বিশেষ সাক্ষাৎকার-বিচারক নিয়োগে সংবিধান সংশোধন সমীচীন by টি এইচ খান
প্রথম আলো আপিল বিভাগে যুক্তি দিয়েছিলেন যে বাংলাদেশ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী-সংক্রান্ত ইস্যু আদালতের বিষয় নয়, এটা একান্তভাবেই সংসদের বিষয়। টি এইচ খান ঠিক কথা। প্রথম আলো এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, ‘আমরা হাইকোর্টের দিকে তাকিয়ে থাকব না। সংসদে বিল আনব।’
টি এইচ খান এটা হলো কূটনৈতিক উপায়ে কথা বলা। সহজ-সরল ভাষায় তাঁদের গত্যন্তর নেই।
প্রথম আলো এত দিন তাঁরা বলেছেন রায় পেয়ে সংবিধান ছাপবেন। এখন বলছেন তাঁরা বিল আনবেন।
টি এইচ খান তাঁরা কখন কী বলেন, তা তো চিন্তাভাবনা করে বলেন না। যখন যে রকম পরিবেশ থাকে, সে রকমই তাঁরা কথা বলেন। খাঁটি কথা হলো, সংবিধান সংশোধন ছাড়া তাঁরা কিচ্ছু করতে পারবেন না।
প্রথম আলো বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়া?
টি এইচ খান এটা আবেগাশ্রয়ী একটা স্লোগান। বাহাত্তরের সংবিধানে সব মধু? আসল কথা হলো, এর মধ্যে কয়েকটি বিষয় রয়েছে, যার সঙ্গে ধর্ম জড়িত। এটা তারা রদ করতে চায়। এ জন্য তারা ‘বাহাত্তর বাহাত্তর’ করে।
প্রথম আলো সরকারি দল কি এর মাধ্যমে একই সঙ্গে আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সংসদীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে চায় না?
টি এইচ খান আমার তো মনে হয় না।
প্রথম আলো দেখুন, বিচার বিভাগের পৃথক্করণ সার্থক করতে ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন না করলে...
টি এইচ খান সংবিধান একটি লিখিত দলিল। কতগুলো শব্দের সন্নিবেশ। দেখার বিষয় হলো, এটা কীভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সংবিধান তো নিজের মতো হেঁটে হেঁটে চলে না, একে পরিচালনা করতে হয়। জনগণের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি, কার কেমন আদর্শ তার ওপর নির্ভর করে ক্রিয়াকলাপ।
প্রথম আলো তবে সংবিধান সংশোধনে কিন্তু এখন দুই নেত্রীরই সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী অঙ্গীকার আছে। ৫০০ আসনের সংসদ প্রতিষ্ঠার কথা আছে। অন্যদিকে আছে নারী আসন বৃদ্ধি অর্থাৎ সাড়ে চার শ আসনের সংসদ করার প্রতিশ্রুতি। তো—
টি এইচ খান এসব সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক ইস্যু, এসব সংবিধানের অংশ নয়। সংসদীয় আসনগুলোকে কখন কতগুলোতে পরিণত করবেন, সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।
প্রথম আলো একটি সংবিধান রিভিউ কমিশন গঠন করা উচিত?
টি এইচ খান যদি তা নিরপেক্ষভাবে করার সুযোগ থাকত, তাহলে বলতাম। বর্তমানের পরিবেশটা ভাবুন। এতে কারা আসবেন? কারা সদস্য হবেন? সুতরাং এটা হবে একটা লাক্সারি (বিলাসিতা)। লোকদেখানো বিলাসিতা।
প্রথম আলো এটা হয়তো আপনার দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু অন্তত তাত্ত্বিকভাবে কি আপনার মনে হয় না বাংলাদেশের সংবিধানের একটা পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা হওয়ার সময় এসেছে?
