ছাত্রলীগের অন্তর্দ্বন্দ্বের শিকার নিরীহ শিক্ষার্থীরা-জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সশস্ত্র সংঘর্ষ

ওরা শুধু রড ব্যবহারে ক্ষান্ত হয়নি, গোলাগুলি করেছে। রক্তাক্ত করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। নৃশংসতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে যখন হামলাকারীরা প্রতিপক্ষ নেতা-কর্মীদের পিটিয়ে আধমরা করে তিন ও চারতলা থেকে বাইরে ছুড়ে ফেলেছে। স্বয়ং উপাচার্যের উপস্থিতিতেও তারা একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে গেছে।


সহকারী প্রক্টরও রডের আঘাতে আহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা আতঙ্কগ্রস্ত। শিক্ষাজীবন বিপন্ন।
ছাত্রলীগের ছেলেরা এ দুঃসাহস পায় কোথায়? সরকারি দলের নেতা ও মন্ত্রীরা যতই দাবি করুন যে ছাত্রলীগ আর আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন নয়, বাস্তব হলো, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগই ছাত্রলীগের খুঁটির জোর। না হলে পুলিশের উপস্থিতিতে ক্যাম্পাসে গোলাগুলি চলে কীভাবে?
প্রভাব বিস্তারের জন্য নাকি এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। কারণ প্রভাব থাকলে নির্বিঘ্নে চাঁদাবাজি ও জমি দখলের অপকর্ম চালিয়ে যাওয়া যায়। এদের প্রতি কারও কোনো অনুকম্পা থাকা উচিত নয়। সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট অভিযুক্ত ১৭ জন ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ১৩ কর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। দুই প্রতিপক্ষের মামলায় অভিযুক্ত কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, নিজ উদ্যোগে কিছু করেনি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কমিটির অভিযুক্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না? কেন এসব নেতাসহ হামলায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত সবাইকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে না? এখানে কি কোনো অলিখিত বাধা কাজ করছে? ছাত্রলীগের নাম করে যে যা-ই করুক না কেন, তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ নাকি দিয়েছেন বলে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন। তাহলে কি ধরে নিতে হবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা অচল?
ছাত্রলীগের আত্মঘাতী হানাহানি নতুন নয়। বছর দেড়েক আগেও তাদের অন্তর্দ্বন্দ্বের জের ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনের কার্যক্রম এক মাসের জন্য বন্ধ এবং কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯ মে কমিটি পুনর্গঠনের পর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে চলেছে। সুতরাং পুরোনো ওষুধে কাজ হবে না। সংঘর্ষের উৎসে হাত দিতে হবে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল করে প্রভাবশালী নেতাদের রাতারাতি অগাধ সম্পদের মালিক হয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ করতে না পারলে শিক্ষাঙ্গনে রক্তাক্ত হানাহানি থামানো যাবে না।
এখন সরকারকেই ঠিক করতে হবে, তারা ছাত্রলীগ নামধারী এসব নেতার অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে চায় কি না। যদি তারা বন্ধ করতে চায়, শিক্ষাঙ্গনে সংঘর্ষ বন্ধ করা সহজ হবে। সরকার এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে কতটা প্রস্তুত, সেটাই প্রশ্ন।

No comments

Powered by Blogger.