কাঠ চুরি ঠেকাতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার-লাউয়াছড়ায় বেপরোয়া বনদস্যু
মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে সংঘবদ্ধ বনদস্যুদের উপদ্রব খুব বেড়েছে। এরা এতই দুর্ধর্ষ ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে এদের প্রতিরোধের শক্তি বনকর্মীদের নেই। গত বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বনদস্যুরা কাঠ চুরির সময় বাধা দিতে যাওয়া রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ ছয় বনকর্মীকে
কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছে। সংরক্ষণের অভাবে কেবল সম্পদ বিনষ্ট নয়, পরিবেশগত ভারসাম্যেও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব।
বনজ সম্পদ রক্ষার বিষয়টি একশ্রেণীর বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ওপর ন্যস্ত। কিন্তু জনবল ও অস্ত্রবলের দিক থেকে বনদস্যুদের তুলনায় তাঁরা দুর্বল। একটি বন বিটে বিট কর্মকর্তাসহ বর্তমানে যত সংখ্যক বনকর্মী আছেন, তার বিপরীতে বনদস্যুদের সংঘবদ্ধ দলে থাকে অন্তত সাত-আট গুণ সদস্য। বহুবার বনকর্মী ও বনদস্যুদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে। বন বিভাগের জনবল একেবারে কম থাকায় প্রায় সংঘর্ষে বনকর্মীদেরই মার খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় নিজের জীবন বিপন্ন করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব তো যথাযথভাবে পালিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
লাউয়াছড়া থেকে বনদস্যুরা গাছ কেটে খণ্ড করে রেলওয়ের একটি ট্রলি ব্যবহার করে কমলগঞ্জ সদরের ভানুগাছ স্টেশনে নিয়ে যায়। ভানুগাছ স্টেশনের রেলওয়ের কর্মীরা আগে এ কাজে বাধা দিতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন। তাঁরা বনদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়ে রয়েছেন। দস্যুদের নাম-পরিচয় জানা থাকলেও তাদের ধরা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের একাংশ বনদস্যুদের পেছনে থাকাটাই তাদের এমন শক্তির মূল কারণ। অভিযোগ আছে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সহব্যবস্থাপনা কমিটির কয়েকজন সদস্যের আত্মীয়স্বজন সরাসরি কাঠ চুরির সঙ্গে জড়িত।
প্রাকৃতিক বন ও সৃজিত বাগানের মিশ্রণে তৈরি বর্ষা-অরণ্য লাউয়াছড়ায় এমন অব্যাহত কাঠ চুরি বনের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলছে। এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। বনকর্মীরা জনবলে ও অস্ত্রবলে দুর্বল। ফলে দস্যু বাহিনী গাছ কেটে নিয়ে যেতে পারছে। এ জন্য বনকর্মীদের শক্তি বাড়ানো দরকার। স্থানীয় জনগণের ধারণা, রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলে কাঠ চুরি হতে পারে না। এই বন ও বনের প্রাণবৈচিত্র্য বেঁচে থাকতেই বনদস্যুদের রুখতে হবে।
No comments