বিশেষ সাক্ষাৎকার-সংবিধান রিভিউ কমিশন গঠন করুন by আমীর-উল ইসলাম
প্রথম আলো পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায় বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়াকে আপনি কীভাবে দেখছেন?আমীর-উল ইসলাম আমার যেটা প্রাথমিক প্রত্যাশা, আপিল বিভাগের রায়টি দ্রুত প্রকাশ পাক। এটা দ্রুত জনসমক্ষে আনার প্রয়োজন রয়েছে।
এই রায় এবং অষ্টম সংশোধনী মামলার রায়, তার ওপর ভিত্তি করে আমাদের সংবিধানকে একটা মৌলিক স্তম্ভের ওপর দাঁড় করানো দরকার। অনেক অসাংবিধানিক উপায়ে আমাদের সংবিধান কাটছাঁট হয়। সেসব যদি পুরোপুরি অবৈধ ঘোষিত হয়, তাহলে তার সূত্র ধরে আমরা সহজে প্রতিকারে পৌঁছাতে পারব।
প্রথম আলো তাহলে তার মানে কি এই, আপিল বিভাগের রায় পেলে সে অনুযায়ী সংবিধানে সংশোধনী আনলেই চলবে। শুধু কাজ হবে নতুন করে সংবিধান ছাপা। সংসদে বিল আনতে হবে না?
আমীর-উল ইসলাম না, তা আমি বলছি না। রায়ে অবৈধ ঘোষিত অনুচ্ছেদগুলোকে আগে দূর করে দিতে হবে। আমরা আপিল বিভাগের রায় থেকে একটা নির্দেশনাও পাব। যেমন ধরুন, হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে আছে সংবিধানের লঙ্ঘন ঘটানো একটি অপরাধ। কেউ যদি সংবিধানকে স্থগিত করে ক্ষমতা দখল করতে চায়, বা সংবিধানকে কাটছাঁট করতে চায়, তাহলে সেটাকে একটা বড়মাপের রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা।
প্রথম আলো পঞ্চম সংসদে রাশেদ খান মেনন একটি বিল এনেছিলেন, যাতে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকে চরম বিশ্বাসঘাতকতা ও দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। দুই বড় দল সমর্থন করেছিল।
আমীর-উল ইসলাম হ্যাঁ। আপনি ঠিকই বলেছেন।
প্রথম আলো আমাদের একটি সংবিধান রিভিউ কমিশন হওয়া উচিত।
আমীর-উল ইসলাম হ্যাঁ। সেটা বরং না করার কারণে অনেক সমস্যায় আমরা পড়ছি। এডহক ভিত্তিতে হওয়া ঠিক নয়। সংবিধানের যে সার্বিক চরিত্র ও গঠন-প্রক্রিয়া রয়েছে, সে বিষয়ে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল থেকে কাজ করতে হবে।
প্রথম আলো কমিশন কীভাবে গঠিত হতে পারে? কারা এতে থাকতে পারেন? ভারতের রিভিউ কমিশনের বিস্তারিত প্রতিবেদন জনমত যাচাইয়ের জন্য প্রচারিত হয়ে আছে। সেখানে সাংসদের বাইরেও সদস্য ছিলেন।
আমীর-উল ইসলাম হ্যাঁ, সেটা হয়েছে। কিন্তু আমার প্রথম উদ্বেগ এডহক-ইজম পরিত্যাগ করা। সংবিধান সংশোধন করতে বসে সেটাকে তো আজকের দিনের বিষয়বস্তুতে পরিণত করা ঠিক নয়। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের যে মূল দর্শন, অঙ্গীকার, মানবতাবাদী দিক; সেসব অক্ষুণ্ন রেখে সংশোধনী আনতে হবে। একে দলীয় রাজনীতির বিষয় করা যাবে না। আমাদের সংবিধান শুধু বাংলাদেশের রাজনীতির প্রতিফলন নয়। এর একটি বৈশ্বিক রূপও আছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুধু বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ছিল না। বিশ্বমানবতার সমর্থনে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। সেটাও আমাদের সংবিধান ধারণ করে আছে।
প্রথম আলো সংবিধান সংশোধনে বিরোধী দলের সমর্থন থাকা অপরিহার্য। আবার দুই পক্ষের মধ্যে যে সম্পর্ক তাতে সংবিধান সংশোধনে কী করে বৃহত্তর মতৈক্য আশা করা সম্ভব?
