গোধূলির ছায়াপথে-রাজনীতি দূরে নয়, কাছেই by মুস্তাফা জামান আব্বাসী
‘হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে...’। তাকিয়ে দেখি, হাতি ঘোড়া দূরে, চারদিকে মশা। দীর্ঘ ৭০ বছরে ইউনিয়ন জ্যাক, সবুজ নিশান ও লাল-সবুজের পতাকা—কত নিশানই না ওড়ালাম। তিনটি জাতীয় সংগীত গাইতে গিয়ে নানা রঙে নিজেকে রাঙালাম। ১০টি টিভি চ্যানেলের বিজ্ঞাপন দেখে বোঝার উপায় নেই যে এ দেশের ছবি এগুলো। খবরের কাগজ হাতে নিয়ে হোঁচট খাই—এত অন্যায়, অবিচার, মৃত্যু, হাহাকার!
রাজা নেই, রাজনীতি আছে। রাজনীতিতেও ‘পলিটিকস’। পলিটিক্যাল সায়েন্স পড়ে এলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, কোথায় ‘সায়েন্স’? বনবর্গী-জলবর্গী-ভূমিবর্গী-রাজবর্গী পরিবেষ্টিত ৭০ বছরের ভ্রষ্ট-নষ্ট রাজনীতির ইতিহাস। এতে আছে ষড়যন্ত্র, গুপ্ত হত্যা, প্রকাশ্য হত্যা, জিঘাংসা-প্রতিহিংসা। রিমান্ডে গিয়েছেন যাঁরা, তাঁদের জবানবন্দি চোখের সামনেই, ‘অ্যামনেস্টি’ বের করেছে। ভাবতে অবাক লাগে—এত হিংসা, এত ক্রোধ রাজনীতির কারণে জমা হয়। রবি-নজরুলের গান গেয়ে ফিরি যারা, তাদের জগৎ থেকে কত ভিন্ন।
ছোটবেলায় শ্লেট ছিল পছন্দের। কিনে আনতেন আব্বা। অ আ লিখে দিতেন, যেন তাঁর ছেলের হাতের লেখা তাঁরই মতো হয় অনিন্দ্য। শ্লেট সহজে মুছে নেয় আগের লেখা, নতুন করে শুরু করা যায়। লিখতে চাই এমন কিছু, মানুষের মনে আসে যাতে কিছু নতুন রং। পাঠকদের কাছে পেলাম তাদের টাটকা অনুভূতি। মানুষের মন রাঙিয়ে দিন। রাজনীতিকে প্রভাবিত করুন নতুন ভাবনা দিয়ে। আয়নায় ভালো করে ছবিটি পরখ করে নিতে ভুলবেন না যেন। আপনি সৎ তো? যে টাকায় ফিটফাট, তা কি স্ব-উপার্জিত? উত্তর যদি হয় হ্যাঁ, তাহলে কিছু বলুন।
দেশটি যে ক্রমেই অবাসযোগ্য হয়ে উঠেছে তা আর কে না জানে? নগরপরিকল্পক হব, দেশ পরিকল্পক হব, রাস্তাগুলো বড় করব, যাতায়াত উন্নত হবে, গাছ লাগাব, স্কুল-কলেজে ভরে দেব গ্রামের পথঘাট—এই তো ছোটবেলার স্বপ্ন। চোখের সামনে মাদানির ছবি, যাঁকে দেখেছি পথে পথে রাস্তা মাপতে আর আধুনিক ঢাকার স্থাপনাগুলো গড়ে তুলতে। সমস্যা অন্যত্র, নানা আকারের ছোট-বড় দস্যু ও নতুন বর্গীদের আগমন। সেই যে ছোটবেলার ছড়াটি, ‘ছেলে ঘুমাল, পাড়া জুড়াল, বর্গী এল দেশে...।’ দস্যু ও বর্গীদের হাত থেকে রেহাই পেতে হবে। সব পরিকল্পনাই ভেস্তে যাবে। প্রয়োজন: ইচ্ছাটুকু, ‘ইনটেন্শন্স’, ‘নিয়ত’। রাজনীতির নিয়ত হবে ‘ফোকাস্ড’। নিজের জন্য নয়, অভীষ্ট হবে ত্যাগ।
নামাজের আগে নিজেকে পবিত্র করা দরকার। প্রভুর সামনে দাঁড়ালাম সর্ব অমঙ্গল থেকে নিজকে আলাদা করে। রাজনীতিতেও নিয়তের প্রয়োজন। না হলে নামাজ যেমন অশুদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য, রাজনীতিও। ছাত্রলীগ-যুবলীগ-ছাত্রদল-যুবদলের তরুণেরা চায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে, হলে সিট, কিছু খরচ, ভবিষ্যতের স্বপ্ন—এই তো? ন্যূনতম ব্যবস্থা, ভবিষ্যতের অঙ্গীকার না দিয়ে তারুণ্যকে যত্রতত্র প্রহার।