টি এইচ খান বাস্তবে সংবিধান যেখানে অচল, সেখানে তত্ত্বে বিশ্বাসী হয়ে কী লাভ? আমি তত্ত্বকথায় বিশ্বাসী হতে চাই না।
প্রথম আলো কিন্তু সংবিধানেই তো এমন কতিপয় অনুচ্ছেদ রয়ে গেছে, যেখানে হাত দেওয়া দরকার। সত্তর অনুচ্ছেদটাই ধরুন। রাজপথে সহিংস হরতাল দিয়ে যা করা বা বলা যাবে, তা কেন সংসদের ফ্লোরে করা বা বলা যাবে না? তাই কী করে আপনি বলবেন সত্তর অনুচ্ছেদটা যেমন আছে তেমনই থাক?
টি এইচ খান এটা আমি স্বীকার করি যে এটা বহাল থাকায় সমস্যা আছে। এটা থাকার কারণে সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি একটা সম্পূর্ণ অনাস্থা চলছে। তথাপি আমি এ কথাও বলতে চাই, আমরা তো গণতন্ত্র শেখার পর্যায়ে আছি। এখনো পর্যন্ত আমরা সে রকম পরিপক্বতা অর্জন করতে পারিনি। সে কারণে এটা থাকতে পারে। তবে হ্যাঁ, কিছুটা সংশোধনী আসতে পারে।
প্রথম আলো আমরা কিন্তু এ মুহূর্তে সেটাই চাই। বাহাত্তরের সংবিধানে সত্তর অনুচ্ছেদ যেভাবে ছিল, সেটা আরও কঠোর করা হয়েছিল ১৯৯১ সালে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীতে।
টি এইচ খান আমরা যে অবস্থায় পৌঁছে গেছি, সে অবস্থায় আমি এটা বলব না যে সত্তর অনুচ্ছেদ পুরোপুরি বিলোপ হোক।
প্রথম আলো উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে আপনি এখন কী ভাবছেন? পঞ্চম সংশোধনী মামলায় হাইকোর্ট বাহাত্তরের সংবিধানের মূল অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে আনার উপায় বাতলেছেন। তবে সেখানে শুধু প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে বিচারক নিয়োগের কথা বলা আছে। ব্যক্তিনির্ভর পরামর্শে আমাদের ভরসা নেই। আপনার?
টি এইচ খান আমি মনে করি, বিচারক নিয়োগে পাঁচ বা ছয় সদস্যের একটি কলিজিয়াম (কমিশন) হোক। এর বাইরে আর কোনো ব্যক্তি নন। সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি কিংবা বার কাউন্সিলের সহসভাপতিকে এই কলিজিয়ামে রাখার কোনো প্রশ্নই আসে না। মধুর হাঁড়ি বোঝেন তো? তাঁদের রাখলে মধুর হাঁড়ির চারপাশে মৌমাছিরা ঘুরবে। ভালো-মন্দ যা-ই হোক, কর্মরত বিচারকদের কলিজিয়াম দ্বারাই বিচারক নিয়োগ হওয়া উচিত।
প্রথম আলো তাহলেও সংবিধান সংশোধনের প্রশ্ন আসছে। আপনি নিশ্চয় বলবেন যে সংবিধানে সংশোধনী এনেই কলিজিয়াম-প্রথা চালু করা উচিত।
টি এইচ খান অবশ্যই।
প্রথম আলো বিচারক নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন? অনেকে বলছেন, কে কোন শ্রেণীতে পাস দিলেন সেটা বড় কথা নয়, অভিজ্ঞতাই বড়।
টি এইচ খান এটা যাঁরা বলেন তাঁরা বাত কি বাত বলেন। তৃতীয় শ্রেণী ও প্রথম শ্রেণীতে পাস করার তফাৎ জীবনভর থেকে যাবে। ওকালতি করে একজন খুব নাম করতে পারে। কিন্তু তফাৎটা থেকে যাবে।
প্রথম আলো পঞ্চম সংশোধনীর বিষয়ে যদি সংবিধান সংশোধন বিল আসে, তাহলে আপনার মন্তব্য কী হবে?
