দিল্লির চিঠি-বর্ণশুমারির বিপদ by কুলদীপ নায়ার
২০১১ সালে জাতবর্ণ-শুমারির প্রস্তাবে বিজেপি সায় দেওয়ায় ঘৃণ্য ও সংকীর্ণ মতাদর্শের সংগঠন আরএসএস হঠাৎ করে বিজেপির ওপর গোস্যা করেছে। রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা লালু প্রসাদ যাদবের মতে সায় দিয়ে বিজেপি আবারও বেকায়দায় পড়েছে। অতীতেও তাদের খুশি করার জন্য দলটি শেষ সীমা পর্যন্ত গিয়েছিল।
নিম্নবর্ণের মানুষের জন্য বিশেষ কোটার সুপারিশ করেছিল মণ্ডল কমিশন। ১৯৯০ সালে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ফিরে অটল বিহারি বাজপেয়ি বলেছিলেন, মণ্ডল না হলে কমণ্ডলও (রক্ষণশীলতার প্রতীক) হতো না। সে সময় তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে ভিপি সিং সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের চিঠি দিয়ে এসেছিলেন।
যাদব সে সময় বিহারের সামস্তিপুরে এল কে আদভানির নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক রথযাত্রা আটকে দেওয়ায় ভয়ংকর খেপে গিয়েছিল বিজেপি। যাদব সে সময় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং ছিলেন ভিপি সিং সরকারের জোটসঙ্গী। স্পষ্টতই যাদব নিজের ইচ্ছায় নয়, ভিপি সিংয়ের চাপাচাপিতেই এ কাজ করেছিলেন।
বিজেপির সামনে তখন উভয়সংকট। রথযাত্রা নিয়ে এগোতে না পারলে হিন্দুদের মধ্যে দলটির সমর্থনের ভিত পোক্ত হবে না, আর তার জোরে মণ্ডল কমিশনের সুপারিশে সায় না দেওয়ায় দলিতদের ক্ষোভ ঢাকার কৌশলও সফল হবে না। দলটির চোখে জোটের মধ্যে ভিপি সিংই হলেন আসল খলনায়ক, যিনি অন্যান্য পশ্চাৎপদ শ্রেণীর (ওবিসি) জন্য সংরক্ষণের সুপারিশ মেনে নিয়েছিলেন।
ভারত তখন ভিপি সিং সরকারের পতন দেখল এবং সংঘ পরিবারের (বিজেপি-আরএসএস-শিবসেনা) পরিকল্পনা ও উসকানিতে বিরাট আকারের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ল। তাহলেও উচ্চশ্রেণীর হিন্দুদের প্রতিহিংসার সবচেয়ে খারাপ পরিণতি হলো ভিপি সিং সরকারের পতন। কারণ, এই সরকার ওবিসিভুক্ত সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের কোটার বিধান করেছিল এবং পরে তা অধ্যাদেশের মাধ্যমে সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়। সে সময় বিজেপি ওবিসিভুক্ত ভোটারদের ভয়ে এর বিরুদ্ধাচরণ করতে পারেনি।
গোটা দেশে যেন গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। কিন্তু একপর্যায়ে মানুষ এই অতিরিক্ত কোটাব্যবস্থাকে মেনে নিল (এর বাইরে তফসিলি সম্প্রদায় ও তফসিলি উপজাতিরা ২৩ শতাংশ কোটার সুবিধা পায়)। এভাবে ভারসাম্য অর্জন করতে দেশকে অনেক সময় দিতে হয়েছে। তার পরও এখনো উচ্চবর্ণের মধ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তাহলেও সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে কোটার অনুপাত সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশের মধ্যে বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
ভিপি সিংয়ের পতনের অনেক বছর পর একবার আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, মণ্ডল কমিশন পাস করার পর তাঁর আরও কোনো পদক্ষেপের চিন্তা ছিল কি না। তিনি বলেছিলেন, ছিল না। যখন আমি তাঁকে বললাম, দেশব্যাপী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার জন্য অনেকে তাঁকে দোষারোপ করে, তাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘সত্যি যে আমি নিজের পা ভেঙেছি, কিন্তু গোলটা তো হয়েছে।’
