সংস্কারের অর্থ রেলওয়ের পুনরুজ্জীবনে ব্যয় হোক-স্বতন্ত্র রেল মন্ত্রণালয় প্রয়োজন
বহুদিন হলো রেল-যোগাযোগ খাতের পুনরুজ্জীবনে কোনো সুসংবাদ নেই। সর্বশেষ, সিদ্ধান্তহীনতার কারণে রেলওয়ে ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানোর প্রকল্পও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত শনিবারের প্রথম আলোর সংবাদে জানা যাচ্ছে, রেল-যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে উন্নয়ন-সহযোগীদের দেওয়া পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিদেশি সহযোগিতার ভবিষ্যৎও অস্পষ্ট।
এ খাত যেন রূপকথার সুয়োরানি, সব গুণ থাকা সত্ত্বেও তার ভাগ্যে জোটে কেবলই অবহেলা।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা এ খাতকে গতিশীল করার জন্য স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার দাবি করে আসছেন। কিন্তু যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আমলাদের আগ্রহ একে তাঁদের কর্তৃত্বের অধীনে রাখা। মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রস্তাবে যোগাযোগমন্ত্রী ও যোগাযোগসচিবকেই সর্বেসর্বা করা হয়েছে। অথচ প্রতিবেশী ভারতে রেলের সাফল্য এসেছে স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী মন্ত্রণালয়ের অধীনে। বাংলাদেশেও রেলওয়েকে বাঁচাতে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় করার সুপারিশ করেছে যোগাযোগ বিষয়ক সংসদীয় কমিটি। তাঁদের এ সুপারিশ বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
রেলওয়ের বর্তমান পরিণতির জন্য কেবল সরকারই নয়, উন্নয়ন-সহযোগীরাও দায়ী। সড়ক পথকেই তাঁরা উন্নয়নের প্রধান অবকাঠামো ভেবে নিয়েছিলেন এবং সে অনুযায়ী তাদের পরামর্শ ও চাপে রেলের বেসরকারিকরণের পদক্ষেপও বাস্তবায়িত হচ্ছিল। নব্বইয়ের দশক থেকে এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-এর পরামর্শে তিনবার রেলওয়ের সংস্কার হয়। এ সময় সারাদেশে অন্তত পৌনে তিন’শ কিলোমিটার রেলপথ বন্ধ করা হলেও লাভজনক পথে নতুন রেলপথ সম্প্রসারণ করা হয়নি। তবে আশার কথা যে, উন্নয়ন সহযোগীরা বর্তমানে রেলকেই যোগাযোগের প্রধান অবকাঠামো করে উন্নয়নের চিন্তাকে আবার সামনে নিয়ে এসেছে। দৃষ্টিভঙ্গির এই পরিবর্তনকে ফলপ্রসূ করার দায়িত্ব এখন সরকারের।
বর্তমানে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে রেলের অংশ মাত্র পাঁচ শতাংশ। শনিবারের প্রথম আলোরই আরেকটি সংবাদ বলছে, দিনে ১২টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল হচ্ছে। রেলওয়ের এই পরিণতির জন্য স্পষ্টতই পরিবহন ব্যবসায়ী ও গাড়ি বিক্রেতাদের পক্ষে সরকারি নীতিও দায়ী। ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত রেলওয়ের ১২ ভাগের বিপরীতে সড়কপথে বরাদ্দ যায় ৮৬ ভাগ। বর্তমান বাজেটেও রেলওয়ের উন্নয়নে নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়নি। এভাবে গণপরিবহন-ব্যবস্থাকে দুর্বল করে বাস-ট্রাকনির্ভর ব্যয়বহুল ও পরিবেশবিনাশী পরিবহন ব্যবসা জোরদার করে রেল-যোগাযোগ খাতের পুনর্জীবন সম্ভব নয়। এরশাদ সরকারের আমলে রেলওয়েকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিভক্ত করা হয়েছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে স্টেশনের সৌন্দর্যবর্ধনে ১০০ কোটি টাকা অপচয় করা হলেও নতুন ইঞ্জিন ও কোচ কেনা এবং লোকবল বাড়ানোয় মনোযোগ দেওয়া হয়নি। রেলওয়ের অধিকাংশ ইঞ্জিন ও কোচ চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায়। রেলওয়ের ইঞ্জিন, কোচ ও ওয়াগন মেরামতের ছয়টি কারখানার একটিরও উৎপাদনক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ানো বিনিয়োগ হয়নি। সম্প্রতি একনেকের বৈঠকে চীনের কুনমিংয়ের সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারিত করার প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে অনুমোদিত অনেক প্রকল্প বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়িত না হওয়ায় এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও সন্দেহ থেকে যায়।
রেলওয়েকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে সংস্কার নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ, বিশ্বব্যাংক-এডিবি এবং মন্ত্রণালয়ের মধ্যে মতবিরোধের মীমাংসা হতে হবে। সংস্কারের উদ্দেশ্য হতে হবে রেলকে জাতীয় পরিবহনব্যবস্থা হিসেবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সক্ষম করে তোলা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেল-যোগাযোগ খাত সরকারি ব্যবস্থাপনায় লাভজনকভাবে চলতে পারলে বাংলাদেশে পারবে না কেন?
