নারীর আত্মহত্যা-ব্যক্তিগত নয়, রাজনৈতিক by জোবাইদা নাসরীন
বাংলাদেশে নারীর আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেশে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাকে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় নারীদের চেয়ে পুরুষেরা বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ। কিন্তু এক্ষেত্রে বাংলাদেশ হচ্ছে ব্যতিক্রম।
এ দেশে নারী-নির্যাতনের সঙ্গে নারীর আত্মহত্যার ঘটনা অনেকটাই সম্পর্কিত বিষয়। সাম্প্রতিক সময়ের বহুল আলোচিত ঢাকার জুরাইনে মা ও দুই সন্তানের ‘আত্মহত্যা’য়ও পারিবারিক নির্যাতনের কথাই সামনে এসেছে। এর কিছুদিন আগে তরুণ কবি মেহেরুন এবং গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রী সুতপার আত্মহত্যার পেছনেও নির্যাতনের বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল। আশার কথা হলো, বর্তমানে অনেক আত্মহত্যাকেই পারিপার্শ্বিক প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’ হিসেবে বিবেচনায় এনে এটিকে অপরাধ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেখা হচ্ছে। তবে মামলা না হলে আত্মহত্যাকে ‘অপমৃত্যু’ হিসেবেই পরিবার এবং সমাজ হাজির করায়। আত্মহত্যাকে কোনোভাবেই নারীর শুধু আবেগী আচরণের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে পাঠ করা যাবে না। বরং নারীর আত্মহত্যা একেবারেই রাজনৈতিক।
গবেষণার ফলাফল থেকে জানা গেছে, দেশের শহর এলাকায় বিবাহিত নারীদের ১৪ শতাংশ আত্মহত্যা করার কথা ভাবে (৯ জুলাই, প্রথম আলো, পৃ. ৯)। আইসিডিডিআরবির গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, খুলনার অভয়নগরে ১৯৮৩ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত আত্মহত্যা করা নারীদের ৭৮ শতাংশই ছিল বিবাহিত। বিয়ে সম্পর্কের মধ্যে অসম ক্ষমতার চর্চা হয় এবং এই সম্পর্কের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি নারী নির্যাতিত হয়, যাকে ‘ব্যক্তিগত’-এর মোড়কে আড়াল করা হয়; কখনো একে রাজনৈতিক হিসেবে দেখা হয় না। এই সম্পর্কের মধ্যকার নিপীড়ন-নির্যাতনকে তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীরা কাউকে না বলাই শ্রেয় মনে করে। পরিবার ও সমাজের কাছ থেকেও নারীরা এই বিষয়ে খুব বেশি সমর্থন পায় না। অন্যদিকে পারিবারিক নির্যাতনের কারণে সম্পর্ক ভেঙে অন্য কোথাও আশ্রয় না পাওয়া কিংবা আরও বেশি সমাজ কর্তৃক নিপীড়নের আশঙ্কা পরিবার-পরিসরেই নারীকে মানসিকভাবে অনেক বেশি নাজুক করে তোলে। নির্যাতনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে চলার জন্য তার ওপর পারিবারিক এবং সামাজিক চাপ থাকে। নির্যাতন মেনে বা মানিয়ে নেওয়া—এই টানাপোড়েন তাকে কখনো কখনো আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করে। এ কারণেই বিয়ে সম্পর্কের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটলে এটিকে ‘ব্যক্তিগত কারণজনিত আত্মহত্যা’ কিংবা ‘ব্যক্তিগত কারণে আত্মহত্যা করেছি’ এই ধরনের চিরকুটের মধ্য দিয়ে প্যাকেজবন্দী করা হয়। কিন্তু বিয়ে সম্পর্কের মধ্যে ঘটিত সব আত্মহত্যাই রাজনৈতিক, কোনোভাবেই তা শুধু ব্যক্তিক নয়।