একটি মলিন মুখ ট্রাফিক জ্যামে আপন মনে আমার গাড়ির কাচ পরিষ্কার করছিল। পরিষ্কার করেই চলেছে ছোট্ট একটি কাপড় দিয়ে। কিছু না নিয়েই পালিয়ে গেল সে। হয়তো সে আমার গান ভালোবাসে। তার চিন্তার সঙ্গে একাত্ম হলাম সারা দিন। কোনো কিছুর প্রত্যাশী না হয়ে, কাজ করে যাব।
স্বপ্ন দেখছি। তরুণদের নিয়েই। স্বপ্ন ছাড়া আছে কী? ২০১০ থেকে ২০২১, এই ১১ বছর বাংলাদেশকে করব দস্যু ও বর্গীমুক্ত। ক্ষমার অবকাশ নেই। দস্যু ও বর্গীরাই নতুন শত্রু। পূর্বতন রাজনৈতিক শত্রুতা ভুলে যাই। নতুন শত্রুদের চিহ্নিত করি। গ্রামকে সাজাই অরণ্যানীতে, নদীগুলো আবার জেগে উঠুক নৌকাবাইচের সারি গান নিয়ে: ‘হেঁইওরে হেঁইও, সামাল সামাল সামাল তরী, সামলে তরী বাইও...।’ শত তরুণ এগিয়ে আসছে, নদীনালার পরিচর্যা করছে, রাস্তাঘাট পরিষ্কার করছে। প্রতিদিন। ৩৬৫×১১ = ৪০১৫ দিন বিশ্রাম নেই। দেশমাতৃকার প্রতি অঙ্গীকার। পরাজয় স্বীকার করব না। জাপানি, চীনা, কোরিয়ান এগিয়ে গেল। আমরাও পারব।
পবিত্র হবে যে, সেই জয়ী। ঘৃণার পাত্র পূর্ণ হবে ঘৃণায়। থু থু দিতে শেখানো একটি মন্দ দৃষ্টান্ত। হন্তারককে ক্ষমা করতে পারব না হয়তো। যদি পারি, তাহলে সেটাই উত্তম। অপর দলের কর্মীদের আরেকটু ভালোবাসা কি অসম্ভব? কোনো কিছু একাই উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। দেশটিকে দুটি দলের মধ্যে ভাগ না করে ফেলি। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিবাকরি, রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডে দলের লোক। হাটুরেরা বলছেন, ‘চলেছি গোল্লায়!’ গোল্লার পর আর সংখ্যা বসে না।
গুরুত্ব দিন অপর দলের মতামতকেও। ওরা বানের জলে ভেসে আসেনি। ওরা দেশের সমান অংশীদার। শুভেচ্ছা বিনিময়, ফুল দিয়ে শুরু। বিরুদ্ধ সংলাপ বর্জন করি। জাতির শ্রেষ্ঠ নেতাদের দিকে যাঁরা অশ্লীল বাক্যবাণ ছুড়ে দেন, তাঁরা যেন নিষ্কৃতি পান পার্লামেন্ট থেকে। মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করেছে তারা। প্রমাণ ছাড়াই সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মান কেড়ে নিয়ে জেলে নিক্ষেপ করেছেন যাঁরা, তাঁদের অভীষ্ট কল্যাণ ছিল না।
পুরোনো বিবাদ মিটিয়ে ফেলি। কীভাবে এগিয়ে গেল জাপানিরা সে কথা লিখেছি বৈকি। নববর্ষের প্রথম দিনে পুরোনো বিবাদ মিটিয়ে ফেলে তারা। বিবাদ অনৈক্য থাকবেই। নববর্ষের প্রথম দিনে নবসূর্যের আলোকে সব বিবাদের ছুটি। ৫০ বছর পর কোনো নেতার নামই মনে থাকবে না। ভুলে যাব আওয়ামী লীগ, বিএনপির বিবাদের কথাও। প্রতিটি মানুষের জন্য মঙ্গলচিন্তা। তারা খেয়ে-পরে উঠতে পারছে কি না, এটাই প্রতিপাদ্য।
