২৮ শহীদের রক্তে লাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস-মনে পড়ে তোমাদের by মেহেরুল হাসান সুজন
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থাকেনি একচুলও নিশ্চুপ। প্রতিবাদের ভাষা গর্জন তুলেছিল এই ক্যাম্পাসেও। তাই তো দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ তাজা প্রাণের রক্তে লাল হয়েছিল মতিহারের সবুজ আঙিনা।আন্দোলনেই যার জন্ম, ১৯৫৩ সালে জন্মের পর সেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবাদের তীর্থস্থানে পরিণত হবে, সেটাই স্বাভাবিক। ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পাক হানাদারদের রুখতে গিয়ে
দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবীর আসনে আসীন হন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা। সেই যে রক্ত দেওয়া শুরু এই ক্যাম্পাসের, তারপর আর থেমে থাকেনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে এ ক্যাম্পাসের রক্তদানের সাহসিকতা। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এ ক্যাম্পাসকে হারাতে হয়েছে তার ২৭ সূর্যসন্তানকে। তাই তো বুঝি শুধু জ্ঞানের বিশাল ভাণ্ডার হিসেবেই নয়; ২৭ শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীর বীরত্বের স্মৃতি কাঁধে নিয়ে আজও মাথা উঁচু করা গর্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ক্যাম্পাসটি। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল পাকিস্তানি হায়েনারা প্রবেশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। তারা আস্তানা গড়ে বর্তমানের শহীদ শামসুজ্জোহা হল এলাকায়। সেটি ছিল তাদের অত্যাচারের আখড়া। স্বাধীনতার পর হলের পাশের গণকবর থেকে উদ্ধার করা হয় অসংখ্য মানুষের মাথার খুলি, হাড়গোড় ও কঙ্কাল। প্রবেশের পরদিনই তারা ধরে নিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক সুখরঞ্জন সমাদ্দারকে। ১৪ এপ্রিল পাকসেনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবাসিক এলাকায় তার কোয়ার্টার থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয়। তিনিই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শহীদ।
পাকসেনারা তাকে হত্যার পর ক্যাম্পাসের পাশে বিনোদপুরের একটি খালে লাশ ফেলে দেয়। স্থানীয় লোকজন ওইদিন রাতেই কাজলা এলাকায় তাকে সমাহিত করেন। কাজলার লোকজন সেদিন রাতেই ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কারণে এই খবর গোপন থাকে অনেকদিন। স্বাধীনতার পর জানা যায় শহীদ সুখরঞ্জনের মৃত্যুর খবর। শহীদ সুখরঞ্জনকে নিয়ে যাওয়ার পরদিনই গণিত বিভাগের অধ্যাপক হবিবর রহমানকে ক্যাম্পাসের জুবেরি ভবন থেকে ব্রিগেডিয়ার আসলাম ও কর্নেল তাজের নেতৃত্বে তুলে নিয়ে যায় পাকবাহিনী। এরপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি এ অধ্যাপকের।
১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক মীর আবদুল কাইয়ুমকে। মনোবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপকের লাশ ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পাওয়া যায় রাজশাহী মহানগরীর পদ্মা নদীর ধারের বাবলাবনে। এখানে অধ্যাপক কাইয়ুমসহ রাজশাহীর আরও ১৪ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হয়েছিল। ১৯৯৫ সালের ২৫ নভেম্বর সেখানে একটি বধ্যভূমি স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন অধ্যাপক কাইয়ুমের সহধর্মিণী অধ্যাপক মাসতুরা খানম। স্বাধীনতার জন্য শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই প্রাণ দেননি, প্রাণ দিয়েছেন ছাত্র এবং কর্মচারীরাও। মুক্তিযুদ্ধে যে ৯ জন ছাত্র শহীদ হয়েছেন তারা হলেন_ রেজাউল করিম, আমিরুল হুদা, আবদুল মান্নান, আবদুল লতিফ, গোলাম সারোয়ার সাধন, মোহাম্মদ আলী, ফজলুল হক, শাহজাহান আলী এবং মিজানুল হক পেয়াস।