বিবাহিত জীবনের বাইরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী আত্মহত্যা করছে কিশোরী বয়সে। ২০০৫ সালের ‘বাংলাদেশ হেলথ অ্যান্ড ইনজুরি সার্ভে’র তথ্যমতে, ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত আত্মহত্যা করা মানুষের ৫৪ শতাংশই ছিল নারী। অন্যদিকে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির হিসাবমতে, ২০০৬ সালে পাঁচজন, ২০০৭ সালে পাঁচজন, ২০০৮ সালে নয়জন, ২০০৯ সালে সাতজন এবং চলতি বছর মে পর্যন্ত ১৪ জন শুধু টিজিংয়ের কারণে আত্মহত্যা করেছে। বখাটেদের উৎপাত এবং অপমান থেকে নিজেকে বাঁচাতে কিংবা সমাজে নিজেকে অনিরাপদ ভেবে অথবা সমাজ-রাষ্ট্রের দিক থেকে এর যথাযথ প্রতিকার না পেয়ে আত্মহত্যাকে প্রতিবাদের একটি জায়গা হিসেবে খুঁজে নিয়েছে তারা। যে কারণে নারায়ণগঞ্জের সিমি, খুলনার রুমীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশে ১৪ বছর বয়সে প্রতি লাখে ১০ জন মেয়ে আত্মহত্যা করলেও একই বয়সী ছেলেদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা প্রায় শূন্য। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে নারী-নির্যাতনের যে নতুন ধরনগুলো যোগ হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো সামাজিক পরিসরে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে নারীকে উত্ত্যক্ত করা, যার প্রধান শিকার কিশোরীরা। তাই এই বয়সী মেয়েদের আত্মহত্যা বাংলাদেশে নারী-নির্যাতনের নতুন নতুন ক্ষেত্রকে বারবার সামনে নিয়ে আসে।
উল্লেখ্য, প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮ শতাংশ গ্রামীণ এবং ১৫ শতাংশ শহুরে নারী আত্মহত্যার চিন্তার কারণ হিসেবে স্বামীর শারীরিক নির্যাতনের কথা গবেষকদের কাছে উল্লেখ করেছেন। যৌতুক, শারীরিক নির্যাতন, ম্যারিটাল রেইপসহ বিভিন্ন ধরনের যৌন-নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, অনিরাপত্তাবোধ, সামাজিক পরিসরে নারীকে উত্ত্যক্ত করা এবং নানা ধরনের অসম্মান প্রদর্শন, পারিবারিক পর্যায়ে নারীকে বিভিন্ন ধরনের চাপ প্রয়োগ, সমাজে বিরাজমান লিঙ্গীয় বৈষম্য, নারীর প্রতি সহিংসতার বিভিন্ন ধরন প্রভৃতি নারীর এই আত্মহত্যার প্রবণতাকে রাজনৈতিক রূপ দিয়েছে। পারিবারিক নির্যাতন ব্যক্তিক নয়, বরং অনেক বেশি রাজনৈতিক। তাই নারীর আত্মহত্যাকেও রাজনৈতিক হিসেবে দেখতে হবে। অনেক গবেষক দেখিয়েছেন, নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বিভিন্ন প্রচলিত ধরনের বাইরে নারীরা আত্মহত্যাকে অনেক ক্ষেত্রেই নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের একটি ধরন হিসেবে গ্রহণ করে এবং সেদিকে ধাবিত হয়।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে নারীর আত্মহত্যার ঘটনার দিকে নজর দিলে দেখা যায়, এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন নির্যাতনের কারণে গত ১০ বছরে আত্মহত্যা করেছে চার হাজার ৭৪৭ জন নারী। এখানে আত্মহননকারীদের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত আবেগের কারণে আত্মহত্যা করা নারীর সংখ্যা একেবারেই কম। তার মানে হলো, নারীর এই আত্মহত্যার পেছনে আছে কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতন, বঞ্চনা, নিপীড়ন, কিংবা বৈষম্যের ইতিহাস; যাকে সামনে আনা হয় না, কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় না। আত্মহত্যা জীবনযুদ্ধের কোনো সমাধান নয়, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নির্যাতনের মাত্রা এত বেশি হয় যে, নারীর দাঁড়ানোর মতো কোনো পাটাতন থাকে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের মে মাসে ৩১০ ধর্ষণ, ১০ এসিড নিক্ষেপ, এক হাজার ৯৯টি নারী-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্তই আত্মহননকারী নারীদের সংখ্যা ছিল ৭৩। তার মধ্যে বেশির ভাগই পারিবারিক নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হওয়ার