ভয়ংকর মানুষেরা মেতে আছে ভয়ংকর পরিকল্পনায়। লাভবান শত্রুপক্ষ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার পরিকল্পিত হত্যা প্রচেষ্টার কথা এবং সেখানে আমার একজন প্রিয় ব্যক্তি বেগম আইভি রহমানের জীবনাবসানের কথা ভুলিনি। তিনি ছিলেন আমার গানের সমঝদার। বিডিআর হত্যাকাণ্ডে শ্রেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তারা শহীদ হলেন, তার পেছনেও ভয়ংকর মানুষ। ’৭৫-এ ধানমন্ডির সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর লাশ শাহাবুদ্দিনের তৈলচিত্রে শুধু নয়, আঁকা প্রতিটি মানুষের মনে। ’৮১-তে চট্টগ্রামে শহীদ জিয়ার লাশের স্মৃতি কাঁধে নিয়ে যে বিরাট জানাজা, তা ভুলে যাওয়া ইতিহাসকে অস্বীকার করা। পড়েছি অবিভক্ত মুক্তি সংগ্রামের কথা, পড়েছি অবিভক্ত পরবর্তী বেদনার ইতিহাস। এর পরও বিভক্ত থাকা সাজে না। বিভক্তিতে লাভবান শত্রুপক্ষ। ‘জ্ঞানসাধকের দোয়াতের কালি শহীদের খুনের চেয়ে পবিত্রতর’ জ্ঞান করি বলেই ভাষাযোগ, গণিতযোগ ও বিতর্কযোগের সমর্থক আমি। এই শিক্ষা কূপমণ্ডূকতা থেকে এনে দেয় মুক্তি, সাহায্য করে বদলে যেতে।
প্রজন্মের তরুণেরা নাকি রাজনীতিতে উৎসাহী নয়, খবর দিয়েছে বিবিসি। তরুণদের সামনে মহৎ আত্মাদের দৃষ্টান্ত এনেছি কি? মহৎ আত্মার অনুশীলন না হলে, ঘৃণার হবে সমপ্রসার। মহত্তম গুণ ক্ষমা, সহনশীলতা অনুসরণ করতে হয়। ব্রিটিশ শাসন করেছে, শোষণ করেছে ২০০ বছর। এর পরও তারা শিখিয়েছে: সহনশীলতা, পরমত শ্রদ্ধাবোধ। হাউস অব কমন্সে এক মাস ট্রেনিং নিলে প্রজন্মের রাজনীতি-অভিলাসীরা দেখতে পারবে কীভাবে সহনশীল হতে হয়, অপরপক্ষের মতামতকে সম্মান দিতে হয়।
সত্য স্বপ্ন জাগরিত হলে রাজনীতিতে নিজেদেরকে উৎসর্গীকৃত করবেন তরুণেরা। কে না জানে ভাষার, স্বাধিকারের, স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখেছেন তরুণেরাই। কুয়োর ব্যাঙ হব না। পৃথিবীর দিকে তাকাব। বিভেদের বিপক্ষে তরুণেরা শপথ নেবে, জ্ঞানের। অজ্ঞানতার নয়। ভালোবাসার শপথ, ঘৃণার নয়। রাজনীতি সেদিন নতুন পথ পাবে।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী: লেখক ও সংগীত ব্যক্তিত্ব।
mabbasi@dhaka.net
ছোটবেলায় শ্লেট ছিল পছন্দের। কিনে আনতেন আব্বা। অ আ লিখে দিতেন, যেন তাঁর ছেলের হাতের লেখা তাঁরই মতো হয় অনিন্দ্য। শ্লেট সহজে মুছে নেয় আগের লেখা, নতুন করে শুরু করা যায়। লিখতে চাই এমন কিছু, মানুষের মনে আসে যাতে কিছু নতুন রং। পাঠকদের কাছে পেলাম তাদের টাটকা অনুভূতি। মানুষের মন রাঙিয়ে দিন। রাজনীতিকে প্রভাবিত করুন নতুন ভাবনা দিয়ে। আয়নায় ভালো করে ছবিটি পরখ করে নিতে ভুলবেন না যেন। আপনি সৎ তো? যে টাকায় ফিটফাট, তা কি স্ব-উপার্জিত? উত্তর যদি হয় হ্যাঁ, তাহলে কিছু বলুন।
