টেস্টে আপ্রাণ চেষ্টার আশ্বাস

ট্টগ্রাম থেকে প্রতিনিধি : আচ্ছা, এ সিরিজ থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের প্রাপ্তি কী?তৃতীয় ওয়ানডেটা শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রেসবঙ্ েবসে ম্যাচ রিপোর্ট লিখতে লিখতে এক সহকর্মী করলেন প্রশ্নটা। কিছুক্ষণ কারো মুখে কোনো কথা নেই। তারপর কে যেন আস্তে করে বললেন, বোধহয় নাসিরের সেঞ্চুরি! যিনি বলেছেন তাঁর দিকে তাকিয়ে মনে হলো নিজেই নিজের উত্তরে সন্তুষ্ট নন! শুধু একটা সেঞ্চুরি, সেটাও হেরে যাওয়া ম্যাচে।


একটা টোয়েন্টি-টোয়েন্টি আর তিনটা ওয়ানডে হয়ে যাওয়ার পর প্রাপ্তির খাতায় আর কিছু নেই! আসলেই নেই। এবং তারচেয়েও ভয়ংকর কথা_দুই ম্যাচের যে টেস্ট সিরিজ বাকি আছে সেখানেও যে কিছু থাকবে সে আশ্বাসও দিতে পারছেন না কেউ। এ যেন সেই পুরনো দিনের বাংলাদেশ! সম্মানজনক হার যখন ছিল সম্বল, তার মাঝেই ব্যক্তিগত কিছু অর্জন খোঁজার চেষ্টা। নিকট অতীতে এরকম ভগ্নদশায় দলটাকে কখনো দেখা যায়নি। এই তো কিছুদিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে একটা ওয়ানডে আর একটা টোয়েন্টি-টোয়েন্টিতে জয় আছে। তারও আগে বিশ্বকাপে তিন তিনটে জয়! সেই দলটাই হঠাৎ করে পাকিস্তানের বিপক্ষে এসে ব্যাটিং ভুলে গেল! এমন হলে টেস্ট সিরিজ নিয়ে কোন আশায় বুক বাঁধবেন সমর্থকরা? নাকি সেখানে অপেক্ষা করছে আরো বড় কোনো লজ্জা?
সেই প্রশ্নের উত্তর দিতেই যেন গতকাল বিশ্রাম ছেড়ে অনুশীলনে চলে এলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, শাহরিয়ার নাফীস আর ইলিয়াস সানি। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দু-দলের খেলোয়াড়দেরই এ দিন বিশ্রাম নেওয়ার কথা। বিশ্রামের ফাঁকেই শেষ হয়ে যাওয়া ওয়ানডে সিরিজের বিচার-বিশ্লেষণ হবে, হোটেলে টিম মিটিংয়ে নিজেদের ভুল-ত্রুটি নিয়ে আলোচনা হবে। হয়তো সেটা হবে বা হচ্ছেও। কিন্তু শুধু তাতেই কাজ হবে না বুঝতে পেরেই যেন এই তিনজনের অনুশীলনে চলে আসা।
একজন এলেন না। কিন্তু না এসেও তিনিই সবচেয়ে বেশি থাকলেন আলোচনায়। তামিম ইকবাল। চাপটা তাঁর ওপরই সবচেয়ে বেশি কিনা! সিরিজ শুরুর আগে কোচের সঙ্গে তাঁর বাদানুবাদের খবর, এরপর রহস্যময় ইনজুরি এবং সবশেষে দল থেকে বাদ পড়া নিয়ে নানা গুজব, নাটক। দুঃসময়ের নাগপাশে বন্দি বাংলাদেশের ওপেনার। এসবের জবাব হতে পারত তাঁর ব্যাট হাতে দুর্দান্ত কোনো পারফরম্যান্স। কিন্তু তিন ওয়ানডের দুটোতে শূন্যসহ মোট চার রান করা তামিমের ক্যারিয়ারে এরচেয়ে খারাপ সময় বোধহয় আগে আর আসেনি। ঐচ্ছিক অনুশীলনে আসেননি বলে তাঁকে কথা বলার জন্য পাওয়া গেল না, তবে তাঁর হয়েই যেন জবাবটা দিলেন প্রধান নির্বাচক আকরাম খান, 'এ রকম সময় যেকোনো ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারেই আসতে পারে। দরকার শুধু একটা ভালো ইনিংস, দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস টেস্টেই ও এরকম কিছু একটা করবে।'
মরিয়া অধিনায়ক মুশফিক নিজেও। ক্রমাগত ব্যাটিং ব্যর্থতার যে দায় সেটা তাঁকেও নিতে হবে এবং মুশফিক আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে নিয়েছেনও, 'এটা ক্লাব ক্রিকেট না। আমরা দেশের জন্য খেলছি এবং সারা পৃথিবী আমাদের হারটা দেখছে। দেশের কথা ভেবে আমাদের আরো দায়িত্ব নিয়ে, আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে খেলতে হবে।'
এই ভাবনার সঙ্গে অবশ্য মাঠের ছবিটার বিস্তর ফারাক। আর এত দিনে যে ছবিটা বদলায়নি সেটা মাত্র দুদিনে বদলাবে? দলের যা অবস্থা তাতে নতুন করে আশার কথা শোনাতে হয়তো একটু ভয় পাচ্ছেন মুশফিকও। সেই পথে না হেঁটে বাংলাদেশ অধিনায়ক তাই ধরলেন নিরাপদ রাস্তা, 'মাত্র দুই দিন আছে। দুই দিনের অনুশীলনে সব ভালো হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়, কিন্তু কথা দিচ্ছি আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করব।'
করতেই হবে। আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া টেস্টটাতে যে অনেক কিছু প্রমাণ করতে হবে তাঁদের!

No comments

Powered by Blogger.