হাইকোর্টের নির্দেশনার বাস্তবায়ন দেখতে চাই-পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু
পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুসংক্রান্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষিত থাকার পটভূমিতে হাইকোর্ট বিভাগ নতুন করে একটি রুল জারি করেছেন। এই খবরে যতটা স্বস্তি আমাদের পাওয়ার কথা, ততটা আমরা পাচ্ছি না। তবুও আমরা এই অগ্রগতিকে নীতিগত কারণে স্বাগত জানাই।
রাজধানীতে পুলিশি হেফাজতে তিন ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় সাত দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করতে স্বরাষ্ট্রসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই নির্দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এই তদন্ত কমিটিতে পুলিশের কোনো সদস্য থাকতে পারবেন না। ১৯৯৮ সালে ডিবির হেফাজতে শামীম রেজা রুবেল হত্যাকাণ্ড এবং পরে চট্টগ্রামের রাউজানে ১৮ বছরের তরুণী সীমা চৌধুরীকে ধর্ষণের পর খুনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) জনস্বার্থে মামলা করেছিল। বিচারপতি মো. হামিদুল হকের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ২০০৩ সালে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড রোধে এক যুগান্তকারী রায় দিয়েছিলেন। হাইকোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধে জোট সরকার লিভ টু আপিল করে। তবে আপিল বিভাগ এমন শর্তে লিভ মঞ্জুর করেন, যাতে ওই নির্দেশনাগুলো সচল থাকে। তাই গত মাসেও আমরা দেখলাম, হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ পুলিশকে ২০০৩ সালের নির্দেশনা মেনে চলতে বলেছেন।
হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা আছে, পুলিশ বা কারা হেফাজতে কেউ মারা গেলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে তা তদন্তের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু সেই নির্দেশ ধারাবাহিকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। আর এটা তদারকির মুখ্য দায়দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের, কিন্তু সেই তদারকির বিষয়টি আমরা জানতে পারি না। আমরা প্রশ্ন করতে চাই, ম্যাজিস্ট্রেটরা কেন নিষ্ক্রিয়? কে তাঁদের সক্রিয় করবে। আইনের স্বাভাবিক গতিকে সচল না করে হাইকোর্ট কেন রুল দিয়ে তা নিশ্চিত করতে চাইছেন। এটা সাময়িক প্রতিকার হলেও হতে পারে। কিন্তু হাইকোর্টকে অবশ্যই আইনের স্বাভাবিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
২৮ জুন থেকে ১ জুলাইয়ের মধ্যে বাবুল, মিজানুর ও মজিবরের পুলিশি হেফাজতে মারা যাওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে, বিদ্যমান আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশ কাজ করছে না। হাইকোর্ট ৫ জুলাই পুলিশি হেফাজতে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য ১১ জন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে এখন অধিকতর চৌকস ও নিখুঁত কোনো নির্দেশনা পাওয়ার প্রত্যাশা করছি। তবে পুলিশি হেফাজতে সাম্প্রতিক তিনটি মৃত্যুর ঘটনার ব্যাপারে আমরা দুটি বিষয় স্পষ্ট করে বলতে চাই। প্রথমত, পুলিশবিযুক্ত তদন্ত কমিটির দ্রুত তদন্ত আমরা দেখতে চাই। শুধু তদন্ত প্রতিবেদন নয়, সে অনুযায়ী দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। দ্বিতীয়ত, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও বিদ্যমান আইনের স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ হওয়ার যে সমস্যা আমাদের ওপর চেপে বসেছে, তা থেকে পরিত্রাণের উপায় খোঁজা। বিষয়টি জাতীয় সংসদ ও নাগরিকসমাজে বিশেষভাবে আলোচনার দাবি রাখে।
আদালতের নির্দেশনা ও প্রচলিত আইন অকার্যকর থাকার এ অবস্থাটি কোনো বিচ্ছিন্ন চিত্র নয়। জনপ্রশাসনের সর্বত্র অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ একটা সর্বগ্রাসী অচলাবস্থা ও বন্ধ্যাত্ব তৈরি করেছে। আমরা গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের কথা যতটা উৎসাহ নিয়ে বলি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ততটা বলি না। আইনের শাসনের স্বাভাবিক গতি ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে পড়ছে। এটা রোধ করার উপযুক্ত পথ খুঁজতে হবে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার উচ্চতর পর্যায়ে কঠিন ব্যাধি বাসা বেঁধেছে। সেটা দূর না করা পর্যন্ত উচ্চ আদালতের বিজ্ঞোচিত সিদ্ধান্তগুলো গতিহীন কিংবা ম্লান হতে বাধ্য।
হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা আছে, পুলিশ বা কারা হেফাজতে কেউ মারা গেলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে তা তদন্তের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু সেই নির্দেশ ধারাবাহিকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। আর এটা তদারকির মুখ্য দায়দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের, কিন্তু সেই তদারকির বিষয়টি আমরা জানতে পারি না। আমরা প্রশ্ন করতে চাই, ম্যাজিস্ট্রেটরা কেন নিষ্ক্রিয়? কে তাঁদের সক্রিয় করবে। আইনের স্বাভাবিক গতিকে সচল না করে হাইকোর্ট কেন রুল দিয়ে তা নিশ্চিত করতে চাইছেন। এটা সাময়িক প্রতিকার হলেও হতে পারে। কিন্তু হাইকোর্টকে অবশ্যই আইনের স্বাভাবিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
২৮ জুন থেকে ১ জুলাইয়ের মধ্যে বাবুল, মিজানুর ও মজিবরের পুলিশি হেফাজতে মারা যাওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে, বিদ্যমান আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশ কাজ করছে না। হাইকোর্ট ৫ জুলাই পুলিশি হেফাজতে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য ১১ জন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে এখন অধিকতর চৌকস ও নিখুঁত কোনো নির্দেশনা পাওয়ার প্রত্যাশা করছি। তবে পুলিশি হেফাজতে সাম্প্রতিক তিনটি মৃত্যুর ঘটনার ব্যাপারে আমরা দুটি বিষয় স্পষ্ট করে বলতে চাই। প্রথমত, পুলিশবিযুক্ত তদন্ত কমিটির দ্রুত তদন্ত আমরা দেখতে চাই। শুধু তদন্ত প্রতিবেদন নয়, সে অনুযায়ী দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। দ্বিতীয়ত, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও বিদ্যমান আইনের স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ হওয়ার যে সমস্যা আমাদের ওপর চেপে বসেছে, তা থেকে পরিত্রাণের উপায় খোঁজা। বিষয়টি জাতীয় সংসদ ও নাগরিকসমাজে বিশেষভাবে আলোচনার দাবি রাখে।
আদালতের নির্দেশনা ও প্রচলিত আইন অকার্যকর থাকার এ অবস্থাটি কোনো বিচ্ছিন্ন চিত্র নয়। জনপ্রশাসনের সর্বত্র অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ একটা সর্বগ্রাসী অচলাবস্থা ও বন্ধ্যাত্ব তৈরি করেছে। আমরা গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের কথা যতটা উৎসাহ নিয়ে বলি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ততটা বলি না। আইনের শাসনের স্বাভাবিক গতি ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে পড়ছে। এটা রোধ করার উপযুক্ত পথ খুঁজতে হবে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার উচ্চতর পর্যায়ে কঠিন ব্যাধি বাসা বেঁধেছে। সেটা দূর না করা পর্যন্ত উচ্চ আদালতের বিজ্ঞোচিত সিদ্ধান্তগুলো গতিহীন কিংবা ম্লান হতে বাধ্য।
No comments