টি এইচ খান কিছু বলার নেই। তাদের আসন আড়াই শ। আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব।
প্রথম আলো তবু সরকারের উদ্দেশে কিছু বলুন।
টি এইচ খান ক্ষমতা যতই থাক, সেটা যেন তারা চিন্তাভাবনা করে প্রয়োগ করে।
প্রথম আলো পঞ্চম সংশোধনীর রায় পেতে বিলম্ব ঘটছে। কোনো মন্তব্য?
টি এইচ খান ওয়েট অ্যান্ড সি।
প্রথম আলো এত দিন তাঁরা বলেছেন রায় পেয়ে সংবিধান ছাপবেন। এখন বলছেন তাঁরা বিল আনবেন।
টি এইচ খান তাঁরা কখন কী বলেন, তা তো চিন্তাভাবনা করে বলেন না। যখন যে রকম পরিবেশ থাকে, সে রকমই তাঁরা কথা বলেন। খাঁটি কথা হলো, সংবিধান সংশোধন ছাড়া তাঁরা কিচ্ছু করতে পারবেন না।
প্রথম আলো বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়া?
টি এইচ খান এটা আবেগাশ্রয়ী একটা স্লোগান। বাহাত্তরের সংবিধানে সব মধু? আসল কথা হলো, এর মধ্যে কয়েকটি বিষয় রয়েছে, যার সঙ্গে ধর্ম জড়িত। এটা তারা রদ করতে চায়। এ জন্য তারা ‘বাহাত্তর বাহাত্তর’ করে।
প্রথম আলো সরকারি দল কি এর মাধ্যমে একই সঙ্গে আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সংসদীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে চায় না?
টি এইচ খান আমার তো মনে হয় না।
প্রথম আলো দেখুন, বিচার বিভাগের পৃথক্করণ সার্থক করতে ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন না করলে...
টি এইচ খান সংবিধান একটি লিখিত দলিল। কতগুলো শব্দের সন্নিবেশ। দেখার বিষয় হলো, এটা কীভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সংবিধান তো নিজের মতো হেঁটে হেঁটে চলে না, একে পরিচালনা করতে হয়। জনগণের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি, কার কেমন আদর্শ তার ওপর নির্ভর করে ক্রিয়াকলাপ।
প্রথম আলো তবে সংবিধান সংশোধনে কিন্তু এখন দুই নেত্রীরই সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী অঙ্গীকার আছে। ৫০০ আসনের সংসদ প্রতিষ্ঠার কথা আছে। অন্যদিকে আছে নারী আসন বৃদ্ধি অর্থাৎ সাড়ে চার শ আসনের সংসদ করার প্রতিশ্রুতি। তো—
টি এইচ খান এসব সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক ইস্যু, এসব সংবিধানের অংশ নয়। সংসদীয় আসনগুলোকে কখন কতগুলোতে পরিণত করবেন, সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।
প্রথম আলো একটি সংবিধান রিভিউ কমিশন গঠন করা উচিত?
টি এইচ খান যদি তা নিরপেক্ষভাবে করার সুযোগ থাকত, তাহলে বলতাম। বর্তমানের পরিবেশটা ভাবুন। এতে কারা আসবেন? কারা সদস্য হবেন? সুতরাং এটা হবে একটা লাক্সারি (বিলাসিতা)। লোকদেখানো বিলাসিতা।
প্রথম আলো এটা হয়তো আপনার দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু অন্তত তাত্ত্বিকভাবে কি আপনার মনে হয় না বাংলাদেশের সংবিধানের একটা পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা হওয়ার সময় এসেছে?
টি এইচ খান বাস্তবে সংবিধান যেখানে অচল, সেখানে তত্ত্বে বিশ্বাসী হয়ে কী লাভ? আমি তত্ত্বকথায় বিশ্বাসী হতে চাই না।
প্রথম আলো কিন্তু সংবিধানেই তো এমন কতিপয় অনুচ্ছেদ রয়ে গেছে, যেখানে হাত দেওয়া দরকার। সত্তর অনুচ্ছেদটাই ধরুন। রাজপথে সহিংস হরতাল দিয়ে যা করা বা বলা যাবে, তা কেন সংসদের ফ্লোরে করা বা বলা যাবে না? তাই কী করে আপনি বলবেন সত্তর অনুচ্ছেদটা যেমন আছে তেমনই থাক?
