অভিমত ভিন্নমত
এ সরকারকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কথাবার্তা চলছে প্রায় দেড় বছর ধরে। কিন্তু কাজ যে প্রত্যাশিত গতিতে এগোচ্ছে তা বলা যাবে না। তিন মাসেরও বেশি সময় আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে, কিন্তু সেই ট্রাইব্যুনালে প্রয়োজনীয় লোকবল দেওয়া হয়নি;
অন্যান্য লজিস্টিক সমর্থনেরও অভাব রয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে অনেক বার বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনালে পর্যাপ্তসংখ্যক আইনজীবী ও তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে, আসল কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা উচিত। কিন্তু সরকার এখনো তা করেনি। ট্রাইব্যুনালের জন্য একটি স্থান বরাদ্দ করা হয়েছে; কিন্তু সেখানে আছে আইন কমিশনের দপ্তর, সেটি সরানো হচ্ছে না। ফলে ট্রাইব্যুনালের যে কজন আইনজীবী ও তদন্ত কর্মকর্তা আছেন, তাঁরা বসার জায়গা পাচ্ছেন না। খবরে প্রকাশ, ট্রাইব্যুনালের জন্য বরাদ্দ অর্থও ছাড় করা হয়নি। আমরা সংবাদমাধ্যমে এই ধরনের খরব পেয়ে হতাশা বোধ করি। সরকার যদি ট্রাইব্যুনালকে যথাশিগগির সক্রিয় করার পরিবর্তে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে বিরোধী দলের সমর্থনকে বড় করে দেখাতে চায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়াকে বানচালের ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে বিরোধী দলকে দায়ী করতে থাকে, তাহলে হতাশ হওয়া ছাড়া কী উপায় থাকে?
আমরা সংবাদমাধ্যমে জানতে পাচ্ছি, যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বাধা দেওয়ার লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী দেশে-বিদেশে সুপরিকল্পিতভাবে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। জামায়াত ও তার বিদেশি বন্ধুরা, যেমন পাকিস্তান ও সৌদি আরব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে, এটা নতুন কিছু নয়। তবে আশার কথা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষেই অধিকতর জনমত রয়েছে। একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র-এর উদ্যোগে ২০ জুন ঢাকায় যে ত্রি-মহাদেশীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল, সেখানে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার ১১টি দেশ থেকে ৪০ জন প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক অংশ নিয়েছিলেন। এই তথ্য থেকে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থনের একটা চিত্র পাওয়া যায়। দেশের ভেতরে জনমতের কথা তো বলাই বাহুল্য। আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার করেছিল, তারা নির্বাচিত হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ইস্যু বলেই তারা এমন অঙ্গীকার করেছিল এবং আমার ধারণা, এ কারণে তারা অনেক ভোট পেয়েছে। সুতরাং দেশবাসী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রস্তুত। দেশের অভ্যন্তরে এ বিষয়ে কোনো বাধাবিঘ্ন নেই। আন্তর্জাতিক পরিসরে জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য যেসব তৎপরতা চালাচ্ছে, সেগুলো এ দেশে হালে পানি পাবে না।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের নির্বাচিত সরকারের দিক থেকেই এ বিষয়ে পরিপূর্ণ বা খুব জোরালো উদ্যোগের ঘাটতি লক্ষ করা যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে কয়েক মাস আগে বলা হয়েছিল, যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে বিদেশি চাপ আছে। এখন বলা হচ্ছে, বিরোধী দল বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এসব কথাবার্তা কিন্তু নানা সংশয় সৃষ্টি করে। আমরা দেখেছি, আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সুযোগ এর আগেও একবার পেয়েছিল, কিন্তু তা কাজে লাগায়নি। জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে দেশজুড়ে যে প্রবল আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলনের একটা সুফল হিসেবে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল। তখনই আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়া শুরু করতে পারত। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, সেটা তারা করেনি। বরং শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের সেই প্রথম মেয়াদের পাঁচ বছরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি চাপা পড়ে গিয়েছিল। এবারও অনেকে বলছেন, আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তরিক নয়। দলটি এই ইস্যু হিসেবে জিইয়ে রাখতে চায় ভবিষ্যতে নির্বাচনী রাজনীতির ফায়দা নিতে। কিন্তু এমন অভিযোগের প্রতি সায় দেওয়া কঠিন। কারণ আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোন দল আছে যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে? বিএনপি? অসম্ভব। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা দূরে থাক, বিচার যাতে না হয় সেই চেষ্টাই করবে। কারণ জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে তাদের মিলটা আদর্শগত; তারা জামায়াতে রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক। বিএনপিই তো জামায়াতে ইসলামীকে এদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছে। শুধু তাই নয়, বিএনপি এমনকি সরকার পরিচালনায়ও অংশীদার করেছে যুদ্ধাপরাধীদের এই দলটিকে।
তাই আওয়ামী লীগ সরকারকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে হবে। এই কর্তব্য থেকে তাদের পিছপা হওয়ার কোনো রাস্তা খোলা নেই।
জামিল আহমেদ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
২.
যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে নানা জনে নানা সংজ্ঞা, নানা প্যাঁচের আইন, আইনের নানা প্যাঁচ ইত্যাদি দেখাচ্ছেন, যেন বিচারটা বিলম্বিত হতে হতে আর না হয়। কিন্তু আমরা নাগরিকেরা মনে করি, এ বিচার নিয়ে কোনো সংজ্ঞা কিংবা আইনের কোনো প্যাঁচের দরকার নেই। বিএনপি নানা রকম বাহানা করছে কারণ, তাদের দলেই বিভিন্ন পাস করা আসনে স্বীকৃত নামজাদা যুদ্ধাপরাধী আছেন, তাঁদের রক্ষা করা। কিন্তু এটা বিএনপির সমর্থক তরুণ প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিচারটা সম্পন্ন করার জন্য যে ঝুঁকি নিয়েছেন, আমরা চাই তিনি তাতে সফল হন। অনেকে বলছে, স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল কেন? প্রচলিত ফৌজদারি আইন আছে, তাতেই বিচার হোক। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে কি একজন-দুজন মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ হয়েছে? না। অপরাধ করা হয়েছে লাখ লাখ বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে। যুদ্ধে সামরিক সদস্যরা একে অপরকে হত্যা করে। এই হত্যা উভয়পক্ষ স্বীকার করেই যুদ্ধে নামে, কিন্তু যখন বেসামরিক নিরপরাধ লোককে লাখে লাখে মেরে ফেলা হয়, নির্যাতন করা হয়, তখন এই অপরাধের জন্য প্রচলিত আইনে বিচার বা কোনো প্রকার সহূদয় বিবেচনার প্রশ্ন অবান্তর।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর মতাদর্শে চালিত কোনো দল স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষে অবস্থান নিতে পারে না। সাময়িক প্রয়োজনে কিছু চিহ্নিত রাজাকারকে দলে ভেড়ানো হয়েছে ঠিকই, জামায়াতের সঙ্গে জোট বাঁধা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখন সময় এসেছে তাদের ঝেড়ে ফেলে নিজেদের শুদ্ধ করার। বিএনপি এ সুযোগটা নিতে পারে। নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তা না হলে তরুণ প্রজন্ম, অর্থাৎ আমরা যারা জাতীয়তাবাদের সমর্থক এবং বাংলাদেশকে ভালোবাসি, খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মুখে দলভক্তি দেখানো বিপথগামিতার বাণী আমরা শুনতে চাই না। তাঁর কথায় দলের যে অবস্থান স্পষ্ট হয়, তা এ দলের ভবিষ্যতের জন্য খুবই মারাত্মক। রাজাকারদের পাশ ছাড়ুন। এই একটা ইস্যুতে সরকারের পাশে আন্তরিকভাবে দাঁড়ান। দেশের মানুষ, যারা আপনাদেরই ভোটব্যাংক, তারা বিএনপির সদিচ্ছা দেখতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিত এখন জাতির উদ্দেশে রেডিও-টেলিভিশনে একটা ভাষণ দেওয়া, যাতে তিনি শহীদ জিয়ার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে বিএনপিকে পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাবেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারটায় তিনি জাতীয়তাবাদী দল এবং দেশের সাধারণ সচেতন মানুষকে সঙ্গে নেওয়ার আবেদন জানাবেন।
সরকার এই ইস্যুতে একটা গণমতামত যাচাইয়ের ব্যবস্থা নিতে পারে। কাগুজে নাম ‘যুদ্ধাপরাধের/মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার’ থাকুক, মানুষ জানুক, এটা আসলে ‘রাজাকার-আলবদর-আলশামসের বিচার’, নিদেনপক্ষে রাজাকারদের বিচার। গণমানুষের রায় নিয়ে এগোলে ক্ষমতা বদল হলেও বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না।
আওয়ামী লীগের কোথাও কোনো প্রমাণিত-পরিচিত-স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধী থাকলে দল থেকে সাহস করে তাদের বের করে দিন। ঢোল পিটিয়ে কাজটা করুণ, যেন সৎসাহস কী, সেটা মানুষ দেখে। অন্য দেশের সামরিক বাহিনী তাদের রাষ্ট্রের আদেশে এসে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, তাদের বিচার অন্য ব্যাপার। সে জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল দরকার। কিন্তু নিজ দেশের যে মানুষেরা এই অপরাধের হোতা, তাদের বিচার এ দেশে দ্রুততম সময়ে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমেই হোক—এই আমাদের প্রত্যাশা।
ওসমান মোল্লা, ঢাকা।
বিশ্বকাপের উচ্ছ্বাস, আমাদের লাভ-ক্ষতি
দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ ফুটবল চলছে। এই আনন্দে বাংলাদেশের ইমারতের উঁচু ছাদ, গাছের উঁচু ডাল, মুঠোফোনের টাওয়ার, বিপণিবিতান, শহরের অলিগলি; এমনকি গ্রামগঞ্জের হাটবাজারের দোকানে দোকানে বাঁশ গেড়ে ঝোলানো হয়েছে বিভিন্ন দেশের পতাকা। তরুণ-তরুণীরা পরছে প্রিয় দলের বা দেশের ফুটবল দলের জার্সি। সর্বত্র চলছে ফুটবল নিয়ে কথা। রাজনৈতিক নেতারাও এ সুযোগে ফুটবলপাগল জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্য শহরে-উপশহরে জুড়ে দিয়েছেন বড় পর্দার টিভি।
ইদানীং খেলা শেষে গভীর রাতে শহরে বা গ্রামে আনন্দমিছিল বের হচ্ছে। বয়স্ক, শিশু, রোগী বা যাঁরা খেলে দেখেন না, তাঁদের ঘুমের ব্যাঘাত যে হচ্ছে, এটা বিবেচনা করা হচ্ছে না। খেলা চলার সময় লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে অনেক জায়গায় ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে সম্পদের ক্ষতি হয়েছে অনেক। আমাদের দেশের ফুটবল দল বিশ্বকাপে খেলছে না। বিশ্বকাপ ফুটবলকে কেন্দ্র করে আমাদের নিজেদের পতাকা ঝোলানোর কোনো সুযোগ নেই। অন্য দেশের পতাকা নিয়ে আমাদের উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়ি ভালো দেখায় না।
ভবিষ্যতে ফুটবল বা ক্রিকেটের বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগেই অন্য দেশের পতাকা ঝোলানোর ব্যাপারে একটি সরকারি নিতিমালা করা উচিত। আর বিদেশি ফুটবল দলগুলোকে নিয়ে উন্মাদনায় মেতে ওঠার চেয়ে বিশ্বকাপে খেলার মতো যোগ্য ফুটবল দল আমরা নিজেরা কীভাবে গড়ে তুলতে পারি, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা ভালো।
মো. হাচানুজ্জামান সবুজ, ছাত্র, ফরিদপুর।
আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন
দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়েছিল দুর্নীতি দমন করার উদ্দেশ্যে। বলা হয়েছিল, দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দুদককে পরিণত করা হয়েছিল দলীয় প্রতিষ্ঠানে; দুদককে ব্যবহার করা হয়েছিল দুর্নীতি দমনে নয়, বরং দুর্নীতি বিস্তারে। মহাজোট সরকারের অঙ্গীকার ছিল, একটি স্বাধীন ও কার্যকর দুর্নীতি দমন কমিশন করা হবে; যা দুর্নীতি দমনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কিন্ত সরকার দুদককে ক্ষমতাহীন করার উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রিসভা দুর্নীতি দমন কমিশনের সংশোধিত আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে। এই খসড়াটি প্রণীত হয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি আন্তমন্ত্রণালয়ের কমিটির সুপারিশের আলোকে। এ প্রসঙ্গে দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেছেন, কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে প্রতিষ্ঠানটি নখদন্তহীন বাঘে পরিণত হবে। জনাব গোলাম রহমানের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়, দুদকের প্রকৃত অবস্থা কী হবে।
সম্প্রতি সরকারের হিসাবসম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের মতো দুদকের প্রয়োজন নেই। তাহলে তিনি কেমন দুর্নীতি দমন কমিশন চান। তিনি কি চান দুর্নীতি দমন কমিশন একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হোক? অবশ্য তিনি এবং তাঁরা কেমন দুর্নীতি দমন কমিশন চান, তার একটা রূপরেখা ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে। যদিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুদকের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়ে গেছে, তবু এ কথা স্বীকার করতে হবে যে তখন দুদক অনেক প্রশংসামূলক কাজও করেছে। জনাব মহীউদ্দীন খান আরও বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুদক বিনা দোষে রাজনীতিবিদদের হয়রানি করেছে। সব রাজনীতিবিদ যদি ধোয়া তুলসী পাতা হন, তাহলে দুর্নীতির জন্য কারা দায়ী। প্রায় সব মামলাই প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তাঁরা যদি নির্দোষ হন, তবে কেন তাঁরা বিচারের মুখোমুখি দাঁড়ালেন না এবং আইনের মাধ্যমে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণিত করলেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের জন্য বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একে অন্যকে দায়ী করছে। তাদের কথা আংশিক সত্যি। পুরোপুরি সত্যি হলো, দুটি দলই সমানভাবে দায়ী।
বর্তমান সরকার এসেছিল দিনবদলের স্বপ্ন দেখিয়ে। দেশের মানুষও স্বপ্ন দেখেছিল পরিবর্তনের। কিন্তু বছর যেতে না-যেতে সেই পুরোনো রাজনীতি, পুরোনো রূপ। দেশের মানুষ চায়, এসবের অবসান হোক এবং সরকার তার অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে কাজ করুক। আর সরকারের লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রথমে দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করতে হবে এবং সে জন্য চাই একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশন। এখন দেখার বিষয়, সরকার তার লক্ষ্য পূরণে কতটা সফল হয়।
সৌরভ আদনান
Sourabh.july1@gmail.com
ধনী হলেই দাম্ভিক হতে নেই
গত ১৩ জুন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান খানের সঙ্গে তুমুল তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন আমাদের দেশের বিশিষ্ট ভূমি উন্নয়ন ব্যবসায়ীরা। ওয়াশিংটন তথা যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাঙালিরা টিভিতে এ সংবাদ দেখে হতবাক হয়েছে। ব্যবসায়ীদের এমন আচরণ অশোভনীয়। পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদে জানা যায়, রিহ্যাব নেতাদের সঙ্গেও রাজউকের তর্ক-বিতর্ক হয়। বিতর্কের একপর্যায়ে একজন ধনাঢ্য আবাসন ব্যবসায়ী হাত উঁচিয়ে কথা বলেন, প্রতিমন্ত্রী এত বড় দুঃসাহস কোথায় পায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসীরা মনে করেন বাগিবতণ্ডায় না গিয়ে ভূমি উন্নয়ন ব্যবসায়ীরা ড্যাপ নিয়ে নিজেদের মতামত, সুপারিশ পেশ করতে পারতেন। ধনী হলেই অর্থের জোরে এমন দাম্ভিক আচরণ করা উচিত নয়।
অগাধ সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। আমরা সবাই মিলে যদি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকা পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলি, তাহলে সকলেরই লাভ। সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে আগামী প্রজন্ম, আমাদের সন্তান-সন্ততিরা। সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর পরিবেশ একটি দেশের চেহারাকে বদলে দেয়। সরকারের একার পক্ষে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সবার সহযোগিতা দরকার। বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরা যদি দেশের পরিবেশ রক্ষার্থে সীমাহীন অর্থলিপ্সা ত্যাগ করেন, তাহলে মঙ্গল হবে।
হারুন চৌধুরী
ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র।
Chowdhury.harun@yahoo.com
বিএনপির হরতাল
বিএনপি গত ২৭ জুন মহাজোট সরকারের ‘দুর্নীতি-নির্যাতন-অপকর্মের’ বিরুদ্ধে সারা দেশে হরতাল পালন করেছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা হরতালের আগে যেসব উসকানিমূলক-প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য দিয়েছেন, তা বাংলাদেশে দিনবদলের রাজনীতিতে সহিষ্ণুতার সংস্কৃতির বিকাশকে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করবে। এ ধরনের বক্তব্য দুটি সংগঠনের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি করবে। হরতাল পালন বা প্রত্যাখ্যানের দায়িত্ব জনগণের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। সরকার বা সরকারি দলের এতে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। তারাও বিরোধী দলে থাকার সময় একইভাবে হরতাল করেছিল। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর সবচেয়ে স্বাভাবিক পন্থা হচ্ছে হরতাল। হরতালের মতো কর্মসূচি বন্ধ করার চেষ্টা করা মানে গণতান্ত্রিক চর্চায় বাধার সৃষ্টি করা। হরতালে জনজীবনকে ক্ষয়ক্ষতি থেকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করার সময় একজন বরেণ্য রাজনীতিবিদের বাসায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাঙচুর-লুটপাট অত্যন্ত নিন্দনীয়। কার অঙ্গুলি হেলনে, কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল, তা সরকারকে জাতির সামনে স্পষ্ট করতে হবে। হরতালকে কেন্দ্র করে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, একজন প্রকৌশলী মৃত্যুপথযাত্রী, একজন গাড়িচালককে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়ার এ পরীক্ষায় সরকার পাস করতে পারেনি। সহিংসতা নিরসনে সরকারের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। বিরোধী দলও এই নৃশংস ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়কেই জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। নতুন দিনের আগমনী বার্তা দিয়ে ডিজিটাল সরকার দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি ঘাটতি, কৃষকের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-হত্যা, নদী দখল, বিদ্যুৎ-গ্যাস-কয়লাক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে বিতর্কিত চুক্তি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের দখলদারি, আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি, ক্রসফায়ার, গুপ্তহত্যা, ভারতের সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তি, রেন্টাল বিদ্যুৎ-বিতর্ক, যুদ্ধাপরাধীর বিচার-প্রক্রিয়ায় চরম স্থবিরতা, টিপাইমুখ বাঁধ, বন্দর লিজ-বিতর্ক, সরকারবিরোধী সংগঠনগুলোর ওপর হামলা, নারী নির্যাতন, দুদক, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের কারণে জনগণ ক্ষুব্ধ।
এই পুঞ্জীভূত ক্ষোভ যেকোনো সময় বিক্ষোভে ফেটে পড়তে পারে। কিন্তু বিএনপির আহূত হরতালে সাধারণ মানুষ আশা সঞ্চার করার মতো কিছুই দেখেনি। কারণ বিএনপিও ক্ষমতায় থাকাকালে একই ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। মহাজোট সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে বিএনপি কোনো সত্যিকার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। সরকারকে ব্যর্থ হিসেবে আখ্যা দিয়ে কোনো সমাধানের পথ তারা জাতিকে দেখাতে পারেনি। তাই সাম্প্রতিক হরতাল জনগণের কাছে অর্থবহ হয়ে ওঠেনি।
রহমান শিহান, শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষা আর পরীক্ষায় পাস করা
গত ১ জুন সৈয়দ আবুল মকসুদের ‘শিক্ষার তিন অবস্থা’ শিরোনামে লেখাটির অধিকাংশ যুক্তির সঙ্গেই আমি একমত। তবে পরীক্ষায় পাস-ফেলের প্রসঙ্গে তিনি যা বলেছেন, সে সম্পর্কে কিছু বলব। ১৮৫৭ সালের ম্যাট্রিক পরীক্ষায় এক-চতুর্থাংশ পরীক্ষার্থীও পাস করেনি, ১৮৫৮ সালের বিএ পরীক্ষায় ১৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র দুজন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও যদুনাথ বসু) পাস করেন। একটা সময় ছিল যখন পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে শিক্ষক বা পরীক্ষক কত কঠোর বা কৃপণ হতে পারেন, তার মধ্যে ছিল মনে হয় যত কৃতিত্ব। ১০ নম্বরের কোনো প্রশ্নের উত্তরের জন্য যত ভালোই লিখুক, দেখা যেত ৬ বা সর্বোচ্চ ৭। আমরা ছাত্রাবস্থায় শিক্ষকদের জিজ্ঞাসা করতাম, স্যার, কীভাবে বা কতটুকু লিখলে পুরো নম্বর দেবেন? উত্তরে শিক্ষকেরা বলতেন, ‘জানি না, আসলে পুরো নম্বর আমরাও আমাদের শিক্ষকের কাছ থেকে পাইনি, তাই আমরাও আমাদের ছাত্রদের দিই না।’
বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। এখন পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের একটা অংশ থাকে নৈর্ব্যক্তিক, যেখানে পরীক্ষার্থী শতভাগ নম্বর পেতে পারে। এর প্রভাব পরীক্ষার রচনামূলক অংশের ওপরও হয়তো কিছুটা পড়ছে। আজ পরীক্ষকেরা হয়তো উত্তরপত্র মূল্যায়নের আগে প্রতিটি প্রশ্নের একটা মোটামুটি স্ট্যান্ডার্ড নমুনা উত্তর ঠিক করে নিচ্ছেন। আগে পরীক্ষকেরা কঠোরতার অনুশীলন করায় পাসের হার খুব কম হতো; এখন পরীক্ষকেরা উদারতার অনুশীলন করায় পাসের হার বেশি হয়ে যাচ্ছে। আসলে কোনো ব্যবস্থাই শতভাগ ত্রুটিমুক্ত অথবা প্রশ্নাতীত নয়।
আমরা যতই বলি, শিক্ষার উদ্দেশ্য মানুষ তৈরি করা। আসলে আমরা মানুষ হতে চাই না। আমরা হতে চাই চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, ব্যাংকার প্রভৃতি মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জনকারী পেশাজীবী। সেখানে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর অথবা মুন্সী মেহেরুল্লাহর মতো মানুষদের স্থান কোথায়? যে শিক্ষার কোনো নগদ বাজারদর নেই, সে শিক্ষা কে নেবে?
পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার উদ্দেশ্য না হতে পারে, তবে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, সরকার, জাতি, মিষ্টির দোকানদার—সবার একান্ত কাম্য।
অসীম কুমার ভৌমিক, শিক্ষক।
ashimkumar_67@yahoo.com
টাকা ছিদ্র করা বন্ধ হোক
রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে কাগুজে টাকার নোট ‘গোনা-বাছার সুবিধার জন্য’ তোড়া বানাতে গিয়ে গজালের সাহায্যে ফুটো করে, তাতে মোটা সুতা ঢুকিয়ে দু-তিন দিক থেকে বেঁধে, ওপরের ও নিচের নোটের ওপর গাম ও কাগজ লাগিয়ে, সিল-স্বাক্ষর দিয়ে, নোটের সংখ্যা ইত্যাদি লিখে গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। সুতায় বাঁধা নোটগুলো যখন গ্রাহকদের হাতে যায়, তখন তারা তা খোলে এবং খরচ করে। বিভিন্ন হাত ঘুরে সেসব নোট যখন আবার ব্যাংকে জমা হয়, তখন ব্যাংকের লোকেরা তাদের ‘গোনা-বাছার’ সুবিধার্থে আবারও একইভাবে গজাল ও সুতার সাহায্যে সেগুলোকে তোড়া আকারে বাঁধে। এভাবে নোটগুলোর ছিদ্র ক্রমশ বড় হতে থাকে, ছিদ্রের ধার দিয়ে ফাটল শুরু হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই নোটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পৃথিবীর কোনো দেশে কাগুজে নোট এভাবে ছিদ্র করে সুতা বেঁধে তোড়া বানানো হয় না; এমনকি পার্শ্ববতী ভারত, নেপাল বা ভুটানেও নয়।
কিন্তু আবার দেখুন, এ দেশের যেসব ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্র যেমন ডলার, ইউরো, পাউন্ড, রিয়াল, দিনার ইত্যাদি লেনদেন হয়, তারা কিন্তু ওই সব মুদ্রার কাগুজে নোটগুলো ছিদ্র করে না। ছিদ্র করলে হয়তো ডলার-পাউন্ড অচল বলে গণ্য হবে। তাহলে টাকার কাগুজে নোটগুলো কেন ছিদ্র করা হয়? এ প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? ছিদ্র করার ফলে নোটগুলোর স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল অনেক কমে যায়। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি ঘন ঘন নতুন নোট ছাপতে হয়। এতে রাষ্ট্রীয় অর্থের অনেক অপচয় হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারের অবশ্যই এ বিষয়ে কিছু করা উচিত। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া উচিত, কোনোভাবেই যেন কাগুজে মুদ্রা ছিদ্র করা না হয়। সারা দুনিয়ার ব্যাংকগুলো যেভাবে কাগুজে মুদ্রার তোড়া বানায়, আমাদেরও তাই করা উচিত।