সম্ভবত, তিন যাদব— লালু প্রসাদ যাদব, শারদ যাদব ও মুলায়ম সিং যাদব প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট সোনিয়া গান্ধীকে শর্ত দিয়েছেন যে সরকার বর্ণশুমারি মেনে নিলে তাঁরা নারীদের জন্য সংরক্ষণ বিল সমর্থন করবেন। শাসকদল এখন উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বাধার মুখে মন্ত্রীদের একটি দলকে সমাধান খোঁজার দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু মন্ত্রীদের মধ্যেও এ নিয়ে পরিষ্কার মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় সরকার ফিরে গেছে বর্ণ প্রশ্নে মতৈক্য খোঁজার আদি প্রস্তাবে।
চাপের মুখে সিদ্ধান্ত পাল্টানোর ঘটনা সোনিয়া গান্ধীর জন্য এটাই প্রথম নয়। মধ্যরাতে তেলেঙ্গানাকে রাজ্য করার ঘোষণার বেলাতেও এমনটা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ভুল বুঝতে পেরেছিলেন এবং বিচারপতি বি এন কৃষ্ণকে প্রধান করে ‘তেলেঙ্গানা কি অন্ধ্র প্রদেশের অংশ থাকবে, না স্বতন্ত্র হবে’ সে বিষয়ে কমিটিও গঠন করেছিলেন। বর্ণশুমারির বেলাতেও একই ভুল হয়েছে। এখানেও তিনি প্রথমে শুমারি মেনে নেওয়ায় রাজি হয়ে পরে মন্ত্রীদের সে বিষয়ে কী করণীয়, তা খুঁজতে নিযুক্ত করেছেন।
কংগ্রেস এমনকি বিজেপিও বুঝতে পারছে না নির্বাচনী উদ্দেশ্যে বর্ণশুমারি সমর্থন করে তারা রাজনৈতিক সংস্কৃতির কী ক্ষতি করছে। যখন লালু প্রসাদ যাদব, শারদ যাদব ও মুলায়ম সিং যাদব এই ইস্যুকে ঘিরে তাঁদের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি বাড়াতে নেমেছেন, তখন ইস্যুটিকে আর খুঁচিয়ে কোনো লাভ হবে না। তাঁদের কঠিনভাবে ‘না’ বলে দিলে গোড়াতেই এই বিপত্তি থেমে যেতে পারে। ঘটনাক্রমে এই তিন যাদব নেতাই ড. রাম মনোহর লোহিয়া এবং গান্ধীবাদী জয়প্রকাশ নারায়ণের অনুসারী, যাঁরা ভারতে ‘জাতপাতহীন সমাজ’ প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়েছিলেন। এমনকি স্বাধীনতাসংগ্রামের সময় ও স্বাধীনতা অর্জনের পরে গোঁড়ামি ও জাতহীন সমাজ করার স্লোগান উঠেছিল।
যাদব নেতারা যতই চাপ দিন, কংগ্রেস ও বিজেপির নেতাদের তাঁদের হাতের পুতুল হওয়া উচিত নয়। তাঁরা এখনো নৈতিক অবস্থান নিয়ে দলীয় স্বার্থের বাইরে এসে রাজনৈতিক দল নিয়ে চিন্তা করতে পারেন। তাঁরা আগুন নিয়ে খেলবেন, আর ভাববেন দাবানল বেশি ছড়াবে না, তা হয় না। বর্ণশুমারি আবারও বিভিন্ন রঙের গোঁড়াপন্থীদের নিজ নিজ এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নামতে উসকে দিতে পারে।
১৯৪১ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশরা প্রতিটি শুমারির সময় ধর্ম ও বর্ণ জানার জন্য একটি প্রশ্ন রাখত। কিন্তু তখন তো ‘ভাগ করো শাসন করো’ নীতি চালু ছিল। জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে শুমারির ফরমে এ বিষয়ক স্তম্ভটিসহ সরকারি নথিপত্রেও বর্ণের বিষয়টি মুছে দিয়েছিলেন। ১৯৫১ সালের পর জাতের প্রশ্নটি আর ওঠেনি।
জাতের বিষয়টি আবার প্রবর্তন করা মানে আবারও আদিম ও বিভক্ত সমাজকে ফিরিয়ে আনা। তাহলে আবারও হরিয়ানার খাপ-জাতীয় পঞ্চায়েত দেশব্যাপী ফিরে আসবে। ভাবতেও ভয় লাগে যে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ভুপিন্দর সিং হুদা খাপের সঙ্গে একমত হয়ে বর্ণে বর্ণে বিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করছেন। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, উচ্চ আদালত এ ধরনের অভিশপ্ত প্রথা বাতিল করে দিয়েছেন।