দেশটি যে ক্রমেই অবাসযোগ্য হয়ে উঠেছে তা আর কে না জানে? নগরপরিকল্পক হব, দেশ পরিকল্পক হব, রাস্তাগুলো বড় করব, যাতায়াত উন্নত হবে, গাছ লাগাব, স্কুল-কলেজে ভরে দেব গ্রামের পথঘাট—এই তো ছোটবেলার স্বপ্ন। চোখের সামনে মাদানির ছবি, যাঁকে দেখেছি পথে পথে রাস্তা মাপতে আর আধুনিক ঢাকার স্থাপনাগুলো গড়ে তুলতে। সমস্যা অন্যত্র, নানা আকারের ছোট-বড় দস্যু ও নতুন বর্গীদের আগমন। সেই যে ছোটবেলার ছড়াটি, ‘ছেলে ঘুমাল, পাড়া জুড়াল, বর্গী এল দেশে...।’ দস্যু ও বর্গীদের হাত থেকে রেহাই পেতে হবে। সব পরিকল্পনাই ভেস্তে যাবে। প্রয়োজন: ইচ্ছাটুকু, ‘ইনটেন্শন্স’, ‘নিয়ত’। রাজনীতির নিয়ত হবে ‘ফোকাস্ড’। নিজের জন্য নয়, অভীষ্ট হবে ত্যাগ।
নামাজের আগে নিজেকে পবিত্র করা দরকার। প্রভুর সামনে দাঁড়ালাম সর্ব অমঙ্গল থেকে নিজকে আলাদা করে। রাজনীতিতেও নিয়তের প্রয়োজন। না হলে নামাজ যেমন অশুদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য, রাজনীতিও। ছাত্রলীগ-যুবলীগ-ছাত্রদল-যুবদলের তরুণেরা চায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে, হলে সিট, কিছু খরচ, ভবিষ্যতের স্বপ্ন—এই তো? ন্যূনতম ব্যবস্থা, ভবিষ্যতের অঙ্গীকার না দিয়ে তারুণ্যকে যত্রতত্র প্রহার।
একটি মলিন মুখ ট্রাফিক জ্যামে আপন মনে আমার গাড়ির কাচ পরিষ্কার করছিল। পরিষ্কার করেই চলেছে ছোট্ট একটি কাপড় দিয়ে। কিছু না নিয়েই পালিয়ে গেল সে। হয়তো সে আমার গান ভালোবাসে। তার চিন্তার সঙ্গে একাত্ম হলাম সারা দিন। কোনো কিছুর প্রত্যাশী না হয়ে, কাজ করে যাব।
স্বপ্ন দেখছি। তরুণদের নিয়েই। স্বপ্ন ছাড়া আছে কী? ২০১০ থেকে ২০২১, এই ১১ বছর বাংলাদেশকে করব দস্যু ও বর্গীমুক্ত। ক্ষমার অবকাশ নেই। দস্যু ও বর্গীরাই নতুন শত্রু। পূর্বতন রাজনৈতিক শত্রুতা ভুলে যাই। নতুন শত্রুদের চিহ্নিত করি। গ্রামকে সাজাই অরণ্যানীতে, নদীগুলো আবার জেগে উঠুক নৌকাবাইচের সারি গান নিয়ে: ‘হেঁইওরে হেঁইও, সামাল সামাল সামাল তরী, সামলে তরী বাইও...।’ শত তরুণ এগিয়ে আসছে, নদীনালার পরিচর্যা করছে, রাস্তাঘাট পরিষ্কার করছে। প্রতিদিন। ৩৬৫×১১ = ৪০১৫ দিন বিশ্রাম নেই। দেশমাতৃকার প্রতি অঙ্গীকার। পরাজয় স্বীকার করব না। জাপানি, চীনা, কোরিয়ান এগিয়ে গেল। আমরাও পারব।
পবিত্র হবে যে, সেই জয়ী। ঘৃণার পাত্র পূর্ণ হবে ঘৃণায়। থু থু দিতে শেখানো একটি মন্দ দৃষ্টান্ত। হন্তারককে ক্ষমা করতে পারব না হয়তো। যদি পারি, তাহলে সেটাই উত্তম। অপর দলের কর্মীদের আরেকটু ভালোবাসা কি অসম্ভব? কোনো কিছু একাই উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। দেশটিকে দুটি দলের মধ্যে ভাগ না করে ফেলি। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিবাকরি, রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডে দলের লোক। হাটুরেরা বলছেন, ‘চলেছি গোল্লায়!’ গোল্লার পর আর সংখ্যা বসে না।
গুরুত্ব দিন অপর দলের মতামতকেও। ওরা বানের জলে ভেসে আসেনি। ওরা দেশের সমান অংশীদার। শুভেচ্ছা বিনিময়, ফুল দিয়ে শুরু। বিরুদ্ধ সংলাপ বর্জন করি। জাতির শ্রেষ্ঠ নেতাদের দিকে যাঁরা অশ্লীল বাক্যবাণ ছুড়ে দেন, তাঁরা যেন নিষ্কৃতি পান পার্লামেন্ট থেকে। মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করেছে তারা। প্রমাণ ছাড়াই সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মান কেড়ে নিয়ে জেলে নিক্ষেপ করেছেন যাঁরা, তাঁদের অভীষ্ট কল্যাণ ছিল না।
