শুল্ক ও কোটামুক্তের বাইরের ইস্যু সামনে আনার তাগিদ

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবিল্গউটিও) অষ্টম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনকে সামনে রেখে আয়োজিত এক সংলাপে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশ এবং দোহা উন্নয়ন আলোচনার বাইরে এসে রুলস অব অরিজিন, অশুল্ক বাধা, জনশক্তি রফতানিসহ দ্বিতীয় প্রজন্মের নানা ইস্যু নিয়ে সামনে এগোতে হবে। তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক।


ডবি্লউটিওর আলোচনায় এটি নিয়ে এগোনো যাবে না। আগামী ১৫-১৭ ডিসেম্বর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠেয় ডবিল্গউটিও মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠককে সামনে রেখে গতকাল বুধবার রাজধানীর স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে গবেষণা সংস্থা সিপিডি এ সংলাপের আয়োজন করে।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সদ্য বিদায়ী বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। ফারুক খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল জেনেভা যাচ্ছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় সংলাপে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ফজলুল আজিম এমপি, জেনেভা মিশনের সাবেক রাষ্ট্রদূত তৌফিক আলী, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির, ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম প্রধান মোস্তফা আবিদ খান, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম, এফবিসিসিআইর উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডবিল্গউটিও সেলের মহাপরিচালক অমিতাভ চক্রবর্তী, সাবেক বাণিজ্য সচিব সোহেল আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
ফারুক খান বলেন, ডবি্লউটিও মানে শুধু শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা কিংবা দোহা উন্নয়ন এজেন্ডার আলোচনা নয়, এর বাইরে অনেক কিছু আছে। এ আলোকে ডবি্লউটিও মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে তার অবস্থান ঠিক করেছে। তিনি বলেন, মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে তিনি দোহা উন্নয়ন আলোচনা যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার তাগাদা দেবেন। সাইডলাইনে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিল, জাপানসহ ১০ থেকে ১২টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈঠক হবে। প্রতিটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা স্বার্থ নিয়ে আলোচনা হবে।
ফারুক খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে। আগত সম্মেলনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলবেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তির (ট্রেড অ্যান্ড ইকনোমিক কো-অপারেশন ফোরাম-টিইসিএফ) বিষয়ে কথা হচ্ছে। সম্ভাব্য ওই চুক্তির বিষয়েও কথা হবে। বাংলাদেশের স্বার্থ পুরোপুরি রক্ষা করে চুক্তি করা হবে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য তার উপস্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত সুবিধার বিষয়ে বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ আর কত দিন তার রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং নেগোসিয়েশন দক্ষতা বিনিয়োগ করবে তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন বাস্তবতায় শুধু শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার প্রবেশাধিকারের মধ্যে আটকে না থেকে দ্বিতীয় প্রজম্মের ইস্যুগুলো নিয়ে এগোতে হবে। তিনি সম্মেলনে শুল্কের বাইরের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন। দেবপ্রিয় বলেন, এশিয়া ও আফ্রিকার এলডিসির স্বার্থের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা দূর করে সাধারণ স্বার্থের জায়গায় নিয়ে আসতে হবে।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাজার সুবিধা সব সময়ের জন্যই একটি রাজনৈতিক বিষয়। ডবিল্গউটিওতে এ সময়ে তাই সেবা খাতকে অন্যতম আলোচ্য করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। ড. তৌফিক আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের জন্য বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ (ট্রিপস) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করা উচিত। হুমায়ুন কবির বলেন, আফ্রিকানদের সমর্থন না পেলে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত প্রবেশ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান সম্মেলন নিয়েই তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ডবি্লউটিও মৃতপ্রায়। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের পাশাপাশি এলডিসি থেকে উন্নত দেশগুলোতে শ্রমশক্তি রফতানি বিষয়ে জোর দেওয়া উচিত। ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম প্রধান মোস্তফা আবিদ খান বলেন, বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আগামী সম্মেলনে তাগিদ দিতে হবে উৎস-বিধি সহজীকরণের বিষয়ে।

No comments

Powered by Blogger.