টি এইচ খান এটা আমি স্বীকার করি যে এটা বহাল থাকায় সমস্যা আছে। এটা থাকার কারণে সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি একটা সম্পূর্ণ অনাস্থা চলছে। তথাপি আমি এ কথাও বলতে চাই, আমরা তো গণতন্ত্র শেখার পর্যায়ে আছি। এখনো পর্যন্ত আমরা সে রকম পরিপক্বতা অর্জন করতে পারিনি। সে কারণে এটা থাকতে পারে। তবে হ্যাঁ, কিছুটা সংশোধনী আসতে পারে।
প্রথম আলো আমরা কিন্তু এ মুহূর্তে সেটাই চাই। বাহাত্তরের সংবিধানে সত্তর অনুচ্ছেদ যেভাবে ছিল, সেটা আরও কঠোর করা হয়েছিল ১৯৯১ সালে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীতে।
টি এইচ খান আমরা যে অবস্থায় পৌঁছে গেছি, সে অবস্থায় আমি এটা বলব না যে সত্তর অনুচ্ছেদ পুরোপুরি বিলোপ হোক।
প্রথম আলো উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে আপনি এখন কী ভাবছেন? পঞ্চম সংশোধনী মামলায় হাইকোর্ট বাহাত্তরের সংবিধানের মূল অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে আনার উপায় বাতলেছেন। তবে সেখানে শুধু প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে বিচারক নিয়োগের কথা বলা আছে। ব্যক্তিনির্ভর পরামর্শে আমাদের ভরসা নেই। আপনার?
টি এইচ খান আমি মনে করি, বিচারক নিয়োগে পাঁচ বা ছয় সদস্যের একটি কলিজিয়াম (কমিশন) হোক। এর বাইরে আর কোনো ব্যক্তি নন। সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি কিংবা বার কাউন্সিলের সহসভাপতিকে এই কলিজিয়ামে রাখার কোনো প্রশ্নই আসে না। মধুর হাঁড়ি বোঝেন তো? তাঁদের রাখলে মধুর হাঁড়ির চারপাশে মৌমাছিরা ঘুরবে। ভালো-মন্দ যা-ই হোক, কর্মরত বিচারকদের কলিজিয়াম দ্বারাই বিচারক নিয়োগ হওয়া উচিত।
প্রথম আলো তাহলেও সংবিধান সংশোধনের প্রশ্ন আসছে। আপনি নিশ্চয় বলবেন যে সংবিধানে সংশোধনী এনেই কলিজিয়াম-প্রথা চালু করা উচিত।
টি এইচ খান অবশ্যই।
প্রথম আলো বিচারক নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন? অনেকে বলছেন, কে কোন শ্রেণীতে পাস দিলেন সেটা বড় কথা নয়, অভিজ্ঞতাই বড়।
টি এইচ খান এটা যাঁরা বলেন তাঁরা বাত কি বাত বলেন। তৃতীয় শ্রেণী ও প্রথম শ্রেণীতে পাস করার তফাৎ জীবনভর থেকে যাবে। ওকালতি করে একজন খুব নাম করতে পারে। কিন্তু তফাৎটা থেকে যাবে।
প্রথম আলো পঞ্চম সংশোধনীর বিষয়ে যদি সংবিধান সংশোধন বিল আসে, তাহলে আপনার মন্তব্য কী হবে?
টি এইচ খান কিছু বলার নেই। তাদের আসন আড়াই শ। আমরা চেয়ে চেয়ে দেখব।
প্রথম আলো তবু সরকারের উদ্দেশে কিছু বলুন।
টি এইচ খান ক্ষমতা যতই থাক, সেটা যেন তারা চিন্তাভাবনা করে প্রয়োগ করে।
প্রথম আলো পঞ্চম সংশোধনীর রায় পেতে বিলম্ব ঘটছে। কোনো মন্তব্য?
টি এইচ খান ওয়েট অ্যান্ড সি।
No comments