এ ছাড়া শহীদ হন সহায়ক কর্মচারী এমাজ উদ্দিন শেখ, সাইফুল ইসলাম, কলিম উদ্দিন, আবদুল আলী, শফিকুর রহমান, সাধারণ কর্মচারী মোহাম্মদ ইউসুফ, আবদুল মজিদ, আবদুর রাজ্জাক, নুরু মিয়া, আবদুল ওয়াহাব, আবদুল মালেক, কোরবান আলী, মোহাম্মদ আফজাল, ওয়াজেদ আলী ও মোহন লাল। যুদ্ধ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়কে আগলে রাখতেই তারা অবস্থান করেছিলেন ক্যাম্পাসে। এ ছাড়া বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় বাসস্ট্যান্ডে অজ্ঞাত এক শহীদের কবর রয়েছে। স্বাধীনতার ৪০ বছরে পথ হাঁটছি আমরা। এত বছরেও ২৮ শহীদের স্মৃতি এতটুকুও মলিন হয়নি এই ক্যাম্পাসে। তাদের স্মৃতি ধরে রাখতেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে বিভিন্ন ভাস্কর্য। ক্যাম্পাসের মেইন গেট দিয়ে ঢুকলেই সজ্জিত সড়ক দ্বীপের মধ্যে চোখে পড়বে সিমেন্টে তৈরি একটি তালিকা। এ তালিকাতেই লেখা আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদদের নাম। এর ঠিক পশ্চিম পাশেই রয়েছে মুক্তি স্মারক ভাস্কর্য 'সাবাস বাংলাদেশ'। এর স্থপতি নিতুন কুণ্ডু। ১৯৮৮-৮৯-এর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) উদ্যোগে এ ভাস্কর্যটি নির্মিত। শহীদ শামসুজ্জোহা হল ছিল পাকবাহিনীর ক্যাম্প। ক্যাম্পাস এবং এর আশপাশ থেকে যাদের ধরে নিয়ে আসা হতো, তাদের ওপর এখানেই চালানো হতো মধ্যযুগীয় নির্যাতন। হত্যা করা হয় বাংলার অনেক সম্পদকে। স্বাধীনতার অনেক পরে হলের পাশের জায়গাটি খুঁড়ে যখন উদ্ধার হলো কয়েকশ' মানুষের হাড়গোড়; তখন থেকেই দাবি ওঠে এখানে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণের। ১৯৯৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর এখানে নির্মাণ করা হয় একটি স্মৃতিফলক। পরে ২০০২ সালের ২১ ডিসেম্বর এখানে একটি বধ্যভূমি শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০০৪ সালের ৯ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয় এই বধ্যভূমি শহীদ মিনার।
শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে অধ্যাপক হবিবুর রহমানের নামে করা হয়েছে একটি আবাসিক হলের নামকরণ। মীর আবদুল কাইয়ুমের নামে মনোবিজ্ঞান বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরির নামকরণ করা হলেও শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দারের নামে নেই কোনো স্থাপনা। এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহীর শহীদদের অম্লান স্মৃতি ধরে রাখতে ক্যাম্পাসে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা। শহীদদের বিভিন্ন সময়ের ছবি, তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং শামসুজ্জোহা হলের গণকবর থেকে উদ্ধার করা শহীদদের হাড়গোড়।
পাকসেনারা তাকে হত্যার পর ক্যাম্পাসের পাশে বিনোদপুরের একটি খালে লাশ ফেলে দেয়। স্থানীয় লোকজন ওইদিন রাতেই কাজলা এলাকায় তাকে সমাহিত করেন। কাজলার লোকজন সেদিন রাতেই ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কারণে এই খবর গোপন থাকে অনেকদিন। স্বাধীনতার পর জানা যায় শহীদ সুখরঞ্জনের মৃত্যুর খবর। শহীদ সুখরঞ্জনকে নিয়ে যাওয়ার পরদিনই গণিত বিভাগের অধ্যাপক হবিবর রহমানকে ক্যাম্পাসের জুবেরি ভবন থেকে ব্রিগেডিয়ার আসলাম ও কর্নেল তাজের নেতৃত্বে তুলে নিয়ে যায় পাকবাহিনী। এরপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি এ অধ্যাপকের।