সুরাইয়া ঝুমু, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
surayajhumu@yahoo.com
লিখুন, পাঠিয়ে দিন
প্রিয় পাঠক, প্রথম আলোয় প্রকাশিত সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, প্রতিবেদন ইত্যাদি নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া/ভিন্নমত আমাদের লিখে পাঠান। সমসাময়িক অন্যান্য বিষয়েও আপনার অভিমত, চিন্তা, বিশ্লেষণ সর্বোচ্চ ৪০০ শব্দের মধ্যে লিখে পাঠিয়ে দিন ডাকযোগে:
অভিমত, সম্পাদকীয় বিভাগ, প্রথম আলো, সিএ ভবন,
১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
কারওয়ান বাজার, ঢাকা।
ই-মেইলে (এমএস ওয়ার্ড অ্যাটাচমেন্ট):
obhimot@prothom-alo.info
আমরা সংবাদমাধ্যমে জানতে পাচ্ছি, যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বাধা দেওয়ার লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী দেশে-বিদেশে সুপরিকল্পিতভাবে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। জামায়াত ও তার বিদেশি বন্ধুরা, যেমন পাকিস্তান ও সৌদি আরব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে, এটা নতুন কিছু নয়। তবে আশার কথা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষেই অধিকতর জনমত রয়েছে। একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র-এর উদ্যোগে ২০ জুন ঢাকায় যে ত্রি-মহাদেশীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল, সেখানে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার ১১টি দেশ থেকে ৪০ জন প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক অংশ নিয়েছিলেন। এই তথ্য থেকে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থনের একটা চিত্র পাওয়া যায়। দেশের ভেতরে জনমতের কথা তো বলাই বাহুল্য। আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার করেছিল, তারা নির্বাচিত হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ইস্যু বলেই তারা এমন অঙ্গীকার করেছিল এবং আমার ধারণা, এ কারণে তারা অনেক ভোট পেয়েছে। সুতরাং দেশবাসী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য প্রস্তুত। দেশের অভ্যন্তরে এ বিষয়ে কোনো বাধাবিঘ্ন নেই। আন্তর্জাতিক পরিসরে জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য যেসব তৎপরতা চালাচ্ছে, সেগুলো এ দেশে হালে পানি পাবে না।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের নির্বাচিত সরকারের দিক থেকেই এ বিষয়ে পরিপূর্ণ বা খুব জোরালো উদ্যোগের ঘাটতি লক্ষ করা যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে কয়েক মাস আগে বলা হয়েছিল, যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে বিদেশি চাপ আছে। এখন বলা হচ্ছে, বিরোধী দল বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এসব কথাবার্তা কিন্তু নানা সংশয় সৃষ্টি করে। আমরা দেখেছি, আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সুযোগ এর আগেও একবার পেয়েছিল, কিন্তু তা কাজে লাগায়নি। জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে দেশজুড়ে যে প্রবল আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলনের একটা সুফল হিসেবে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল। তখনই আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়া শুরু করতে পারত। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, সেটা তারা করেনি। বরং শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের সেই প্রথম মেয়াদের পাঁচ বছরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি চাপা পড়ে গিয়েছিল। এবারও অনেকে বলছেন, আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তরিক নয়। দলটি এই ইস্যু হিসেবে জিইয়ে রাখতে চায় ভবিষ্যতে নির্বাচনী রাজনীতির ফায়দা নিতে। কিন্তু এমন অভিযোগের প্রতি সায় দেওয়া কঠিন। কারণ আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোন দল আছে যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে? বিএনপি? অসম্ভব। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা দূরে থাক, বিচার যাতে না হয় সেই চেষ্টাই করবে। কারণ জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে তাদের মিলটা আদর্শগত; তারা জামায়াতে রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক। বিএনপিই তো জামায়াতে ইসলামীকে এদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছে। শুধু তাই নয়, বিএনপি এমনকি সরকার পরিচালনায়ও অংশীদার করেছে যুদ্ধাপরাধীদের এই দলটিকে।
তাই আওয়ামী লীগ সরকারকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে হবে। এই কর্তব্য থেকে তাদের পিছপা হওয়ার কোনো রাস্তা খোলা নেই।
জামিল আহমেদ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
২.
যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে নানা জনে নানা সংজ্ঞা, নানা প্যাঁচের আইন, আইনের নানা প্যাঁচ ইত্যাদি দেখাচ্ছেন, যেন বিচারটা বিলম্বিত হতে হতে আর না হয়। কিন্তু আমরা নাগরিকেরা মনে করি, এ বিচার নিয়ে কোনো সংজ্ঞা কিংবা আইনের কোনো প্যাঁচের দরকার নেই। বিএনপি নানা রকম বাহানা করছে কারণ, তাদের দলেই বিভিন্ন পাস করা আসনে স্বীকৃত নামজাদা যুদ্ধাপরাধী আছেন, তাঁদের রক্ষা করা। কিন্তু এটা বিএনপির সমর্থক তরুণ প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিচারটা সম্পন্ন করার জন্য যে ঝুঁকি নিয়েছেন, আমরা চাই তিনি তাতে সফল হন। অনেকে বলছে, স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল কেন? প্রচলিত ফৌজদারি আইন আছে, তাতেই বিচার হোক। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে কি একজন-দুজন মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ হয়েছে? না। অপরাধ করা হয়েছে লাখ লাখ বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে। যুদ্ধে সামরিক সদস্যরা একে অপরকে হত্যা করে। এই হত্যা উভয়পক্ষ স্বীকার করেই যুদ্ধে নামে, কিন্তু যখন বেসামরিক নিরপরাধ লোককে লাখে লাখে মেরে ফেলা হয়, নির্যাতন করা হয়, তখন এই অপরাধের জন্য প্রচলিত আইনে বিচার বা কোনো প্রকার সহূদয় বিবেচনার প্রশ্ন অবান্তর।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর মতাদর্শে চালিত কোনো দল স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষে অবস্থান নিতে পারে না। সাময়িক প্রয়োজনে কিছু চিহ্নিত রাজাকারকে দলে ভেড়ানো হয়েছে ঠিকই, জামায়াতের সঙ্গে জোট বাঁধা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখন সময় এসেছে তাদের ঝেড়ে ফেলে নিজেদের শুদ্ধ করার। বিএনপি এ সুযোগটা নিতে পারে। নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তা না হলে তরুণ প্রজন্ম, অর্থাৎ আমরা যারা জাতীয়তাবাদের সমর্থক এবং বাংলাদেশকে ভালোবাসি, খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মুখে দলভক্তি দেখানো বিপথগামিতার বাণী আমরা শুনতে চাই না। তাঁর কথায় দলের যে অবস্থান স্পষ্ট হয়, তা এ দলের ভবিষ্যতের জন্য খুবই মারাত্মক। রাজাকারদের পাশ ছাড়ুন। এই একটা ইস্যুতে সরকারের পাশে আন্তরিকভাবে দাঁড়ান। দেশের মানুষ, যারা আপনাদেরই ভোটব্যাংক, তারা বিএনপির সদিচ্ছা দেখতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিত এখন জাতির উদ্দেশে রেডিও-টেলিভিশনে একটা ভাষণ দেওয়া, যাতে তিনি শহীদ জিয়ার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে বিএনপিকে পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাবেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারটায় তিনি জাতীয়তাবাদী দল এবং দেশের সাধারণ সচেতন মানুষকে সঙ্গে নেওয়ার আবেদন জানাবেন।
সরকার এই ইস্যুতে একটা গণমতামত যাচাইয়ের ব্যবস্থা নিতে পারে। কাগুজে নাম ‘যুদ্ধাপরাধের/মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার’ থাকুক, মানুষ জানুক, এটা আসলে ‘রাজাকার-আলবদর-আলশামসের বিচার’, নিদেনপক্ষে রাজাকারদের বিচার। গণমানুষের রায় নিয়ে এগোলে ক্ষমতা বদল হলেও বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না।
আওয়ামী লীগের কোথাও কোনো প্রমাণিত-পরিচিত-স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধী থাকলে দল থেকে সাহস করে তাদের বের করে দিন। ঢোল পিটিয়ে কাজটা করুণ, যেন সৎসাহস কী, সেটা মানুষ দেখে। অন্য দেশের সামরিক বাহিনী তাদের রাষ্ট্রের আদেশে এসে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, তাদের বিচার অন্য ব্যাপার। সে জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল দরকার। কিন্তু নিজ দেশের যে মানুষেরা এই অপরাধের হোতা, তাদের বিচার এ দেশে দ্রুততম সময়ে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমেই হোক—এই আমাদের প্রত্যাশা।
ওসমান মোল্লা, ঢাকা।
বিশ্বকাপের উচ্ছ্বাস, আমাদের লাভ-ক্ষতি
দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ ফুটবল চলছে। এই আনন্দে বাংলাদেশের ইমারতের উঁচু ছাদ, গাছের উঁচু ডাল, মুঠোফোনের টাওয়ার, বিপণিবিতান, শহরের অলিগলি; এমনকি গ্রামগঞ্জের হাটবাজারের দোকানে দোকানে বাঁশ গেড়ে ঝোলানো হয়েছে বিভিন্ন দেশের পতাকা। তরুণ-তরুণীরা পরছে প্রিয় দলের বা দেশের ফুটবল দলের জার্সি। সর্বত্র চলছে ফুটবল নিয়ে কথা। রাজনৈতিক নেতারাও এ সুযোগে ফুটবলপাগল জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্য শহরে-উপশহরে জুড়ে দিয়েছেন বড় পর্দার টিভি।
ইদানীং খেলা শেষে গভীর রাতে শহরে বা গ্রামে আনন্দমিছিল বের হচ্ছে। বয়স্ক, শিশু, রোগী বা যাঁরা খেলে দেখেন না, তাঁদের ঘুমের ব্যাঘাত যে হচ্ছে, এটা বিবেচনা করা হচ্ছে না। খেলা চলার সময় লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে অনেক জায়গায় ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে সম্পদের ক্ষতি হয়েছে অনেক। আমাদের দেশের ফুটবল দল বিশ্বকাপে খেলছে না। বিশ্বকাপ ফুটবলকে কেন্দ্র করে আমাদের নিজেদের পতাকা ঝোলানোর কোনো সুযোগ নেই। অন্য দেশের পতাকা নিয়ে আমাদের উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়ি ভালো দেখায় না।
ভবিষ্যতে ফুটবল বা ক্রিকেটের বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগেই অন্য দেশের পতাকা ঝোলানোর ব্যাপারে একটি সরকারি নিতিমালা করা উচিত। আর বিদেশি ফুটবল দলগুলোকে নিয়ে উন্মাদনায় মেতে ওঠার চেয়ে বিশ্বকাপে খেলার মতো যোগ্য ফুটবল দল আমরা নিজেরা কীভাবে গড়ে তুলতে পারি, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা ভালো।
মো. হাচানুজ্জামান সবুজ, ছাত্র, ফরিদপুর।
আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন
দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হয়েছিল দুর্নীতি দমন করার উদ্দেশ্যে। বলা হয়েছিল, দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দুদককে পরিণত করা হয়েছিল দলীয় প্রতিষ্ঠানে; দুদককে ব্যবহার করা হয়েছিল দুর্নীতি দমনে নয়, বরং দুর্নীতি বিস্তারে। মহাজোট সরকারের অঙ্গীকার ছিল, একটি স্বাধীন ও কার্যকর দুর্নীতি দমন কমিশন করা হবে; যা দুর্নীতি দমনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কিন্ত সরকার দুদককে ক্ষমতাহীন করার উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রিসভা দুর্নীতি দমন কমিশনের সংশোধিত আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে। এই খসড়াটি প্রণীত হয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি আন্তমন্ত্রণালয়ের কমিটির সুপারিশের আলোকে। এ প্রসঙ্গে দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেছেন, কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে প্রতিষ্ঠানটি নখদন্তহীন বাঘে পরিণত হবে। জনাব গোলাম রহমানের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়, দুদকের প্রকৃত অবস্থা কী হবে।