যাদব-গোষ্ঠীর যুক্তি হলো, বর্ণশুমারি হলে ওবিসির মধ্যে গরিবদের সংখ্যা জানা যাবে। তা-ই যদি তাঁরা চান, তাহলে সরাসরি দারিদ্র্য-শুমারি নয় কেন? গরিবেরা উচ্চশ্রেণীর হলে তো আর কষ্ট কমে যায় না। এখনই সময় ভারতে অর্থনৈতিক অবস্থানের বিবেচনায় কোটা সংরক্ষণ চালু করা। নইলে, জাতপাত নিয়ে গোঁড়ামি, সংস্কার ও ঘৃণা বিস্তৃত হবে। ভারতের মতো একটি দেশে, যার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল কল্যাণকামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য, সেখানে এমনটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
কুলদীপ নায়ার: ভারতীয় সাংবাদিক।
যাদব সে সময় বিহারের সামস্তিপুরে এল কে আদভানির নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক রথযাত্রা আটকে দেওয়ায় ভয়ংকর খেপে গিয়েছিল বিজেপি। যাদব সে সময় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং ছিলেন ভিপি সিং সরকারের জোটসঙ্গী। স্পষ্টতই যাদব নিজের ইচ্ছায় নয়, ভিপি সিংয়ের চাপাচাপিতেই এ কাজ করেছিলেন।
বিজেপির সামনে তখন উভয়সংকট। রথযাত্রা নিয়ে এগোতে না পারলে হিন্দুদের মধ্যে দলটির সমর্থনের ভিত পোক্ত হবে না, আর তার জোরে মণ্ডল কমিশনের সুপারিশে সায় না দেওয়ায় দলিতদের ক্ষোভ ঢাকার কৌশলও সফল হবে না। দলটির চোখে জোটের মধ্যে ভিপি সিংই হলেন আসল খলনায়ক, যিনি অন্যান্য পশ্চাৎপদ শ্রেণীর (ওবিসি) জন্য সংরক্ষণের সুপারিশ মেনে নিয়েছিলেন।
ভারত তখন ভিপি সিং সরকারের পতন দেখল এবং সংঘ পরিবারের (বিজেপি-আরএসএস-শিবসেনা) পরিকল্পনা ও উসকানিতে বিরাট আকারের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ল। তাহলেও উচ্চশ্রেণীর হিন্দুদের প্রতিহিংসার সবচেয়ে খারাপ পরিণতি হলো ভিপি সিং সরকারের পতন। কারণ, এই সরকার ওবিসিভুক্ত সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের কোটার বিধান করেছিল এবং পরে তা অধ্যাদেশের মাধ্যমে সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়। সে সময় বিজেপি ওবিসিভুক্ত ভোটারদের ভয়ে এর বিরুদ্ধাচরণ করতে পারেনি।
গোটা দেশে যেন গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। কিন্তু একপর্যায়ে মানুষ এই অতিরিক্ত কোটাব্যবস্থাকে মেনে নিল (এর বাইরে তফসিলি সম্প্রদায় ও তফসিলি উপজাতিরা ২৩ শতাংশ কোটার সুবিধা পায়)। এভাবে ভারসাম্য অর্জন করতে দেশকে অনেক সময় দিতে হয়েছে। তার পরও এখনো উচ্চবর্ণের মধ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে কোটাব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তাহলেও সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে কোটার অনুপাত সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশের মধ্যে বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
ভিপি সিংয়ের পতনের অনেক বছর পর একবার আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, মণ্ডল কমিশন পাস করার পর তাঁর আরও কোনো পদক্ষেপের চিন্তা ছিল কি না। তিনি বলেছিলেন, ছিল না। যখন আমি তাঁকে বললাম, দেশব্যাপী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার জন্য অনেকে তাঁকে দোষারোপ করে, তাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘সত্যি যে আমি নিজের পা ভেঙেছি, কিন্তু গোলটা তো হয়েছে।’
সম্ভবত, তিন যাদব— লালু প্রসাদ যাদব, শারদ যাদব ও মুলায়ম সিং যাদব প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট সোনিয়া গান্ধীকে শর্ত দিয়েছেন যে সরকার বর্ণশুমারি মেনে নিলে তাঁরা নারীদের জন্য সংরক্ষণ বিল সমর্থন করবেন। শাসকদল এখন উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বাধার মুখে মন্ত্রীদের একটি দলকে সমাধান খোঁজার দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু মন্ত্রীদের মধ্যেও এ নিয়ে পরিষ্কার মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় সরকার ফিরে গেছে বর্ণ প্রশ্নে মতৈক্য খোঁজার আদি প্রস্তাবে।