কারণে আত্মহত্যা করেছে। দেশে কয়েক মাসের আত্মহত্যাগুলোর পূর্বাপর ব্যাখ্যা করলে আমরা দেখতে পাই, নারী-নির্যাতনের সঙ্গে এই আত্মহত্যার সম্পর্কটি অত্যন্ত গভীর। তাই নারীর আত্মহত্যার হার কমাতে হলে অবশ্যই কমাতে হবে নারী-নির্যাতন, নারীর প্রতি বৈষম্য। পারিবারিক ও বিয়ে সম্পর্কের মধ্যকার নির্যাতনকে রাজনৈতিকভাবে দেখতে হবে এবং এটির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। নির্যাতনকে আড়াল নয়, বরং আলাপচারিতায় নিয়ে আসাই অনেকাংশে বন্ধ করতে পারে আত্মহত্যার পথ।
জোবাইদা নাসরীন: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
zobaidanasreen@gmail.com
গবেষণার ফলাফল থেকে জানা গেছে, দেশের শহর এলাকায় বিবাহিত নারীদের ১৪ শতাংশ আত্মহত্যা করার কথা ভাবে (৯ জুলাই, প্রথম আলো, পৃ. ৯)। আইসিডিডিআরবির গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, খুলনার অভয়নগরে ১৯৮৩ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত আত্মহত্যা করা নারীদের ৭৮ শতাংশই ছিল বিবাহিত। বিয়ে সম্পর্কের মধ্যে অসম ক্ষমতার চর্চা হয় এবং এই সম্পর্কের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি নারী নির্যাতিত হয়, যাকে ‘ব্যক্তিগত’-এর মোড়কে আড়াল করা হয়; কখনো একে রাজনৈতিক হিসেবে দেখা হয় না। এই সম্পর্কের মধ্যকার নিপীড়ন-নির্যাতনকে তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীরা কাউকে না বলাই শ্রেয় মনে করে। পরিবার ও সমাজের কাছ থেকেও নারীরা এই বিষয়ে খুব বেশি সমর্থন পায় না। অন্যদিকে পারিবারিক নির্যাতনের কারণে সম্পর্ক ভেঙে অন্য কোথাও আশ্রয় না পাওয়া কিংবা আরও বেশি সমাজ কর্তৃক নিপীড়নের আশঙ্কা পরিবার-পরিসরেই নারীকে মানসিকভাবে অনেক বেশি নাজুক করে তোলে। নির্যাতনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে চলার জন্য তার ওপর পারিবারিক এবং সামাজিক চাপ থাকে। নির্যাতন মেনে বা মানিয়ে নেওয়া—এই টানাপোড়েন তাকে কখনো কখনো আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করে। এ কারণেই বিয়ে সম্পর্কের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটলে এটিকে ‘ব্যক্তিগত কারণজনিত আত্মহত্যা’ কিংবা ‘ব্যক্তিগত কারণে আত্মহত্যা করেছি’ এই ধরনের চিরকুটের মধ্য দিয়ে প্যাকেজবন্দী করা হয়। কিন্তু বিয়ে সম্পর্কের মধ্যে ঘটিত সব আত্মহত্যাই রাজনৈতিক, কোনোভাবেই তা শুধু ব্যক্তিক নয়।
বিবাহিত জীবনের বাইরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী আত্মহত্যা করছে কিশোরী বয়সে। ২০০৫ সালের ‘বাংলাদেশ হেলথ অ্যান্ড ইনজুরি সার্ভে’র তথ্যমতে, ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত আত্মহত্যা করা মানুষের ৫৪ শতাংশই ছিল নারী। অন্যদিকে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির হিসাবমতে, ২০০৬ সালে পাঁচজন, ২০০৭ সালে পাঁচজন, ২০০৮ সালে নয়জন, ২০০৯ সালে সাতজন এবং চলতি বছর মে পর্যন্ত ১৪ জন শুধু টিজিংয়ের কারণে আত্মহত্যা করেছে। বখাটেদের উৎপাত এবং অপমান থেকে নিজেকে বাঁচাতে কিংবা সমাজে নিজেকে অনিরাপদ ভেবে অথবা সমাজ-রাষ্ট্রের দিক থেকে এর যথাযথ প্রতিকার না পেয়ে আত্মহত্যাকে প্রতিবাদের একটি জায়গা হিসেবে খুঁজে নিয়েছে তারা। যে কারণে নারায়ণগঞ্জের সিমি, খুলনার রুমীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশে ১৪ বছর বয়সে প্রতি লাখে ১০ জন মেয়ে আত্মহত্যা করলেও একই বয়সী ছেলেদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা প্রায় শূন্য। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে নারী-নির্যাতনের যে নতুন ধরনগুলো যোগ হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো সামাজিক পরিসরে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে নারীকে উত্ত্যক্ত করা, যার প্রধান শিকার কিশোরীরা। তাই এই বয়সী মেয়েদের আত্মহত্যা বাংলাদেশে নারী-নির্যাতনের নতুন নতুন ক্ষেত্রকে বারবার সামনে নিয়ে আসে।
