অমানিশা কাটল তবে by সুদীপ কুমার দীপ

ত সপ্তাহে মুক্তি পেল অমিত হাসান অভিনীত ৪৫০তম ছবি 'কে আপন কে পর'। শাহীন-সুমন পরিচালিত এ ছবিটির প্রযোজকও তিনি। কয়েক বছর ধরে ছবিটি নিয়ে কম ঝামেলা পোহালেন না। ছবিটি ব্যবসা সফল হওয়ায় অমিত ভীষণ খুশি। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন সুদীপ কুমার দীপ বাব্বা! অমিত হাসানের মাথার ওপর থেকে এবার যেন সাত রাজ্যের চিন্তা দূর হলো। কয়েক বছর ধরে মুখটা তুলে আকাশ দেখার মতো ফুরসতটুকুও নাকি পাননি তিনি। প্রথমবারের মতো


অভিনেতা থেকে প্রযোজক হওয়া। এটা কি চাট্টিখানি কথা! একই সঙ্গে শিল্পীদের শিডিউল নেওয়া, সময়মতো শুটিং করা, সেট নির্মাণ, কস্টিউম এমনকি গল্পে পর্যন্ত যেন নিজস্বতা রক্ষা হয় সেদিকে খেয়াল রাখা, আরো কত কিছুর পেছনেই না খাটুনি গেল তাঁর। কিন্তু এতেও কি শেষ রক্ষা হলো? ঝামেলা বেধেছিল অন্যখানে। ছবি নির্মাণের পরই দেখা দিল নানা গণ্ডগোল। শুটিং শেষ হওয়ার পর ডাবিং, এডিটিং নিয়ে কয়েকবার বিপাকে পড়তে হলো তাঁকে। এটাও যখন কোনোভাবে কাটিয়ে উঠলেন, তখন আবার নতুন করে জটলা বাঁধল সেন্সরে। শেষমেশ এটাও কাটিয়ে ওঠার পর মুক্তি দিতে গিয়ে আর পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পেলেন না তিনি। কয়টা প্রিন্ট করবেন, কোন কোন প্রেক্ষাগৃহে ভালো ব্যবসা হবে, টেবিল কালেকশনটাও যে কিভাবে আদায় করতে হয়_এসব বিষয়ে কেউ অমিত হাসানকে সামান্য সাহায্যটুকুও করতে চাইলেন না। যেন তিনি সবার হাঁড়ির ভাত মারতে এসেছেন। শেষেমেশ উপায়ান্তর না পেয়ে নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন। কাকরাইলে একটা অফিস নিয়ে শুরু করলেন ছবি মুক্তির তোড়জোড়। আর এরপর একটি-দুটি নয়, ২১টি প্রেক্ষাগৃহে ভালো টেবিল কালেকশন নিয়েই নিজের ছবিটি মুক্তি দিলেন। এরই মধ্যে মুক্তির ছয়টি দিন কেটে গেছে। ফলাফলও এল আশাতীত। প্রতিটি প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের ভিড়। প্রদর্শকরা শুরু করেছেন তৈলমর্দন। এবার যেন খুশির পালা। আর তাই তো এই সুযোগে ভালো করে আকাশটাও একবার দেখে নিলেন দুচোখ মেলে। বুকভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন, 'এ যেন স্বর্গ হাতে পাওয়া। আসলে শুরুটা একটু গোলমেলে হলেও শেষটা কিন্তু ভালোই হলো। যাদের জন্য ছবিটি তৈরি করেছি সেই দর্শকরাই কিন্তু আমার ছবিটিকে ভালোভাবে নিয়েছে। এখনো প্রেক্ষাগৃহগুলোতে তাদের ভিড় উপচে পড়ছে। কেউ হয়তো ভাবেনি, ছবিটি এ রকম ব্যবসা করবে। আর তাই বুঝি প্রথম প্রথম সবাই আমাকে এড়িয়ে চলেছিল। যা হোক, এখন কিন্তু বাতাস উল্টো বইছে। আমিও উপভোগ করছি।' অমিতের প্রডাকশন টেলিভিউ থেকে এবার ধারাবাহিকভাবে ছবি নির্মাণেরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। বললেন, 'পোকাটা একবার যখন মাথার ভেতর ঢুকিয়েছি তখন আর সহজে বের করছি না। আগামী বছর নাগাদ নতুন ছবি শুরু করব। এবার একটি নয়, একসঙ্গে দুটি ছবি তৈরি করব।'
এবার আর পুরনো ভুলগুলো করতে চান না অমিত। বিশেষ করে শিল্পী বাছাই, শুটিং-ডাবিংয়ে অনিয়ম, সেন্সরে জটিলতা_এসব আগে থেকেই গোছগাছ করে নেবেন তিনি। কথায় আছে না, ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায়! আর অমিত হাসান তো এখন বাস্তবেই ন্যাড়া। তাঁকে দেখলে সহজে কেউ চিনতেও পারবেন না। চোখ দুটি লাল; হাতে-গলায় শিকল, কানে রিং। আরো কত কি! তিনি বলেন, 'নিজেকে আসলে ভাঙছি আর গড়ছি। জানেন তো, 'কে আপন কে পর' ছবিটি আমার ক্যারিয়ারের ৪৫০তম ছবি। তা ছাড়া চলচ্চিত্রে আছি দুই যুগ হতে চলল। এখনো যদি সেই ললিপপ মার্কা নায়ক হয়ে থাকি, তাহলে কি দর্শক আমাকে দেখবেন? এর চেয়ে নিজের গেটআপ আর চরিত্রকে বারবার পরিবর্তন করে নতুনভাবে হাজির হলে ক্ষতি কী!' মাস দুয়েকের মধ্যে দর্শকরা অমিত হাসানকে সেই নতুন রূপেই দেখতে পাবেন। শাহীন-সুমনের 'ভালোবাসার রং' এবং মনতাজুর রহমান আকবরের 'এবারের সংগ্রাম' ছবি দুটিতে ভিন্ন দুটি চরিত্র নিয়ে হাজির হচ্ছেন তিনি। প্রথম ছবিটিতে সাধারণ গেটআপে ভিলেন হিসেবে দেখতে পেলেও পরেরটিতে নিয়েছেন নতুন সেই গেটআপ। যেন একেবারে শিউরে ওঠার মতো। নতুন এ ভাবনাটা অবশ্য প্রথমে অমিতের মাথায় আসেনি। তিনি বলেন, "এর আগে 'বন্ধু তুমি শত্রু তুমি' ছবিটিতে আংশিক ভিলেন হিসেবে হাজির হয়েছিলাম। সেখানে মাথা সত্যি সত্যি ন্যাড়া না করলেও বিশেষ মেকআপে দর্শক আমাকে ন্যাড়া হিসেবেই দেখতে পেয়েছিলেন। ওই ছবিতে আমার অভিনয় এত প্রশংসিত হয় যে জ্যাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজক শিষ মনোয়ার তাঁর দুটি ছবিতে সরাসরি ভিলেন হওয়ার প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি একটি ছবিতে সত্যিকারের ন্যাড়া হতে বলেন। তাঁর প্রস্তাবে দেখলাম বেশ অভিনবত্ব আছে। তাই রাজি হয়ে গেলাম। এখন দেখা যাক, নতুন এ অধ্যায়ে কতটা সফল হই।"

No comments

Powered by Blogger.