লোডশেডিং নাকি ভুলে যাওয়া ব্যাটিং! by কামরুল হাসান
হায় লোডশেডিং! তুমি জানলেও না কী ক্ষতিটা করেছ বাংলাদেশের ক্রিকেটের!সব আলো নিভিয়ে তোমার আঁধারের করাল গ্রাসটা বাড়ানোর বুঝি আর সময় পেলে না?\ কিছুক্ষণের জন্য জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম ডুবে তলিয়ে গেল সেই আঁধারে। দর্শকদের হাতে থাকা অসংখ্য মোবাইল ফোনসেটের স্ক্রিন জ্বলল। দেখে মনে হচ্ছিল রাতের আকাশে মিটিমিটি জ্বলতে থাকা অনেকগুলো তারা। কবি, সাহিত্যিক, ভাবুকদের জন্য হয়তো দারুণ দৃশ্য, কিন্তু
ফ্লাডলাইটের আলোয় ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে আসা দর্শকদের জন্য নয়। কারণ, ওই অন্ধকারই যে তাদের প্রিয় দলের সর্বনাশ করে দিয়ে গেছে! আলোটা গেল এমন সময়ে যখন প্রথম বলে চট্টগ্রামের রাজপুত্র তামিম ইকবালকে হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ শাহরিয়ার নাফীস আর মাহমুদুল্লাহর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের ১৭৭ রান তাড়া করতে গিয়ে ১ উইকেটে ৬১ রানও হয়ে গেছে। মিনিট পনেরোর আঁধার কাটিয়ে আলো ফিরল ঠিকই, ফিরল না শুধু ব্ল্যাক আউটের আগে মাহমুদুল্লাহ আর নাফীসের ব্যাটে থাকা ছন্দটা! শুরু হলো ব্যাটসম্যানদের উইকেটে আসা-যাওয়ার সেই চিরচেনা গল্প। এবং সেই গল্প শেষ ১১৯ রানে। হার ৫৮ রানের! যে ম্যাচে একসময় বাংলাদেশ ছিল ড্রাইভিং সিটে, সেখানে হঠাৎ এক অন্ধকার এসে বদলে দিল সব কিছু।
ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা বিসিবির একজন বললেন, চট্টগ্রাম শহরের কোথায় যেন ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে গেছে। আরেকজন এককাঠি সরেস। বললেন, জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়! কারণ যা-ই হোক সেটা যে বাংলাদেশের হারে বড় ভূমিকা রেখেছে, তা ম্যাচের পরে স্বীকার করেছেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক মিসবাহ-উল হকও, 'ব্ল্যাক আউটের আগে বাংলাদেশের দারুণ অবস্থান ছিল। শুরুতে এক উইকেট পড়লেও দ্বিতীয় উইকেট জুটিটা তাদের ভালো অবস্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। সে সময় অন্ধকার আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়ার পর মহসিন খান ও ইজাজ আহমেদ আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। আমরা অনুপ্রাণিত হয়ে মাঠে নামি।' দলের ব্যাটিংয়ের অবস্থা আগে থেকেই খারাপ। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকের তাই সুযোগ নেই সব দায় ব্ল্যাক আউটের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার। কিন্তু পুরোটা না হলেও কিছুটা যে ভূমিকা আছে সেটা জানালেন তিনিও, 'এটা একটা কারণ অবশ্যই। কারণ ওই সময় আমরা ভালো একটা অবস্থার দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ সুরটা কেটে গেলে সেটা ফিরে পাওয়া বেশ কষ্টকর।' বলেই আবার সঙ্গে যোগ করলেন, 'কিন্তু আমাদের এ ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য তৈরি থাকতে হবে। খেলার মাঝখানে নানারকম বিপর্যয় আসতে পারে। আর এমনিতেও তো চা কিংবা মধ্যাহ্ন বিরতি থাকে। ওতেই যদি খেই হারিয়ে যাই তাহলে তো মুশকিল।'
তারমানে বিদ্যুৎবিভ্রাট একা নয়, দায়ী তাঁর দলের ব্যাটসম্যানরাও। এবং স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের মধ্যে তিনি নিজেও আছেন। সিরিজজুড়েই যে ব্যাটিং ব্যর্থতার ছবি সেটা একটুও বদলায়নি শেষ ম্যাচে। ব্যাটসম্যানদের সবাই ব্যাটিং ভুলে যাচ্ছেন কি না_এ প্রশ্ন করতেই তাই বাংলাদেশের অধিনায়কের জবাব, 'ব্যাটসম্যানরা শুধু না, আমি নিজেও হয়তো ব্যাটিং ভুলে গেছি। কী যে হচ্ছে! রানের মধ্যে না থাকলে ব্যাটসম্যানরা মানসিকভাবে দুর্বল থাকে। শট সিলেকশনে ভুল হতে থাকে তখন। আমাদের ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে।' তা তো বটেই। নইলে তিনি নিজেই বা কেন ওরকমভাবে এলবিডাবি্লউ হবেন? সাকিব আল হাসান যেভাবে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়েছেন সেটাও তো রীতিমতো ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আগের দুই ম্যাচে যার ব্যাট স্বপ্ন দেখাচ্ছিল সেই নাসির হোসেনও পারলেন না। একমাত্র ফরহাদ রেজাই নিজেকে কিছুটা দুর্ভাগা ভাবতে পারেন। তাঁকে দেওয়া এলবিডাবি্লউটা স্পষ্টতই আম্পায়ারের ভুল।
এমন ভুল যে আন্তর্জাতিক ম্যাচে হয় না তা না। হয় এবং সেটা মেনে নিয়ে নিজেদের সামর্থ্য দিয়ে ম্যাচ জিতে আসে অনেক দল। বাংলাদেশ পারছে না!
কেন পারছে না? হয়তো আফসোস করে বলা মুশফিকের কথাটাই সত্যি। একসঙ্গে ব্যাটিং ভুলে গেছেন বাংলাদেশের সব ব্যাটসম্যান!
No comments