের পারস্পরিক সহিষ্ণুতা ইত্যাদি বিষয় শিখতে শুরু করেন। তিনি জন্মেছিলেন হিন্দু বৈশ্য গোত্রে। এরা ছিলেন মূলত ব্যবসায়ী। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই বাবা-মায়ের পছন্দ মতো পাত্রীকে বিয়ে করেন।
ম্যাট্রিকুলেশন পাসের পর পড়াশোনার জন্য চলে যান ব্রিটেনে। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে ব্যারিস্টারি পড়তে লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজে ভর্তি হলেও তার দর্শনচর্চার সুপ্ত বাসনাটি থেকেই যায়। মূলত হিন্দু দর্শনের ছাত্র হলেও বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন, ইসলামসহ অন্যান্য ধর্মের সাহিত্য ও দর্শন নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেন। তার ছিল একটা নিজস্ব জীবন দর্শন। তিনি বলেছেন, শুভই সত্য এবং সত্যই শুভ। ক্ষমতা কখনও তাকে টানেনি। হননি শাসক কিংবা রাজা। রাজা হলে তিনিই হতেন প্লেটো প্রস্তাবিত কল্পিত রাজ্যের এক দার্শনিক রাজা। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে এক হিন্দু মৌলবাদীর ছোড়া গুলিতে তিনি মারা যান।
আশরাফুল আলম মিলন
 

No comments

Powered by Blogger.