সম্প্রতি সরকারের হিসাবসম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের মতো দুদকের প্রয়োজন নেই। তাহলে তিনি কেমন দুর্নীতি দমন কমিশন চান। তিনি কি চান দুর্নীতি দমন কমিশন একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হোক? অবশ্য তিনি এবং তাঁরা কেমন দুর্নীতি দমন কমিশন চান, তার একটা রূপরেখা ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে। যদিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুদকের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়ে গেছে, তবু এ কথা স্বীকার করতে হবে যে তখন দুদক অনেক প্রশংসামূলক কাজও করেছে। জনাব মহীউদ্দীন খান আরও বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুদক বিনা দোষে রাজনীতিবিদদের হয়রানি করেছে। সব রাজনীতিবিদ যদি ধোয়া তুলসী পাতা হন, তাহলে দুর্নীতির জন্য কারা দায়ী। প্রায় সব মামলাই প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তাঁরা যদি নির্দোষ হন, তবে কেন তাঁরা বিচারের মুখোমুখি দাঁড়ালেন না এবং আইনের মাধ্যমে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণিত করলেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের জন্য বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একে অন্যকে দায়ী করছে। তাদের কথা আংশিক সত্যি। পুরোপুরি সত্যি হলো, দুটি দলই সমানভাবে দায়ী।
বর্তমান সরকার এসেছিল দিনবদলের স্বপ্ন দেখিয়ে। দেশের মানুষও স্বপ্ন দেখেছিল পরিবর্তনের। কিন্তু বছর যেতে না-যেতে সেই পুরোনো রাজনীতি, পুরোনো রূপ। দেশের মানুষ চায়, এসবের অবসান হোক এবং সরকার তার অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে কাজ করুক। আর সরকারের লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রথমে দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করতে হবে এবং সে জন্য চাই একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশন। এখন দেখার বিষয়, সরকার তার লক্ষ্য পূরণে কতটা সফল হয়।
সৌরভ আদনান
Sourabh.july1@gmail.com
ধনী হলেই দাম্ভিক হতে নেই
গত ১৩ জুন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান খানের সঙ্গে তুমুল তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন আমাদের দেশের বিশিষ্ট ভূমি উন্নয়ন ব্যবসায়ীরা। ওয়াশিংটন তথা যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাঙালিরা টিভিতে এ সংবাদ দেখে হতবাক হয়েছে। ব্যবসায়ীদের এমন আচরণ অশোভনীয়। পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদে জানা যায়, রিহ্যাব নেতাদের সঙ্গেও রাজউকের তর্ক-বিতর্ক হয়। বিতর্কের একপর্যায়ে একজন ধনাঢ্য আবাসন ব্যবসায়ী হাত উঁচিয়ে কথা বলেন, প্রতিমন্ত্রী এত বড় দুঃসাহস কোথায় পায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসীরা মনে করেন বাগিবতণ্ডায় না গিয়ে ভূমি উন্নয়ন ব্যবসায়ীরা ড্যাপ নিয়ে নিজেদের মতামত, সুপারিশ পেশ করতে পারতেন। ধনী হলেই অর্থের জোরে এমন দাম্ভিক আচরণ করা উচিত নয়।
অগাধ সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। আমরা সবাই মিলে যদি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকা পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলি, তাহলে সকলেরই লাভ। সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে আগামী প্রজন্ম, আমাদের সন্তান-সন্ততিরা। সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর পরিবেশ একটি দেশের চেহারাকে বদলে দেয়। সরকারের একার পক্ষে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সবার সহযোগিতা দরকার। বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরা যদি দেশের পরিবেশ রক্ষার্থে সীমাহীন অর্থলিপ্সা ত্যাগ করেন, তাহলে মঙ্গল হবে।
হারুন চৌধুরী
ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র।
Chowdhury.harun@yahoo.com
বিএনপির হরতাল
বিএনপি গত ২৭ জুন মহাজোট সরকারের ‘দুর্নীতি-নির্যাতন-অপকর্মের’ বিরুদ্ধে সারা দেশে হরতাল পালন করেছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা হরতালের আগে যেসব উসকানিমূলক-প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য দিয়েছেন, তা বাংলাদেশে দিনবদলের রাজনীতিতে সহিষ্ণুতার সংস্কৃতির বিকাশকে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত করবে। এ ধরনের বক্তব্য দুটি সংগঠনের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি করবে। হরতাল পালন বা প্রত্যাখ্যানের দায়িত্ব জনগণের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। সরকার বা সরকারি দলের এতে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। তারাও বিরোধী দলে থাকার সময় একইভাবে হরতাল করেছিল। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর সবচেয়ে স্বাভাবিক পন্থা হচ্ছে হরতাল। হরতালের মতো কর্মসূচি বন্ধ করার চেষ্টা করা মানে গণতান্ত্রিক চর্চায় বাধার সৃষ্টি করা। হরতালে জনজীবনকে ক্ষয়ক্ষতি থেকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করার সময় একজন বরেণ্য রাজনীতিবিদের বাসায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাঙচুর-লুটপাট অত্যন্ত নিন্দনীয়। কার অঙ্গুলি হেলনে, কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল, তা সরকারকে জাতির সামনে স্পষ্ট করতে হবে। হরতালকে কেন্দ্র করে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, একজন প্রকৌশলী মৃত্যুপথযাত্রী, একজন গাড়িচালককে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়ার এ পরীক্ষায় সরকার পাস করতে পারেনি। সহিংসতা নিরসনে সরকারের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। বিরোধী দলও এই নৃশংস ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়কেই জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। নতুন দিনের আগমনী বার্তা দিয়ে ডিজিটাল সরকার দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি ঘাটতি, কৃষকের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-হত্যা, নদী দখল, বিদ্যুৎ-গ্যাস-কয়লাক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে বিতর্কিত চুক্তি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের দখলদারি, আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি, ক্রসফায়ার, গুপ্তহত্যা, ভারতের সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তি, রেন্টাল বিদ্যুৎ-বিতর্ক, যুদ্ধাপরাধীর বিচার-প্রক্রিয়ায় চরম স্থবিরতা, টিপাইমুখ বাঁধ, বন্দর লিজ-বিতর্ক, সরকারবিরোধী সংগঠনগুলোর ওপর হামলা, নারী নির্যাতন, দুদক, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের কারণে জনগণ ক্ষুব্ধ।