রেলওয়ের কর্মকর্তারা এ খাতকে গতিশীল করার জন্য স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার দাবি করে আসছেন। কিন্তু যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আমলাদের আগ্রহ একে তাঁদের কর্তৃত্বের অধীনে রাখা। মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রস্তাবে যোগাযোগমন্ত্রী ও যোগাযোগসচিবকেই সর্বেসর্বা করা হয়েছে। অথচ প্রতিবেশী ভারতে রেলের সাফল্য এসেছে স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী মন্ত্রণালয়ের অধীনে। বাংলাদেশেও রেলওয়েকে বাঁচাতে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় করার সুপারিশ করেছে যোগাযোগ বিষয়ক সংসদীয় কমিটি। তাঁদের এ সুপারিশ বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
রেলওয়ের বর্তমান পরিণতির জন্য কেবল সরকারই নয়, উন্নয়ন-সহযোগীরাও দায়ী। সড়ক পথকেই তাঁরা উন্নয়নের প্রধান অবকাঠামো ভেবে নিয়েছিলেন এবং সে অনুযায়ী তাদের পরামর্শ ও চাপে রেলের বেসরকারিকরণের পদক্ষেপও বাস্তবায়িত হচ্ছিল। নব্বইয়ের দশক থেকে এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-এর পরামর্শে তিনবার রেলওয়ের সংস্কার হয়। এ সময় সারাদেশে অন্তত পৌনে তিন’শ কিলোমিটার রেলপথ বন্ধ করা হলেও লাভজনক পথে নতুন রেলপথ সম্প্রসারণ করা হয়নি। তবে আশার কথা যে, উন্নয়ন সহযোগীরা বর্তমানে রেলকেই যোগাযোগের প্রধান অবকাঠামো করে উন্নয়নের চিন্তাকে আবার সামনে নিয়ে এসেছে। দৃষ্টিভঙ্গির এই পরিবর্তনকে ফলপ্রসূ করার দায়িত্ব এখন সরকারের।
বর্তমানে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে রেলের অংশ মাত্র পাঁচ শতাংশ। শনিবারের প্রথম আলোরই আরেকটি সংবাদ বলছে, দিনে ১২টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল হচ্ছে। রেলওয়ের এই পরিণতির জন্য স্পষ্টতই পরিবহন ব্যবসায়ী ও গাড়ি বিক্রেতাদের পক্ষে সরকারি নীতিও দায়ী। ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত রেলওয়ের ১২ ভাগের বিপরীতে সড়কপথে বরাদ্দ যায় ৮৬ ভাগ। বর্তমান বাজেটেও রেলওয়ের উন্নয়নে নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়নি। এভাবে গণপরিবহন-ব্যবস্থাকে দুর্বল করে বাস-ট্রাকনির্ভর ব্যয়বহুল ও পরিবেশবিনাশী পরিবহন ব্যবসা জোরদার করে রেল-যোগাযোগ খাতের পুনর্জীবন সম্ভব নয়। এরশাদ সরকারের আমলে রেলওয়েকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিভক্ত করা হয়েছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে স্টেশনের সৌন্দর্যবর্ধনে ১০০ কোটি টাকা অপচয় করা হলেও নতুন ইঞ্জিন ও কোচ কেনা এবং লোকবল বাড়ানোয় মনোযোগ দেওয়া হয়নি। রেলওয়ের অধিকাংশ ইঞ্জিন ও কোচ চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায়। রেলওয়ের ইঞ্জিন, কোচ ও ওয়াগন মেরামতের ছয়টি কারখানার একটিরও উৎপাদনক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ানো বিনিয়োগ হয়নি। সম্প্রতি একনেকের বৈঠকে চীনের কুনমিংয়ের সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারিত করার প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে অনুমোদিত অনেক প্রকল্প বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়িত না হওয়ায় এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও সন্দেহ থেকে যায়।
রেলওয়েকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে সংস্কার নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ, বিশ্বব্যাংক-এডিবি এবং মন্ত্রণালয়ের মধ্যে মতবিরোধের মীমাংসা হতে হবে। সংস্কারের উদ্দেশ্য হতে হবে রেলকে জাতীয় পরিবহনব্যবস্থা হিসেবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সক্ষম করে তোলা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেল-যোগাযোগ খাত সরকারি ব্যবস্থাপনায় লাভজনকভাবে চলতে পারলে বাংলাদেশে পারবে না কেন?
No comments