স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে নতিস্বীকার নয়-ড্যাপ দ্রুত বাস্তবায়নই কাম্য

ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে পরিকল্পিত নগরায়ণে সরকারের সদিচ্ছাই প্রতিফলিত হয়েছে। যেকোনো নগর গড়ে তুলতে সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি।


এর ব্যত্যয় ঘটলে জনজীবনে কী ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে, সম্প্রতি রাজধানীর নিমতলীতে আগুন লাগা এবং বেগুনবাড়িতে দালান ধসে বহু মানুষের প্রাণহানিই তার প্রমাণ। ঢাকায় ভূমির যথেচ্ছ ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না বলে প্রধানমন্ত্রী যে আশ্বাস দিয়েছেন, তার দ্রুত বাস্তবায়নই দেখতে চায় মানুষ।
রাজধানীর আবাসিক সমস্যা সমাধানে নতুন বাড়িঘর নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা কেউ অস্বীকার করবে না। এ ক্ষেত্রে আবাসনশিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো যে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে, তা-ও সত্য। তাই বলে তাদের কারও কারও বেআইনি কাজকর্মও বরদাশত করা যায় না। অনেক আবাসনশিল্প প্রতিষ্ঠান সরকারের আইন-কানুন মেনে আবাসনশিল্প গড়ে তুলেছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান নিজেদের বরাবরই আইনের ঊর্ধ্বে ভাবে। তারা নদী-নালা, জলাভূমি ভরাট করে আবাসিক প্রকল্প বানাতেও দ্বিধা করে না। এতে যে পরিবেশগত ভারসাম্যই নষ্ট হচ্ছে তা-ই নয়, রাজধানী শহরও বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ কারণেই বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপের বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।
নগরবাসী সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। ঢাকাকে বাঁচাতে এর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একটি স্বার্থান্বেষী মহল শুরু থেকে এর বিরোধিতা করে আসছে। অতীতের মতো আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা ঢাকার চারপাশের নদী-নালা ও জলাভূমি দখলদারি অব্যাহত রাখতে চায়। ড্যাপ বাস্তবায়নে শক্ত অবস্থান নেওয়ায় গণপূর্তমন্ত্রীকে হুমকি-ধমকিও খেতে হয়েছে। সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেও যার উল্লেখ রয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা বিবেচনা করে এই দখলদারি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। পূর্বসুরিদের মতো বর্তমান সরকার স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে নতিস্বীকার করবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।
প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে ড্যাপ বাস্তবায়নের কথা বলেছেন। আলোচনার ব্যাপারে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। আমরাও মনে করি, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হওয়া উচিত ও পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। তবে যারা ড্যাপের বিরোধিতা করে আসছে, তাদের উদ্দেশ্য কী, তা সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে। তারা কি যুক্তিসংগত সমাধানে আসতে আগ্রহী, না সময়ক্ষেপণ করে পুরো পরিকল্পনাটিকে বানচাল করতে তৎপর? তা ছাড়া এ ধরনের আলোচনা অনন্তকাল চলতে পারে না। এ ব্যাপারে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সরকার ড্যাপ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।
ঢাকা মহানগর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ বইতে পারছে না বলেই বিশদ পরিকল্পনা অঞ্চল বা ড্যাপ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে সেই উদ্যোগ থেমে থাকতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী ‘অতীতে লাই পেয়েছে’ বলে যাদের ইঙ্গিত করেছেন, তাদের ব্যাপারে সরকার সতর্ক থাকবে, এটাই প্রত্যাশিত। আশা করি, বর্তমান সরকারের কাছ থেকে কোনো মহল অনুরূপ ‘লাই’ পাবে না এবং সব বাধা অতিক্রম করে সরকার ড্যাপ বাস্তবায়নে কৃতসংকল্প থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.