আমীর-উল ইসলাম এ বিষয়ে ক্ষুদ্র রাজনৈতিক গণ্ডিতে চিন্তা করা কারও ঠিক হবে না, দলীয় গণ্ডিতেও নয়। বাহাত্তরের সংবিধানে যে মৌলিক দর্শন ছিল, সেখানে আমাদের দাঁড়াতে হবে। সেই প্রশ্নে কোন দল কীভাবে দেখছে, কে কীভাবে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে, সেটা দেখার বিষয়। বিরোধী দলের সংখ্যা কত, সেটা নিতান্ত কারিগরি বিষয়। বড় বিষয় হলো, সাধারণ মানুষের কাছে বাহাত্তরের সংবিধানের যে অসাম্প্রদায়িক দিক, যে সার্বজনীন চরিত্র, সেটা তুলে ধরতে হবে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিচারের দিকটি মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।
প্রথম আলো সব গণতান্ত্রিক দেশেই সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে সাধারণত গভীর রাতের দিকে এটা ঘটে থাকে। সেটা মনে রেখে কেন এখনই আমরা একটি রিভিউ কমিশন পেতে পারি না? আপিল বিভাগের রায়ের জন্য তো অপেক্ষার দরকার নেই।
আমীর-উল ইসলাম হ্যাঁ। সে রকম একটি কমিশন এখনই হতে পারে। আইনগত কোনো বাধা নেই। উপরন্তু থাকাই ভালো। এ রকম একটি কমিশন থাকার সুফল অনেক। সরকার, বিরোধী দল বা অন্যান্য আগ্রহী মহল অনেক বিষয় বিবেচনার জন্য কমিশনের কাছে পাঠাতে পারে। কমিশন তখন দলীয় চিন্তাভাবনার ঊর্ধ্বে উঠে সুচিন্তিত মত দিতে পারে।
প্রথম আলো উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের বিষয়ে আপনি জুডিশিয়াল কমিশনের ধারণা সমর্থন করেছিলেন। সেই কমিশন এখন আর নেই। তবে আপিল বিভাগের রায়ের নির্দেশনা আছে, কিন্তু তদুপরি বিতর্ক রয়ে গেছে।
আমীর-উল ইসলাম বিচারক নিয়োগে বিশ্বে এখন নানা মডেল রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো বার কাউন্সিলের সদস্য হওয়ার সময়ই বিকল্প বেছে নিতে বলা। আর তাহলে তাঁদের ওপর বার ও বেঞ্চ দীর্ঘ সময় ধরে নজর রাখতে পারবে। তখন তাঁদের ট্র্যাক রেকর্ড পরীক্ষা করার সুযোগ থাকবে। তাঁদের লেখালেখি, গবেষণা, দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের কাছে পরিষ্কার থাকবে। কিন্তু এখন ১০ জনের পদ খালি হলো, অমনি তা পূরণ করা হলো। এই যে ব্যবস্থা, তা চলতে পারে না। এ ধরনের নিয়োগ কমিশন দিয়ে করা হলেও যোগ্যতম লোক পওয়া দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রথম আলো অনেক দিন বিচারক নিয়োগে আমরা শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কথা বলিনি। কিন্তু এখন হাজার হাজার ছেলেমেয়ে গোল্ডেন ফাইভ নিয়ে বেরোচ্ছে। এখন কি আমরা মেধার দিকে জোর দিতে পারি না?
