বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়া ও কলেরা ছড়াচ্ছে by তৌফিক মারুফ
রাজধানীর মহাখালী আইসিডিডিআর,বি ক্যাম্পাসে হাসপাতাল ভবনের সামনের খোলা চত্বর এখন আর খোলা নেই। ঢাকা পড়ে গেছে বিশাল প্যান্ডেলে। অন্যবারও এমন প্যান্ডেল হয়, তবে এতটা বড় নয়। প্যান্ডেলের ভেতরে রোগীর ভিড়। তারা ডায়রিয়া বা কলেরায় আক্রান্ত। মূল ভবনে ঠাঁই না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ এ প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করে থাকে।
গতকাল মঙ্গলবার দেখা যায়, কেবল মূল ভবন বা প্যান্ডেলের প্রবেশপথের এখানে-সেখানে অপেক্ষায় আছে রোগী ও তাদের স্বজনরা। চিকিৎসকরা ব্যস্ত রোগীদের নিয়ে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণাকেন্দ্র-বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালের 'শর্ট স্টে' ইউনিটের প্রধান ড. আজহারুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, এ বছর ডায়রিয়ার প্রকোপ গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে আইসিডিডিআর,বির ঢাকা হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৭৫০ থেকে ৮০০ রোগী আসছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫০০ থেকে ৫৫০। ২০১০ সালে ছিল গড়ে ৯০০ জনের মতো। ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের অনেকেই আবার কলেরায় আক্রান্ত হয়েছেন।
দক্ষিণ বাড্ডার বাসিন্দা মোসলেম আলী বলেন, 'বাসায় বিদ্যুৎ থাকে না, পানি থাকে না। পাশের একটা কল থেকে পানি আইনা খাইছি। ঠিকমতো থালা-বাসন ধোয়া যায় না। গরমে অস্থির অবস্থা। এর মধ্যেই আমার স্ত্রী ও ছোট এক মেয়ের ডায়রিয়া হইছে। আল্লায় জানে এখন তাদের কী হয়।'
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালেও ডায়রিয়া রোগীর এখন ভিড় একই রকম। গত পাঁচ বছর ধরে দেশের ডায়রিয়া পরিস্থিতি একই চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। এক বছর প্রকোপ একটু কমলেই পরের বছর তা আবার বেড়ে যায়। এ সময়ে সরকারি হিসাবেই বছরে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ থেকে ২৬ লাখের মধ্যে ওঠানামা করেছে। এর মধ্যে বড় শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ডায়রিয়া আক্রান্তদের মধ্যে গড়ে ২৫ শতাংশ কলেরার জীবাণুবাহী। সরকারি হিসাবে কলেরার জীবাণুবাহী মানুষের সংখ্যা ধরা হয়েছে চার লাখ ৫০ হাজার। সরকারি হিসাবের সঙ্গে বেসরকারি হিসাবের গরমিল রয়েছে। আইসিডিডিআর,বির দাবি- বছরে বাংলাদেশে কেবল কলেরার জীবাণুবাহী মানুষের সংখ্যা আনুমানিক প্রায় ১২ লাখ। হিসাবের গরমিল যাই থাকুক, এ ডায়রিয়া বা কলেরার কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে অনিরাপদ বা দূষিত পানি পানকে।
সব পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, দূষিত পানি পানের কারণেই দেশে এত ব্যাপক মাত্রায় ডায়রিয়া বা কলেরার প্রকোপ দেখা দেয়। একইভাবে পানিবাহিত অন্যান্য জীবাণুনির্ভর রোগ-বালাই লেগে থাকে দূষিত পানির কারণেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, প্রধানত দূষিত পানির কারণেই ডায়রিয়া ও কলেরার প্রকোপ দেখা দেয়। তবে ডায়রিয়া-কলেরা ছাড়াও টাইফয়েড, জন্ডিস, চর্ম রোগসহ আরো বেশ কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে পানি দূষণের কারণেই। তাই মানুষের জন্য যত বেশি নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা যাবে, ততই ডায়রিয়া বা পানিবাহিত অন্যান্য রোগের প্রকোপ কমে যাবে।
ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, পানি সরবরাহ ব্যবস্থার কারণেই দূষণের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে বলে মনে হয়। সরবরাহ পাইপে সারাক্ষণ পানি থাকলে সেখানে জীবাণু সংক্রমণের সুযোগ একটু কম থাকে। কিন্তু আমাদের সমস্যা হচ্ছে বেশির ভাগ সময়েই পানি সরবরাহ থাকে না। পাইপ খালি পড়ে থাকে। ফলে সেখানে জীবাণুর আক্রমণ অনেক সহজ হয়। এ ছাড়া পানি সরবরাহ পাইপ নিয়মিত কতটা পরিষ্কার করা হয় কিংবা যে পানি সরবরাহ করা হয় তা কতটা নিরাপদ বা বিশুদ্ধ থাকে সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে গভীর নলকূপের পানিকে নিরাপদ ধরা হলেও শোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরবরাহ করা নদীর পানি কতটা জীবাণুমুক্ত করা হয়, সেটা আসলেই পূর্ণ নিরাপদ হয় কি না- তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ অনেক সময় ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। নিয়মিত পানি সরবরাহ না পেয়ে অনেকেই এখান-সেখান থেকে অনিরাপদ পানি সংগ্রহ করে তা পান ও ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। এ থেকেই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে। পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বড় কনটেইনারে বাজারজাত করা পানি শতভাগ নিরাপদ আছে কি না সেটাও দেখা দরকার।
আইসিডিডিআর,বির বিশেষজ্ঞ ড. আজহারুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে জানান, আগের কয়েক বছরে রাজধানীর সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়াপ্রবণ এলাকা ছিল মিরপুর। তবে এবার ঢাকায় ডায়রিয়াপ্রবণ প্রথম ১০টি এলাকার শীর্ষে রয়েছে বাড্ডা। এর পরে আছে গুলশান, তেজগাঁওসহ অন্যান্য এলাকা।
আইসিডিডিআরবির ইন্ট্রোডাকশন অব কলেরা ভ্যাকসিন ইন বাংলাদেশ (আইসিভিবি) কার্যক্রম সূত্র থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে তাদের গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে ২৫ শতাংশ কলেরার জীবাণুবাহী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বিশেষ করে চারটি ক্যাটাগরিতে কলেরা জীবাণুবাহীদের ভাগ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, একজন মানুষের শরীরে কলেরা চূড়ান্ত পর্যায়ে আক্রান্ত হলে তার মাধ্যমে আরো তিনজন সংক্রমিত হতে পারে। এমন হিসাবকে ভিত্তি করেই বাংলাদেশে বছরে কলেরা জীবাণুবাহী মানুষের সংখ্যা আনুমানিক প্রায় ১২ লাখ ধরা হয়েছে। তবে এদের সবাইকে কলেরা রোগী বলা যাবে না।
আইইডিসিআরের অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, 'যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে পরিসংখ্যান পেয়েছি, বাংলাদেশে বছরে আনুমানিক চার লাখ ৫০ হাজার মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়ে থাকে।'
আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণাকেন্দ্র-বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালের 'শর্ট স্টে' ইউনিটের প্রধান ড. আজহারুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, এ বছর ডায়রিয়ার প্রকোপ গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে আইসিডিডিআর,বির ঢাকা হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৭৫০ থেকে ৮০০ রোগী আসছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫০০ থেকে ৫৫০। ২০১০ সালে ছিল গড়ে ৯০০ জনের মতো। ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের অনেকেই আবার কলেরায় আক্রান্ত হয়েছেন।
দক্ষিণ বাড্ডার বাসিন্দা মোসলেম আলী বলেন, 'বাসায় বিদ্যুৎ থাকে না, পানি থাকে না। পাশের একটা কল থেকে পানি আইনা খাইছি। ঠিকমতো থালা-বাসন ধোয়া যায় না। গরমে অস্থির অবস্থা। এর মধ্যেই আমার স্ত্রী ও ছোট এক মেয়ের ডায়রিয়া হইছে। আল্লায় জানে এখন তাদের কী হয়।'
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালেও ডায়রিয়া রোগীর এখন ভিড় একই রকম। গত পাঁচ বছর ধরে দেশের ডায়রিয়া পরিস্থিতি একই চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। এক বছর প্রকোপ একটু কমলেই পরের বছর তা আবার বেড়ে যায়। এ সময়ে সরকারি হিসাবেই বছরে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ থেকে ২৬ লাখের মধ্যে ওঠানামা করেছে। এর মধ্যে বড় শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ডায়রিয়া আক্রান্তদের মধ্যে গড়ে ২৫ শতাংশ কলেরার জীবাণুবাহী। সরকারি হিসাবে কলেরার জীবাণুবাহী মানুষের সংখ্যা ধরা হয়েছে চার লাখ ৫০ হাজার। সরকারি হিসাবের সঙ্গে বেসরকারি হিসাবের গরমিল রয়েছে। আইসিডিডিআর,বির দাবি- বছরে বাংলাদেশে কেবল কলেরার জীবাণুবাহী মানুষের সংখ্যা আনুমানিক প্রায় ১২ লাখ। হিসাবের গরমিল যাই থাকুক, এ ডায়রিয়া বা কলেরার কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে অনিরাপদ বা দূষিত পানি পানকে।
