অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন কাম্য নয়-‘বন্দুকযুদ্ধ’ ও প্রাণহানি

সোমবার দুপুরে নরসিংদী সদর উপজেলার নরসিংদী-মদনগঞ্জ সড়কের খাটেহারা নামক স্থানে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ছয় ব্যক্তির নিহত হওয়ার খবর পরদিনের সংবাদমাধ্যমে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে।


র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিহত ব্যক্তিরা ছিনতাইকারী, তাঁরা ৪০ হাজার টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়ার সময় র‌্যাব সদস্যদের সঙ্গে গুলিবিনিময়ে নিহত হয়েছেন।
গুরুতর অপরাধ দমনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে; তবে তা করতে গিয়ে কখনো কখনো মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘এনকাউন্টারে’ মৃত্যুর ঘটনাগুলোকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘এনকাউন্টার’ শব্দ দুটির ব্যবহার হ্রাস পেয়ে ‘বন্দুকযুদ্ধ’-এর ব্যবহার বাড়ছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১৯ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। শুধু র‌্যাব নয়, পুলিশ সদস্যদের সঙ্গেও ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়। এসব কারণে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আত্মরক্ষার প্রয়োজনে অপরাধীদের সঙ্গে কখনো কখনো গুলিবিনিময় ঘটে, এ কথা সত্য। তবে এমন ঘটনার সংখ্যা যদি বেশি হয়, তাহলে প্রশ্ন ওঠে যে প্রাণহানি এড়িয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টায় কোনো ত্রুটি থেকে যাচ্ছে কি না। তা ছাড়া ‘ক্রসফায়ার’, ‘এনকাউন্টার’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনাগুলোর যে বিবরণ র‌্যাব বা পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়, সেগুলোও যখন প্রায় একই রকম হয়, তখনো প্রশ্ন ওঠে। এসব কারণে প্রাণহানি এড়িয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করায় আরও দক্ষতা কীভাবে অর্জন করা যায়, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। মানবাধিকারের প্রতি সংবেদনশীলতার অভাব থেকে থাকলে তাও দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে; র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মানবাধিকারবিষয়ক প্রশিক্ষণের তাগিদ সে কারণেই রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.