আমীর-উল ইসলাম আমার কাছে এ বিষয়টি অত বেশি প্রতিপাদ্য মনে হয় না। তার কারণ, মেধা পরীক্ষার ফলাফল নির্ধারণ করে। কিন্তু কারও বিচারিক মেজাজ কী হবে, মানবাধিকার, শ্রেণীবৈষম্য সম্পর্কে তাঁর সংবেদনশীলতা কী, সেটা বিচার্য।
প্রথম আলো সেটা যথার্থ। কিন্তু পরীক্ষার ফলাফলকে উপেক্ষা করারও তো যুক্তি নেই।
আমীর-উল ইসলাম কাজটাই বড়। গবেষণা থেকে কী বের করে আনছে, সেমিনারে কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারছে, মামলার পক্ষগুলোর সঙ্গে তার আচরণ কেমন, সততা, নিষ্ঠা—সেসব গুরুত্বপূর্ণ। তাই বলছি, পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতেও কোনো পূর্বানুমান
সংগত নয়।
প্রথম আলো তাহলে তার মানে কি এই, আপিল বিভাগের রায় পেলে সে অনুযায়ী সংবিধানে সংশোধনী আনলেই চলবে। শুধু কাজ হবে নতুন করে সংবিধান ছাপা। সংসদে বিল আনতে হবে না?
আমীর-উল ইসলাম না, তা আমি বলছি না। রায়ে অবৈধ ঘোষিত অনুচ্ছেদগুলোকে আগে দূর করে দিতে হবে। আমরা আপিল বিভাগের রায় থেকে একটা নির্দেশনাও পাব। যেমন ধরুন, হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে আছে সংবিধানের লঙ্ঘন ঘটানো একটি অপরাধ। কেউ যদি সংবিধানকে স্থগিত করে ক্ষমতা দখল করতে চায়, বা সংবিধানকে কাটছাঁট করতে চায়, তাহলে সেটাকে একটা বড়মাপের রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা।
প্রথম আলো পঞ্চম সংসদে রাশেদ খান মেনন একটি বিল এনেছিলেন, যাতে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকে চরম বিশ্বাসঘাতকতা ও দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। দুই বড় দল সমর্থন করেছিল।
আমীর-উল ইসলাম হ্যাঁ। আপনি ঠিকই বলেছেন।
প্রথম আলো আমাদের একটি সংবিধান রিভিউ কমিশন হওয়া উচিত।
আমীর-উল ইসলাম হ্যাঁ। সেটা বরং না করার কারণে অনেক সমস্যায় আমরা পড়ছি। এডহক ভিত্তিতে হওয়া ঠিক নয়। সংবিধানের যে সার্বিক চরিত্র ও গঠন-প্রক্রিয়া রয়েছে, সে বিষয়ে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল থেকে কাজ করতে হবে।
প্রথম আলো কমিশন কীভাবে গঠিত হতে পারে? কারা এতে থাকতে পারেন? ভারতের রিভিউ কমিশনের বিস্তারিত প্রতিবেদন জনমত যাচাইয়ের জন্য প্রচারিত হয়ে আছে। সেখানে সাংসদের বাইরেও সদস্য ছিলেন।
আমীর-উল ইসলাম হ্যাঁ, সেটা হয়েছে। কিন্তু আমার প্রথম উদ্বেগ এডহক-ইজম পরিত্যাগ করা। সংবিধান সংশোধন করতে বসে সেটাকে তো আজকের দিনের বিষয়বস্তুতে পরিণত করা ঠিক নয়। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের যে মূল দর্শন, অঙ্গীকার, মানবতাবাদী দিক; সেসব অক্ষুণ্ন রেখে সংশোধনী আনতে হবে। একে দলীয় রাজনীতির বিষয় করা যাবে না। আমাদের সংবিধান শুধু বাংলাদেশের রাজনীতির প্রতিফলন নয়। এর একটি বৈশ্বিক রূপও আছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুধু বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ছিল না। বিশ্বমানবতার সমর্থনে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। সেটাও আমাদের সংবিধান ধারণ করে আছে।
প্রথম আলো সংবিধান সংশোধনে বিরোধী দলের সমর্থন থাকা অপরিহার্য। আবার দুই পক্ষের মধ্যে যে সম্পর্ক তাতে সংবিধান সংশোধনে কী করে বৃহত্তর মতৈক্য আশা করা সম্ভব?