সব পর্যায়ের বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, দূষিত পানি পানের কারণেই দেশে এত ব্যাপক মাত্রায় ডায়রিয়া বা কলেরার প্রকোপ দেখা দেয়। একইভাবে পানিবাহিত অন্যান্য জীবাণুনির্ভর রোগ-বালাই লেগে থাকে দূষিত পানির কারণেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, প্রধানত দূষিত পানির কারণেই ডায়রিয়া ও কলেরার প্রকোপ দেখা দেয়। তবে ডায়রিয়া-কলেরা ছাড়াও টাইফয়েড, জন্ডিস, চর্ম রোগসহ আরো বেশ কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে পানি দূষণের কারণেই। তাই মানুষের জন্য যত বেশি নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা যাবে, ততই ডায়রিয়া বা পানিবাহিত অন্যান্য রোগের প্রকোপ কমে যাবে।
ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, পানি সরবরাহ ব্যবস্থার কারণেই দূষণের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে বলে মনে হয়। সরবরাহ পাইপে সারাক্ষণ পানি থাকলে সেখানে জীবাণু সংক্রমণের সুযোগ একটু কম থাকে। কিন্তু আমাদের সমস্যা হচ্ছে বেশির ভাগ সময়েই পানি সরবরাহ থাকে না। পাইপ খালি পড়ে থাকে। ফলে সেখানে জীবাণুর আক্রমণ অনেক সহজ হয়। এ ছাড়া পানি সরবরাহ পাইপ নিয়মিত কতটা পরিষ্কার করা হয় কিংবা যে পানি সরবরাহ করা হয় তা কতটা নিরাপদ বা বিশুদ্ধ থাকে সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে গভীর নলকূপের পানিকে নিরাপদ ধরা হলেও শোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরবরাহ করা নদীর পানি কতটা জীবাণুমুক্ত করা হয়, সেটা আসলেই পূর্ণ নিরাপদ হয় কি না- তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ অনেক সময় ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। নিয়মিত পানি সরবরাহ না পেয়ে অনেকেই এখান-সেখান থেকে অনিরাপদ পানি সংগ্রহ করে তা পান ও ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। এ থেকেই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে। পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বড় কনটেইনারে বাজারজাত করা পানি শতভাগ নিরাপদ আছে কি না সেটাও দেখা দরকার।
আইসিডিডিআর,বির বিশেষজ্ঞ ড. আজহারুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে জানান, আগের কয়েক বছরে রাজধানীর সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়াপ্রবণ এলাকা ছিল মিরপুর। তবে এবার ঢাকায় ডায়রিয়াপ্রবণ প্রথম ১০টি এলাকার শীর্ষে রয়েছে বাড্ডা। এর পরে আছে গুলশান, তেজগাঁওসহ অন্যান্য এলাকা।
আইসিডিডিআরবির ইন্ট্রোডাকশন অব কলেরা ভ্যাকসিন ইন বাংলাদেশ (আইসিভিবি) কার্যক্রম সূত্র থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে তাদের গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে ২৫ শতাংশ কলেরার জীবাণুবাহী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বিশেষ করে চারটি ক্যাটাগরিতে কলেরা জীবাণুবাহীদের ভাগ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, একজন মানুষের শরীরে কলেরা চূড়ান্ত পর্যায়ে আক্রান্ত হলে তার মাধ্যমে আরো তিনজন সংক্রমিত হতে পারে। এমন হিসাবকে ভিত্তি করেই বাংলাদেশে বছরে কলেরা জীবাণুবাহী মানুষের সংখ্যা আনুমানিক প্রায় ১২ লাখ ধরা হয়েছে। তবে এদের সবাইকে কলেরা রোগী বলা যাবে না।
আইইডিসিআরের অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, 'যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে পরিসংখ্যান পেয়েছি, বাংলাদেশে বছরে আনুমানিক চার লাখ ৫০ হাজার মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়ে থাকে।'
No comments