সময় থাকতে ঝাড়াই-বাছাই করুন পুলিশের সহিংস আচরণ
মঙ্গলবার ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতসংলগ্ন চত্বরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য এক নারীর শ্লীলতাহানি, তার মা-বাবাকে মারধর, সাংবাদিকসহ কয়েকজন আইনজীবীকে বেপরোয়া লাঠিপেটা করে পুলিশি হিংস্রতার ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় সংযোজন করলেন। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিকারের জন্য আদালতে বিচার চাইতে গিয়ে তাঁরা পুলিশের হাতে নির্যাতিত হলেন। অভিযুক্ত আট পুলিশ কর্মকর্তাকে হাইকোর্ট তলব করেছেন। এই ন্যক্কারজনক ঘটনার পরদিন গাজীপুর উপজেলার কালীগঞ্জ থানার একজন পুলিশ উপপরিদর্শক (এসআই) এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সন্ত্রাসীরা তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে। প্রশ্ন হলো, পুলিশ যদি কাউকে গ্রেপ্তার করে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয়, একের পর এক সাংবাদিক পেটায়, নারীর ওপর নির্যাতন চালায়, তাহলে দেশের মানুষ কার কাছে নিরাপত্তা চাইবে?পুলিশের আচরণে মনে হয়, তারা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, যাকে-তাকে ধরে ইচ্ছেমতো পেটানোর অধিকার তাদের আছে। তারা কোনো আইনের ধার ধারে না। অথচ, তাঁরা নাকি আইনের মানুষ! আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়, তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এসব বাহিনীর কাছে দেশ ও দেশের মানুষ নিরাপদ নয়। এ ব্যাপারে সরকারকে এখনই সতর্ক হতে হবে। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, পুলিশ নাকি আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে! এর আগের দিন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পুলিশ থেকে ‘নিরাপদ দূরত্বে’ থেকে সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য সাংবাদিকদের পরামর্শ দিয়েছেন। আগে সরকার দাবি করত যে পুলিশ ‘জনগণের বন্ধু’। তাই যদি হয়, তাহলে তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে কেন? কথিত ভালো পুলিশের অগ্নিমূর্তি সবাইকে বিস্মিত করে। তাহলে কি পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে? তাদের কাজের কি কোনো জবাবদিহি করতে হয় না? ইচ্ছেমতো যাকে-তাকে আসামি বানিয়ে চালান দিতে পারে? খেয়ালখুশিমতো যার-তার ওপর নির্যাতন চালাতে পারে? দিনদুপুরে শত শত মানুষের সামনে নারীর শ্লীলতাহানি করতে পারে? এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে পুলিশের কিছু সদস্য শৃঙ্খলার সীমা লঙ্ঘন করছেন। এসব ঘটনার দ্রুত তদন্ত, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বরখাস্ত, তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। এর আগে অপর এক ঘটনায় পুলিশ প্রথম আলোর তিনজন সাংবাদিককে নির্মমভাবে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। তার জের না কাটতেই পুলিশ আবার আদালত প্রাঙ্গণে প্রথম আলোর অপর এক সাংবাদিকসহ কয়েকজন সাংবাদিক ও আইনজীবীকে পিটিয়েছে। এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে বড় বাধা। এর পরিণাম কখনো শুভ হতে পারে না। পুলিশ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সুশৃঙ্খল বাহিনী। এদের মধ্যে অনাচার ঢুকে পড়লে মহা বিপদ। সময় থাকতে এখনই ঝাড়াই-বাছাই শুরু করুন। পুলিশ বাহিনীকে অমলিন রাখার জন্য যা কিছু দরকার, করতে হবে।
No comments