মৌসুমি নাট্যোৎসব by মামুন মিজানুর রহমান

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের আয়োজনে 'মৌসুমব্যাপী নাট্য অভিনয়ের ২০ বছর পূর্তি ও বিজয়ের ৪০ বছর উদ্যাপন'। লিখেছেন মামুন মিজানুর রহমান\ বিজয়ের মাসের প্রথম শুক্রবারের সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ আয়োজিত 'মৌসুমব্যাপী নাট্য অভিনয়ের ২০ বছর পূর্তি ও বিজয়ের ৪০ বছর উদ্যাপন' অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী


অনুষ্ঠানে দর্শকের এমনই ঢল নামে। ২ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের সভাপতি মান্নান হীরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বিশিষ্ট নাট্যজন ঝুনা চৌধুরী, হাসান আরিফ, গোলাম কুদ্দুস প্রমুখ। বক্তারা আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ ও নাট্যাঙ্গনের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি বক্তারা অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জোর দাবি জানান। প্রতিবছর বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ শীতকালে আয়োজন করে মৌসুমি নাট্যোৎসব। এ বছর এই নিয়মিত আয়োজনের ২০ বছর পূর্তি হলো। পাশাপাশি আমাদের স্বাধীনতারও ৪০ বছর বয়স হয়ে গেল। ২০ আর ৪০-এর এই অদ্ভুত মিল কাকতালীয় না হলেও চমকপ্রদ।
এ উৎসব চলবে পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত। প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে প্রদর্শিত হবে বিভিন্ন নাট্যদলের পরিবেশনায় বেশ কয়টি জনপ্রিয় নাটক। উদ্বোধনী দিনে প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনায় নাটক 'কষ্টবন্দি মানুষেরা', নাট্যধারার 'ছি : বুড়ি নাইয়া', 'দৃষ্টিপাত নাট্যসংসদের 'জোড়াতালি', নাট্যযোদ্ধার 'খ্যাতির বিড়ম্বনা'। আগামীকালও বেশ কয়েকটি দল তাদের জনপ্রিয় নাটক মঞ্চায়ন করবে।
পথনাটকের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিক সম্ভবত এই যে, এখানে সমাজের শ্রমজীবী মানুষ, ভাসমান মানুষকে নাটক দেখানোর সুযোগ থাকে। এই শ্রেণীর দর্শকের পক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিলনায়তনে বসে নাটক দেখার কল্পনাও হয়তো অসম্ভব। উদ্বোধনী দিনের প্রদর্শনীতে দর্শক হিসেবে পাওয়া গেছে নানা পেশার মানুষ। চাকুরে, শিক্ষার্থী, নানা পেশাজীবী ও ভাসমান মানুষ নাটক উপভোগ করেছেন। অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত অধিকাংশ নাটক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক। সব নাটকেই রয়েছে তীব্র সমকালীন রাজনৈতিক বক্তব্য, মানুষের দুর্দশা এবং তা থেকে উত্তরণের স্বপ্ন। বিজয়ের এই মাসে এসব নাটক সাধারণ মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আরো বেশি দীক্ষিত করবে। এসব নাটকের যে চেতনা, তা শিক্ষিত সমাজে তো বটেই, ছড়িয়ে দেওয়া উচিত সমাজের সব মহলে। পথনাটকের সাফল্য এখানেই, পথনাটক পথের মানুষকেই নাটক দেখায় এবং এভাবেই পথনাটক ছড়িয়ে দেয় সমাজের প্রায় সব মহলে জীবনের চেতনা, সম্ভাবনা ও স্বপ্ন। পাশাপাশি নিরক্ষর মূর্খ লোককেও রাজনৈতিক সচেতনতা শিক্ষা দেয় পথনাটক।

No comments

Powered by Blogger.