উল্লেখ্য, প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮ শতাংশ গ্রামীণ এবং ১৫ শতাংশ শহুরে নারী আত্মহত্যার চিন্তার কারণ হিসেবে স্বামীর শারীরিক নির্যাতনের কথা গবেষকদের কাছে উল্লেখ করেছেন। যৌতুক, শারীরিক নির্যাতন, ম্যারিটাল রেইপসহ বিভিন্ন ধরনের যৌন-নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, অনিরাপত্তাবোধ, সামাজিক পরিসরে নারীকে উত্ত্যক্ত করা এবং নানা ধরনের অসম্মান প্রদর্শন, পারিবারিক পর্যায়ে নারীকে বিভিন্ন ধরনের চাপ প্রয়োগ, সমাজে বিরাজমান লিঙ্গীয় বৈষম্য, নারীর প্রতি সহিংসতার বিভিন্ন ধরন প্রভৃতি নারীর এই আত্মহত্যার প্রবণতাকে রাজনৈতিক রূপ দিয়েছে। পারিবারিক নির্যাতন ব্যক্তিক নয়, বরং অনেক বেশি রাজনৈতিক। তাই নারীর আত্মহত্যাকেও রাজনৈতিক হিসেবে দেখতে হবে। অনেক গবেষক দেখিয়েছেন, নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বিভিন্ন প্রচলিত ধরনের বাইরে নারীরা আত্মহত্যাকে অনেক ক্ষেত্রেই নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের একটি ধরন হিসেবে গ্রহণ করে এবং সেদিকে ধাবিত হয়।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে নারীর আত্মহত্যার ঘটনার দিকে নজর দিলে দেখা যায়, এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন নির্যাতনের কারণে গত ১০ বছরে আত্মহত্যা করেছে চার হাজার ৭৪৭ জন নারী। এখানে আত্মহননকারীদের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত আবেগের কারণে আত্মহত্যা করা নারীর সংখ্যা একেবারেই কম। তার মানে হলো, নারীর এই আত্মহত্যার পেছনে আছে কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতন, বঞ্চনা, নিপীড়ন, কিংবা বৈষম্যের ইতিহাস; যাকে সামনে আনা হয় না, কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় না। আত্মহত্যা জীবনযুদ্ধের কোনো সমাধান নয়, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নির্যাতনের মাত্রা এত বেশি হয় যে, নারীর দাঁড়ানোর মতো কোনো পাটাতন থাকে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের মে মাসে ৩১০ ধর্ষণ, ১০ এসিড নিক্ষেপ, এক হাজার ৯৯টি নারী-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্তই আত্মহননকারী নারীদের সংখ্যা ছিল ৭৩। তার মধ্যে বেশির ভাগই পারিবারিক নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হওয়ার কারণে আত্মহত্যা করেছে। দেশে কয়েক মাসের আত্মহত্যাগুলোর পূর্বাপর ব্যাখ্যা করলে আমরা দেখতে পাই, নারী-নির্যাতনের সঙ্গে এই আত্মহত্যার সম্পর্কটি অত্যন্ত গভীর। তাই নারীর আত্মহত্যার হার কমাতে হলে অবশ্যই কমাতে হবে নারী-নির্যাতন, নারীর প্রতি বৈষম্য। পারিবারিক ও বিয়ে সম্পর্কের মধ্যকার নির্যাতনকে রাজনৈতিকভাবে দেখতে হবে এবং এটির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। নির্যাতনকে আড়াল নয়, বরং আলাপচারিতায় নিয়ে আসাই অনেকাংশে বন্ধ করতে পারে আত্মহত্যার পথ।
জোবাইদা নাসরীন: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
zobaidanasreen@gmail.com
No comments