আমীর-উল ইসলাম এ বিষয়ে ক্ষুদ্র রাজনৈতিক গণ্ডিতে চিন্তা করা কারও ঠিক হবে না, দলীয় গণ্ডিতেও নয়। বাহাত্তরের সংবিধানে যে মৌলিক দর্শন ছিল, সেখানে আমাদের দাঁড়াতে হবে। সেই প্রশ্নে কোন দল কীভাবে দেখছে, কে কীভাবে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে, সেটা দেখার বিষয়। বিরোধী দলের সংখ্যা কত, সেটা নিতান্ত কারিগরি বিষয়। বড় বিষয় হলো, সাধারণ মানুষের কাছে বাহাত্তরের সংবিধানের যে অসাম্প্রদায়িক দিক, যে সার্বজনীন চরিত্র, সেটা তুলে ধরতে হবে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিচারের দিকটি মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।
প্রথম আলো সব গণতান্ত্রিক দেশেই সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে সাধারণত গভীর রাতের দিকে এটা ঘটে থাকে। সেটা মনে রেখে কেন এখনই আমরা একটি রিভিউ কমিশন পেতে পারি না? আপিল বিভাগের রায়ের জন্য তো অপেক্ষার দরকার নেই।
আমীর-উল ইসলাম হ্যাঁ। সে রকম একটি কমিশন এখনই হতে পারে। আইনগত কোনো বাধা নেই। উপরন্তু থাকাই ভালো। এ রকম একটি কমিশন থাকার সুফল অনেক। সরকার, বিরোধী দল বা অন্যান্য আগ্রহী মহল অনেক বিষয় বিবেচনার জন্য কমিশনের কাছে পাঠাতে পারে। কমিশন তখন দলীয় চিন্তাভাবনার ঊর্ধ্বে উঠে সুচিন্তিত মত দিতে পারে।
প্রথম আলো উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের বিষয়ে আপনি জুডিশিয়াল কমিশনের ধারণা সমর্থন করেছিলেন। সেই কমিশন এখন আর নেই। তবে আপিল বিভাগের রায়ের নির্দেশনা আছে, কিন্তু তদুপরি বিতর্ক রয়ে গেছে।
আমীর-উল ইসলাম বিচারক নিয়োগে বিশ্বে এখন নানা মডেল রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো বার কাউন্সিলের সদস্য হওয়ার সময়ই বিকল্প বেছে নিতে বলা। আর তাহলে তাঁদের ওপর বার ও বেঞ্চ দীর্ঘ সময় ধরে নজর রাখতে পারবে। তখন তাঁদের ট্র্যাক রেকর্ড পরীক্ষা করার সুযোগ থাকবে। তাঁদের লেখালেখি, গবেষণা, দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের কাছে পরিষ্কার থাকবে। কিন্তু এখন ১০ জনের পদ খালি হলো, অমনি তা পূরণ করা হলো। এই যে ব্যবস্থা, তা চলতে পারে না। এ ধরনের নিয়োগ কমিশন দিয়ে করা হলেও যোগ্যতম লোক পওয়া দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রথম আলো অনেক দিন বিচারক নিয়োগে আমরা শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কথা বলিনি। কিন্তু এখন হাজার হাজার ছেলেমেয়ে গোল্ডেন ফাইভ নিয়ে বেরোচ্ছে। এখন কি আমরা মেধার দিকে জোর দিতে পারি না?
আমীর-উল ইসলাম আমার কাছে এ বিষয়টি অত বেশি প্রতিপাদ্য মনে হয় না। তার কারণ, মেধা পরীক্ষার ফলাফল নির্ধারণ করে। কিন্তু কারও বিচারিক মেজাজ কী হবে, মানবাধিকার, শ্রেণীবৈষম্য সম্পর্কে তাঁর সংবেদনশীলতা কী, সেটা বিচার্য।
প্রথম আলো সেটা যথার্থ। কিন্তু পরীক্ষার ফলাফলকে উপেক্ষা করারও তো যুক্তি নেই।
আমীর-উল ইসলাম কাজটাই বড়। গবেষণা থেকে কী বের করে আনছে, সেমিনারে কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারছে, মামলার পক্ষগুলোর সঙ্গে তার আচরণ কেমন, সততা, নিষ্ঠা—সেসব গুরুত্বপূর্ণ। তাই বলছি, পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতেও কোনো পূর্বানুমান
সংগত নয়।
No comments