১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক মীর আবদুল কাইয়ুমকে। মনোবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপকের লাশ ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পাওয়া যায় রাজশাহী মহানগরীর পদ্মা নদীর ধারের বাবলাবনে। এখানে অধ্যাপক কাইয়ুমসহ রাজশাহীর আরও ১৪ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হয়েছিল। ১৯৯৫ সালের ২৫ নভেম্বর সেখানে একটি বধ্যভূমি স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন অধ্যাপক কাইয়ুমের সহধর্মিণী অধ্যাপক মাসতুরা খানম। স্বাধীনতার জন্য শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই প্রাণ দেননি, প্রাণ দিয়েছেন ছাত্র এবং কর্মচারীরাও। মুক্তিযুদ্ধে যে ৯ জন ছাত্র শহীদ হয়েছেন তারা হলেন_ রেজাউল করিম, আমিরুল হুদা, আবদুল মান্নান, আবদুল লতিফ, গোলাম সারোয়ার সাধন, মোহাম্মদ আলী, ফজলুল হক, শাহজাহান আলী এবং মিজানুল হক পেয়াস।
এ ছাড়া শহীদ হন সহায়ক কর্মচারী এমাজ উদ্দিন শেখ, সাইফুল ইসলাম, কলিম উদ্দিন, আবদুল আলী, শফিকুর রহমান, সাধারণ কর্মচারী মোহাম্মদ ইউসুফ, আবদুল মজিদ, আবদুর রাজ্জাক, নুরু মিয়া, আবদুল ওয়াহাব, আবদুল মালেক, কোরবান আলী, মোহাম্মদ আফজাল, ওয়াজেদ আলী ও মোহন লাল। যুদ্ধ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়কে আগলে রাখতেই তারা অবস্থান করেছিলেন ক্যাম্পাসে। এ ছাড়া বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় বাসস্ট্যান্ডে অজ্ঞাত এক শহীদের কবর রয়েছে। স্বাধীনতার ৪০ বছরে পথ হাঁটছি আমরা। এত বছরেও ২৮ শহীদের স্মৃতি এতটুকুও মলিন হয়নি এই ক্যাম্পাসে। তাদের স্মৃতি ধরে রাখতেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে বিভিন্ন ভাস্কর্য। ক্যাম্পাসের মেইন গেট দিয়ে ঢুকলেই সজ্জিত সড়ক দ্বীপের মধ্যে চোখে পড়বে সিমেন্টে তৈরি একটি তালিকা। এ তালিকাতেই লেখা আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদদের নাম। এর ঠিক পশ্চিম পাশেই রয়েছে মুক্তি স্মারক ভাস্কর্য 'সাবাস বাংলাদেশ'। এর স্থপতি নিতুন কুণ্ডু। ১৯৮৮-৮৯-এর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) উদ্যোগে এ ভাস্কর্যটি নির্মিত। শহীদ শামসুজ্জোহা হল ছিল পাকবাহিনীর ক্যাম্প। ক্যাম্পাস এবং এর আশপাশ থেকে যাদের ধরে নিয়ে আসা হতো, তাদের ওপর এখানেই চালানো হতো মধ্যযুগীয় নির্যাতন। হত্যা করা হয় বাংলার অনেক সম্পদকে। স্বাধীনতার অনেক পরে হলের পাশের জায়গাটি খুঁড়ে যখন উদ্ধার হলো কয়েকশ' মানুষের হাড়গোড়; তখন থেকেই দাবি ওঠে এখানে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণের। ১৯৯৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর এখানে নির্মাণ করা হয় একটি স্মৃতিফলক। পরে ২০০২ সালের ২১ ডিসেম্বর এখানে একটি বধ্যভূমি শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০০৪ সালের ৯ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয় এই বধ্যভূমি শহীদ মিনার।
শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে অধ্যাপক হবিবুর রহমানের নামে করা হয়েছে একটি আবাসিক হলের নামকরণ। মীর আবদুল কাইয়ুমের নামে মনোবিজ্ঞান বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরির নামকরণ করা হলেও শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দারের নামে নেই কোনো স্থাপনা। এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহীর শহীদদের অম্লান স্মৃতি ধরে রাখতে ক্যাম্পাসে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা। শহীদদের বিভিন্ন সময়ের ছবি, তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং শামসুজ্জোহা হলের গণকবর থেকে উদ্ধার করা শহীদদের হাড়গোড়।
No comments