এই পুঞ্জীভূত ক্ষোভ যেকোনো সময় বিক্ষোভে ফেটে পড়তে পারে। কিন্তু বিএনপির আহূত হরতালে সাধারণ মানুষ আশা সঞ্চার করার মতো কিছুই দেখেনি। কারণ বিএনপিও ক্ষমতায় থাকাকালে একই ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। মহাজোট সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে বিএনপি কোনো সত্যিকার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। সরকারকে ব্যর্থ হিসেবে আখ্যা দিয়ে কোনো সমাধানের পথ তারা জাতিকে দেখাতে পারেনি। তাই সাম্প্রতিক হরতাল জনগণের কাছে অর্থবহ হয়ে ওঠেনি।
রহমান শিহান, শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষা আর পরীক্ষায় পাস করা
গত ১ জুন সৈয়দ আবুল মকসুদের ‘শিক্ষার তিন অবস্থা’ শিরোনামে লেখাটির অধিকাংশ যুক্তির সঙ্গেই আমি একমত। তবে পরীক্ষায় পাস-ফেলের প্রসঙ্গে তিনি যা বলেছেন, সে সম্পর্কে কিছু বলব। ১৮৫৭ সালের ম্যাট্রিক পরীক্ষায় এক-চতুর্থাংশ পরীক্ষার্থীও পাস করেনি, ১৮৫৮ সালের বিএ পরীক্ষায় ১৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র দুজন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও যদুনাথ বসু) পাস করেন। একটা সময় ছিল যখন পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে শিক্ষক বা পরীক্ষক কত কঠোর বা কৃপণ হতে পারেন, তার মধ্যে ছিল মনে হয় যত কৃতিত্ব। ১০ নম্বরের কোনো প্রশ্নের উত্তরের জন্য যত ভালোই লিখুক, দেখা যেত ৬ বা সর্বোচ্চ ৭। আমরা ছাত্রাবস্থায় শিক্ষকদের জিজ্ঞাসা করতাম, স্যার, কীভাবে বা কতটুকু লিখলে পুরো নম্বর দেবেন? উত্তরে শিক্ষকেরা বলতেন, ‘জানি না, আসলে পুরো নম্বর আমরাও আমাদের শিক্ষকের কাছ থেকে পাইনি, তাই আমরাও আমাদের ছাত্রদের দিই না।’
বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। এখন পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের একটা অংশ থাকে নৈর্ব্যক্তিক, যেখানে পরীক্ষার্থী শতভাগ নম্বর পেতে পারে। এর প্রভাব পরীক্ষার রচনামূলক অংশের ওপরও হয়তো কিছুটা পড়ছে। আজ পরীক্ষকেরা হয়তো উত্তরপত্র মূল্যায়নের আগে প্রতিটি প্রশ্নের একটা মোটামুটি স্ট্যান্ডার্ড নমুনা উত্তর ঠিক করে নিচ্ছেন। আগে পরীক্ষকেরা কঠোরতার অনুশীলন করায় পাসের হার খুব কম হতো; এখন পরীক্ষকেরা উদারতার অনুশীলন করায় পাসের হার বেশি হয়ে যাচ্ছে। আসলে কোনো ব্যবস্থাই শতভাগ ত্রুটিমুক্ত অথবা প্রশ্নাতীত নয়।
আমরা যতই বলি, শিক্ষার উদ্দেশ্য মানুষ তৈরি করা। আসলে আমরা মানুষ হতে চাই না। আমরা হতে চাই চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, ব্যাংকার প্রভৃতি মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জনকারী পেশাজীবী। সেখানে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর অথবা মুন্সী মেহেরুল্লাহর মতো মানুষদের স্থান কোথায়? যে শিক্ষার কোনো নগদ বাজারদর নেই, সে শিক্ষা কে নেবে?
পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার উদ্দেশ্য না হতে পারে, তবে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, সরকার, জাতি, মিষ্টির দোকানদার—সবার একান্ত কাম্য।
অসীম কুমার ভৌমিক, শিক্ষক।
ashimkumar_67@yahoo.com
টাকা ছিদ্র করা বন্ধ হোক
রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে কাগুজে টাকার নোট ‘গোনা-বাছার সুবিধার জন্য’ তোড়া বানাতে গিয়ে গজালের সাহায্যে ফুটো করে, তাতে মোটা সুতা ঢুকিয়ে দু-তিন দিক থেকে বেঁধে, ওপরের ও নিচের নোটের ওপর গাম ও কাগজ লাগিয়ে, সিল-স্বাক্ষর দিয়ে, নোটের সংখ্যা ইত্যাদি লিখে গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। সুতায় বাঁধা নোটগুলো যখন গ্রাহকদের হাতে যায়, তখন তারা তা খোলে এবং খরচ করে। বিভিন্ন হাত ঘুরে সেসব নোট যখন আবার ব্যাংকে জমা হয়, তখন ব্যাংকের লোকেরা তাদের ‘গোনা-বাছার’ সুবিধার্থে আবারও একইভাবে গজাল ও সুতার সাহায্যে সেগুলোকে তোড়া আকারে বাঁধে। এভাবে নোটগুলোর ছিদ্র ক্রমশ বড় হতে থাকে, ছিদ্রের ধার দিয়ে ফাটল শুরু হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই নোটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। পৃথিবীর কোনো দেশে কাগুজে নোট এভাবে ছিদ্র করে সুতা বেঁধে তোড়া বানানো হয় না; এমনকি পার্শ্ববতী ভারত, নেপাল বা ভুটানেও নয়।
কিন্তু আবার দেখুন, এ দেশের যেসব ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্র যেমন ডলার, ইউরো, পাউন্ড, রিয়াল, দিনার ইত্যাদি লেনদেন হয়, তারা কিন্তু ওই সব মুদ্রার কাগুজে নোটগুলো ছিদ্র করে না। ছিদ্র করলে হয়তো ডলার-পাউন্ড অচল বলে গণ্য হবে। তাহলে টাকার কাগুজে নোটগুলো কেন ছিদ্র করা হয়? এ প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? ছিদ্র করার ফলে নোটগুলোর স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল অনেক কমে যায়। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি ঘন ঘন নতুন নোট ছাপতে হয়। এতে রাষ্ট্রীয় অর্থের অনেক অপচয় হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারের অবশ্যই এ বিষয়ে কিছু করা উচিত। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া উচিত, কোনোভাবেই যেন কাগুজে মুদ্রা ছিদ্র করা না হয়। সারা দুনিয়ার ব্যাংকগুলো যেভাবে কাগুজে মুদ্রার তোড়া বানায়, আমাদেরও তাই করা উচিত।
সুরাইয়া ঝুমু, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
surayajhumu@yahoo.com
লিখুন, পাঠিয়ে দিন
প্রিয় পাঠক, প্রথম আলোয় প্রকাশিত সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, প্রতিবেদন ইত্যাদি নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া/ভিন্নমত আমাদের লিখে পাঠান। সমসাময়িক অন্যান্য বিষয়েও আপনার অভিমত, চিন্তা, বিশ্লেষণ সর্বোচ্চ ৪০০ শব্দের মধ্যে লিখে পাঠিয়ে দিন ডাকযোগে:
অভিমত, সম্পাদকীয় বিভাগ, প্রথম আলো, সিএ ভবন,
১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
কারওয়ান বাজার, ঢাকা।
ই-মেইলে (এমএস ওয়ার্ড অ্যাটাচমেন্ট):
obhimot@prothom-alo.info
No comments