পুরোনো বিবাদ মিটিয়ে ফেলি। কীভাবে এগিয়ে গেল জাপানিরা সে কথা লিখেছি বৈকি। নববর্ষের প্রথম দিনে পুরোনো বিবাদ মিটিয়ে ফেলে তারা। বিবাদ অনৈক্য থাকবেই। নববর্ষের প্রথম দিনে নবসূর্যের আলোকে সব বিবাদের ছুটি। ৫০ বছর পর কোনো নেতার নামই মনে থাকবে না। ভুলে যাব আওয়ামী লীগ, বিএনপির বিবাদের কথাও। প্রতিটি মানুষের জন্য মঙ্গলচিন্তা। তারা খেয়ে-পরে উঠতে পারছে কি না, এটাই প্রতিপাদ্য।
ভয়ংকর মানুষেরা মেতে আছে ভয়ংকর পরিকল্পনায়। লাভবান শত্রুপক্ষ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার পরিকল্পিত হত্যা প্রচেষ্টার কথা এবং সেখানে আমার একজন প্রিয় ব্যক্তি বেগম আইভি রহমানের জীবনাবসানের কথা ভুলিনি। তিনি ছিলেন আমার গানের সমঝদার। বিডিআর হত্যাকাণ্ডে শ্রেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তারা শহীদ হলেন, তার পেছনেও ভয়ংকর মানুষ। ’৭৫-এ ধানমন্ডির সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর লাশ শাহাবুদ্দিনের তৈলচিত্রে শুধু নয়, আঁকা প্রতিটি মানুষের মনে। ’৮১-তে চট্টগ্রামে শহীদ জিয়ার লাশের স্মৃতি কাঁধে নিয়ে যে বিরাট জানাজা, তা ভুলে যাওয়া ইতিহাসকে অস্বীকার করা। পড়েছি অবিভক্ত মুক্তি সংগ্রামের কথা, পড়েছি অবিভক্ত পরবর্তী বেদনার ইতিহাস। এর পরও বিভক্ত থাকা সাজে না। বিভক্তিতে লাভবান শত্রুপক্ষ। ‘জ্ঞানসাধকের দোয়াতের কালি শহীদের খুনের চেয়ে পবিত্রতর’ জ্ঞান করি বলেই ভাষাযোগ, গণিতযোগ ও বিতর্কযোগের সমর্থক আমি। এই শিক্ষা কূপমণ্ডূকতা থেকে এনে দেয় মুক্তি, সাহায্য করে বদলে যেতে।
প্রজন্মের তরুণেরা নাকি রাজনীতিতে উৎসাহী নয়, খবর দিয়েছে বিবিসি। তরুণদের সামনে মহৎ আত্মাদের দৃষ্টান্ত এনেছি কি? মহৎ আত্মার অনুশীলন না হলে, ঘৃণার হবে সমপ্রসার। মহত্তম গুণ ক্ষমা, সহনশীলতা অনুসরণ করতে হয়। ব্রিটিশ শাসন করেছে, শোষণ করেছে ২০০ বছর। এর পরও তারা শিখিয়েছে: সহনশীলতা, পরমত শ্রদ্ধাবোধ। হাউস অব কমন্সে এক মাস ট্রেনিং নিলে প্রজন্মের রাজনীতি-অভিলাসীরা দেখতে পারবে কীভাবে সহনশীল হতে হয়, অপরপক্ষের মতামতকে সম্মান দিতে হয়।
সত্য স্বপ্ন জাগরিত হলে রাজনীতিতে নিজেদেরকে উৎসর্গীকৃত করবেন তরুণেরা। কে না জানে ভাষার, স্বাধিকারের, স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখেছেন তরুণেরাই। কুয়োর ব্যাঙ হব না। পৃথিবীর দিকে তাকাব। বিভেদের বিপক্ষে তরুণেরা শপথ নেবে, জ্ঞানের। অজ্ঞানতার নয়। ভালোবাসার শপথ, ঘৃণার নয়। রাজনীতি সেদিন নতুন পথ পাবে।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী: লেখক ও সংগীত ব্যক্তিত্ব।
mabbasi@dhaka.net
No comments