চাপের মুখে সিদ্ধান্ত পাল্টানোর ঘটনা সোনিয়া গান্ধীর জন্য এটাই প্রথম নয়। মধ্যরাতে তেলেঙ্গানাকে রাজ্য করার ঘোষণার বেলাতেও এমনটা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ভুল বুঝতে পেরেছিলেন এবং বিচারপতি বি এন কৃষ্ণকে প্রধান করে ‘তেলেঙ্গানা কি অন্ধ্র প্রদেশের অংশ থাকবে, না স্বতন্ত্র হবে’ সে বিষয়ে কমিটিও গঠন করেছিলেন। বর্ণশুমারির বেলাতেও একই ভুল হয়েছে। এখানেও তিনি প্রথমে শুমারি মেনে নেওয়ায় রাজি হয়ে পরে মন্ত্রীদের সে বিষয়ে কী করণীয়, তা খুঁজতে নিযুক্ত করেছেন।
কংগ্রেস এমনকি বিজেপিও বুঝতে পারছে না নির্বাচনী উদ্দেশ্যে বর্ণশুমারি সমর্থন করে তারা রাজনৈতিক সংস্কৃতির কী ক্ষতি করছে। যখন লালু প্রসাদ যাদব, শারদ যাদব ও মুলায়ম সিং যাদব এই ইস্যুকে ঘিরে তাঁদের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি বাড়াতে নেমেছেন, তখন ইস্যুটিকে আর খুঁচিয়ে কোনো লাভ হবে না। তাঁদের কঠিনভাবে ‘না’ বলে দিলে গোড়াতেই এই বিপত্তি থেমে যেতে পারে। ঘটনাক্রমে এই তিন যাদব নেতাই ড. রাম মনোহর লোহিয়া এবং গান্ধীবাদী জয়প্রকাশ নারায়ণের অনুসারী, যাঁরা ভারতে ‘জাতপাতহীন সমাজ’ প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়েছিলেন। এমনকি স্বাধীনতাসংগ্রামের সময় ও স্বাধীনতা অর্জনের পরে গোঁড়ামি ও জাতহীন সমাজ করার স্লোগান উঠেছিল।
যাদব নেতারা যতই চাপ দিন, কংগ্রেস ও বিজেপির নেতাদের তাঁদের হাতের পুতুল হওয়া উচিত নয়। তাঁরা এখনো নৈতিক অবস্থান নিয়ে দলীয় স্বার্থের বাইরে এসে রাজনৈতিক দল নিয়ে চিন্তা করতে পারেন। তাঁরা আগুন নিয়ে খেলবেন, আর ভাববেন দাবানল বেশি ছড়াবে না, তা হয় না। বর্ণশুমারি আবারও বিভিন্ন রঙের গোঁড়াপন্থীদের নিজ নিজ এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নামতে উসকে দিতে পারে।
১৯৪১ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশরা প্রতিটি শুমারির সময় ধর্ম ও বর্ণ জানার জন্য একটি প্রশ্ন রাখত। কিন্তু তখন তো ‘ভাগ করো শাসন করো’ নীতি চালু ছিল। জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে শুমারির ফরমে এ বিষয়ক স্তম্ভটিসহ সরকারি নথিপত্রেও বর্ণের বিষয়টি মুছে দিয়েছিলেন। ১৯৫১ সালের পর জাতের প্রশ্নটি আর ওঠেনি।
জাতের বিষয়টি আবার প্রবর্তন করা মানে আবারও আদিম ও বিভক্ত সমাজকে ফিরিয়ে আনা। তাহলে আবারও হরিয়ানার খাপ-জাতীয় পঞ্চায়েত দেশব্যাপী ফিরে আসবে। ভাবতেও ভয় লাগে যে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ভুপিন্দর সিং হুদা খাপের সঙ্গে একমত হয়ে বর্ণে বর্ণে বিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করছেন। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, উচ্চ আদালত এ ধরনের অভিশপ্ত প্রথা বাতিল করে দিয়েছেন।
যাদব-গোষ্ঠীর যুক্তি হলো, বর্ণশুমারি হলে ওবিসির মধ্যে গরিবদের সংখ্যা জানা যাবে। তা-ই যদি তাঁরা চান, তাহলে সরাসরি দারিদ্র্য-শুমারি নয় কেন? গরিবেরা উচ্চশ্রেণীর হলে তো আর কষ্ট কমে যায় না। এখনই সময় ভারতে অর্থনৈতিক অবস্থানের বিবেচনায় কোটা সংরক্ষণ চালু করা। নইলে, জাতপাত নিয়ে গোঁড়ামি, সংস্কার ও ঘৃণা বিস্তৃত হবে। ভারতের মতো একটি দেশে, যার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল কল্যাণকামী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য, সেখানে এমনটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
কুলদীপ নায়ার: ভারতীয় সাংবাদিক।
No comments